somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধূসর স্বপ্ন

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাসের মাঝে ফোন বেজে উঠাটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। এরজন্য অনেক বন্ধুকেই মাঝে মাঝে কথা শুনিয়ে দেই। ভাল ছাত্র বলে এরকম তাই না, ক্লাসে মোবাইল নিয়ে আসাই ঠিক না, আর আনলেও বাবা সাইলেন্ট করে রাখলেই তো হয়। সবসময় সবাইকে বলে আসা এই আমিই আজ কিনা স্যারের হাতে বকা খেলাম ক্লাসে ফোন বেজে উঠার অপরাধে! একবার না দুইবার না গুনে গুনে সাতবার কল করেছিল, তাও অপরিচিত নম্বর থেকে!

বাসায় এসে ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখেই সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে অপরিচিত সেই নম্বরে ফোন দিলাম। আচ্ছা করে ঝাড়তে হবে লোকটাকে।
ফোন বেজেই চলেছে কিন্তু ফোন ধরছে না। রাগ চেপে গেল। এখন বাছাধন ধমক খাওয়ার ভয়ে ফোন রিসিভ করছ না? ওমা একবার দেখি কেটেও দিল। জিদ চেপে গেল, আরও চার পাঁচবার ফোন দিয়েও না পেয়ে থামতে হল। এখন একটু ভাল লাগছে, লোকটাকে একটু ভয় দেখানো গেল।

তুই এখনও স্কুলের শার্টটাও খুলিস নাই? চিৎকার শুনে তাকিয়ে দেখি বড় আপু। উফ পেইনটা হাজির হইছে। কি হয় কে জানে।
-তোকে কতবার করে বলছি না স্কুল থেকেই এসে আগে জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে, কি বলি নাই?
গলার স্বর সপ্তম আকাশে উঠে গেছে।
-হুম, বলছ তো।
-এইভাবে বিড়ালের মত মিনমিনিয়ে কি বলছিস। কথা কানে যায় না? তাড়াতাড়ি উঠ।
গলাটা কেঁশে ঝেড়ে নিয়ে বলার আগেই আবারও ঝড় শুরু হল,
-তুই দিনদিন এরকম খচ্চর হয়ে যাচ্ছিস ক্যান, হ্যা?তোর জন্য তো আমার নাক কাটা যাবে।
মনে মনে বললাম, বোঁচা নাকটা কাটা গেলে তো অনেক খুশি হতাম।
-আমি আবার কি করলাম?
-চোখ নামিয়ে দেখ, পায়ে কি?
পায়ে আবার কি বলে তাকিয়ে দেখি মোজাটা এখনও খুলি নাই।
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হ খচ্চর কোনখানের, বলে ঝড়ের বেগে চলে গেল।
ধুর শালার, আজকে দিনটাই খারাপ, ওই লোকটা একটা কুফা, ওর জন্যই আবার বকা খেলাম। শালারে হাতের মুঠোয় পেলে কি করতাম তা কল্পনা করে মনে মনে শান্তি পেয়ে জামাকাপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।

গোসল করে মাথাটা ঠান্ডা হলে খেতে আসলাম মায়ের ডাকে। কিন্তু টেবিলে গিয়েই আবারও মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল, একটা আইটেমও পছন্দের না, সারাদিন ক্লাস করে কেউ করল্লা দিয়া ভাত খায়!
-আম্মা এইগুলা কি রান্না করছ?
-কি মানে, চোখে দেখিস না কি রান্না করছি?
-জানই তো করল্লা খাই না।
-আরে একটু খা, চিংড়ি দিয়ে চচ্চড়ি করছি, শখ করে রান্না করছি।
-ধুর এগুলা আমি খাই না, জোর করে ক্যামনে খাই!
-আচ্ছা দাড়া, একটা ডিম ভেজে দেই।
-লাগবে না, খাবই না দুপুরে কিছু।
রাগ করে উঠে এলাম।ঘরে এই একটা লোকের উপরে রাগ দেখানো যায়। রাগ দেখাইলে উল্টা আইসা আদর করে রাগ ভাঙ্গায়।
রুমে ঢুকে মানিব্যাগটা হাতে নিয়ে বের হয়ে আসলাম।বাইরে থেকে খেয়ে আসব।
পিছন থেকে মা ডাকছে।
দড়াম করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে আসলাম।


মোবাইলে Skid Row এর I remember You গানটা বাজিয়ে দিলাম। যে কোন পরিস্থিতিতেই গানটা আমার মন ভাল করে দেয়।হেডফোনটা কানে লাগিয়ে হাটা ধরলাম। রাস্তার ওপারে শরীফের দোকানে কিছু খেয়ে নিতে হবে। পিছন থেকে কিছু লোক চিৎকার করে উঠল।অস্পষ্টভাবে শুনলেও কোন দুর্ঘটনা ঘটল কিনা তা দেখার জন্য ঘুরতেই দেখি হলুদ দানবটা চোখের সামনে,হর্ন বাজাতে বাজাতে এগিয়ে আসছে প্রতিমুহূর্তেই। ধাক্কাটা লাগলে কোন ব্যাথা পেলাম না, বরং ভালই হল। নিমিষেই সব রাগ,ক্ষোভ অভিমান চলে গেল। মাথাটা একেবারে হালকা হয়ে গেল। কোন গাড়িতে একটা বাচ্চা কাঁদতেছে, মা টা কি করে কান্না থামাচ্ছে না ক্যান! বাচ্চাদের কান্না আমার সহ্য হয় না। বুঝতে পারছি না এত ঘামাচ্ছি ক্যান, কপাল থেকে ঘামের মোটা ধারা চোখ বন্ধ করে নেমে যাচ্ছে। আশেপাশের সবকিছু অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে ক্যান তাও বুঝতেছি না। আমি কি ঘুমিয়ে পড়ছি নাকি? মনে হয়, স্বপ্নও দেখতেছি একটা। পুরোপুরি ঘুমে তলিয়ে যাবার আগে চোখের সামনে একটা দৃশ্য ভেসে উঠল। আহ কি শান্তি, এত শান্তি তো এর আগে আর লাগে নি। আপুর হাতে আম্মুর করল্লার চচ্চড়ি দিয়ে ভাত খাচ্ছি।খাওয়াটা যদি অনন্তকাল চলত!

ওদিকে মোবাইলে বেজেই চলেছে
Remember yesterday, walking hand in hand
Love letters in the sand, I remember you
Through the sleepless nights and every endless day
I'd want to hear you say, I remember you.
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×