somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসী সময়

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তার ঘুম ভেঙ্গেছে অনেকক্ষণ হল। সে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছে। উঠতে ইচ্ছে করছেনা। জানালা দিয়ে এই সকালবেলায় বেড়ালের মতো রোদ আসছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। তার মাথায় ঘণ্টাখানেক ধরে একটা লাইন ঘুরছে ‘ঘুম ভাঙার পর স্বপ্নগুলো হাতের মুঠোয় ধরতে পারিস তুই?’। এটা কি কোন কবির লেখা না কেউ তাকে বলেছিল ?। ইদানিং ভেঙ্গে যাচ্ছে এলোমেলো স্রোতের মতো সবটা সময়। আগে নীরস দুপুরে গল্প বই নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করতো। এখন করেনা। চেনা সব মানুষকে অচেনা লাগে। জীবনে একবার ছায়া নেমে এলে বারেবার ছায়ার পতাকা উড়ে। কে জানে এটাই হয়তো শুরু।

কিছুক্ষন আগে নীলুফার চায়ের কাপ রেখে গেছেন। এখন চা প্রায় ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। নীলুফার জানেন তার মেয়ে আগুন গরম চা পছন্দ করে। একটু আগে তিনি আবার রুমে ঢুঁকে দেখলেন মেয়ে চায়ে এখনো চুমুক দেয়নি। মেয়ের ঘুম ভেঙ্গেছে দু’ঘণ্টা’র মতো। সে বিছানায় পড়ে আছে এখনো। সন্তানরা বোঝেনা তাদের কিছু হলে মায়েরা আগে বোঝেন। মনীষা জেগেছে দু’ঘণ্টা আগে সেটা তিনি জানেন। মনীষা হয়তো জানেনা। পৃথিবীর সবকিছু সবার কাছে লুকোনো যায় কিন্তু আল্লাহ ও মায়ের কাছে যায়না। মায়েদের স্রষ্টা অন্যভাবে তৈরি করেছেন। কীভাবে নীলুফার জানেন না। তার মা’ও একসময় তাকে বুঝে ফেলতো। তার মায়ের লেখাপড়া ছিলোনা। একবার সে তার এক সহপাঠীর দেয়া প্রেমের চিঠি পড়ছিল। এমন সময় তার মা রাবেয়া বেগম ঘরে ঢুঁকে বললেন ‘মা তোর কি হয়েছে? তুই কেঁপে উঠছিস কেন? কেউ কি কিছু বলেছে?’। নীলুফার অবাক হয়ে চিঠি লুকিয়ে তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েছিল।
সবখানে ফাঁকি দেয়া যায়। মা অশিক্ষিত হলেও ফাঁকি দেয়া যায়না। কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি তার মেয়ের ব্যাপার বুঝতে পারছেন না। তার মেয়ে কি কাউকে পছন্দ করে ? কাউকে চায় ? মেয়েদের বৈশাখী ঝড়ও এলোমেলো করতে পারেনা। কিন্তু কিছু ছেলেরা ঝড়ের মতো এসে তাদের যুক্তির জগত ভেঙ্গে দিতে পারে।

মনীষা এই মুহূর্তে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা টিকটিকি দেয়াল ধরে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে আশ্চর্য ব্যাপার। পৃথিবীতে অনেক অদ্ভুত ব্যাপার আছে এমন। তার মা নীলুফার সংসার ও ছেলেমেয়ে ছাড়া কিছু ভাবতে পারেন না। তার বান্ধবী অবনী প্রেম ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না। তার বন্ধু আনিস পড়ালেখা ছাড়া কিছু ভাবতে পারেনা। অবনী আনিসকে পছন্দ করে , আনিসও অবনীকে পছন্দ করে। আজ তাদের বিয়ের হওয়ার কথা। কোর্ট ম্যারেজ। এই বিয়েটা হয়ে গেলে মনীষার বুক থেকে একটা পিরামিড সাইজ দীর্ঘশ্বাস বের হবে। অসম্ভব হলেও সত্যি আনিসের প্রতি তার ভালোবাসা আছে। সে কখনো বোঝেনি। আনিসের বিয়ের খবর শুনে বুঝতে পেরেছে। তার বুকের ভেতর ২৪ বছরের জীবনের রেকর্ড ভাঙা তুষারপাত চলছে। পরিবর্তনের সংবাদ সবসময় আনন্দময় নয়। অনেকে বলেন ‘কষ্টের অপর নাম স্মৃতি’। হাজার বর্ষা রাত কি মনীষা এই কষ্ট বুকে নিয়ে ঘুরবে ?।তার দুবছর আগের জন্মদিনে পূর্ণেন্দু পত্রীর একটা বই উপহার দিয়েছিলো আনিস। বইয়ের উপর সে লিখে দিয়েছিলো -

‘ঘুম ভাঙার পর স্বপ্নগুলোকে হাতের মুঠোয় ধরতে পারিস তুই? , আমি কখনো পাঠ্যবইয়ের বাইরে বই পড়িনি। একদিন চোখ মেলে তাকালাম দেখি তুই, তোকে বইয়ের মতো পড়তে খুব ইচ্ছে হয়’। – আনিস

মনীষা একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে প্যারিস যাবে। পৃথিবীর শিল্প সাহিত্যের মিলনমেলা দেখবে। আত্মার চোখ খোলার জন্য প্যারিস যেতে হবে। পৃথিবীতে কতো কষ্ট আছে। কিন্তু প্যারিসের দেয়ালে দেয়ালে আছে কষ্টের ঐশ্বর্য। এদের কষ্টের কাছে কি সামান্য মন ভাঙা কোন কষ্ট হলো?। তার এখন একটা গান শুনতে ইচ্ছে করছে। তার মা নীলুফার বেশ ভালো গান করে। তাঁকে ডাকা যাবেনা। এমন একটা গান লাগবে যেখানে কষ্ট আছে , প্রকৃতি আছে , ভালোবাসা আছে , জিজ্ঞাসা আছে। আছে কি এমন কোন গান ?

যখন থেমে যায় সব সঙ্গীত
যখন নেমে আসে নীরবতা
আমি শুনতে চাই
প্রজাপতির চিৎকার
আমি জানতে চাই
কে দিয়েছে কাকে
কতোটুকু ভালোবাসা ?

যখন প্রবল বৃষ্টিতে বসে পাশাপাশি
এক জোড়া চড়ুই করে উষ্ণতা ভাগাভাগি
আমি দেখতে চাই আবেগের রংধুনু।

যখন ফুরিয়ে যায় সকল ব্যস্ততা
যখন মনের আঙিনা শুধু স্মৃতিভরা
আমি পেতে চাই নতুন জীবন।



৫/১০/২০১৪

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×