somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'অশনি সংকেত'

০৪ ঠা জুন, ২০১২ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের প্রচলিত ধারাগুলোর বাইরে কেউ যদি কিছু করে ফেলে তাহলে সেটাকে বলা হয় পাগলামি । আর ধারাগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করলে সেটা হয়ে যায় ক্রাইম । আর এ দুটো নিয়ে যদি কেউ গিঁট পাকায় তাহলে আমরা তাকে বলি সাইকো ।

অসুস্থ এ সমাজের অরক্ষিত ধারামালার সংস্পর্শে আমি নেই । আমার মানস বৃত্তান্তে ইথিক্স বলে কিছু একটা ছিল আগে কিন্তু কালের আবর্তনে আকাল পক্ষীর একটু একটু ঠোকরে তা এখন সম্পূর্ণ নাই হয়ে গেছে । এখন কেউ যদি আমাকে বলে যে, আপনার শার্টের সাথে টাই টা ওড লাগছে; আমি রাগ করিনা কিংবা বিব্রতবোধ করিনা । কোনো সুন্দরী মেয়ে যদি আমার সংস্পর্শে এসে সম্পর্ক জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে; আমি এক মুহূর্তও ইতস্তত না করে বলে দেই ‘ক্ষ্যাত’ । গত সপ্তাহে আমার বার্থ ডে গেলো । আমি কোনো পার্টি দেই নাই, কোনো আয়োজন করি নাই । অথচ তারপরেও আমার সহকর্মীরা এসেছে, ফ্রেন্ডরা এসেছে । তারা নিজের গাঁট থেকে পয়সা খরচ করে ক্যান্ডেল আর কেক নিয়ে এসেছে । বিশ্বাস করুন আমার কোনো ফ্রেন্ড নেই । আগে হয়তো বা ছিলো কিন্তু এখন আর নেই ।
ফ্রেন্ডের কথা তোলাতে কিরণের স্মৃতি তীব্র ভাবে আঘাত করলো আমার নিউরন সিনাপ্সে । আমরা দুজন একসাথে থাকতাম, এক পাশে বসতাম সেই স্কুল লাইফ থেকেই । সবাই আমাদের প্রতি ঈর্ষা করতো এমন কি টিচাররাও আমাদের আলাদা করে দিত । আমরা মন থেকে আলাদা হই নাই কখনো । মেটরা আমাদের গে’ বলে রাগানোর চেষ্টা করতো;কিন্তু আমরা পাত্তা দিতাম না । তারপর আমরা কলেজে ওঠলাম; সেই সাথে একজন আরেকজনের ছায়া হয়ে ওঠলাম । আমার সেই প্রানপ্রিয় বন্ধুটি কিভাবে যেন বিপরীত লিঙ্গের সংস্পর্শে এলো । আমি আবার একা হয়ে গেলাম । আমার ভেতর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সাইক্লপ । জোঁকের মত কীটগুলো আমাকে জ্বালাতন করতে শুরু করে । প্রাণের বন্ধুটির প্রাণ হরণ করার মত ক্ষ্রিপ্ত বাসনা জেগে ওঠে মনে । কীটগুলো ক্রমেই পিন ফুটিয়ে যায় আমি নির্ঘুম কাটিয়ে দেই দু রাত । অবশেষে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম এবং যথাসময়ে তা কার্যকরও করলাম । কেউ টের পেলোনা । কেউ জানতেও পারলো না কিরণ এখন তার থেঁতলানো দেহ নিয়ে রাত কাটাচ্ছে নীলাচল পাহাড়ের গোড়ায় । হাহ্! আমার একটুও অনুশোচনা হচ্ছে না । কারণ বন্ধুটিকে তাড়াতাড়ি স্বর্গে যাবার অগ্রাধিকার আমিই দিয়েছি ।
নির্ঝঞ্ঝাট দুটো দিন কাটিয়ে দিলাম । ঝামেলা শুরু হলো তার পরদিন থেকে । তদন্ত বিভাগের দু জন কর্মকর্তা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এলো । আমি কিন্তু নার্ভ খুব শক্ত রাখতে পারি । চোখে চোখ রেখে খুব সহজেই মিথ্যা বলতে পারি । এক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হলো না । তবে আমি সুস্পষ্টভাবে আমার এ্যালিবাই দেখাতে পারি নাই ।পরে এটা নিয়ে টুকটাক ঝামেলা হলেও আমি মুক্তি পেয়ে যাই ।

আমি খুবই অপ্টিমিস্টিক । বন্ধুর মৃত্যুকে কিভাবে পজিটিভলি এক্সপ্লেইন করলাম আপনারা ইতোমধ্যে তা জেনে ফেলেছেন আশা করি । তবে বেশী ঝামেলা পাকালো ওর সাবেক গার্লফ্রেন্ড । শিখা না কি যেন নাম । আমার তত ইন্টারেস্ট নেই । মেয়েদের ব্যাপারে আমি বরাবরই সেন্সলেস ।
একটু অপেক্ষা করুন ও আসছে । হ্যাঁ, ও এখন আমার রুমেই । ফুসলিয়ে নিয়ে আসলাম আমার নতুন ফ্ল্যাট দেখাবো বলে ।

এই যে শিখা আমার বিরুদ্ধে তোমার অভিযোগ ওরা জানতে চাচ্ছে ।
কারা?
-ওওরা ।
ওরা মানে? এখানে তো কেউ নেই ।
-এই যে এখানে ওরা ।
মাই গড! এটা তো একটা ওয়ার্ড পেজ ।
-যা বলছি তাই কর । বেশী বুঝতে যাবে না ...
তোমাকে কতবার বললাম । একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাও ।
-একদম চুপ, যা বলছি তাই কর । এই ডাইরিতে লেখতে থাক ।
আশ্চর্য! তুমি এমন করছ কেন? কি লিখবো ।
-অভিযোগ; আমার বিরুদ্ধে তোর অভিযোগ ।
ঠিকাছে । চাইছো যখন ...

‘আমি শিখা । কিরণের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো বছরখানেক আগে । সে মারা যাবার দিনটাতে আমি জিপু কে আর তাকে একসঙ্গে বের হতে দেখেছি । কিরণ খুবই নার্ভাস ছিলো তখন । তারপর তারা একসঙ্গে বের হয় । আমি জিজ্ঞাস করাতে জিপু বলল, কুমিল্লায় ফ্রেন্ডের বাসায় যাবে । তারও পরে যখন জিপু একাই ফিরে আসে এবং কিরণ নিখোঁজ হয় । তখনই আমি বুঝে গেলাম জিপুই খুন করেছে তাকে । আমি এও জানি জানি কিভাবে খুন করা হয়েছে’ ......
(একটা অদ্ভুত বীভৎস শব্দের পর রাজ্যের নিস্তব্দতা বিরাজ করলো রুমে) ...............
এটা আমার হাতের দোষ । বুকটা হাশপাশ করতে ছিলো প্রবল তৃষ্ণায় । আমি একটা বদ্ধ ট্যাঙ্ক দেখতে পাই সামনে । তার ভেতর আছে বিপুল পানির উৎস । সামনেই আমার চপারটা পড়ে আছে । সেটা তুলে নিয়ে পাগলের মত সর্বশক্তিতে আমি আঘাত করি ট্যাঙ্কের ওপরে । ব্যাস, তৃষ্ণা মেটে গেলো ।

বার্থ ডে পার্টি ওরা পালন করছে , আমি নই । কারন আজকে আমার বার্থ ডে না । আমার সার্টিফিকেটের তারিখটা আমি মনে রেখেছি । আসলটা নিশ্চয়ই তার ধারে কাছেই হবে । এই যে ক্ষয়িষ্ণু মোম, স্ফীত বেলুন কিংবা ঝাঁঝালো তরল সবই অদ্য জীবন পালনের ক্ষণে জীবনেরই একটা দিক নির্দেশ করছে । “Heavy weight yourself unless your life is gonna end”.
সময় হারাবার আগেই নিজেকে সমৃদ্ধ কর। জীবন হচ্ছে মোমবাতির মত ক্ষণস্থায়ী । সময়ের কোনো এক দৃষ্টিভঙ্গিতে এক্কালে সবার মধ্যে যে কার্যকারিতা থাকে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা কমতে থাকে । অনেকটা কোমল পানীয় এর মত; মুখ খোলা কোলার যে রকম আস্তে আস্তে ঝাঁঝ কমতে থাকে ।

পেশায় আমি একজন ডাক্তার; ক্লিনিক্যাল সার্জন ।যেখানে আমার কাজ হচ্ছে মানব দেহের রক্ষণাবেক্ষণ ।আমার ভাইটা মেডিক্যালে পড়তে চায়নি এ কারণে । ভায়োলেন্স ও একদম সহ্য করতে পারতো না । প্রতি কোরবানি ঈদে আমরা কত আগ্রহ নিয়ে গরু জবাই দেখতাম । সে এসময় কাছে ধারে থাকতো না; আসতো গরু যখন ফালি ফালি করা হয়ে গেছে তখন । এসব তুচ্ছ জিনিস আমার মনে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেনি । মেডিক্যালে ভর্তির পর আমাদের এসাইনম্যান্ট গুলোতে সবচে বেশি এক্টিভ থাকতাম আমি । তখন আমার একজন পরিচিত ডোমকে একবার জিজ্ঞ্যাস করেছিলাম, লাশ কাটতে কেমন লাগে তার ।
ওর জবাব ছিলো, তহন তো কইতে পারুম না তয় নেশা কাইটা গেলে শইলডা একটু কাঁপে ।
কি আশ্চর্য! এ সামান্য একটা লাশ কাটতে নেশা করা লাগে? যারপনাই বিরক্ত হই আমি ।
খুব ছোটোবেলায় আমরা কজন মিলে কলাগাছ শোয়াতাম । তারপর ছুরি কিংবা ব্লেড দিয়ে সেগুলো অপারেশন করতাম । তারপর কেটে টুকরো টুকরো করে সেগুলোকে মাংশ হিসেবে মিছেমিছি বিক্রি করতাম । নিতান্তই একটা ছেলেমানুষি খেলা ছাড়া আর কিছুই ছিলোনা তা । কিন্তু এখন আমি বড় হয়েছি খেলার ধরন ও পাল্টেছে ।

আমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড ও সহকর্মী নাজির আমাকে প্রায়ই খর্ব করে । আমরা কয়েকজন মিলে পরিকল্পনা করে গিয়েছিলাম গুলশানের নাইটক্লাবে । স্বভাবতই নাজির একটু প্লে বয় টাইপের । তার ওপর নতুন জায়গা, নতুন পরিস্থিতি, নতুন জিনিস মোদ্দা কথা নাজিরের সালফিউরিক মনে একটু পানি পড়লো আর কি। একটা স্থূলকায় দেহের স্ফীত প্রকম্পিত বুক আর ওজনদার নিতম্বের অধিকারীর প্রস্টিটিঊটের দিকে ইঙ্গিত করে সে মধ্যমা আর নির্দেশিকার জোড়ায় একটা জ্যামিতিক ক্ষেত্র তৈরী করে । তারপর বিশ্রীভাবে চোখ টিপে কিসের ইঙ্গিত দিতেই মেয়েটি তিনটা আঙ্গুল দিয়ে রেট জানিয়ে দিলো । তারপর সে আমার কাছে পার্টিসিপেট রেট চেয়ে বসে ।

দোস্ত, তুমি আর আমি শুধু । মালটা দেখছো সুপার হট ।
-আমাকে জড়াচ্ছো কেনো?
জড়াইতেছি মানে; তোমারে আমি বন্ধু পায়া এরকম একটা চান্স দিতাসি । আর তুমি এইটা একটা কথা কইলা? যাই হোক এই রকম সুযোগ আর পাইবানা । আর এগুলো তো এভেলেবল না । দেখতাছো না যে রকম স্মার্ট সে রকম সেক্সি । আমরা দুজনে শেয়ার করি ফিফটি ফিফটি, ওকে?
-না বন্ধু । আমি আজীবন এগুলো থেকে দূরে থেকেছি এখন আর তা করতে পারবো না ।
কি যে কওনা দোস্ত । র্যা ডিশনে এ রকম কলীন দিয়া স্পা করাতেই তো দশ হাজার টাকা ফেলতে হয় । আর এখানে হাজার তিনেক ফেললেই সব করতে পারবা । আর আমাদের তো লাগতাসে মাত্র পনেরোশো কইরা, কি রাজী?
অনেকক্ষণ চিন্তা করে আমি নিমরাজি হলাম । শুধু টাকা শেয়ার করার ব্যাপারে, দেহ নয় । মূলত এসব দেহের প্রতি আমি আকর্ষণ হারিয়েছি আমার পুরুষত্বের নিস্তেজতার কারণে । কাজেই এসব নারীয়মহার্ঘ বস্তুসমূহ এখন আর আমার মধ্যে তেমন আকর্ষণ জাগাতে পারেনা ।

-ঠিকাছে । আমি তোমাকে অর্ধেক দেবো; তুমিই পুরোটা এনজয় কর ।
আজীব তো! তোমার দৈহিক কোনো সমস্যা আছে নাকি? ডাক্তার দেখাইছো?
-আমার ফিজিক্যালি সম্পূর্ণ ঠিকাছি । তোমাকে যা বলার তা বলেছি এখন সেইটা তোমার ইচ্ছা ।
ওকে । হাজার খানেক টাকা দাও তাইলে ।
পুরো দেড় হাজারই ওর হাতে তুলে দিলাম আমি । ইতোমধ্যে সে মেয়েটির সাথে ডিল করতে চলে গেলো । কিছুক্ষন পর দেখলাম কপাল কুঁচকে সে চলে আসছে এদিকে ।
-কি সমস্যা কোনো?
সব তো ঠিকই আছে, বাট একটাই সমস্যা ।
-কী?
মাগী বলতাছে এইখানে হইবো না । স্পেইস সিলেক্ট করতে হইবো ।
-পেমেন্ট করে ফেলছো?
পুরোটা না । হাফ এখন বাকিটা কাম শেষে ।
-দোস্ত এক কাজ করলে কেমন হয় । তোমার ফ্ল্যাটে তো কেউ থাকেনা …………..।
আমি একজন শীতল রক্তের মানুষ । অন্যের অনুরোধ ফেলতে পারিনা । ঠান্ডা মাথায় অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে অবশেষে রায় দিলাম ।
পরিশেষে সুযোগের সদ্ব্যবহার দ্বারা সোনিয়া নামের প্রস্টিটিউটের সংস্পর্শে আসতে পেরে নিজের করিৎকর্মা জাহির করার একটা মোক্ষম সুযোগ পেয়ে যায় নাজির । তা আবার আমার ফ্ল্যাটে, আমারই সাইডরুমে ।
প্রায় একঘন্টা পর নিজের ঘর্মাক্ত আর ক্ষয়প্রাপ্ত নগ্ন দেহটাকে টেনে হিঁচড়ে আমার বেডে এনে ফেলে নাজির । হাঁপাতে হাঁপাতে সে তার মহৎকর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ পেশ করতে থাকে আমার কাছে ।
দোস্ত, চুক্তি হইসে দুই ঘন্টার । আমি তো এর মধ্যেই শেষ । এখন ছাইড়া দিলেটাকাটা লস হইয়া যায়না?
-তাহলে একটু রেস্ট নিয়ে আবার যাও ।
না দোস্ত। আমার আর সম্ভব না । এবার তুমি যাও । প্লীজ এইটাই লাইফের একটা মোক্ষম সময় । পরে কিন্তু পস্তাইবা । আইচ্ছা তুমি তো এখনো ভার্জিন না?
-হ্যাঁ, এবং তা ই থাকতে চাই আজীবন ।
অবশেষে এ নিয়ে নানা বাক বিতণ্ডার পরে নাজির আমার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন করে । টেবিলের ওপর রাখা ভারি পিতলের এ্যাশট্রেটা দিয়ে আমি সজোরে তার মাথার একপাশে আঘাত করি । আমি আগেই বলেছি আমি একজন শীতল রক্তের মানুষ । যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি ।

অবশেষে ধীরে সুস্থে আমি সাইডরুমে প্রবেশ করি এবং দরজা লক করে দেই । মেয়েটি আমাকে ইশারা করলো আমি গেলাম । একপর্যায়ে সে আমার ঠোঁটের ওপর তার ঠোঁট জোড়া চেপে ধরলো । আমার ভেতরের পাপী সত্ত্বাটা আবার জেগে ওঠে তার সেই পাপ বিহব্বল কীটগুলো ছড়িয়ে দেয় আমার রন্দ্রে রন্দ্রে । সেগুলো কিলবিল করতে করতে আমার অপ্রিয় অনুভূতি গুলোকে কুঁকড়ে ফেলে । তারই প্রবল তাড়নায় আমি তার ঠোঁটজোড়া কামড়ে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলি । অতঃপর হাতের কাছে রাখা ধারালো ব্লেডটা দিয়ে আমি তার দেহে একের পর এক পোঁচ মেরে তাকে এক প্রকার জেব্রার মত ডোরাকাটা আল্পনায় রাঙ্গিয়ে তুলি । পার্থক্য শুধু এখানে সাদাকালোর বদলে অন্য রঙের ডোরা ।তার মরণ চিৎকার আমার মনকে ব্যাথিত করে তোলে । তাই সমস্ত কষ্ট থেকে আমি তাকে মুক্ত করে দেই । অবশেষে তার মুণ্ডুটা আমি আমার প্রকান্ড ডিপ ফ্রিজে আরো অনেকের সাথে সঙ্গোপনে যত্ন করে রেখে দেই ।

শিখা কেমন বিবর্ণ হয়ে গেছে এ কদিনেই । তার মুখমণ্ডলে বরফের আস্তরন জমে গেছে । আহারে, কত যত্ন করতো মেয়েটা ত্বকের । সময় নিয়ে আস্তে আস্তে আমি তার ফেসিয়াল করিয়ে দেই; মানে বরফগুলো ক্লিন করে দেই আর কি ।

ও নাজিরের কথা তো আমি ভুলেই গেছিলাম । গিয়ে দেখি সে পড়ে আছে বিছানার নিচে । যেভাবে রেখে গিয়েছিলাম ঠিক সেভাবে নয় । সে ক্রল করে একটু এগিয়ে যাবার চেষ্টা হয়তো করেছিলো । কিন্তু তার আগেই জ্ঞান হারায় । রক্তের একটা স্রোতস্বিনী গড়িয়ে যেতে যেতে শুকিয়ে গেছে । আহা বেচারা রক্তক্ষরণে অক্কা পেয়েছে । কালকে রাতে একটা ইমার্জিন্সিঅপারেশনে আমাকে ছুটে যেতে হয়েছিলো স্কয়ার হসপিটালে । ফিরে আসতে রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে । তারপর টায়ার্ড ছিলাম, অবশেষে প্রশান্তির ঘুম ।

আজ আমি কোথাও যাই নাই । সারাদিন ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলাম । প্রত্যুষে আমাকে আবার যখন ইমার্জিন্সিতে যাওয়ার জন্য ফরমাল হতে হয় ঠিক তখনই ক্লিনিক্যাল হেড আমাকে ফোন করে বসেন । আমার খোঁজে দুজন তদন্ত কর্মকর্তা অপেক্ষারত । যখন তারা শুনলো আমি এখনো বের হই নাই তখন তারা বাসায় আসতে চাইলো । কিন্তু আমি তাড়াহুড়া করে বলে দিয়েছি রাস্তায় নেমে পড়েছি । নাছোড়বান্দা জোচ্চোরগুলোও বলে ওঠলো তারা এখন রওনা দিয়ে দিয়েছে । আসতে আধাঘন্টা লাগবে । কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে আমি এখন দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেই । কি করবো না করবো । মানা করে দিলে এখন সন্দেহ করে বসতে পারে ।

নরমাল পোষাকে দুজন গম্ভীর চেহারার লোক এসে ডোরবেল চাপা শুরু করলো ; সার্কিট ক্যামেরায় আমি আগেই দেখে ফেলেছি । তারপর অত্যন্ত হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসলাম ওদের । কিছুক্ষন গল্প গুজব করলাম আমরা । আমার পেশা, ফ্যামিলি ইত্যাদি সম্পর্কে জিজ্ঞ্যাসাবাদ করলো । পরক্ষণে আসল ঘটনায় এলো ওরা । আমার সহকর্মী নাজির সম্পর্কে জিজ্ঞ্যাস করলো । তাকে কতটুকু চিনি কিংবা তার সাথে আমার কি রকম সম্পর্ক ইত্যাদি । ওর নিখোঁজ সংবাদ পেয়ে আমি চমকে ওঠার ভান করলাম না । ওদের সাথে সাধারণ ভাবেই কথাবার্তা চালিয়ে যেতে লাগলাম । ওরা ধরে নিলো আমি তা আগে থেকেই জানি । তারপর প্রশ্ন করা শুরু করলো কিভাবে জানলাম, কার কাছ থেকে শোনলাম হেনতেন । প্রত্যেকটা প্রশ্নেরই আমি ধীরে সুস্থে উত্তর দিলাম । তাদের একজন এবার বলা শুরু করলো_

আপনি কি জানেন যেদিন থেকে মিঃ নাজির নিখোঁজ হোন ঐদিন ঠিক একই সময়ে সোনিয়া নামের একজন পতিতা ও নিখোঁজ বনে যায় ।
-না ; তা আমি জানিনা ।
অতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকার পর তিনি বললেন,
আপনি মিথ্যে বলছেন ।
-কেমন করে বুঝলেন?
কারণ ঐদিন সেখানে আপনিও ছিলেন এবং এটাও সত্যি যে মিঃ নাজির মেয়েটির সাথে ডিল করেন । আপনি কি বলেন?
-ভেতরের অস্বস্তি বাইরে প্রকাশ করলাম না । আমার কিছুই বলার নেই ।
আমাদের ধারণা; চুক্তির মেয়াদকালীন শেষে তিনি মেয়েটিকে মার্ডার করেন । সেজন্যেই তার এ গা ঢাকা দেওয়া ।
এবার আমি একটু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলাম ।
-কি বলছেন এসব আবোল তাবোল । সে কিছুতেই এ ধরনের কাজ করতে পারেনা । আপনাদের কাছে নিশ্চয় এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য প্রমাণ নেই ।
আমি আগেই বলেছি এটা আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান ছাড়া কিছুই নয় । আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই, তবে তথ্য আছে । সেগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে । আশা করি দু একদিনের ভেতরেই ফল পেয়ে যাবো ।
পাশের লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে । আমার ভেতর দিয়ে একটা ভয়ের শিহরণ নেমে গেলো ।

আমি রোজকারমত ইমার্জেন্সি রুমে প্রবেশ করলাম । আমার সহযোগী কফি নিয়ে প্রবেশ করতেই নাজিরের কথা তোলে আমি আক্ষেপ করা শুরু করি । সে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো ।
কি বলছেন স্যার এসব আবোল তাবোল? নাজির স্যার মার্ডার করবে কেনো?
-কেনো তুমি কিছু শোনোনি?
নাহ স্যার; আমি তো জানতাম উনি দেশের বাইরে গেছেন কি একটা কাজে ।
-হায়রে, কি ঘটছে না ঘটছে কোনোদিকেই খেয়াল নেই তোমার । একটু চোখ কান খোলা রাখবে বুঝলে?
এ নিয়ে আমি ফান করার জন্য আমার আরেক সহকর্মীর কাছে গিয়ে বললাম তা । সেও মনে হয় ফান করলো এবং অর্থহীন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । সন্দেহভাজন হলাম আমি । এই লোক তো ফান করার কথা না । তাহলে কি তদন্তের স্বার্থে গুজব ছড়ানো হয়েছে যে সে বিদেশ চলে গেছে? কিন্তু তা কি করে হবে । সবাই তো জেনেই গেছে । ক্লিনিক্যাল হেড আমাকে ডেকে পাঠালেন । আমি সরাসরি তাঁকে জিজ্ঞ্যাস করলাম নাজির সম্পর্কে সে কি জানে । সে একই উত্তর ।
বাসায় পৌঁছার পর আমি অনেকটা ভেঙ্গে পড়ি । সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেই, খাওয়ার প্রতিও মন বিরূপ করে । আমার ভেতর বাস করা অর্ধদানবটা সারারাত আমাকে যন্ত্রণা দিয়েছে । ভোর হবার আগেই আমি বাসার পেছনের ঝোপটার মাটি খুঁড়ে নাজিরের অর্ধগলিত লাশটা বের করি । নিশ্চিত হয়ে আবার মাটি চাপা দিতে যাবো এমন সময় পেছনের একটা খচ খচ শব্দ আমার মনকে দ্বিধান্বিত করে ফেলে । দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার পথে একটা তপ্ত সীসা আমার উরুর মাংস ভেদ করে চলে যায় । মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ি আমি । ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে তদন্ত বিভাগের সেই লোক যে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসেছিলো । ধীরে ধীরে আমি সবই বুঝতে পারি । কেনো এরকম একটা গুজব রটানো হয়েছিলো । ইস! বড্ড বোকা আমি ।

কিন্তু আসলেই কি ততোটা বোকা আমি? চারপাশের লোহার শিক কি আসলেই আঁটকে রাখতে পেরেছে আমাকে? কিন্তু আমি তো চারপাশে ছুটে বেরিয়েছি, কল্পনার সৈকতে আশার প্রবাল নিয়ে খেলা করেছি । আমার ভেতরের ক্রুদ্ধ দানবটা প্রতিনয়ত আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে চলছে । পাপবিহব্বল কীটগুলো আমাকে চুষে চুষে সাইজে অনেক বড় হয়ে গেছে । এখন সেগুলো পেঁচিয়ে ধরার মত জোগানও পাচ্ছে । ভেন্টিলেটরের ভাঙ্গা একটা কাঁচের টুকরা পেয়ে যাই আমি । যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবার একটা আশার অশনি জ্বলে ওঠলো । নিশিতে পরম তৃপ্তি নিয়ে আমি আমার ত্বকে একের পর এক রক্তাল্পনা এঁকে চলছি । রক্তনালা গুলো সাপের মত এঁকেবেঁকে আমার বাহু বেয়ে টপ টপ করে নিচে জমা হয় । আহ্বহুদিন পর আবার পুরানো সুখটায় পুলকিত হয় মন । কজন এ রকম সুখ অর্জন করতে পারে? কজন পারে এ রকম শিল্পকর্মে পারদর্শিতা দেখাতে?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১২ সকাল ৮:০৮
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×