somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কষ্টের বাস্তবতা

১১ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাসে জানালার পাশেই বসলাম, একটু পরই বোরকা পড়া,ভদ্র মেয়ে পাশে বসলো অতঃপর…

জানালার পাশেই একটি খালি সিটে আমি বসলাম ! কিছুক্ষন পরেই দেখি ২০ বয়সী একটা সুন্দরী মেয়ে উঠে বসলো পাশের সিটে । বোরকা পড়া, মাথায় হিজাব দেয়া। মেয়েটাকে এক নজর দেখলেই বোঝা যায় খুবই ভদ্র ও অবস্থা সম্পন্ন ঘরের

মেয়ে। এদিক ওদিক সিট খুঁজে না পেয়ে শেষে আমার পাশে এসে বসলো। হাতে একটা মোবাইল। দেখে বোঝা যায় অনেক দামী একটা মোবাইল। কিছুদূর যাবার পর বাস আবার জ্যামে পড়লো। মেয়েটা বলে উঠলো, অসহ্য জ্যাম ! আমিও হুম বলে সম্মতি জানালাম । এরপর টুকটাক কথা হতে লাগলো । বাসও চলতে শুরু করলো ! কথায় কথায় জানলাম, মেয়েটি ইংরেজিতে অনার্স করছে। খুবই ফ্রী ভাবে কথা বলছিলাম আমরা !

এয়ারপোর্টের ওখানে গিয়ে আবারও জ্যামে পড়লো বাস। বিরক্তিকর জ্যাম ! জ্যামের মধ্যেই বাসে ঠলো সাদা শার্ট পড়া কালো চেহারার মধ্যে বয়সী একটা লোক। অনেক দিনের পুরনো বোধহয় শার্ট টা ! ময়লা হয়ে আছে। তার হাতে অনেক গুলো নামাজ শিক্ষা বই। কাধে

কালো রঙের একটা ব্যাগ। লোকটা নামাজ শিক্ষা বই বিক্রি করছে ! লোকটা অনেকক্ষণ যাবৎ, বইতে কি কি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, সূরা, মাসলা ইত্যাদি আছে তা বর্ননা করলো। কিন্তু বাসের কেউ একটা বইও কিনলো না !

আমার খুব খারাপ লাগলো। ইচ্ছে করছিল লোকটাকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করি ! কিন্তু, লোকটাকে টাকা দিতে চাইলে যদি কিছু মনে করে। তাই দিলাম না ! একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, লোকটা বাসে ওঠার পর থেকে মেয়েটি আমার সাথে একটা কথাও বলেনি। মাথা নিচু করে মোবাইল টিপতেছে !

বাড়িতে নামাজ শিক্ষা বই থাকা সত্বেও শুধু মাত্র লোকটিকে সাহায্য করার ইচ্ছায় বিশ টাকা দিয়ে দুইটা বই কিনলাম। লোকটিকে পঞ্চাশ টাকার নোট দিলে সে ত্রিশ টাকা ফেরত দিল ! টাকা ফেরত দেবার পরেও দেখি সে পকেট থেকে আরও টাকা বের করছে ! একটা একশ টাকার নোট আর কয়েকটা দশ টাকার নোট !

আমার দিকে এগিয়ে ধরলো ! আমি তো অবাক। আমাকে টাকা দেবেন কেন উনি ? আমার ভুল ভাঙলো তার ডাক শুনে ! তিনি আমাকে না মেয়েটিকে টাকা দিচ্ছেন ! তিনি বললেন, ‘সোমা টাকাটা রাখো । কিছু কিনে খেয়ে নিও! তোমার মা বললো,তুমি সকালে না খেয়েই ভার্সিটিতে চলে আসছো। ‘ মেয়েটি লজ্জায় মরে যাচ্ছিল। সে অত্যন্ত রেগে লোকটার দিকে তাকালো !বললো,লাগবে না ! লোকটি জোর করে টাকাটা তার হাতে দিয়ে বাস থেকে নেমে গেল !

মেয়েটার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না ! রেগে লাল হয়ে আছে ! আমি কৌতুহল সামলাতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, আপনাকে টাকা দিল উনি কে ? মেয়েটা বললো, আমাদের বাড়ির পাশে থাকে ! আমি বললাম, কিছু মনে করবেন না। একটা কথা বলি, উনি কি আপনার বাবা ? মেয়েটি রেগে তাকালো আমার দিকে ! জবাব দিলো না !

এমন ভাব করলো যেন আমি মহা অপরাধ করে ফেলেছি ! আমি বুঝতে পারলাম তার রাগের কারন। তার বাবা একজন ভ্রাম্যমাণ হকার। বাসে বাসে ঘুরে বই বিক্রি করে। আর সে দামী পোশাক পড়ে ভার্সিটিতে যায় ! সে একজন শিক্ষিত মানুষ ! এজন্য সে বাবার পরিচয়
দিতে লজ্জা পায় ! এই ময়লা শার্ট পড়া লোকটাকে বাবা বলে স্বীকার করাটাকে সে ঘৃনার
চোখে দেখে !

সে চায় না দুনিয়ার কেউ জানুক এই হকার তার বাবা ! কত বড় বিবেক সম্পন্ন মানুষ সে ! যে লোকটা রাত দিন পরিশ্রম করে বাসে বাসে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বই বিক্রি করে মেয়েটাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছে। তাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছে।

নিজে কয়েক বছরের পুরনো একটা শার্ট পড়ে অথচ মেয়েটিকে দামী পোশাক, ব্যাগ, দামী মোবাইল কিনে দিয়ে তার সমস্ত চাওয়া পূরন করেছেন। সেই মানুষটাকে বাবা বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করছে মেয়েটির ! কত বড় নির্লজ্জ ! যে মানুষটা তাকে লালন পালন করে এত
বড় করলো, যারটা খেয়ে বেঁচে আছে তাকে বাবা বলে পরিচয় দিতে সমস্যা !

মেয়েটি হয়তো শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু তার ভেতরে বিবেক ও মানুষত্ব তৈরি হয়নি ! হকার লোকটির প্রতি শ্রদ্ধায় মনটা ভরে উঠলো ! লোকটা হাজার কষ্টের মাঝেও পরম মমতায় নিজের মেয়েটিকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলছেন ! আদর্শ বাবা মনে হয় একেই বলে।

অন্য কেউ হলে হয়তো অনেক আগেই মেয়েটিকে কোন শ্রমিকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিত। সেটাই বোধহয় ভাল হত! তাহলে তখন হয়তো মেয়েটি বাবার পরিচয় অস্বীকার করতো না ! যেই শিক্ষা আমাদের মধ্যে বিবেক ও মনুষত্ব তৈরী করে না, কি লাভ সেই শিক্ষা গ্রহন করে?

#জুমবাংলা হতে সংগৃহীত__
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:২২
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাগতম ইরান

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

ইরানকে ধন্যবাদ। ইসরায়েলকে দাত ভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য।

হ্যাঁ, ইরানকে হয়তো এর জন্য মাসুল দেওয়া লাগবে। তবে, কোন দেশ অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপে করবে আর সেদেশ বসে থাকবে এটা কখনোই সুখকর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×