somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশে বিদেশে: দেশে থেকেও বিদেশ ভ্রমণ

২৭ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৈয়দ মুজতবা আলী'র 'দেশে বিদেশে' বইটি যখন পড়া শুরু করি, বইটির নাম দেখে প্রত্যাশা হয়েছিল বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণের কাহিনী পড়তে পারব। কারন নাম 'দেশে বিদেশে', হয়তো লেখক একই সফরে বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। যখন লেখক পাকিস্তানে তথা তৎকালীন ভারতবর্ষ হতে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেন তখনো প্রত্যাশা অব্যাহত ছিল। কিন্তু ঘটনা প্রবাহে যখন বুঝতে পারলাম ভ্রমণের ব্যপ্তি মাত্র দুটি দেশেই তখন কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। তবে ভুল ভাংতে বেশি দেরি হয় নি। কারন আফগানিস্তান রাজনৈতিক ভাবে একাটি দেশ হতে পারে, কিন্তু রং-এ, রূপে, বৈচিত্রে, জাতিতে, ভাষায় গোটা বিশেক দেশকে হারিয়ে দিতে পারে। তাই বইটির নাম যদি বহুবচনে রাখা না হত তবে যেন আফগানিস্তানকেই অপমান করা হত। পাকিস্তানও (ভুতপূর্ব ভারতবর্ষ) কম যায় না। তার নমুনা সে দেখিয়েছে পেশোয়ারে- ডজনখানেক ভাষা, অর ততগুলো জাতি, ততগুলো জীবন দর্শন। অর এই বইয়ের মূল ভেন্যু কাবুলতো বিচিত্রতায় অনন্য। পাঠান, হাজারা, তাজিক, ভারতীয় আর তাদের সাথে ভীর জমিয়েছে আরও বিচিত্র ইউরোপীয় তামাসা দর্শকগণ। সব মিলিয়ে আফগানিস্তান ঠিকই দেশ বিদেশ।
আফগানিস্তান সম্পর্কে ধারণা ছিল দেশটি উষর, মরুময়, ছায়াহীন, প্রাণহীন, জীবন স্পন্দন যেখানে রসহীন পাথর। আর এমন একটা দেশের ভ্রমণ কাহিনী পড়া, সে তো ভ্রমণের চেয়েও কঠিন। আফগানিস্তানের সৌভাগ্য, আর এই পাঠকও সেই সৌভাগ্যের অংশীদার যে ভ্রমণকারীর নাম সৈয়দ মুজতবা আলী।
কোন ভ্রমণকারী যদি ভ্রমণস্থলকে উপভোগ করতে না পারে, তার কাদা, তার বালু, তার পাহাড়, তার ফুল, তার কাটায় যদি সৌন্দর্য অনুভব করতে না পারে তবে সেটি তার অন্তরের দীনতা। লেখক আফগানিস্তানে সেটি পেরেছেন তিনি প্রাণহীন মরুতেও সৌন্দর্য দেখেছেন। একই সাথে তার বর্ণনা করার ক্ষমতাকেও বিবেচনায় আনতে হয়। তিনি দক্কা দূর্গের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কাবুল নদীর যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে কাবুল নদীকে মনে হয় যেন স্বর্গের নহর। এই ভ্রমণ কাহিনী যদি কোন রসবোধহীন লেখকের পাল্লায় পড়ত তবে তা হতো পুষ্টিহীন পাঠের অযোগ্য অখাদ্য।
তিনি তার পুরো বৃত্তান্তটি এমন রসময় করে বর্ণনা করেছেন মরুর দেশটিকে মোটেও প্রণহীন, উষর, বিস্বাদ মনে হয় না। তিনি মরুতে মধু'র চাষ করেছেন। পাকিস্তান সহ আফগানিস্তানের মানুষ, তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন, মনন, ধ্যান ধারনা, জীবনবোধ. কাবুলের বাজার, আফগানিস্তানের ঘটনাপন্জী, প্রতিটি বিষয় তিনি যথাযোগ্য মর্যাদায় রসময় করে তুলে এনেছেন। তার বর্ণনায় আফগানিস্তান যেন তুলে ধরেছে তার আপন রুপ অকৃপণতায়। আফগানিস্তান হয়তো সবার কাছে নিজেকে প্রকাশ করে না।
লেখক এক যায়গায় একটি ব্যক্তিগত বিষয় উপস্থাপন করে দ্বিধান্বিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি যদি পরবর্তী প্রজন্মের ভ্রমণ কাহিনী পড়তেন তবে দেখতেন ভ্রমণকারী তার ভ্রমণসাথীর ব্যাগের চাবি হারানোর ঘটনাটি তুলে ধরেছে গুরুত্ব সহকারে। বাদ যায় না একটি ঘটনাহীন দিনের বর্ণনাও।
বইটি শুধু একটি ভ্রমণকাহিনী নয়, একটি অনন্য ইতিহাস গ্রন্থও বটে। আজো বাংলায় আফগানিস্তানের ইতিহাসের ভাল কোন বই নেই। বোধকরি এই দৈন্য প্রায় প্রতিটি ভাষার। বৃটিশদের কাছে থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পরের রাজতন্ত্রের পালাবদলের সেই ঘটনগুলি লেখক দেখেছেন খুব কাছ থেকে। শেষের দিকের এই রাজনৈতিক ঘটনাবলী ও লেখকের উদ্ধার পাওয়ার কাহিনী রোমান্ঞউপন্যাসের স্বাদ দেয়।
লেখক কত সালে আফগনিস্তান গিয়েছিলেন, কত দিন ছিলেন এসব ব্যাপারে সামক্য ধারণা পাওয়া যায় না। লেখক কোথাও সন তারিখ উল্লেখ করেন নি। তবে বোধকরি ঘটনাবলী গত শতকের তিরিশের দশকের।
বইটি পড়ার শেষে আব্দুর রহমানের স্মুতি সবাইকে নাড়া দেবে। লেখক বলেছেন ...চর্তুদিকের বরফের চেয়েও শুভ্রতর অবদুর রহমানের পাগড়ি, আর শুভ্রতম অবদুর রহমানের হৃদয়।

দেশে বিদেশে
লেখক: সৈয়দ মুজতবা আলী
প্রকাশক: স্টুডেন্ট ওয়েজ
মূল্য: ১৫০ টাকা
পৃষ্ঠা: ২০৮টি


বিশেষ দ্রষ্টব্য: এটি ঠিক বুক রিভিউ নয়( মানে বুক রিভিউ হিসেবে এটা উত্তীর্ণ কিনা এ ব্যাপারে আমি সন্দিহান আরকি)। বইটি পড়ার পর আমার অনুভুতি বইযের শেষের পাতায় লিখার জন্য এটি লিখেছিলাম। তাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন (ভুল বানানগুলোকেও)।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:০৪
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×