somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রেকো ৩১৫

৩০ শে জুন, ২০১২ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ময়লা ডোবাটার মধ্যখানটাকে কেন্দ্র করে বৃত্তমালা গুলো ক্রমেই প্রসার থেকে সম্প্রসারনে যাচ্ছে । এর পেছনের প্রভাব যদি আমরা খুঁজতে যাই তাহলে দেখা যাবে কয়েকটি সমন্বিত কার্যকলাপ । এর মধ্যে আছে শব্দ, বস্তু এবং বল । যদি শব্দের কথা বলা হয় তাহলে শোনা যাবে “টুপ-টুপ’’ করে একটা নির্দিষ্ট বিরতিতে শব্দটা হচ্ছে , বস্তু বললে পঞ্চাশ থেকে একশো কিলোগ্রাম ওজনের ছোট ছোটো শক্ত মাটির ঢেলা দৃষ্টিগোচোর হবে আর যদি এর পেছনের ফোর্স টা কি তা যদি খোঁজা হয় আমরা দেখতে পাবো যে পনেরো বছরের একটা রুগ্ন কালো দেহধারী । একটু পর পর একেকটা মাটির ঢেলা সে ছুড়ে দিচ্ছে ডোবার অজানা বস্তুকে নির্দেশ করে । টুপ করে যে শব্দের উৎপত্তি তা যেন বহু দূর থেকে তরঙ্গাকারে গড়িয়ে গড়িয়ে আসছে এবং এ শব্দের কারনেই কতিপয় বকগুলোর ধ্যান নষ্ট হচ্ছে । তারা বার বার দূরে সরে যায় তারপর বিরক্তিও ভয় নিয়ে আবার ফিরে আসে । বিরক্তকারী প্রানীটির সেদিকে কোনো খেয়াল নেই, সে তার মতো জলতরঙ্গ সৃষ্টি করে যাচ্ছে ।

একটু পর কারো একজনের ডাকে তার বাস্তব সংযোগ হয় । সে ফিরে আসে আবার তার ছোট্ট দেয়ালঘেরা পড়ার টেবিলে । অনিক ডাক শুনেই তার আউটার নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়; এমন কিন্তু নয় । বরং বার বার একই শব্দের পুনরাবৃত্তি ঘটার কারণে সে তার কল্পিত জগৎ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয় ।

কিরে কি করছিলি এতক্ষন? এতবার ডাকলাম শুনিস নি? ঝাঁজ মাখা কণ্ঠে বাক্যবাণ ছুঁড়ে দিলো একজন গৃহপরিচারিকা ।

প্রথমে একটু ইতস্তত তারপর ধীরে ধীরে উত্তর এলো অনিকের, ‘পড়ছিলাম ।
-কী পড়ছিলি?
কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ ছোট্ট উত্তর অনিকের ।
-এতই মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলি যে এতজোরে ডাকার পরও শুনতে পাসনি না? হারামজাদা আমার সাথে মিথ্যাবাজী । তোর আইপড টা কোথায়?
আমি আইপড বেরই করিনি, নিরপরাধের মতো হাহাকার শোনা গেলো তার কন্ঠে ।
-তোকে বলছি আইপড বের করে আমার হাতে দে, চিৎকার করে বললেন মহিলা ।

আস্তে ড্রয়ার থেকে ডিভাইসটা বের করে দিয়ে দিলো অনিক । মহিলা এবার একটি কথাও না বলে চলে গেলেন কিচেনের দিকে । মনটা খারাপ হয়ে গেলো ওর । আইপড হারানোর আক্ষেপে নয় বরংআচরণগত কারনে । ইরেজারের জন্য ড্রয়ারে হাত দিলো অনিক । হাতে একটা ধাতববস্তু ঠেকল । বের করে আনল সে । বস্তুটি হচ্ছে তার সেই প্রিয় আইপড যেটি একটু আগে হরণ করা হয়েছিলো । অন্য কেউ হলে চক্ষু গোল আলু বানিয়ে তাকিয়ে থাকতো কিন্তু ওর তেমন কিছু হলো না । সাময়িক একটু বিস্ময়াবেগ ঘটলো মাত্র । এসবের সাথে সে বহু দিন ধরেই পরিচিত এবং একঘেয়ে জীবনটাতে এটাই ওর উপভোগ্য বিষয় । তাই সে মনে করে এটা একটা ম্যাজিক ওয়ার্ল্ড ।
এ ওয়ার্ল্ডটার নাম ট্রেকো;কারো কারো ট্রেকো 50, ট্রেকো 100, ট্রেকো 500 ইত্যাদি ।


ট্রেকো আসলে এই মনো ওয়ার্ল্ডের আদি অধিবাসীদের বোঝায় । যাদের উপস্থিতিতে এই ক্রিয়েটিভ মাইটির আলোড়ন ঘটে । ট্রেকোরা চায়ই এই মনো ওয়ার্ল্ডে একছত্র আধিপত্ত চালাতে । বাহক এখানে কিছুই করতে পারে না । ট্রেকো 315 এর বাহক হচ্ছে অনিক নামের পনেরো বছরের ছেলেটি । যে নিয়মিত স্কুলে যায়, কোচিং করে এবং অবশেষে বাসায় ও প্র্যাকটিস করে বলে আকাঙ্ক্ষিত ফলটি বার বার হাত ফস্কে বেরিয়ে যায় । একটা সময় আছে যখন মানুষ চেষ্টা করে সব কিছু নিজের অনুকূলে রাখতে ; সে সময়টা চলে গেলে তখন সে নিজের প্রতি একটা অসহিষ্ণুতা অনুভব করে । কিন্তু সময় চলে যাওয়ার আগেই যখন অনিকের জীবনটা তেতিয়ে ওঠেছিলো তখন সে তার অনুভূতি কিংবা ইচ্ছাগুলোকে প্রকাশ করতে চাইতো বাস্তবের মতো করে । এ দু জগতের মেলামেশার মধ্য দিয়ে তাদের অতি সূক্ষ সূতোগুলো একে অপরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে যায় ।
যার কারনে অনিক সেই গিঁটগুলো খুলতে পারেনা এবং অনুধাবন করতেও পারেনা কোনটা রিয়েল আর কোনটা ক্রিয়েটিভ । সমস্যাটা শুরু হয় ওর ব্যাপারটা বুঝে ওঠবারও আগে ।



লি’ মন খারাপ করে একা একা বসে আছে । সামনে বিস্তীর্ণ খোলা প্রান্তর জুড়ে ঘাসফুল আর প্রজাপতির গভীর মিতালি লক্ষ্য করার মতো । এই একটা জায়গায়ই ওর বার বার বিচরন ঘটে তা ওর মন কতৃক ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত হোক । সে তার ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে শিখেছে আর জেনেছে জীবনের ব্যাপ্তি মাত্র এক সেন্টিমিটার । এক সেন্টিমিটারের এই জীবনে ছত্রিশ ইঞ্চির স্বপ্ন দেখাটা রীতিমতো বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে । তারপরও বিনা খরচে যদি এই বিলাসিতায় গা ভাসানো যায় মন্দ কী । তাই সে সপ্ন দেখে_জীবনকে সীমাহিন রূপে পরিচালিত করার ।

নীহা একটি ফ্লেয়ার হাতে নিয়ে লি’ কে খুঁজতে বের হলো । জঙ্গলের রাস্তাটা পার হতে পারলেই আর কোনো ভয় নেই । এই অন্ধকারে নির্জন রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে আতংকে বুকটা দুরু দুরু করছে ওর । তার মাঝে আছে রক্ত হিম করা ভয়ংকর নেকড়ে গর্জন । হাঁটতে হাঁটতে নীহার মনে হচ্ছে, সে যেন মহাকাশের শূন্যতার মধ্য দিয়ে চলছে । দু পাশের নক্ষত্র গুলো মিট মিট করছে জোনাকির মতো । আসলে নক্ষত্র নয় জোনাকিই ছিলো ওগুলো । এক মুহূর্তের জন্য নীহা হারিয়ে গিয়েছিলো অসীম শূন্যতায় । কিন্তু যখন দেখলো ওর চারপাশের জগতটা সসীম, পরিচিত বস্তুসমুহ, পরিচিত শব্দে কলময় তখন নিজেকে নিঃসঙ্গ এক কয়েদী মনে হলো । চারপাশের প্রকৃতিকে মনে হল ফাঁদ । রাস্তা পেরিয়ে বড় একটা সমতল ভূমিতে চলমান অবস্থান নিলো সে; অন্ধকার ক্রমেই সরে আসছে সব কিছু আস্তে আস্তে ভেসে ওঠছে ছবির মতো করে । নীহা যখন লু’র কাছে পৌঁছলো তখন ফ্লেয়ারের আলোকে নগন্য ও ম্লান দেখালো ।
মাত্র দু কিলোমিটারের তপাৎ তাতেই রাত দিনের মতো পার্থক্য ।

একদিকে সূর্যদার গন গনে অগ্নি বর্ষণ আর বিপরীত দিকে চাঁদ মামার ফক ফকা হাঁসি । এ দুই মিলে ব্যালেন্সটা ঠিক রাখছে । এ প্রান্তে মোটামুটি রোদ্র পড়ছে ।ট্রেকানরা এ রকম পরিবেশের সাথে এক রকম খাপ খাইয়ে নিয়েছে । সময় এখানে শম্ভুক গতিতে ধাবমান । তারপর ও ক্ষুদ্র এ সময়কে একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক দীর্ঘ মনে হয় । স্রষ্টার কাছে দুনিয়াটা দু দিনের ;কিন্তু আমাদের কাছে হাজার বছরের ।

কি ব্যাপার ? অসময়ে এখানে তোমাকে প্রায়ই বসে থাকতে দেখা যায়, নীহা জিজ্ঞাস করলো ।

-অসময়টা কখন ? লি’ অন্যমনস্ক হয়ে পালটা প্রশ্ন করে ।

যে সময়ে কোনো কাজ কাম থাকেনা ।

-ভুল । যে সময়ে কোনো ক্রিয়া থাকেনা ; আমি বসে বসে প্রকৃতি উপভোগ করছি । আমার হৃদপিণ্ড কাজ করছে, আমার চক্ষুদ্বয় প্রকৃতির সৌন্দর্যের রস আস্বাদন করছে । এসবের মানে ক্রিয়া চলছে ।

প্রকৃতি! চারপাশে একটা নগন্য দৃষ্টি ফেলে মুখ ব্যাদান করলো নীহা । এই প্রকৃতি দেখতে কত সুন্দর আবার কুৎসিতও ।

-কেমন? হঠাৎ যেন সম্মোহন ভাঙল লি’র ।

তুমি কি বুঝতে পারছো না আমরা এখানে হোস্টেজ ।

-কার দ্বারা ? লি’র ভাবখানা যেন সে কোনো পাগলের প্রলাপে কান দিচ্ছে ।

নীহা তার থিওরিটা এভাবেই শুরু করলো__
“এই ট্রেকো স্পেসে আমরা কিন্তু সবকিছু স্বইচ্ছায় করতে পারিনা । তুমি একটু কনসানট্রেট করলেই বুঝতে পারবে যে আমরা একপ্রকার বন্দী এখানে । আমাদের নাকের সামনে ঝুলানো মূলাটা কিন্তু এই মনোরম প্রকৃতিটাই । আমাদের ভেতর ইচ্ছা জাগে, আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয় । কিন্তু তারও একটা সীমাবদ্ধতা আছে যা আমরা কেউই অতিক্রম করতে পারিনা । মাঝে মাঝে আমরা ইচ্ছার বিরুদ্ধেও অনেক কিছু করে ফেলি । তবে স্বল্প সময়ের জন্য । তাহলে আমাদের এই ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা এবং সেন্টিমেন্টাল ব্যাপারগুলোতে নিশ্চয় কোনো আউটার ফোর্স কাজ করছে । আমাদের খুঁজে বের করতে হবে সেই ফোর্সটা কি এবং কেনো আমারা অন্যের ইচ্ছেটাকে নিজেদের বলে পোষণ করবো ।”। একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামল নীহা ।

লি’ খানিকক্ষন কি যেন ভাবলো । আচমকা জিজ্ঞ্যাস করলো, তুমি কি ঈশ্বর বিরোধী?
-এ কথা কেন জিজ্ঞ্যাস করছো ?

এ জন্য যে আমাদের সেন্টিমেন্টাল ব্যাপার গুলোকে চালনা করেন সে তিনিই । তাঁর ইচ্ছেই আমাদের ইচ্ছা । অতএব এর জন্য তুমি নিশ্চয় তাঁকে দোষারোপ করবে না ।

-অবশ্যই করবো । তিনি এই ট্রেকে কেনো আমাদের বছরের পর বছর এভাবে নিঃসঙ্গ অবস্থায় ফেলে রাখবেন ? নীহা কপট রাগ দেখালো ।

-নিঃসঙ্গ! তাহলে আমি কি জড়পদার্থ ?

নীহা ফিক করে হেঁসে দিলো ।

নীহার চোখে একধরনের আবেগ খেলা করলো । লি’ তাতে সাড়া দিলো । পরস্পরের ঠোঁটজোড়া চুম্বকের মতো আকর্ষিত হলো ।

নীহা বলল, চলো আমরা দুরের ঐ পর্বতমালার মালভূমিতে যাই ।

-না, সোনা । এটা কখনোই সম্ভব নয় । তুমি ভালো করেই জানো ট্রেকোকে চারটি স্পেসে ভাগ করা হয়েছে । এর তিনটিতেই আমাদের এক্সেস সম্পূর্ণ প্রহিবিটেট । লি’ ভরাট গলায় বলল ।

কিন্তু আমাদের তা জয় করতে হবে । আমাদের জানতে হবে দূরের ঐ মালভূমিতে কি আছে , জানতে হবে ব্ল্যাক ফরেস্ট কেনো এত ভয়ংকর কিংবা নীল দ্বীপে কেনো কেউ যেতে পারে না । নীহা ক্রুদ্ধ কন্ঠে কথাগুলো বলল ।

যেতে যেতে লি’ হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো ।

নীহা জিজ্ঞ্যাস করলো, কি হলো ?

-কান পাতো, একটা অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাবে; লি’ বলল ।

হ্যাঁ, টুপ করে একটা শব্দ হলো । একটু পর আরেকটা হলো । এভাবে নির্দিষ্ট বিরতিতে শব্দটা চলতে থাকলো ।

লি’ আর নীহা অচিরেই কৌতূহল বশত শব্দের উৎসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো । কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওরা যখন কাঙ্ক্ষিত স্থানটুকুতে পৌঁছে গেলো । তার এক মুহূর্ত আগেই শব্দটা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু তার প্রভাব গুলো থেকে গেছে । ওরা দেখতে পেলো ডোবাটার পানিতে মৃদু আলোড়ন । আশে পাশে আর কেউ নেই ।


১(অ)
অনিক আজকে স্কুলে যায়নি । সে পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে । একটু পর ওর মা এসে জাগিয়ে দেয় ওকে । ওর চোখ লাল হয়ে আছে । অনবরত বিলাপ বকছে সে । সকলে ধরাধরি করে ওর মাথায় পানি ঢাললো । ধীরে ধীরে অনিক শুধু একটি বাক্যই বলতে লাগলো । ‘আর আমি কোথাও যাবনা’...

২(অ)
লি’ আর নীহা আজকে ট্রেকোর গুপ্ত রহস্য ভেদ করতে যাচ্ছে । পরস্পরের আস্থা ও দীর্ঘসময়ের আলিঙ্গনই মূলত ওদের উৎসাহের আগুনে ইন্ধন জুগিয়েছে । প্রথমেই ওরা ডেস্টিনেশন ঠিক করলো ভয়ংকর ব্ল্যাক ফরেস্ট । ধীরে ধীরে অন্ধকার পথ ধরে হাঁটছে ওরা । পরস্পরের হাত ধরা, শারীরিক উষ্ণতা ইত্যাদি ওদের মনোবলকে আরো শতগুন বাড়িয়ে দিয়েছে ।
ফ্লেয়ার নিয়ে অন্ধকারের মাঝখানে আলোর পথ তৈরী করে করে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা । মানবিক অনুভূতিগুলো রীতিমত বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছে । শারীরিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও সেই দলে শামিল হয়েছে । নইলে পা কেনো চলতে আপত্তি করবে? ফুসফুস কেনো হাল ছেড়ে দেবে? হিংস্র নেকড়ে গর্জন বায়ু প্রকম্পিত করে । আরেকটি অদৃষ্ট সত্তার উপস্থিতি অনুভব করে ওরা দুজনেই । নেকড়েরা ঘিরে ফেলার আগেই ওরা প্রাণপণে দৌড়ে বেরিয়ে যায় ভয়ংকর সেই স্থান থেকে ।

ভেঙ্গে পড়না । এখনো আমাদের গন্তব্য শেষ হয়নি । আমরা এবার নীল দ্বীপে যাবো, নীহা আত্নবিশ্বাষের সাথে কথাগুলো বলে ।

-আঁতকে ওঠে লি’ বলল, নীল দ্বীপে নীলিরা থাকে । ওরা আরো ভয়ংকর আরো হিংস্র ।

তাতে কি? আমাদের একটা দুর্লভ এডভ্যান্সার হয়ে যাবে, নীহা বলল ।

-অনেকক্ষণ কি যেন ভাবলো লি’ । তারপর যে কথাটি বলল তা তারপর যে কথাটি লি' বলল তা স্বপ্নেও ভাবেনি নীহা । লি’ বলল না ; আজ আর আমি কোথাও যাবো না ।

নীহা যেন একটা প্রচন্ড শক খেলো । কোথাও যাবে না মানে! কি বলছ এসব?

-ঠিকই বলছি আমি । এটা আমার ট্র্যাক । আমি এখান থেকে বের হতে পারবো না । কিন্তু তুমি পারবে । কারন তুমি অনুপ্রবেশকারী ।

কি বলছো এসব? আমি তো কিছুই বুঝছি না । কত বছর আমরা এই ট্রেকে একসাথে ছিলাম।

-সময় এখানে আপেক্ষিক । বিশাল মহাসাগরে কতটুকু পানি আছে পরিমাপ করা যেমন অর্থহীন । তেমনি এখানে দিন, মাস, বছরের হিসাব ও উইয়ার্ড । তোমার ট্রেক ৩৬৫ । তুমি ওখানেই চলে যাও । আমার ট্রেকে আমাকে থাকতে দাও । আর আমি কোথাও যাবনা এই ট্রেক ছেড়ে ।


১(খ)
অনিক সারা রাত ছটপট করেছে । মনটাকে একটা দিকে কেন্দ্রীভূত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে । ব্যাপারটা খুবই কঠিন, খুবই কষ্ট হচ্ছে ওর । তারপরও সে হাল ছাড়েনি । অদৃশ্য একটা শক্তি প্রভাব খাটাচ্ছে ওর মনের ওপর । তাকে কিছু একটা
কল্পনা করতে বাধ্য করছে । কিন্তু দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অনিক কিছুতেই তা হতে দেবে না । শেষপর্যন্ত সে পারে তার ইমাজিনেশন নিয়ন্ত্রণ করতে ।

“প্রত্যেক হিউম্যান মাইন্ডেরই চারটি সাইড আছে । সেগুলো হচ্ছে_ ওপেন সাইড, ডার্ক সাইড, হিডেন সাইড আর আন নোন সাইড । ওপেন সাইডে সাবজেক্ট যা জানে অন্যরাও তা জানে; মানে সবার জন্য উন্মুক্ত জোন । ডার্ক সাইডে সিক্রেট গুলো কেউ জানে, কেউ বা জানে না । কাছের মানুষ কিংবা বন্ধুরা এ সাইডে সহজেই প্রবেশ করতে পারে । হিডেন সাইড, সাবজেক্ট নিজে তা সম্পর্কে অবগত কিন্তু অন্যদের সে জানতে দিতে নারাজ । আন নোন সাইড মানে সাবজেক্ট নিজে অবগত নয় কিন্তু অন্যরা ব্যাপারটি ঠিকই জানে । ট্রেকো ৩৫০ তে নিষিদ্ধ তিনটি স্থানই অনিকের ডার্ক, হিডেন আর আন নোন সাইড । আর ট্রেকো হচ্ছে ওর কল্পনা বিলাসী মন” ।


অনেকদিন পর আজ স্কুলে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে অনিকের । বন্ধুদের কুশলাদি, দুষ্টুমি সব মিলিয়ে বেশ ভালোই লাগছে । এরই মধ্যে একটা মেয়েকে ভীষণ ভালো লেগে যায় ওর । মেয়েটি অন্য স্কুল থেকে বদলি হয়ে নতুন এসেছে । ক্লাসে দু একবার চেষ্টা করে সে ভাব জমানোর জন্য । কিন্তু অন্য ইতর ছেলেগুলোর জন্য পারছে না । সবুরে মেওয়া ফলে । তাই ফলল । মেয়েটি নিজেই এগিয়ে এলো ওর সান্নিধ্যে । বলে ওর নাম লিনা ।

এভাবেই শুরু হয় ওদের কথোপকথন । স্বাভাবিক সম্পর্কটা অস্বাভাবিকতায় রুপ নেয় । এভাবেই বছর খানেক পেরিয়ে যায় । অবশেষে একদিন ওরা সমুদ্রভ্রমনে বের হয় । সবার মধ্য থেকে আলগোছে ওরা দুজন কেটে পড়ে । নির্জন একটা পরিবেশ বেছে ওরা সেখানে স্থান নেয় । একের পর এক ঢেউ আছড়ে পরে সৈকতের কোল ঘেঁষে ।

এসময় লিনা আনমনে বলে ওঠে, আমরা যদি এই সমুদ্র পেরিয়ে দূরের আকাশ ছোঁয়া দিগন্তে পৌঁছুতে পারতাম কি মজা হতো তাই না?

-অনিক অবাক হয়ে বলে, এতে মজার কি আছে?

মজাটা হচ্ছে ফ্রিডোম । তোমার কি একটুও মনে হচ্ছে না বিশাল এই পৃথিবীতে আমরা একপ্রকার বন্দী ?

-বন্দী কেন হতে যাব? আমরা তো যেখানে ইচ্ছা সেখানেই যেতে পারি ।
তাহলে পারবে এই সমুদ্র পাড়ি দিতে কিংবা আটলান্টিকা অথবা পেরুর ঘন অরণ্য?

অনিক নিস্তব্দ হয়ে যায় । এই কথাগুলো তার অতিপরিচিত লাগছে ।

-আমরা আমাদের ইচ্ছামত সবকিছু করতে পারিনা । কারন তার ওপরও একটা আলাদা সত্তা একছত্র আধিপত্য করে । যেমন আমরা এখন ইচ্ছা করলেই সমুদ্র পাড়ি দিতে নামতে পারিনা; লিনা কথাগুলো বলতে থাকে ।

অনিক নিস্তব্দ হয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে ।

হঠাৎ লিনা চেঁচিয়ে বলল ঐ দেখ দূরে একটি সানগ্লাস পড়ে আছে । অনিক বলল, পড়ে থাক । চল আমরা উঠি এবার । দুজনে হাঁটতে শুরু করে ।


পরিশিষ্ট

শিপ্রা, কি করছিলি ?
-পড়ছিলাম। শিপ্রার জবাব । প্রশ্ন করে ওর বড় বোন অর্পনা ।
এই আমি একটু বের হব; তোর সানগ্লাসটা দে তো একটু ।
-নিজে একটা কিনে নিতে পারো না? সবসময় আমারটা খোঁজো কেবল ।
দে না আজকের জন্য একটু ।
-সরি, চশমাটা নেই । ফেলে এসেছি ।
নেই মানে? কোথায় ফেলে এসেছিস?
-ফ্রেন্ডের বাসায়, নির্লিপ্ত জবাব শিপ্রার ।
ফিরে যেতে গিয়েও ঘুরে তাকায় অর্পনা । বলে তোর বইয়ের ফাঁকে ওটা কি?
-চশমা, বলে সানগ্লাসটা এগিয়ে দেয় সে ।

আর দেরি করে না অর্পনা । সানগ্লাস পেয়েই দেয় চম্পট । জানে মাঝেমধ্যে এরকম করে শিপ্রা ।
শিপ্রা আবার ডুবে যায় তার কল্পনার প্রহরে । এ জগতটার নাম পৃথিবী ।

-------





সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:১৯
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×