somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হতদরিদ্রের দুর্দশা

২১ শে জুন, ২০২০ রাত ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নিজ জেলা শরীয়তপুর সদরে ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছোটভাই বরকত আর আমি বাইক সার্ভিসিং সেন্টারে দুইভাই দুটি চেয়ার নিয়ে বসে আছি।

হঠাৎ একজন মধ্য বয়সী মহিলা কোলে একটি ছোট বাচ্চা নিয়ে সামনে এসে খুবই কাকুতি-মিনতি করে বলছিলেন, ভাই আমার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি, অপরশন করতে অইবো, আমারে কিছু দেন।

প্রতিনিয়ত এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন আমাদের অনেকেরই হতে হয়। তেমনি আমিও পরেছি অনেক। আর স্বভাবগতভাবে এমন কাউকে পেলে আমি তার সমস্যার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাই। কিন্তু দুঃখ্যের বিষয় এ পর্যন্ত যত জনের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি কেউ সদুত্তর দিতে পারেনি! কারন তারা মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছিলো!

তাই আজও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে আগের অভিজ্ঞতার কথা মনে পরে, তাই আমি মহিলাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সাথে থাকা ছোটভাই পকেট থেকে কিছু টাকা দিয়ে, কৌতুহল বসত তার সমস্যার বিস্তারিত জানতে চাইলো।

মহিলা জানালেন তার স্বামীর হানিয়া নামক একটি রোগ হয়েছে যার জন্য তার অপারেশন করতে হবে। আর অপারেশন করতে ১০ হাজার টাকা চেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু উনি জানালেন বাড়ীতে থাকা দুটি ছাগল বিক্রি করে ৫ হাজার টাকা ডাক্তার সাহেবের কাছে দিয়েছে অপরেশনের খরচ বাবদ অগ্রীম এবং ১৫০০ টাকা খরচ করেছে বিভিন্ন টেষ্ট করার জন্য। আর সারাদিন হেঁটে মানুষের কাছ থেকে পেয়েছে ২০০ টাকা তা দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে কিছু রয়েছে।

বিস্তারিত শুনে আমরা দুইভাই তাকে অভয় দিয়ে বললাম আপনি হাসপাতালে যান আমরা আসতেছি। তখন উনি ওখানে দাড়িয়েই আমাদের একটি প্রাইভেট হাসপাতাল দেখিয়ে বললেন ঐ হাসপাতালে তার স্বামী ভর্তি! জানতে চাইলাম আপনি সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করেননি কেন?

উনি বললেন.. আমারে গোসাইরহাট হাসপাতাল থেকে একটা কাগজ দিয়া কইছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আইতে তহন আমাগো ঐহানের এক মহিলা আমারে এই হাসপাতালে দিয়া কইছে এইডাই সদর হাপাতাল। আর আমার থেকে ৫০০ টাকাও নিছে।

কথা শুনে অবাক হলাম, এমন হতদরিদ্র মানুষের সাথেও মানুষ চলচাতুরী-ধোকাবাজী করতে পারে!! ঐ মহিলার খোঁজ নিয়ে জানলাম উনি একজন দালাল। যার কাজ রোগীদের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী এনে দেয়া।

আর কথা না বাড়িয়ে কাজ শেষ করে দুইভাই উক্ত প্রাইভেট হাসপাতালে চলে গেলাম। গিয়ে স্টাফদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম অপারেশনের জন্য অগ্রীম অর্থ গ্রহণকারী ডাঃ সাহেব ওখানেই আছেন। একটু অপেক্ষা করলাম। স্টাফদের কাছেই জানতে চাইলাম তার যে সমস্যা তা কি সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার মাধ্যমে উন্নতি হওয়া সম্ভব না? তারা জানালেন হ্যা অবশ্যই এখানে যে ডাক্তার তার অপারেশন করবেন উনি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালেরই একজন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, আর উনিই এই অপারেশ সদর হাসপাতালে করেন।

বেশী কিছু না ভেবে তাদের বললাম আমরা এই রোগী সরকারী হাসপাতালেই ভর্তি করবো, তাদের রিলিজ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। বেশী কথা বলার সময় ছিলোনা তাই আর বাড়াইনি। ডাক্তার সাহেব ৫ হাজার টাকা ফেরত দিলেন। তারপর ডাঃ সাহেবের সাথে কথা বললাম তিনি যেন এই রোগীকে সদর হাসপাতালে একটু ভালো করে চিকিৎসা করেন এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় গরিব-অসহায় রোগীদের যে অনুদান দেয় তাতে সুপারিশ করে একটু সহযোগীতা করার চেষ্টা করেন। ডাক্তার সাহেব অভয় দিলেন।

৫ হাজার টাকা রোগীর স্ত্রীকে দিয়ে গ্রহণ করালাম। স্টাফরা জানালেন এ পর্যন্ত ৪৮০ টাকার ঔষধ দিয়েছেন তারা রোগীকে। তা নিজেরাই পরিশোধ করলাম। তারপর স্বামী-স্ত্রী দুজনকে রিস্কায় উঠিয়ে দিলাম আর আমরাও বাইক নিয়ে পিছনে পিছনে চললাম শরীয়তপুর সদর সরকারী হাসপাতালে।

সদর হাসপাতালে পৌঁছে রোগীর স্ত্রীর কাছে তাদের বাসস্থল গোসাইরহাট হাসপাতালের ছাড়পত্র চাইলাম। উনি জানালেন তা সেই মহিলা নিয়ে গেছে!
যাইহোক কিছু পরিচিত ভাইদের সহযোগীতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করতে সক্ষম হলাম এবং অপারেশনও দু-একদিনের মধ্যেই হবে এই আশ্বাস পেলাম। রোগীকে বেডে পৌঁছে দিলাম। আসার সময় রোগীর স্ত্রী, মধ্য বয়সী ঐ বোন ফেরত পাওয়া ৫ হাজার টাকা আমাদের দিয়ে বলছিলেন ভাই এত টাকা আমার কাছে রাখলে হারাই যাইতে পারে এইডা আপনাগো কাছে রাহেন আমি লাগলে নিমুনে। অবাক হলাম কতটা সরল মনের মানুষ হতে পারে। তাকে বুঝিয়ে বললাম আপনার এই ছোট ব্যাগটায় টাকাটা রেখে দেন। এখানে আপনার তেমন কোন খরচ হবেনা। সব সরকারীভাবেই বহন করা হবে। আর আমাদের মোবাইল নম্বর দিয়ে আসলাম যেন কোন সমস্যা হলে আমাদের ফোন দিয়ে জানায়।

এখন আমার প্রশ্ন হলো ঐসব ধোকাবাজ-দালাল প্রকৃতির মহিলাদের পরিচালনাকারী কারা?
তারা কেন সরকারী হাসপাতালে রেফার করা রোগীকে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালের দিকে নেয়ার চেষ্টা করে? এই নির্দেশনাই বা কাদের থেকে পেয়ে থাকে তারা?

জানিনা এমন কতজন ধোঁকাবাজ মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের আশেপাশে সরল মানুষগুলোকে বোকা বানাতে, জানিনা এদের প্রতারণার শিকার হয়ে কত মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে!!

একটু চিন্তা করে দেখুনতো গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা হতদরিদ্র এই সহজ-সরল মানুষগুলোকে কত বড় ধোঁকা দেয়া হচ্ছে।

আর কিছু বলতে চাইনা শুধু শেষ কথা বলতে চাই যারা এই ধরণের জঘন্য কর্মকান্ডের সাথে জড়িত আছেন.. আপনারা যেমন মানুষের জীবন নিয়ে খেলবেন, আপনাদের জীবন নিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ খেলবে।।

[বিঃদ্রঃ ধোঁকাবাজ-দালাল প্রকৃতির মহিলার খোঁজ নিচ্ছি শিঘ্রই আইনী আশ্রয় নেবো ওনার বিরুদ্ধে]

#এমপিকে
২১/০৬/২০২০ইং
ছবিটি সম্প্রতি ফেনী শহরের একটি রাস্তার বেহাল অবস্থা এবং হতদরিদ্রদের দুর্দশার চিত্র। তবে এই পোস্টে প্রতীকী চিত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৪৩
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×