somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়েস্টার্ন: জুয়া ( শেষ পর্ব)

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব
২য় পর্ব
না... শেষ পর্যন্ত চিড়তনের সাহেব তার সাতের সাথে যোগ দিল । হায় রে... ঐ সাতটিকে গলার কাঁটার মত মনে হচ্ছে । আমার সামনে বসা লোকগুলোর দিকে তাঁকালাম...ভাবলেশহীন চেহারা... ডলারের জন্য এরা সবই করতে পারে । কিছুক্ষণ আগেও যা আমার ছিল তা সবই ঐ বেটাগুলো পকেটস্থ করেছে ।ওদেরকে মৃত কল্পনা করতে শুরু করলাম... বিভিন্ন ভঙ্গিমাতে... একজন চেয়ারে উপুড় হয়ে আছে... আরেকজন পিঠে ছোড়া নিয়ে চিৎপটাং হয়ে আছ.... বাদামী হ্যাটটা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে

বিডের পর বিড হয়ে যাচ্ছে....খুনে লোক গুলোর থামার কোনোই লক্ষণই নেই । আমি ডলারগুলো চাই .... যেভাবেই হোক....যেকোন উপায়েই হোক। জীবনে কোনো কিছুর জন্য এভাবে প্রতীক্ষা করেছি কিনা জানি না... সম্ভবত না । হয়ত ওখানে আমার শেষ সম্বলটুকু আছে অথবা ঐ বাদামী হ্যাটের নিষ্ঠুর দাম্ভিকতা মরিয়া করে তুলছে ।

' আছো তো?' স্পষ্ট তাচ্ছিলতার সুর বাদামী হ্যাটের কন্ঠে ।
মাথা নাড়লাম 'আছি' ।
' তুমি কি তাস পরিবর্তন করবে নাকি তোমার হাতেরগুলোতেই বিশ্বাস আছে ?'
একটা দশ... শুধু একটা দশ ওর মুখে একটা চড় বসিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট । স্ট্রেইট হবার জন্য শুধু একটি দশ চাই....
' কি হে ভড়কে গেলে নাকি বাছা.... হা হা হা '
শুধু একটা দশ....
' দেখ বাছা... জীবনটাই একটা জুয়া। বাজি না ধরে এই পশ্চিমে তুমি বাঁচতে পারবে না...সেটা জীবনেরই হোক আর ডলারেরই হোক...'
বাদামী হ্যাটের প্যাকপ্যাকানি আমার কানে ঢুকছে না । আমার সামনে এখন দুটি পথ খোলা আছে...কাপুরুষের মত খেলা ছেড়ে চলে যেতে পারি অথবা খেলে জিততে পারি...হারতেও পারি । কাপুরুষের মত বেঁচে থাকার চেয়ে রাস্তার ফকির হওয়া ভাল ।
'যদি হেরে যাই তাহলে আমাকে কি করতে হবে?'
'ছোট একটা কাজ'
' শুধুই একটা কাজ?'
সে মাথা নাড়ল। জীবনে তো প্রতিমুহূর্তে কিছু না কিছু করছি একটা কাজে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে....। আমি কেন জানি জয়ের সুবাস পাচ্ছি ।
' একটা তাস...একটাই পরিবর্তন করব'
আবার ঝড়ের গতিতে তাস সাফল হতে থাকল...আমি সাতটা ছুড়ে ফেললাম....নতুন তাসটা টেবিলেই পড়ে থাকল... উল্টে দেখলাম না।

তাস দেখানো শুরু হলো...প্রথমজন হতাশ ভঙ্গিতে তাস ছুড়ে ফেলল... যাচ্ছেতাই তাস...বেচারা... দ্বিতী্য় জন পয়েছে 'থ্রি অফ এ কাইন্ড' (3 of A kind).....তার চোখ চকচক করছে জয়ের আশা।

বাদামী হ্যাট একটি একটি করে তাস উল্টাতে শুরু করল...সবগুলোই রুইতন... তার মানে ফ্লাস (Flash) ।

সব রুইতন । নরকের কীট... স্ট্রেইট তো আর ফ্লাসকে হারাতে পারবে না.... হেরে গেলাম... এত কাছে এসে এভাবে ধরা খেলাম !!!!!!!!

' হেরেই গেলে তাহলে' বাদামী হ্যাটের ঠোঁটে ক্রূর হাসিটা আবার ফুটে উঠল।

আমি হতাশ চোখে একবার রুইতনগুলো আর একবার আমার অকম্মার সাতটার দিকে তাকালাম।

'কাজের কথায় আসা যাক'.. বাদামী হ্যাটের কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গলো..ওর দিকে ফিরে চাইলাম... ' তাহলে তুমি এখন আমাদের জন্য একটা কাজ করতে যাচ্ছ।'
' কি কাজ?'
' শেরিফ..এই শহরে যার জন্য আমাদের আসা...'
হঠাৎ সে ঝুঁকে আমার সামনে মৃত সৈনিকের মত উপুড় হয়ে থাকা তাসটা উল্টে দিল । রুইতন ।
'সাত' হেসে বলে উঠল সে 'তোমার লাকি নাম্বার মন হয়'
'শেরিফকে তুমি চেনো?' আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
'ঐ কুত্তার বাচ্চাটা এখনো আমার সামনে পড়েনি...পড়লে এতক্ষণে..যায় হোক..আমি চাই ওর বুকের বামপাশে ঠিক হৃদপিন্ডে একটা বুলেট ঢুকিয়ে দিতে হবে।'
'যাকে তুমি দেখইনি..তার প্রতি এত ঘৃনা!!!!!'
'ঐ কুত্তা আমার ভাইকে সবার সামনে গুলি করে মেরেছে...'
'কোনো কারণ ছাড়াই..মেরে ফেলেছিল ?'
' আমি কোনো কারণের ধার ধারি না ...' হঠাৎ করে সেই যমদূতের মত শীতলতা ফিরে আসল তার মধ্যে, 'কাজটা নিজেই করব ভেবেছিলাম...কিন্তু এখন আমার হয়ে কাজটা করবে তুমি...হা হা হা হা'
আমি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম...
এই প্রথম আমার ঠোঁটে ফুটে উঠল তাচ্ছিল্যের হাসি। বললাম, ' তুমি বলেছিলে না সাত আমার লাকি নাম্বার...এখন বলত শেরিফের ব্যাচে কয়টা কোণা থাকে??'
'সাত'
আমি চেয়ারের পিছনে ঝুলিয়ে রাখা আমার কোটটা তুলে নিলাম...যেখানে ঝলমল করছে শেরিফের ব্যাচ ।
লোকগুলো ধরমর করে উঠে দাঁড়ালো... কিন্তু তার আগেই আমার হাতে শোভা পাচ্ছে আমার সবচেয়ে হিংস্র বন্ধু .... আমার কোল্ট ০.৫।
'অহু... বাছারা নিজেদের বেল্টে হাত দিয়ে কোনো লাভ নেই... তোমরা ঐ খচ্চর শেরিফের করা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সেলুনে ঢুকার সময়ই নিজেদের অস্ত্র জমা দিয়েছিলে...কিন্তু আমি তো শেরিফ তাই না...নিজের আইন নিজেকে মানতে হয় না....হা হা হা' ......

সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:৫০
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

লাইকা লেন্সে তোলা ক’টি ছবি

লিখেছেন অর্ক, ১৭ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৩০




ঢাকার বিমানবন্দর রেল স্টেশনে ট্রেন ঢোকার সময়, ক্রসিংয়ে তোলা। ফ্ল্যাস ছাড়া তোলায় ছবিটি ঠিক স্থির আসেনি। ব্লার আছে। অবশ্য এরও একরকম আবেদন আছে।




এটাও রেল ক্রসিংয়ে তোলা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কার গল্প জানেন ও শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:৩১



গতকাল সন্ধ্যায়, আমরা কিছু বাংগালী ঈদের বিকালে একসাথে বসে গল্পগুজব করছিলাম, সাথে খাওয়াদাওয়া চলছিলো; শুরুতে আলোচনা চলছিলো বাইডেন ও ট্রাম্পের পোল পজিশন নিয়ে ও ডিবেইট নিয়ে; আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাবাকে আমার পড়ে মনে!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৭ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২

বাবাকে আমার পড়ে মনে
ঈদের রাতে ঈদের দিনে
কেনা কাটায় চলার পথে
ঈদগাহে প্রার্থনায় ..
বাবা হীন পৃথিবী আমার
নিষ্ঠুর যে লাগে প্রাণে।
কেন চলে গেলো বাবা
কোথায় যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×