somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেম্পলার এবং ফ্রীম্যাসন by হারুন ইয়াহিয়া (৭ম কিস্তি)

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম কিস্তি to ৬ষ্ঠ কিস্তি


সম্পদ বৃদ্ধির সাথে সাথে টেম্পলাররা তাদের কাজ সম্পাদনের জন্য ঘুষ প্রয়োগ শুরু করল। ঘুষ প্রদান তাদের কাছে একটা উপযোগী পন্থা হিসেবে প্রকাশ পেল যা দিয়ে তারা প্রায় সকল ধরণের কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম হল। যখন তারা কোথাও স্থায়ী হতে মনঃস্থির করত, তারা সহায়তার ছদ্মাবরনে সেখাঙ্কার শাসককে ঘুষ প্রদান করত। এর মাধ্যমে তারা স্থায়ী হওয়ার পাশাপাশি বেশ অনেক সুবিধাও আদায় করে নিত। রাজা রিচার্ড ১ এর মৃত্যুর পর টেম্পলাররা তার উত্তরাধিকারী রাজা জনকে অশ্ব ও অর্থ সম্পদ ঘুষ হিসেবে দিত। ইউরোপের দুর্বল অভিজাত সম্প্রদায়ের প্রভাবকে কমদামে এবং সস্তা উপহারে কিনতে পেরে টেম্পলাররা উৎসাহী হয়ে উঠে এবং এভাবেই তারা ইউরোপজুড়ে আরও সহজে চলাচল করতে লাগলো। ঘুষ দেওয়ার মত নেওয়াতেও টেম্পলাররা অভ্যস্ত হয়ে পড়ল। এভাবেই তারা চার্চের দেওয়া সুযোগ সুবিধার অপব্যবহার করা শুরু করে।
যেসব অভিজাতেরা যুদ্ধে জড়াতে চাইতো না তারা টেম্পলারদেরকে বড় পরিমাণে চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের পক্ষে যুদ্ধ করাতো। সমাজচ্যুতরা একই পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের হারানো স্থান ফিরে পেত। আইনের চোখে দাগী অপরাধীরা আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য টেম্পলারদের দলে যোগ দিত এবং দায়মুক্তি লাভ করত।
সুস্পষ্টভাবেই তারা চার্চের দেওয়া সুবিধার অপব্যবহার করছিল যা সময়ে সময়ে ভ্যাটিকানকে ক্রোধান্বিত করত। ১২০৭ সালে Innocent III ঘোষণা দেয় যে টেম্পলাররা মাত্রাছাড়া অহংকারী হয়ে উঠেছে এবং তাদের পদের অপব্যবহার করছে। পোপ অভিযোগ করে যে অর্থের বিনিময়ে যে কেউই এই সংঘের সদস্য হতে পারে এবং চার্চ অস্বীকারকারী, বিতাড়িত ও পাপের পাহাড়ে আরোহণকারীরা পবিত্রভূমিতে তাদের পা রাখছে। পোপ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানায়।
নির্মাণ, আবাসন এবং পরিবহণ ব্যবসায় হাতেখড়ির পর এসব ব্যবসা নিয়ে জুয়া শুরু করে ফলে এসব থেকে তাদের উপার্জন বাড়তে থাকে।এছাড়াও তারা ব্যবসার পণ্য এবং খনিজ পদার্থ তাতে উচ্চমানের আকরিকের প্রলেপ দিয়ে জুয়ার বস্তু বানিয়ে ফেলে।
তাদের এই কর্মকাণ্ডের কারণে ইংল্যান্ডে জমিজমার দাম পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশী বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও তাদের বাণিজ্যিক সুবিধা থাকার কারণে তারা ইংল্যান্ডে উৎপাদিত উল সারা ইউরোপে বাজারজাত করত।

খ্রিস্টবাদের নামে সংগ্রামের কথা বলে তারা এমনকি গরিব লোকজন থেকেও টাকা আদায় করত। এসব তাদের অর্থের উৎস বাঁচিয়ে রাখার এক অপকৌশল মাত্র। Council of Troyes এর পর তারা পরবর্তী তিনটি যুদ্ধে পরাজিত হয়। তারা তাদের অতিরঞ্জিত বীরত্বগাথার বর্ণনার মত অজেয় ছিল না। তারা মূলত নিরীহ ও নিরুপায় মানুষ হত্যা করত। কিন্তু যখন যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া ছাড়া তাদের সামনে কোন পথ খোলা থাকতো না তখন তারা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পরাজিত হত কারণ তারা তাদের অসুদুপায়ে লব্ধ অর্থ অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে ব্যয় না করে জমিয়ে রাখতো।
এইসব গুপ্ত কর্মকাণ্ড ছাড়াও, টেম্পলাররা দাস ব্যবসা এবং মানব পাচারের মত কাজ সংগঠিত করত। যখন দাস ব্যবসায়ে টেম্পলারদের সংশ্লিষ্টতা প্রকাশিত হয় তখন পোপ তা নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হন। যদিও সেসময়ে দাস ব্যবসা অবৈধ ছিল না তথাপি খৃষ্টানদের উপর খৃস্টান দাস নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তখন টেম্পলাররা ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে নিরীহ মুসলিমদের অপহরণ করত এবং যুবকদেরকে জোরপূর্বক দাসত্ব করতে বাধ্য করা হত। তারা হয় ঐ অপহৃত মানুষগুলকে ইউরোপে দাস হিসেবে বেচে দিত নয়ত তাদের নিষ্ঠুরতার শিকার হত। রোমান সম্রাট Frederic II যিনি মুসলমানদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন, পোপের সহযোগিতায় টেম্পলারদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন। তিনি অনেক মুসলিম দাসকে মুক্ত করেন এবং এর ফলে তিনি টেম্পলারদের ঘৃণার পাত্রে পরিনিত হন।
শুধু মুসলিম দাস ব্যবসাই টেম্পলারদের জন্য যথেষ্ট ছিল না এছাড়াও তারা গ্রীক, বুলগেরিয়ান, রাশিয়ান এবং এমনকি রোমানিয়ান অর্থোডক্স খৃস্টানদের কেও (যাদেরকে তারা মুসলিম হিসেবে চালিয়ে দিত) দাস হিসেবে বেচাকেনা করত। পোপ Gregory IX টেম্পলারদের এইসব অনৈতিক কাজের ব্যাপারে সিরিয়ার বিশপ এবং টেম্পলারদের গ্র্যান্ডমাস্টারের কাছে অভিযোগ করেন। তারপরও তারা তাদের এই অন্যায় কাজ চালিয়ে যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি আফ্রিকার অধিবাসীরা অর্থ উপার্জনের এক নতুন ক্ষেত্র হিসেবে সামনে আসে।

এইসব অনৈতিক কাজ ছাড়াও তারা নোংরা রাজনৈতিক খেলা শুরু করে। অসুদুপায় অবলম্বন করে তারা ধনী সংগঠনে পরিনিত হওয়ার পাশাপাশি লোকজনের কাছে এক মূর্তিমান আপদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তাদের নিষ্ঠুর কলাকৌশলগুলো ধর্মীয় আচ্ছাদন থেকে বেরিয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের যন্ত্রনার কারণ হয়ে দাড়ায়। তাদের অদ্ভুতুড়ে বিশ্বাস এবং জীবন পদ্ধতি তাদের খ্যাতিকে ধূসর করার সাথে সাথে খৃস্টানবাদের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাড়ায়।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×