somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেইজ থ্রি....

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পত্রিকার ভাষায় আমি আসলে পেইজ থ্রি’তে কাজ করি। যারা পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত না তারাও অনেকে জানেন পেইজি থ্রি কী? নেতিবাচক অর্থে বিনোদন জগতের উত্তেজক সব খবরকে এই পাতার আওতাভূক্ত বলে ধরা হয়। যদিও আজকাল লাইফ স্টাইল বা বিশেষ ক্রোড়পত্র এসবকেও পেইজ থ্রি’র অন্তর্ভক্ত করতে কেউ দ্বিধা বোধ করে না। মূলত মিডিয়া মোঘল হিসেবে পরিচিত রুপার্ট মার্ডক সম্পাদিত ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘দ্য সান’ ১৯৭০ সালে তাদের বিতর্কিত মডেল ফটোগ্রাফির মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু করে। যেখানে এক জার্মান মডেলের অর্ধনগ্ন ছবি প্রকাশের মাধ্যমে এই পেইজ এখন একটি গালিতে পরিণত হয়েছে সাংবাদিক বা পাঠক মহলে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এটাই পেইজ থ্রি।

জিপিএ ফাইভ পাওয়ার মতো পত্রিকায় এসে দেখলাম এখানেও মা,বাবা, ভাই,বোন, বন্ধু, প্রেমিকা বা শুভাকাঙ্কি সবাই এই সেক্টরটাকে খুব একটা ভালো ভাবে দেখে না। পরিক্ষার মতো কোনো মতে পাশ করার সেকশন হিসেবে এই বিভাগকে দেখে থাকে সবাই। ছোট বেলায় প্রথমে কেন্দ্রিয় কচি কাঁচার মেলায় আঁকাআঁকি করতে গিয়েছিলাম। হয় নাই। ওঠা ছোট ভাইকে দিয়ে হলো। সে এখন পরিচয় দেয়ার মতো কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের শেষ বর্ষের ছাত্র। তারপর তবলা শিখলাম কিছুদিন। মন বসলো না। গিটার ধরলাম। ওঠা কিছুটা শিখলাম। বলা যায় একটা রসকসহীন আড্ডা জমানোর মতো গিটার বাজাতে পারি। মার্ক নফলার বা গিলমোর না হতে পারি তাকে কী। কিন্তু এই দিক থেকে বলতে পারি আমি আমার লক্ষ্য অর্জন করেছি। তারপর সাহিত্যের দিকে ঝুকলাম। সেখানেও এখনো অনেক জানা বাকি। এভাবেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন বিষয় অল্পবিস্তর জানতে জানতে পেইজ থ্রি’তে যুক্ত হওয়া। এখানে এসেও দেখি কতো কিছু জানার বাকি। যখন দেখি ফিচার এডিটর বলে বসেন আপনি এই বইটা পড়েছেন, এই সিনেমাটা দেখেছেন।

মান সম্পন্ন পেইজ থ্রি বের করা কতো কঠিন কাজ সেটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। দেখছি কতোটা জানতে পারলে এমন ভালো কিছু লেখা পাঠকের জন্য প্রস্তুত করা যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা এই পেইজে কাজ করি বলে। আবার পাঠকের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সানি লিওন বা শাহরুখ খানের খবর যখন মানুষকে পড়াতে চাই তখন ভাবি আরো কতো গুরুত্বপূর্ণ খবর আছে। ধরেন, পহেলা বৈশাখ নিয়ে সরকারের টাইম ফ্রেম বেঁধে দেয়া। এটা নিয়ে সম্মেলিত সাংস্কৃতিক জোট খুব সুবিধাবাদি একটা অবস্থান নিলো। তারা কোনো কর্মসূচিতেই গেলো না। যদি কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বেঁধে দেয়া সময়কে উপেক্ষা করে তারা তা চালিয়ে যেতো তবে বুঝতাম সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এখনো সাহস নিয়ে বেঁচে থাকার কিছু মানুষ জীবিত আছে। কিন্তু সেটা হলো না। কেনো হলো না, বা কী হলে ভালো হতো সেটা নিয়ে পত্রিকার প্রথম পাতার ফার্স্ট লিড হতেই পারতো। আবার ধরেন আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গনের যে বেহাল দশা, তেমনি সংগীত, মঞ্চ সব কিছু নিয়েই বড় বড় আট কলামের নিউজ হতেই পারে। কিন্তু তা কী হয়? আমরা জনি ডেপ, ডেভিড কাম্বারব্যাচ, এমা ওটাসন থেকে শুরু করে এখানকার সালমান মুক্তাদিরের প্রাত্যহিক জীবন যাপন নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ফলে পাঠককে দোষ দিয়েও লাভ নেই।

মানুষ যখন রাজনৈতিক ভাবে কোনো দিশা পায় না তখন সাংস্কৃতির মুখাপেক্ষি হয়। তখন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডই মানুষকে পথ দেখায়। কিন্তু আমাদের এখানে গ্ল্যামারটাই যেনো বড়। ফলে তখন মনে হয়, হলিউড বা বলিউডের সিনেমার খবর নিয়ে আমি কী করবো যখন আমার চলচ্চিত্রের বেহাল দশা। যখন যৌথ প্রযোজনার নাম করে একপেশে প্রপাগান্ডা চলচ্চিত্র নির্মান হয়, তখন আমি এসব সিয়ে কী করে ব্যস্ত থাকি? এসবই কী সাংবাদিকতা?

শিল্পকর্মের কোনো সীমানা হয় না এটা একেবারেই সত্য, কিন্তু ঘরের দিকে নজর না দিয়ে যখন পরের দিকে নজর হয় তখন বুঝতে হয় নীতিনির্ধারক মহল পরশ্রী কাতরতায় কতোটা ভুগতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি না মানুষ এসব চায়, আমি মনে করি মানুষকে এসব গেলানো হয়। আবার এটাও বলা যায়, মানুষ না চাইলেও তাকে যদি ভূলটা গেলানো হয় তখন তাকে সঠিক পথ দেখানো সমাজের তুলনামূলক এগিয়ে থাকাদের দায়িত্ব। সাংবাদিকতা তো তেমনই একটি পেশা।

আমি হয়তো পেইজ থ্রি’তে বেশিদিন থাকবো না। কেননা, আক্ষরিক অর্থে রাজনীতি বলতে যা বোঝায় তা আমাকে বেশি টানে। হয়তো সেসব বিষয়ে সাংবাদিকতা করবো। কিন্তু এখানে কাজ করতে গিয়ে আমি বুঝতে পারছি এই পেইজ থ্রি আমাদের সুন্দর মনন গড়তে কতোটা অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে পারে। যেমনটা সক্রিয় ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হিসেবে সব সময় মনে করেছিলাম বা এখনো করি- স্লোগান বা মিছিল যতোনা কাজ করে তারচেয়ে বেশি কাজ করে একটা ছো্ট্ট চলচ্চিত্র, একটা গান, একটা নাটক, একটা পেইন্টিং। আমরা আসলে কোন পথে হাঁটাছি? কেউ কী বলেতে পারেন?

অধিকাংশ ছেলে মেয়ে সাংবাদিকতায় এসে কিছু না করতে পারলে তথাকথিত ”পেইজ থ্রি”তে কাজ করতে চায়। এটাও একটি ভূল ধারণা। আবার কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করে যারা নিজেদের মেইন স্ট্রিম সাংবাদিক ভাবছেন তারাও এক প্রকার ঘোরের মধ্যে আছেন। কেননা, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হরিলুট জাতির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলে, এফডিসি বা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ভঙ্গুর দশা কোনো অংশে কম নয়। কারণ, এসব সেক্টরের ভঙ্গুর দশাই ব্যাংক লূটের মতো বিকৃত মানসিকতা তৈরি করে। আমি যতোদূর জানি, এক সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক পোস্টারের নকশা নিয়ে চিত্রকর্মের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। আমাদের চারুকলাতেই পারলে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। সীদ্ধান্ত এখন জাতির আয়না বলে পরিচিত সাংবাদিক মহলের। তারা কী দেবে পাঠককে। পাঠকের রুচি কোথয়া উন্নীত করবেন। যদিও এসব বলে বা লিখে কিছু হয় না। সবই একসময় মনে হয় কথার কথা। এমনই তো হয়ে আসছে। তাই না? এমনই তো লেখক শহীদুল জহিরের উপন্যাসের মতো জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা।

(২১ এপ্রিল ২০১৬, পল্টন)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×