১. মাত্র একদিন করে গ্যাপ দিয়ে জুলাইয়ের ২ তারিখ থেকে ১৪ তারিখের মধ্যে পরীক্ষা শেষ। একটা পরীক্ষায় দুইদিন গ্যাপ পাইছিলাম শুক্রবার মাঝখানে চলে আসায়। যেই সেই পরীক্ষা না, দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষা। মেডিকেল জীবনের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা। এরপরে রোজার ঈদ থাকলেও প্রাকটিক্যাল নিয়ে ব্যস্ততা। যাই হোক ঈদ করলাম। আবার ভাইভার ডেট পড়ে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি চলেও আসলাম। এসে শুনি কয়েকটা ইউনিভার্সিটির লিখিত পরীক্ষাই এখনও শেষ হয় নাই! DU rockz....আমরা সবাই shockzzz....
২. এইবার শুরু ভাইভা+প্রাকটিক্যাল। মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, কমিউনিটি মেডিসিন আর ফার্মাকোলজি এর মতন এইসব বিসাল সাবজেক্ট পাঁচদিন গ্যাপে ভাইভা। (ভাল কথা নন মেডিকেল কেউ পাঁচদিন হওয়ার পরও আমার বেজার থাকার কথা শুইনা অবাক হইয়েন না, যেখানে ভাইভাই সব সেখানে এই সব বিষয়ের জন্য পাঁচদিন কিছুই না) কিন্তু ব্যাপার হইল গিয়া পেরিফেরিতে এক্সটারনাল বেশিদিন থাকতে চায় না, তাই পাঁচদিনের গ্যাপ কমে আসল চারদিনে। তাও ভাবলাম যত তাড়াতাড়ি আপদ দূর হয় ততই ভাল(এই জায়গাতে আঙুর ফল টক বা আক্ষেপ টাইপ একটা ইমো হবে)।
৩.পরীক্ষা যেমনি হোক(জানতে চেয়ে লজ্জা দিবেন না) খুশি মনে বকরী(কুরবানি) ঈদ করব ভাবছিলাম কিন্তুউ তাও হবে কিনা সন্দেহ দেখা দিল। প্রফেশনাল এক্সাম শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই ক্লাশ দিয়ে বসল স্যারেরা। আমি জানি না আর কোথাও এমন হইছে কিনা বা হওয়া সম্ভবই কিনা প্রশ্ন আসে মনে। সামনে অবশ্য মুলা ঝুলাই রাখছিল যে ঈদের ছুটি বাড়িয়ে দিবে। পরে সেই ছুটি পাইলাম ঈদের চারদিন আগ থেকে ঈদের চারদিন পর পর্যন্ত। (হা হা আজকাল স্যাররা পোলাপানদের ভালই *দেয়া শিখছে এইটা নাকি বাড়াইয়া ছুটি দেয়ার নমুনা!) পেঁচার মত ব্যাজার থাকা মুখটাতে হাসি ফোটাতে বাসায় গিয়ে পৌছে বন্ধুর কাছে শুনি একমাস আগে থেকেই ছুটি কাটাচ্ছে সে। মনে মনে আমার পোড়া কপাল না ওর কপাল কোনটারে কষে গালি দিব বুঝতে না পেরে চলে আসলাম। ঈদ শেষ করে আবার বাড়ি থেকে চলে আসলাম কলেজে।
৪.এসে শুনি RU তে এখনও পড়ীক্ষা শেষ হয় নাই, এবং শেষ হইতেও আরো একমাস!
এইজায়গায় মনকে বুঝাইলাম ওরা পরীক্ষা পরে
দিছে রেজাল্টও পরে পাবে আর আমরা তো ওদের একমাস আগেই পরীক্ষা শেষ কইরা ৫ম বর্ষে উইঠা ঘানি টানতেছি।৫ম বর্ষের ক্লাস তো প্রফের পরদিন থেকেই পুরোদমে চলতেছে আর আসার পর এখন চলতেছে ওভারডোজ। বাঘা বাঘা সাবজেক্ট আরও ততোধিক। বাঘা বাঘা টিচারগন পড়াতেই থাকেন। আর এই অধম বসিয়া বসিয়া coc(অন্য কিছু মনে কইরেন না এইটার বানানের শেষে 'k' নাই) নিয়া পইড়া থাকি আর ভাবি রেজাল্ট দিলে সব শুরু করব। কারণ রেজাল্টের কি হয় তার কোন ঠিক নাই। যদি ভাল হয় তাহলে৫ম বর্ষের পড়া আর খারাপ হলে জানুয়ারি সাপ্লিমেন্টারীর জন্য ৪র্থ বর্ষের পড়াই আবার পড়তে বসব।
৫. কথা হইল গিয়া রেজাল্টের কথা ভাবতে আছি তো আছিই। ভাবতে ভাবতে ঘাড়েমাথা ব্যথা হইয়া যাইতাছে। দুইমাসের বেশি হইল ভাবতেই আছি। রেজাল্ট আর দেয় না। ওইদিন দেখি একজন ফেবুতে স্ট্যাটাস দিল সেকেন্ড প্রফ পাস। অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া তাহাকে শুভেচ্ছা জানাইয়া প্রোফাইলে ঢুকিয়া দেখি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমাদের অল্প কয়েকদিন পরে পরীক্ষা শেষ করিয়াও তাহারা ফলাফল প্রকাশ করেছে।আজকে দেখি আরেকজন স্ট্যাটাস দিসে সেকেন্ড প্রফে পাস। ভাবলাম তাইলে আজকে রেজাল্ট দিছেই। RU তে পরীক্ষা শেষ হইছে অনেক পরে, অন্য ভার্সিটি সবার রেজাল্ট দেয়া শেষ। তাইলে নিশ্চয়ই DU এর রেজাল্ট। আবারো শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রোফাইলে ঢুকে দেখি উনি রাজশাহী মেডিকেলের ছাত্রী! বুঝলাম না তাহারা ইহা কিভাবে করিল! আমাদের DU ১নং বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও তিনমাসে রেজাল্ট দিতে পারে না আর তাহারা একমাসে রেজাল্ট দিয়ে দিল! লেখার এই পর্যায়ে এসে আসলেই বলতে পারতেছি না কি লিখব। যেই ছেলেটার রেজাল্ট খারাপ হবে তাকে আবার জানুয়ারিতে পরীক্ষা দিতে হলে প্রিপারেশনেরও তো একটা ব্যপার আছে।
৬. শেষ কথা হইল সেই এপ্রিলে তৃতীয় টার্ম পরীক্ষা শুরু, তা জন্য মার্চ মাস থেকে টানা আইটেম শুরু, জুনে মডেল টেস্ট দাও, জুলাইতে সেই বিখ্যাত প্রফের লিখিত পরীক্ষা, পুরো আগস্ট আর সেপ্টেম্বর এর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ভাইভা আর গত তিনমাস ধরে পরীক্ষার ফল নিয়ে টেনশন, এই রকম ধকলের মধ্যে রাখার কি দরকার আছে বাপু? মেডিকেলে পড়তে আসাটা দোষের কিনা সেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে এখন মনে!
এত টেনশন এর ভীড়েও রেজাল্টটা দিলে খুশি কান্না যাই আসুক টেনশনটা অন্তত কমত। এইটুক শামুকের লেদার পরিমানু বুদ্ধি যদি DUএর লোকদের থাকত।
এ কি প্রহেলিকা শুরু করলেন আপনারা?
একটাই কথা বলার আছে "আর পারি না গুরু, এইবার অন্তত খান্ত দাও।"
বিঃদ্রঃ এই আজাইরা প্যাঁচাল এতক্ষন আপনার মুল্যবান সময় নষ্ট করে পড়ে কষ্ট পাইলে আমি দুঃখিত।
পুনশ্চঃ শুধুমাত্র DU তে সেকেন্ড প্রফ দেয়া আমার মত কেউই ব্যাপারটা বুঝবেন।
এবং আপ্পিসমাজের একজনকে আজকে DU কে কঠিন গালি দিতে দেখিয়া বুঝলাম সবসি আমার মত পেরেশানিতে আছে, কেউ কম কেউ বা বেশি।