somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোমা অথবা সুস্বপ্ন-দুঃস্বপ্নের গল্প….

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাশাপাশি ঘরে আমি আর আমার সহদর। সময় তখন প্রায় ভোর রাত ৪ টার মতো। বিছানায় শুয়ে আমার বারবার মনে হচ্ছিলো একটু তার কাছে যাই। গিয়ে বলি- সময়টা ভালো যাচ্ছে না, ভালো লাগছে না কিছুই। কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো কোনো একটা বিপদ আসবে আসবে বলে মন বলছে। কাঁধে হাত রেখে বলি- সাবধানে থাকিস। কিন্তু তেমনটা বলতে পারছিলাম না সে রাতে।

সে রাতে বেশ গরম পড়ছিলো আর এলাকার কুকুরগুলো এমন হিংস্রভাবে ডাকছিলো যেনো ডাকতে ডাকতে ঘরে ভেতর ছুঁটে আসছে আর এসেই তার সূঁচালো দাঁতগুলো দিয়ে কামড়ে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গ টেনে হিঁচড়ে খেয়ে ফেলবে। মনে হচ্ছিলো পুরো ঘর থকথকে রক্তে ভরে থাকবে। আর পরদিন পত্রিকার আট কলাম জুড়ে শিরোনাম হবে- ‘বুনো নয়, শহুরে কুকুরের কামড়ে দুই যুবকের ছিন্ন ভিন্ন লাশ উদ্ধার’।

অদ্ভত এসব কল্পকাহিনী ভাবতে ভাবতে সে রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আমার ঘুমে তখন ফজরের আজান হয়তো বাজছিলো। কিন্তু আমি তো ঘুমে। কিছুই শুনছিলাম না। নিশ্চই ঘুম থেকে নামাজ যে উত্তম এই সত্য আমার কাছে তখন সত্য মনে হচ্ছিলো না হয়তো। হয়তো এর চেয়ে কোনো সত্যের সন্ধান আমি পেয়েছিলাম সে রাতে। কেননা, ‍ঘুমের ঘোরে যে স্বপ্ন আমাকে তাড়া করছিলো এর চাইতে বড় সত্য আর কীবা হতে পারে।

আমি দেখলাম বহুদিন বহুরাত পর আমার প্রাক্তন প্রেমিকা আমার সামনে হাজির হলো একটাই প্রশ্ন নিয়ে। প্রশ্ন একটা হলেও অত্যন্ত সত্য সে প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছিলো, ঠিক সেসময় তার কাছে পানি চাইতেই আমার মুখে পেশাব করে দিয়ে বললো ‘নে পানি খা’। সে কী বিশ্রী স্বাদ আর গন্ধ। তখন পুরো ঘরকে আমার দোজখ মনে হচ্ছিলো। না এর আগে দোজখে যাবার সুযোগ না হলেও প্রতি জুম্মায় দোজখের যে কাল্পনিক বর্ণনা হুজুর করতেন তার চাইতেও বেশি কিছু মনে হলো সে মূহুর্তটাকে। আমি সোমার কাছে প্রশ্ন করলাম কী চাও এতোদিন পর?

সোমার রক্তাক্ত চোখের দিকে আমি তাকাতে পারছিলাম না। এতোটা ক্রোধ তার চোখে জ্বলজ্বল করছিলো যে তাকানোটা খুবই কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সে রাতে, হয়তো ঘুমের ঘোরে। তবু তার ডান পায়েল নুপুরের দিকে তাকিয়েই আবার প্রশ্ন করি, কী চাও তুমি? সোমা কিছু বলে না। আমি আবার জানতে চাই, কী চাও বলছো না কেনো?

এবার সোমা মুখ খোলে। প্রথম প্রশ্ন, তুমি সেদিন বসলে না কেনো? আমি জানতে চাই, ‘কোনদিন’? ওই যে শেষদিন। এতো করে বললাম যেও না। থেকে যাও। তুমি আসলে কোথায় যাচ্ছিলে? আমি তো সেই থেকে একাই আছি। এতোদিন পর সোমার এমন প্রশ্নে আমি বিচলিত হই। উত্তরে বলি, তুমি তো একা নও। শুনেছি তোমার নতুন সংসার হয়েছে। এটা আমাদের উভয়ের জন্যই ভালো হয়েছে। আমাদের রাস্তা ভিন্ন, চিন্তা ভিন্ন সবই ভিন্ন ছিলো। তাই এ সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাওয়ার কোনো মানে ছিলো না। সদ্য যৌবনে পা দেয়া প্রেম খুব কমই সূর্য দেখতে পেয়েছে। তুমিতো যেমন চেয়েছো তেমন পেয়েছো বলে আমাকে জানিয়েছিলে। কিন্তু আজ আমার কাছে এমন প্রশ্নের কোনো মানে আছে কী?

সোমা আরো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে মুখটা আমার মুখের খুব কাছে এনে বলতে থাকে আমার শাড়ি তুমি দেখতে পাচ্ছো না? হ্যা দেখতে পাচ্ছি বলেই, যে শাড়িকে এতোক্ষন হালকা নীল রঙের জামদানি ভাবছিলাম সেটিই নিমেষে ধবধবে সাদা হয়ে গেলো। কেনো এমন হলো জানি না। কিন্তু আমি সে প্রশ্নে না গিয়ে আমি বললাম, হ্যা কাল বৈশাখ সাদা শাড়িই পরবে। এমনটাই তো কথা ছিলো। কিন্তু লাল পাড় নেই কেনো? উত্তরে সোমা জানায়, সিঁদুর মুছে গেছে গত রাতে।

আমি এই অপ্রস্তুত বাক্যে স্থির হয়ে যাই আরো কিছু মূহুর্তের জন্য। তখন আর গরম লাগছিলো না। বাতাস বাতাস আর বাতাস। দক্ষিনের জানালা, পশ্চিমের জানালা, পূবের জানালা, উত্তরের জানালা সবটা দিয়েই শনশন করে বাতাস ঢুকছিলো। এক বাতাসের শব্দ ছাড়া কিছুরই শব্দ নেই। কিন্তু কিভাবে যেনো কাট টু শটে আমরা দু’জন ঘর ছেড়ে সাগরের পাড়ে চলে যাই।

সোমার পরনে বেগুনী রঙের জামদানি এবার। আমার গায়ে পাতলা খদ্দরের সাদা ফতুয়া। আমরা স্বপ্নের ভিতরে আরেক স্বপ্নে প্রবেশ করি। চুল তার উড়ছিলো। খালি পা। ডান পায়ে নুপুর আর আমার ডান হাত ধরা। চুড়ি ছিলো হাতে। ব্লাউজের বিশাল গলার কারনে সোমার পিঠে যে রোদ প্রতিফলিত হচ্ছিলো সে রোদ আমার শরীরে এসে পড়ছিলো। আমি আলোকিত হচ্ছিলাম। একটু থেমে গিয়ে তার সে উন্মুক্ত পিঠে হাত বুলাই, চুমু খাই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তারপর আবার আমরা হাঁটতে থাকি। রঙিন হতে থাকে সব। সাগরের পানি স্বচ্ছ থেকে স্বচ্ছ হতে থাকে তাই দু’জন সে স্বচ্ছ পানিকে আয়না ভেবে দেখে নেই নিজেদের সুখী মুখগুলো। হঠাৎ দেখি মাথার উপর দিয়ে সাদা পায়রার দল উড়ে যায় আর চিঠি ফেলে যায়, একটি। যেখানে লেখা ছিলো, আলিঙ্গন করো হে নর-নারী। সে চিঠির পেছনে একটা মাঝারি আকারের লাল টিপও ছিলো। তারপর আকাশ, সাগর আর উড়ে যাওয়া পায়রাকে সাক্ষি রেখে লাল টিপ পরিয়ে দেই সোমার কপালে। সেই টিপ দেয়া কপালে চুমু খেয়ে আমরা পরস্পরকে আলিঙ্গন করি। কিন্তু হঠাৎ বাতাস বন্ধ হয়ে যায়। সব গুমোট হতে থাকে। আর ধীরে ধীরে চোরাবলিতে হারাতে থাকি দু’জন। এমন সময় সোমা আমার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিলে আমি দ্বিতীয় স্বপ্ন থেকে আবার প্রথম স্বপ্নে আবার ফিরে আসি কখন মনে নেই।

সোমার মুখ এবার বেশ মলিন। আর চোখ দু’টো তখন ভেজা শামুকের মতো। মুখ তুলে আমাকে অপরাধির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলতে থাকে সেদিন এভাবে চলে না গেলে আজ আমাকে এমন বসনে ঘুরতে হতো না। আমি এমন অভিযোগ, ঘৃনা আর তিরস্কারের কারণ বুঝতে পারি না। তাই তার ক্ষোভের উত্তর না খুঁজে আমি শুধু জানাই, ভুল, সবই মরিচিকা। আমি তো মরেছি তারও আগে। এই যে কথা বলছো আমার সাথে। আমাকে ছুঁয়ে দেখো, কিছু কি অনুভব করতে পারো? পারবে না। আমি এখন একজন হাওয়াই মানব। বারবার বলবো, আমি মরেছি তারও আগে। তোমার মানুষ কী করে হারালো আমি জানি না, তবে আমি হারিয়েছি তারও আগে। তোমরা জানো নাই কোনোদিন। তাই আবারও বলছি আমি থাকলেও তোমার আজকের মতো একই পরিনতিই হতো। সাদা শাড়িই জুটতো তোমার কপালে। সেকারনেই সেদিন এতোবার বলার পরও আর বসিনি। বলেছি তো আমার মৃত্যু হয়েছে তারও আগে, তোমার মানুষেরও আগে। জানতে চেয়ো না মৃত্যুর কী কারণ, কটা বলবো? শুধু এতোটুকুই বলি- ওই যে ওই ঘরে সহদের ঘুমায়। এরাও সব মৃত্যু পথযাত্রী। বুনো নয়, শহুরের কুকুরেরা তাদের খুন করছে প্রতিদিন। আমি শুধু সাহস করে বলতে পারিনা তাদের, সত্যের পথে মৃত্যুই শেষ কথা। ওরাও বাঁচবে না বেশি দিন।

(১১,১২ এপ্রিল ২০১৬, ধানমন্ডি/ পল্টন)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×