ফুল দিয়ে আঁকা বাংলাদেশের মানচিত্রের মধ্যখানে দক্ষিণ দিকে মুখ করে বসে আছেন একজন। হাতে জাতীয় পতাকা। সামনে একটি মোমবাতি ও ম্যাচের বাক্স। মানচিত্রের মাঝখানে বসে থাকা লোকটির বুকে ঝুলছে একটি লেখা—‘অপেক্ষা’।
শাহবাগের জনসমুদ্র থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যেতে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে এ দৃশ্যটি গত কয়েক দিন ধরে চোখে পড়ছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে এভাবে নীরব প্রতিবাদ জানিয়ে চলেছেন চারুকলার সামনের ফুটপাতের ব্যবসায়ী শাহাদাত্। তিন দিন ধরে তিনি নিজের ব্যবসা বন্ধ রেখে এভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তিনি অপেক্ষা করছেন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির জন্য।
শাহাদাত্ জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তিনি এভাবে বসে বা শুয়ে থাকেন। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর এই প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে চান।
নিজে ব্যাগ তৈরি করে শাহবাগের ফুটপাতে সেগুলো বিক্রি করেন শাহাদাত্। শাহবাগে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি তাতে শামিল হন। ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন; কিন্তু তিন দিন ধরে নিজের ব্যবসা বন্ধ রেখে চালিয়ে যাচ্ছেন ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ।
ব্যবসা বন্ধ করে কেন এই প্রতিবাদ করছেন, জানতে চাইলে শাহাদাত্ বলেন, ‘ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে, তা সাময়িক। নয় মাস ধরে কত কষ্ট করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা, আমরা তো কিছু করছি না। শুধু বসে আছি। কেউ আমাদের তাড়াও করছে না। মুক্তিযোদ্ধারা তো গুলি খাইছে, গুলি তাদের তাড়া করেছে।’
মোমবাতিটি কেন জ্বালানো হচ্ছে না—জানতে চাইলে শাহাদাত্ বলেন, ‘আমাদের জ্ঞানের আলো এখনো জ্বলেনি। যেদিন জ্ঞানের আলো জ্বলবে, সেদিন আমার মোমবাতি জ্বলে উঠবে।’ তিনি মনে করেন, যেদিন যুদ্ধাপরাধীরা তাদের কৃতকর্মের জন্য সাজা পাবে, সেদিনই জ্ঞানের আলো জ্বলবে। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। সেদিকে মুখ করে তিনি বসে আছেন তরি আসবে বলে। তিনি অপেক্ষায় আছেন তরির। তরি সেদিনই আসবে, যেদিন একাত্তরের রাজাকারেরা ফাঁসিতে ঝুলবে।
Click This Link