সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক
১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির বিয়ের সংবাদেও লোকে হাহা রিয়েক্ট করে, ডিভোর্স হয়ে কান্নাকাটির ঘটনাতেও তাই। সে বেচারি মাথায় ঘোমটা দিয়ে নির্বাচনী স্টান্ট করলেও লোকে সিরিয়াসলি নেয়না, সেখানেও হাহা রিয়েক্ট। শাকিব খানকে নিয়ে তার দুই বৌয়ের ছ্যাচড়ামিতো আরও এপিক পর্যায়ের কমেডি। দুই মহিলা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে কার চেয়ে কতটা সস্তা প্রমান করতে পারে। ইদানিং শুনছি শাকিব খান পরিবারের পছন্দে আরেকটা বিয়ে করতে বসছে। তাই ওর আগের দুই বৌয়ের ঘরে প্রবেশ নিষেধ। আগে দুই বৌয়ে কামড়াকামড়ি করতো, এখন তিন বৌয়ে করবে। শাকিব খান তখন চতুর্থ কোন নায়িকাকে প্রেগন্যান্ট করার মিশনে ব্যস্ত থাকবে। আমাদের হাহা রিয়েক্ট সংখ্যার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল।
তা বাংলা সিনেমার আরেক কার্টুন ইভেন্ট হচ্ছে শিল্পী সমিতির নির্বাচন। মার্টিন স্করসিসি, স্টিভেন স্পিলবার্গ, ক্রিস্টোফার নোলান, জ্যাক নিকোলসন, রবার্ট ডি নিরো, টম হ্যাংকস, ডেনজেল ওয়াশিংটন - এরা বিশ্ব সিনেমার বাঁক বদলে ভূমিকা রাখলেও এদের কাউকে কখনও দেখলাম না শিল্পী সমিতির পদ নিয়ে কামড়াকামড়ি করতে। আমাদের জায়েদ খান, নিপুন, ইলিয়াস কাঞ্চন, ডিপজল, মিশা সওদাগর, আলেকজান্ডার বো নিজেদের সমস্ত প্রতিভা(!?!?!?!) আর সময় (যার কোন মূল্যই নেই ওদের কাছে) নির্বাচনের পেছনেই ব্যয় করে ফেলে - তারপরে আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট তৈরী করে শিল্পের বারোটা বাজিয়ে দেয়। শিক্ষাঙ্গনের মতন রাজনীতি আমাদের দেশের সিনেমাকেও খেয়ে ফেলেছে। এরা কিভাবে সামনে এগোবে?
তা এইবার শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মারামারি হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে, এবং এ নিয়ে যথারীতি পাবলিক হাহা রিয়েক্ট দিয়েছে। এর আগেও আমাদের শিল্পীরা ক্রিকেট খেলতে গিয়ে এমন কমেডির জন্ম দিয়েছিল। ভেবেছিলাম এইবারও হয়তো সেটাই ঘটেছে। পরে শুনি না। এককালের অশ্লীল সিনেমার নায়িকা ময়ূরীর মেয়েকে এক সাংবাদিক ওর মায়ের সিনেমা দেখে কিনা, এবং এর অনুভূতি কি সেটা জানতে চাইলে শিল্পীরা সেই সাংবাদিককে খানিকটা আদব কায়দা শিখিয়েছে।
আমাদের দেশে এখন সবচেয়ে বড় মহামারীর নাম সাংবাদিকতা। করোনার সময়ে এতটা করোনা রোগী পাওয়া যায়নি যতটা সাংবাদিক এখন আমাদের দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রতিটা অলিতে গলিতে সাংবাদিক কিলবিল করছে। সবার হাতে মোবাইল ফোন আছে, সবার নিজের নিজের ইউটিউব চ্যানেল আছে, ফেসবুক পেজ আছে, যেকেউ এখন ভাইরাল হওয়ার ধান্দায় সাংবাদিক হয়ে রাস্তায় নেমেছে। ভিউ এবং ট্রেন্ডে থাকাটাই এদের মূল লক্ষ্য। সংবাদে মশলা মিশালো নাকি মশলায় সংবাদ, এদের কিচ্ছু যায় আসেনা। মেইন স্ট্রিম মিডিয়ায় খবর পৌঁছাবার আগেই দেখবেন এরা সোশ্যাল মিডিয়ায় মিডিয়া ট্রায়াল শুরু করে দিয়েছে।
মাঝে মাঝে এদেরকে এদের অবস্থান জানান দিতেও অমন চেয়ার তুলে পেটানোর প্রয়োজন আছে। সাধারণ শিষ্টাচার, ভদ্রতা, রুচীবোধ ইত্যাদি যখন বাড়ি থেকে শিখে আসেনা, তখন বাইরের লোকেই শেখাক।
এই সূত্র ধরেই দুই নম্বর পয়েন্টে আসা যাক।
২. যে খবরটা ভাইরাল হয়েছে তা হচ্ছে, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এক নারী আম্পায়ার ম্যাচ পরিচালনা করতে গেলে ক্রিকেটাররা এবং টিম ম্যানেজমেন্ট নাকি বিচার দিয়েছে কোন নারী আম্পায়ারের অধীনে ওরা খেলবে না।
খবরটা ফেসবুকে কোন এক উজবুক প্রকাশ করতেই পাবলিক এতে আজকের যুগের সবচেয়ে ভাইরাল টপিক পেয়ে গেল, সেটা হচ্ছে "নারীবাদ" - এবং আর পায় কোথায়? সবাই ভাইরাল হওয়ার ধান্দায় সত্য মিথ্যা যাচাই বাছাই না করেই ঝাঁপিয়ে পড়লো।
পরে জানা গেল এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। ক্রিকেটাররা নাকি কোন আপত্তিই করেন নাই। ম্যানেজমেন্ট থেকে করলেও করে থাকতে পারে - সেটাও আম্পায়ারের লিঙ্গ নিয়ে নয়, রবং এত বড় ম্যাচে একজন আম্পায়ারের আনকোরা আম্পায়ারের অভিষেক ঘটনাকে নিয়ে। ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ম্যাচে আপনি আমি আম্পায়ার দাঁড়িয়ে গেলে আমাদের বিরুদ্ধে শুধু ক্রিকেটাররাই না, দর্শকরাও আপত্তি জানাবে। এখানেও ঘটনা একই। অথচ, ফেসবুক জুড়ে জাতীয় ক্রিকেটারদের গুষ্ঠি উদ্ধার শেষ।
আচ্ছা, এই যে কান কথায় লাফানো পাবলিকরা যখন জানতে পারে ওরা বেহুদাই লাফালাফি করেছে, মূল ঘটনা জানার পরে ওদের কি একটুও লজ্জাবোধ হয় না? সাবধান হয় না যে পরেরবার ভাল মতন খোঁজখবর নিয়ে তারপরে নামবে?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১