somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা বড় হয়ে কি হতে চাও এবং একটি দীর্ঘশ্বাস

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি কাল সম্ভবত আমার জীবনের খুব বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।আমার অ্যাকাডেমিক লাইফ এবং ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত।আমি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো কিনা সেই সিদ্ধান্ত।সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বের জায়গা যেটি সেটি হচ্ছে আমি বুয়েট ছেড়ে দেব কিনা পছন্দের সাবজেক্টের আশায়।আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আজকে রাতে আমার এই মুহুর্তের চিন্তাভাবনাগুলো লিখে রাখা উচিত কোথাও।হয়তো বছরে কয়েক পরে যদি কখনো ফিরে দেখতে ইচ্ছে হয় সুবিধা হবে।
আমার ছোটভাই খুব ছোটবেলায় হলুদ রঙের ট্যাক্সিক্যাবের ড্রাইভার হতে চাইতো।আরেকটু বড় হয়ে সে বললো সে হলুদ রঙের ট্রাকের ড্রাইভার হবে।আমার মা হতাশার হাসি দিয়ে বললেন,যাক তাও ভাল।আমার ছেলেটার দিনদিন বড় জিনিসের প্রতি নজর যাচ্ছে।সেই ছোটভাই এখন ক্লাস ফাইভে পড়ে।এখন কেউ জখন তাকে গাল ধরে টান দিয়ে জিজ্ঞেস করে,বাবা তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?সে খুব সুন্দর করে উত্তর দেয়,আঙ্কেল আমি ফুটবলার হব!সামনে উপস্থিত আঙ্কেল কিংবা আন্টির চোখ কিছুক্ষণের জন্য কপালে উঠে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যে তারা তাকে সামলে নিয়ে দ্বিতীয় প্রশ্ন করেন,বাবা তুমি ফুটবলার হয়ে কি করবে?আমার ভাই অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে উত্তর দেয়,ফুটবলার হয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে ফুটবল খেলবো।বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে উঠাবো।আঙ্কেল বা আন্টি আরও একবার চোখ কপালে তুলে ফেলেন এবং পরক্ষণেই আবার নিজেকে সামলে নিয়ে তাদের মোক্ষম অস্ত্রটি ঝাড়েন,বাবা কিন্তু ফুটবলারদের তো টাকাপয়সা নাই অথবা বাংলাদেশে তো ফুটবলের কোন ভবিষ্যত নাই!আমার ছোটভাই এই পর্যায়ে এসেও বেশ শান্তস্বরে জবাব দেয়,আমি ভাল খেলে ফুটবলের ভবিষ্যত বানিয়ে দেব!এই পর্যায়ে এসে আমার জীবনের অনেকটুকু দেখে ফেলা বাবা মা হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়েন এবং সামনে উপবিষ্ট আঙ্কেল বা আন্টিকে বলেন,কিছু মনে করবেন না ভাই/ভাবি আমার ছেলের মাথাটাই একটু খারাপ!ক্লাস ফাইভে পড়া একটা বাচ্চার মাথায় হাত রেখে তার মাথা খারাপ প্রমাণ করার এই চক্রান্ত যুগ যুগ ধরে আমাদের বাবা মায়েরা করে আসছেন।তাই বাংলাদেশে আর কেউ ফুটবলার হতে চায় না,সবাই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়!
আমি কোনদিন গাড়ির ড্রাইভার হতে চাইনি,ফুটবলার হতে চাইনি এমনকি চকলেটের দোকানদারও হতে চাইনি!আমি ছোটবেলায় হার্ভার্ডের সায়েন্টিস্ট হতে চাইতাম।হার্ভার্ডের সায়েন্টিস্ট হওয়া কি জিনিস তখন আমার বোঝার কথা না,সম্ভবত পত্রিকার পাতায় কোন হার্ভার্ড পড়ুয়াকে দেখে এই ভূত মাথায় চেপেছিল।একটু বড় হয়ে আমি বিজ্ঞানী হতে চাইলাম।এবং আমি আমার স্কুলজীবন পুরোটাই পার করেছি বিজ্ঞানী হবার স্বপ্নে,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে।আমি তখনো শুনেছি মানুষ আমার পিওর ফিজিক্স পড়ার ইচ্ছা শুনে বলতো,পিওর ফিজিক্স পড়ে করবাটা কি শুনি?কলেজের মাস্টার হবা?এইসব শুনতে শুনতেই একসময় ইচ্ছা বদলে গেল।মনে হল বুয়েটেই পড়তে হবে।বুয়েটে পড়া ছাড়া বাঁচবো না ধরনের মনোভাব অনেকদিন ছিল।এইবার বাবা মা,পাড়া প্রতিবেশি আনন্দে হাততালি দিল,বাহ মেয়ে তো বুদ্ধিমান হইসে! মেয়ের লাইফ তো তাইলে সেট।সেই ইচ্ছা সম্ভবত বদলাতো না যদি না আমি কলেজে উঠে প্রোগ্রামিং এর স্বাদ পেতাম।কোডিং আর প্রবলেম সলভিং এর দুনিয়া দেখে মনে হল,আরে আমি তো এটাই খুজছিলাম!সবসময় মাথা খাটানোর জিনিস পাওয়া যাবে,চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে,মাথাটাকে ব্যস্ত রাখা হবে!সেই থেকে ইচ্ছা ছিল কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ার।নেশা পেশা এক হয়ে যাওয়ার মত আনন্দ আর নাই!এবং আমি ঘোষণা দিয়ে দিলাম বাসায়,পৃথিবীর যে প্রান্তে আমি কম্পিউটার সায়েন্স পাব আমি সেখানেই পড়বো!তার জন্য বুয়েট যদি ছাড়তে হয় তো তাই সই!এবং সম্ভবত এটাই হতে চলেছে।আমি কেবলমাত্র মেডিকেল,বুয়েট এবং ঢাবিতেই পরীক্ষা দিয়েছিলাম এবং ভাগ্যক্রমে তিন জায়গায়ই আমি চান্স পেয়েছি।কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা নামক তিন ঘন্টার যুদ্ধে দুইটা অঙ্ক কম আন্সার করার শাস্তিস্বরূপ আমি বুয়েটে পেয়েছি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।কআমার সামনে একমাত্র অপশন এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ কিন্তু সেখানেও সুযোগ পাওয়াটা এখনো নিশ্চিত নয়!
আচ্ছা কি হবে কাল আমি যদি ঢাবিতে সিএসই না পাই?এক হতে পারে আমি বিষণ্ন মুখে বুয়েটে ভর্তি হব এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো কাঠখোট্টা একটি বিষয়ে পড়ে ফেলবো।এবং প্রোগ্রামিং এর প্রতি ভালবাসাকে চিরতরে মাটিতে পুতে ফেলবো।অথবা...অথবা আমি চার বছরে নিজেকে ভবিষ্যতে সিএসই সম্পর্কিত বিষয়ে পড়ার জন্য যোগ্য করে তুলবো।(আমি যদিও জানি না সেটা কিভাবে!কারণ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইটসেলফ একটা ভয়ংকর সাবজেক্ট।ব্যাপক তার পরিধি।)অথবা মনেপ্রানে নিজেকে একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বলে মেনে নেব।আমার ফিজিক্সের কিছু বিষয় অসহ্য লাগে।এবং দুর্ভাগ্যক্রমে সেগুলোই সম্ভবত মেকানিক্যালের মূল বিষয়!
আমার ভাইয়ের এই খ্যাপাটে ইচ্ছার জন্য যখন সবাই তার দিকে বড় বর চোখ করে তাকায় আমি তখন তার কানে গিয়ে ফিসফিস করে বলি,মন খারাপ করিস না।বড়দের কাজই হচ্ছে বড় বড় চোখ করে তাকানো।বড়দের বড় চোখ দেয়াই হইসে এইজন্য!কারণ আমি জানি আমার ভাই যদি আমার মত বিজ্ঞানীও হতে চাইতো তাতেও তাদের তাকানো বন্ধ হতো না!এমনকি আমি কাল বুয়েটে ভর্তি না হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের সাবজেক্টের লোভে ভর্তি হয়েও যাই,তারা তাও আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাবে এবং বলবে,মেয়েটা কি ভুলই না করলো!এই ব্যাপারটা সম্ভবত লাভ ম্যারেজ এবং অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ পর্যায়ে চলে গেছে।পৃথিবীতে খুব কম মানুষই সম্ভবত আছে যারা নিজের পরিবারকে খুশি করে নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে পারে।যারা করে তারা সাহসী!বাকিদের বেশিরভাগ কেই বিয়ের পরে প্রেম হবে এই আশায় আমার মত নিরূপায় হয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হয়!কিন্তু যদি না হয়!তাহলে হয়তো বছরে সাতেক পড়ে আমি একজন বুয়েট পাস করা একজন সফল ব্যাঙ্কার হব!

সম্ভবত আমার এই লেখাটি দেখে নিজের অজান্তেই একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসবে।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৮
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×