somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ছোট বেলা।

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেয়ালগুলো ছিলো স্যাঁতসেঁতে নোনাধরা, সে দেয়ালে ছিলো সস্তা ডিসটেম্পার, বছর দুবছরে তার রঙ পালটানো হতো, কখনো টিয়া কালার, কখনো হলুদ আবার কখনো বা সাদা। তখনো আমাদের মেঝেতে টাইলস ওঠেনি, টয়লেটে ছিলোনা হ্যান্ড শাওয়ার, ছিলো না হাই কমোড। তখনো থাই গ্লাসের চল হয়নি, আমাদের চৌকাঠ ছিল কেরোসিন কাঠের, আমাদের পর্দাগুলো ঝুলতো নাইলনের টানটান দড়িতে। আমাদের বাসার সামনে বাগান বিলাস, পাতাবাহার কিংবা মানিপ্ল্যান্ট গাছ থাকতো, কখনো শখ করে এনে লাগানো হতো দুয়েকটা বিদেশী ফুলগাছ, বিচ্ছিন্ন ডালিয়া কিংবা চন্দ্রমল্লিকা। আমি শুধু আমার কথা বলছিনা, আমি লেট এইটিজ কিংবা আর্লি নাইন্টিজের সমস্ত মধ্যবিত্ত সমাজের কথা বলছি।

আমরা লম্বা তারের দুইপাশে কন্ডেন্সমিল্কের কৌটা লাগিয়ে হ্যালো হ্যালো বলে অপর পাড়ের কথা শুনতে পাওয়ার ভান করতাম, প্রতিবেশীর বাসার ল্যান্ডফোনে অন রিকোয়েস্টে আসা ফোন ধরতে যেতাম খানিকটা সংকুচিত হয়ে। তখনো ভিডিও গেমস এসে আমাদের বিকেলের দখল নেয়নি, আমরা বিকেলে খেলতাম গোল্লাছুট, বরফপানি কিংবা কুতকুত, ছুটির দিনের সকালে আমরা সকালের পড়া শেষ করে খেলতে বসতাম ‘ধনী হবার মজার খেলা’ অথবা লুডু কিংবা দাবা। শীতের দিনে খেলতাম ব্যাডমিন্টন, নাহ তখনো নেট কিংবা বাতি লাগিয়ে খেলা শুরু হয়নি, কেউ কাউকে হারানোর মনোবৃত্তি নিয়ে নয়, আমরা দুই সহ খেলোয়াড় মিলে চেষ্টা করতাম যত বেশী সময় সম্ভব কর্কটাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে রাখতে।

আমাদের ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ছিলো না, আমরা রাতের পড়া শেষ করে আমাদের শাদাকালো টিভির এন্টেনাটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটু স্পষ্ট ছবি দেখার আশা করতাম; আলিফ লায়লা, রবিনহুড, নিউ এডভেঞ্চার অফ সিনবাদই ছিলো আমাদের একমাত্র ডিজিটাল বিনোদন। আমরা সেই পাঁচ মিনিটের বিজ্ঞাপন বিরতিতেই অসহ্যবোধ করতাম, ছোট মাথায় বুঝে উঠতে পারতাম না টিভিওয়ালারা এইরকম দুমুখো কেন- একবার বলে পেপসোডেন্ট টুথপেস্টই সেরা, আবার বলে কোলগেটের উপরে নাকি কোন টুথপেস্ট নাই!! আমরা গল্পের বই পড়তাম, টেক্সট বইয়ের ভেতরে রেখে, ডিমলাইট জ্বালিয়ে, টয়লেটে গিয়ে লুকিয়ে; তিনগোয়েন্দা, কিশোর ক্লাসিক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই। ফেসবুকের নীল দুনিয়া তখনো আমাদের সর্বস্ব কেড়ে নিতে পারেনি!!

আমরা দুপুরে খেয়ে একটু ঘুমাতাম, বিকেলের আযান পড়লে খেলতে বের হতাম, সন্ধ্যার আযানে বাসায় ফিরতাম। আমাদের মারামারি ছিলো অল্প একটু ধাক্কাধাক্কি আর বন্ধুর মায়ের কাছে বিচার দেয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ, আমরা মাঝে মাঝে রাগ করে আড়ি নিতাম, আবার দুয়েকদিনের মাঝেই তর্জনী বাঁকা করে মিলিয়ে মিল হয়ে যেতাম। কোথাও যাওয়ার আগে আমরা মাথায় অল্প একটু সরিষার তেল দিতাম, অল্প একটু পাউডার মেখে চুল আঁচড়ে নিতাম। প্রতিবেশী কিংবা দূরের আত্নীয়স্বজনের বিয়েতে আমরা গ্লাস সেট কিংবা ফিরনি সেট উপহার দিতাম, দই দিয়ে বিয়ের খাবারের ফিনিশিং দিয়ে কসকো সাবান দিয়ে হাত ধুইতাম। আমরা হাফ প্যান্টের সাথে শার্ট ইন করে পড়তাম, আমাদের পায়ে পায়ে ছিলো জাম্প কেডস্!!!

আমাদের বিকেলগুলো সোনালী ছিলো, খোলা মাঠে পড়ন্ত বিকেল আমাদের সামনে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে রাতে পরিণত হতো, আমাদের বিকেলগুলো অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ছিলো, মনে হতো চোখের পলকে যেন আরেকটা বিকেল শেষ হয়ে গেলো। আমরা সন্ধ্যার আযানে বাসায় যেতে যেতে পরের বিকেলের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম, আজকের খাওয়া গোল্লাটা পরেরদিন শোধ করার প্ল্যান করতাম... রইলো না... রইলো না... সেইযে আমার নানা রঙের দিনগুলি...


২০১৫ এর শেষের দিকে তোলা কক্সবাজারে।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×