somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মহত্যা

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আর তুমি আজকে রাতের মধ্যে সুইসাইড করো।তোমার মত জঘন্য মেয়ে পৃথিবীতে থাকলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।",মেয়েটা বলেছিল।

আমি সারাজীবন নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ফেলা মেয়ে।চিৎকার করে কাঁদা আমার স্বভাবে নেই।আমি দুর্ঘটনা দেখি,মৃত্যু দেখি, মানুষকে নিচে নামতে দেখি,মানুষকে হাসতে দেখি,গভীর রাতে কাঁদতে শুনি,সান্ত্বনা দেই এবং নিঃশ্বাস ফেলি।আমি এবার ভুল করে ফেলেছি ভীষণ।
আমি এবার কেঁদে ফেলেছি সবার সামনে।আমার মনে হচ্ছে আমার সামনে পিছনে ডানে বায়ে একগাদা মানুষ করুণা নিয়ে তাকাচ্ছে।আমার মন হচ্ছে ওরা ঝুঁকে পড়ে দেখতে চাইছে বারবার আমি কাঁদছি কিনা।আমি দুহাতে চোখ ঢেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছি দূরে কোথাও।আমার একটা ছোট্ট অন্ধকার ঘর প্রয়োজন।

"আর তুমি আজকে রাতের মধ্যে সুইসাইড করো।তোমার মত জঘন্য মেয়ে পৃথিবীতে থাকলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।",মেয়েটা বলেছিল।
সেই মেয়েটা যার কথা সকাল বিকাল জিজ্ঞেস করতাম আমি বন্ধুর কাছে,মেয়েটা কেমন আছে রে?কিংবা রাত তিনটার সময় বন্ধুর ফোন পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠে বসতাম,
-কি হয়েছে এত রাতে?
-রিনাকে বাসা থেকে খুব বকেছে।আমার ছোট্ট বউটা না খেয়ে আছে সারারাত।
-কেন?আবার ধরা খেয়েছিস বাসায়?
-হ্যাঁ।
তারপরেই টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে আমি আমার বন্ধুর দীর্ঘনিশ্বাস শুনতাম।সারারাত জেগে প্ল্যান বানিয়েছিলাম সেবার রিনার মন ভাল করে দেয়ার। দুঃখের বিষয় রিনা কোনদিন জানতেও পারেনি এসব।যখন জানতে পেরেছে বলেছে,আমি নাকি ক্যান্সারাস গ্রোথের মতো ওর জীবনে লেগে আছি। অতএব আমার সরে যাওয়া উচিত।আমি যদি রিনা হতাম আমি সম্ভবত তক্ষুনি অভিশাপ দিয়ে বসতাম তাকে।কিন্তু আমি রিনা না,আমি আমি।একা একা অন্ধকার ঘরে নিঃশ্বাস ফেলা ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না।আমার বরং আমার বন্ধুর ওপর অভিমান হয়েছে ভীষণ।ওইযে বললাম রাগ আর অভিমান করা ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না।সবাই বলবে আমার সরে যাওয়া উচিত ছিল।আমি সরে যেতে পারিনি।এবং ঠিক সে মুহূর্তে আমি বুঝতে পারলাম আমার জীবনে আমার বন্ধুটার জায়গা কতটুকু।আমি ভেবেছিলাম বন্ধুর ওপর জোর খাটানো যায়,অভিমান করা যায়,রাগ করলে দৌড়ে এসে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলা যায়,মিথ্যে কথা বলে পরক্ষণেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়া যায়।এবং আমি হয়তো ভুলও ছিলাম না।আমার ভুল ছিল এটাই আমি রিনাকে বন্ধু বানাতে চেয়েছিলাম।

ধরে নেই রিনার প্রেমিক এবং আমার বন্ধুর নাম দীপ।দীপের সাথে আমার বন্ধুত্ব প্রায় দুই বছরের।একটু হিসেব করে গুণলে এক বছর আট মাস।দীপ বলে,ছয় মাস বড়জোর তিন মাসের।আমার রাগ উঠে যায়।বললে পারিস তিনদিনের।দিপ হাসে,কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চা নাকি আমরা?ক্লাসমেট ছিলাম আমরা।আমি যদি পাগল হই,দীপ ছিল পাগলের সর্দার।কলেজ বাস ছাড়ার সময় প্রতিদিন কোথা থেকে যেন উড়ে চলে আসত।উদ্দেশ্য হাত নেড়ে বিদায় দেয়া।মাঝেমাঝে খুব বিরক্ত হতাম।এখন আমি মাঝেমাঝে ওকে হাত নেড়ে বিদায় বলার চেষ্টা করি। রিনা দৌড়ে এসে বলে,বেহায়া কোথাকার।আমি আবার রিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করি এবং আবার ব্যর্থ হই। আমি চুপিচুপি সরে আসা অন্ধকারের মানুষ।আমার বন্ধুর কাছে দৌড়ে গিয়ে ধাক্কা দেবার স্বভাব থাকা উচিত নয়।আমি জীবনে প্রথমবারের মতো কাউকে চুপচাপ চলে যেতে দিতে চাইনি। এটাই আমার একমাত্র ভুল ছিল। অবশ্য লোকে বলে আমার আরও একটা ভুল ছিল। আমি নাকি দীপের প্রেমে পড়েছিলাম!লোকে যেটা জানেনা সেটা হল দীপই কোন এক রাতে হঠাৎ বলে ফেলেছিল,"জানিস আমি না একটা ভুল করে ফেলেছি। তোকে ভালবাসি।"কথা শুনে আমার যে খুব একটা ভাবান্তর হয়েছিল তা নয়। আমি ভাল শ্রোতা। সেদিন হয়তো বন্ধুর কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু অনেকদিন পর বুঝলাম হয়তো কোথাও একটা আমিও ভালবাসি।হ্যাঁ এটা আমার প্রথম ভুল।সেই সম্ভবত প্রথম রাত যে রাতে আমি রিনার কথা জানতে চাইনি। জানতে চাইনি রিনা কেমন আছে অথবা রিনা ঘুমিয়েছে কিনা।দীপ এরপর প্রতি রাতেই বলেছে ভালবাসার কথা। রিনার সাথে ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাইনি আমি কক্ষনো। আমি আমার জীবন নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। দীপ বলত মাঝেমধ্যে,রিনা ওর ছোটবেলার ভুল। আমার তাতে খুব বেশি কিছু আসত যেত না। দীপ আমাকে ভালবাসে এবং আমি দীপকে ভালবাসি -এই বিশ্বাসেই আমি সুখী ছিলাম। বলা যায় আমি দীপকে ভালবাসি এই বিশ্বাসটাই আরও বেশি সুখী করেছিল আমাকে। কারণ আমার ধারণা ছিল আমার জীবনে ভালবাসার অস্তিত্ব থাকবে না। আমি একটা একাকী ভালবাসাবিহীন জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম সারাজীবন। কিন্তু আমি মরে যেতে চাইনি।অথচ রিনা আমাকে মেরে ফেলতে চায়।

সারাজীবন মেপে মেপে পা ফেলে আসা আমি ভুলের পর ভুল করে ফেলেছি। আমার তৃতীয় ভুল ছিল আমি রিনাকে আমার আর দীপের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দিয়েছিলাম। অবশ্য আমি জানিয়ে দিতে চাইনি। রিনা কেঁদেছিল খুব ফোন করে। বলেছিল,"আমাকে বল একবার প্লিজ। আমি সব নিতে পারি।"আমি ওকে বিশ্বাস করেছিলাম। পুরোটা বলেছিলাম। সেদিন রাতে সব শুনে ভেঙে পড়া রিনার কান্না থামাতে দীপ কেন ওকে বেশি ভালবাসে তার কিছু হাবিজাবি যুক্তিও দেখিয়েছিলাম। মেয়েটা কান্না থামিয়ে বলেছিল,এনকারেজড মাচ।দীপের অভিমান ছিল ঠিক সেদিন থেকেই।দীপ চায়নি রিনা জানুক সবটা। আমি চেয়েছিলাম কারণ আমার আর মেয়েটার কান্না সহ্য হচ্ছিল না। দীপের ভীষণ জেদ।ও সম্ভবত সেই মুহূর্তে ঠিক করে ফেলেছিল যতটা যন্ত্রণা দেয়া সম্ভব সে আমাকে দেবে। আমি এইখানে দাড়িয়েও চাইলে ফিরে আসতে পারতাম। আমার মনে হয়েছিল আমার প্রেমিক প্রয়োজন নেই,আমার শুধু আমার বন্ধুটাকে দরকার। এইখানে এসে আমি আবারও একটা ভুল করে বসলাম। আমি দীপের সাথে জেদাজেদীর মাঝে একটা প্র্যাঙ্ক রচনা করে বসলাম। এবং সেই নাটকের পর্দা ওঠার আগেই দৃশ্যপটে রিনার আগমন.আমি বুঝতে পারিনি যাকে এত কাছের বন্ধু ভাবতাম সে তার সাথে সামান্য মজার পরিণামও এত ভয়ঙ্কর হবে।আমি জানতাম আমার দীপকে যা খুশি বলবার অধিকার আছে. রিনা আজীবন সাইকো ধরনের মেয়ে।ভয়ঙ্কর ঝগড়ার একপর্যায়ে সে আমায় মরে যেতে বললো। আপনি হয়তো আমায় বলবেন,ওটা রাগের মাথায় বলা কথা। ও কথা গায়ে মাখতে নেই। কিন্তু আমি জানি রিনা এটাই চায়। কারণ আমি বেঁচে থাকলে ওর মনে হবে দীপকে ওর চেয়ে ভাল চেনে এমন কেউ আছে। আচ্ছা আমি কি আদৌ দীপকে চিনি?আমি তো এক দীপকে চিনতাম যে আমার অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার দিনগুলোতে একমাত্র আলো হাতে দাড়িয়ে বলতো ,এইযে আমি আলো হাতে দাড়িয়ে আছি তোর পাশে.আমাকে দিয়ে পোষায় না তোর?
সেই দীপ গতরাতে বলেছে,আমি যাতে বাসস্ট্যান্ড এ গিয়ে বাসের সামনে লাফিয়ে পড়ে মারা যাই। না আমার তাতে খুব একটা দুঃখ নেই।
আমার দুঃখ,আমি জানি যে ঠিক তার আগ মুহূর্তে দীপ নিজে বাসের চাকার তলায় লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে।
আমি দীপকে চিনতে ভুল করতে পারি,দীপের মৃতদেহ চিনতে আমার কক্ষনো ভুল হবে না।
জীবনে এই প্রথমবার আমি নিশ্চিত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×