somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক্সেরিন জিরো (কল্প কাহিনী)

১১ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিষাদগ্রস্থ ভায়োলিনের করুণ সুরে ইয়ন শহর বেদনার্ত হয়ে পড়েছে ।সন্ধ্যার এই চমকপ্রদ আয়োজনে ঝকঝকে সুউচ্চ শ্বেত ভাস্কর্যের উপর দিয়ে এক ঝাঁক বাদুড় ডানা মেলে । সবই আসলে মেকি । বাইভার্বাল নিয়ে আজ কেউ বের হচ্ছে না ।আজকের এই দিনে অতীতের সেই নির্ভীক বীরাঙ্গনেরা বীর বিক্রমে সন্তর্পণে বিলিয়ে দিয়েছিলো তাদের বুক ভরা ভালোবাসা । এলিয়ে দিয়েছিলো ইহকালের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে দামি সম্পদ যা মানুষের জীবনে একবারই আসে, যা একজন মানুষ একবারই ধারন করতে পারে । সমবেত কন্ঠে সবাই কোরাস পাঠ করছে । পান করছে আকন্ঠ উত্তেজক তরল । হিলিয়াম গ্যাসের বড় বড় গোলক গুলো বিভিন্ন জায়গায় শূন্যে স্থির হয়ে ভেসে আছে ।ইউনি লকার নিয়ে সামরিক বাহিনীর লোকজন সবার মধ্যে সাম্য গড়ে তোলছে । একগুচ্ছ ফুল হাতে শুভ্র পলিমারের পোশাক পরিহিত এক দঙ্গল মানব মানবী সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে থাকলো । বিভিন্ন প্যাভিলনে বিচিত্র সব উপকরণ; কোনোটিতে আছে ফ্লায়িং স্যুট, কোনোটিতে মেমরী আপডেটর, আবার কোনোটিতে লটারি এবং তার প্রাইজ হচ্ছে পৃথিবী থেকে ঘুরে আসা । এ পর্যন্ত মাত্র দশজন ভাগ্যবান ব্যাক্তি লটারিতে জিতেছেন । প্রতি বছর একবারই লটারি হয় । ভাগ্য ভালো থাকলে একজন জিতে আর না হয় কেউই ভাগ্য প্রসন্ন হয়না । পূর্বপুরুষেরা পৃথিবীর গল্প বলে যেতেন তাদের উত্তরাধিকারদের কাছে । নাইট্রেজেনের নীল আকাশের কিংবা প্রশান্তির এক নিঃশ্বাস বিশুদ্ধ অক্সিজেনের অথবা একগুচ্ছ রঙ্গিন ফুলের গল্প । সবই স্বপ্ন নইলে ঘোরগ্রস্থ আহাম্মকের প্রলাপ । নইলে যেটা সম্ভব নয় সেটার বর্ণনাই কেনো দিতে যায় তারা ?
সিনথিয়া কখনো পৃথিবীতে যেতে চায় না । কারণ সে বিশ্বাস করেনা । আজ থেকে দুশো বছর আগে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেছে । আবার কেউ কেউ বলে পৃথিবীতে এখনো আমাদের সেই বীরেরা রাজকীয় পদার্পণ করে যাচ্ছেন । তারপরও সে একটি লটারি কেনে । পৃথিবী জেতার আশায় নয় নিজের মনকে শান্তনা দিতে । সিনথিয়ার নীল চোখের দৃষ্টিতে স্বপ্নিল অনুজীবেরা খেলা করে । সে হতে চায় আহানের মত আত্মত্যাগী, কিংবা পলিনের মত দুঃসাহসী । এদের ভাস্কর্যের সামনে গেলে আপনিই মাথা নিচু হয়ে আসে । কতবার যে সিনথিয়া আহানের মুষ্টিমেয় পেশীবহুল বাহুতে কপাল ঠেকিয়েছে । পলিনের দেবরূপ মুখমণ্ডলে কোমলভাবে পরশ বুলিয়ে গেছে । তার বিশ্বাস একদিন তার স্বপ্নপুরুষেরা জেগে ওঠবে । এক্সেরিনের যত অরাজকতা স্বৈরচারীতা সব ভেঙ্গে খান খান করে দেবে । কিন্তু তারা তো কবেই মরে গেছে । আমাদের পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরা চালাকি করে শত বছর ধরে বেঁচে আছে, শত মানুষের বুকে । ওর কন্টাক ল্যান্সের স্বচ্ছ সংবেদনশীল রিফ্লেক্টরটা চক চক করে ওঠলো । মানুষের সুখ দুঃখ কেড়ে নিয়েছে যন্ত্র । মানুষ এখন ইচ্ছে করলেই কাঁদতে পারেনা, হাঁসতে পারেনা । কিন্তু আবেগ ঠিকই আছে । সিনথিয়ার আবেগ এখন কাঁদছে ।

.৭৫
দীর্ঘ যাত্রার বিরতির পর টেক্সাসের বিজ্ঞান পরিষদের সামনে এসে থামলেন ফ্রাং । এক মুহূর্ত ইতস্তত করে ভেতরে ঢুকে পড়লেন । রেটিনা স্ক্যান করার পর স্বয়ংক্রিয় দরজাটা এক মুহুর্তের জন্য খুলে গেলো । ভেতরে একুরিয়ামের মত বড় একটি কাঁচের গোলক । তার ভেতরের সারিবদ্ধভাবে কফিনের মত ক্যাপসুল । ফ্রাং ক্যাপসুলের কাঁচের ঘোলাটে ঢাকনার দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ । ভেতরে একেকটি নগ্ন মানব দেহ । মানব দেহ না বলে মানবাকৃতির দেহ বলাই শ্রেয় । বিভিন্ন ধরনেরযন্ত্রপাতি আঁটা ক্যাপসুল গুলোতে । গদিমোড়া নিজের রকিং চেয়ারে গিয়ে বসলেন ফ্রাং । একটু পর চিপ ডিরেক্টর ‘জর্জ ম্যাকাইন’ আসন গ্রহণ করলেন এবং প্রথমেই ফ্রাং এর নাম দিয়ে শুরু করলেন ।
আমাদের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সি নিয়ে কি ভাবলেন ডঃ ফ্রাং লি?
-নিঃসন্দেহে এটি মানব কল্যাণ বয়ে আনবে স্যার । কিন্তু এখানে ভাবনার অনেক ব্যাপার আছে বৈকি ।
যেমন?
-এক্সেরেনিয়াম কোম্পানি আমাদের কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কপোট্রন দিয়েছে । বলা হয়েছে এর মধ্যে মানব অনুভূতির ২৫ শতাংশ ইনপুট করা সম্ভব । তার মানে আমরা যা বলবো তার সেভেন্টি ফাইভ পার্সেন্টই ওরা বুঝবে না ।
আমরা এখানে মানুষ সৃষ্টি করতে আসি নি’ মিঃ ফ্রাং , জীববিজ্ঞানী ‘লুইস হ্যামিন’ খেঁকিয়ে ওঠলেন ।
-আপনি কথাটা ধরতে পারেন নি, মিঃ হ্যামিন । আমরা যা করব বা বলব তার মাত্র পঁচিশ পার্সেন্ট ওরা ধারন করতে পারবে । আমাদেরক্রিয়া কার্যক্রমের বাকি সেভেন্টি পার্সেন্ট পরিশ্রমই বৃথা যাবে । কিন্তু কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কাজ হচ্ছে হোমোস্যাপিয়েনদের সার্ভ করা, তাদের কষ্ট লাঘব করা, টোয়েল রিডিউস করা, ক্যালরি রক্ষা করা ইত্যাদি। এ দুটোর মধ্যে আমি কোনো হিসেব মিলাতে পারছি না ।
বিজ্ঞান পরিষদ কিছুক্ষণ থম মেরে রইলো ......
অবশেষে জর্জ ম্যাকাইন মুখ খুললেন । তাহলে আপনি এখন কি করতে বলছেন?
-কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফ্রাং বলে ওঠলেন, আমার কিছু বলার নেই স্যার ।
সেকি? আপনিই না বললেন...... আচ্ছা বাদ দিন । আপনি নিঃসংকোচ ভাবে আপনার মতামত জানাতে পারেন মিঃ ফ্রাং । সে অধিকার আপনার আছে । দয়া করে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না ।
-একে একে সবার চোখে মুখে তাকালেন ফ্রাং । আমাকে যদি জোর করা হয় তাহলে আমি বলবো সমস্ত প্রজেক্ট বাতিল করা হোক । অল্প বিদ্যা আর অধিক বিদ্যা দুটোই ক্ষতিকর ।
লাফিয়ে ওঠলেন রোবোটিক্স বিভাগের প্রৌড় প্রকৌশলী ‘রোনিন্সন’ । কি যাতা বলছেন এসব । এই প্রজেক্টের পেছনে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে তার কি হবে?
আমাদের ব্যাবসার কি হবে? বলে ওঠলেন এক্সেরেনিয়াম কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা ‘জন বুকার’।
ম্যাকাইন হাত তুলে বললেন, আস্তে! উত্তেজিত হবেন না আপনারা । ডঃ ফ্রাং আমার সহকর্মী তারচেয়ে বড় কথা এই পরিষদের টপ মেম্বারদের একজন । তাঁর কথার গুরুত্ব আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি আপনারা তা পেরেছেন কি না জানি না আমি । আমাদের একটু চিন্তা ভাবনা করতে হবে এ ব্যাপারে ।
রোনিন্সন বললেন, তাঁর কথার গুরুত্ব আমিও বুঝতে পেরেছি প্রফেসর । ফেলে দেবার মত নয়, তবে এও ঠিক এখন আর পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই ।
সবাই যখন ভ্রু কুঁচকে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন তখন ফ্রাং কথা বলে ওঠলেন ।
-আমরা কিন্তু ইচ্ছে করলে এ প্রজেক্ট চালু রাখতে পারি ।
সবার দৃষ্টি ছেঁকে ধরলো তাঁকে ।
-আমরা যদি মানব অনুভূতির সবটুকু তাদের কপোট্রনে ইনপুট করাতে পারি তবেই এটা সার্থক হবে ।
এটা কি সম্ভব? জিজ্ঞ্যাস করলেন কেউ একজন ।
কেউ জবাব দিলো না ।
সম্ভব না হলে তো আর এ প্রজেক্ট রেখে লাভ নেই, ম্যাকাইন বললেন । আমি এক্সেরেনিয়ামের প্রপোজাল বাতিল করে দিচ্ছি । এই বলে তিনি ফাউন্টেইন পেন বের করে মাত্র সাইন করতে যাবেন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারলেন না । একটা শক্তিশালী শব্দসীসা তাঁকে বিদ্ধ করে তাঁর সাময়িক কার্যক্রম এক মুহূর্তের জন্য স্থির করে দিলো ।
সম্ভব । এই সেই সব্দসীসা । উৎস হচ্ছে ‘জন বুকার’।
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামে মডিউলেশন প্রসেসে সেন্টিমেন্ট হস্তান্তর করা সম্ভব ।
পারবেন আপনি? রোনিন্সন সোল্লাসে চেঁচিয়ে ওঠলেন ।
হ্যাঁ; আমার পরিচিত একজন আছেন যিনি এই ফিল্ডে বহুদিন কাজ করেছেন । মূলত সাম্প্রতিক তথ্যটি আমি ওর জার্নালেই পেয়েছি । বুকার বললেন ।
কথাটা আমিও শুনেছি । হার্ভাড তাঁকে এনকারেজ করেছে এ ধরনের গবেষণায় । কিন্তু এখন আর তা সম্ভব নয়, ম্যাকাইন বললেন ।
কেন? সমস্যা কি । সবাই অস্থির হয়ে পড়েছেন । ম্যাকাইন এ রকম হম্বতম্বি করছেন কেনো?
-কারণ আমাদের প্রজেক্টটা বাতিল হয়ে গেছে আগেই, ফ্রাং বললেন ।
স্তব্ধ হয়ে গেলো পুরো হলঘর ।
হ্যাঁ; আমি আর মিঃ ফ্র্যাং গতকালকে এ নিয়ে অনেক ভেবেছি । তারপর একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে এ প্রপোজাল আগেই ডিসএপ্রোভ করে ফেলেছি । আর করার কিছুই ছিলোনা । আমি জানতাম আপনারা ও একই মতামত দিতেন এবং অনতিলম্বে আমাকে তাই করতে হতো । অতি শান্তভাবে ব্যাক্ত করলেন ম্যাকাইন ।
থ বনে গেলো সকলে ।
তারমানে আপনি আগেই সাইন করে দিয়েছেন? আমাদের মতামতের যেহেতু মুল্য নেই তাহলে ডাকার আর কি দরকার ছিল ।
অবশ্যই আপনাদের মতামতের মূল্য আছে । আপনারা এ পরিষদের যুগ্ম মেম্বার । আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ এবং সমবেত জ্ঞান না পেলে আজ বিজ্ঞান এ পর্যন্ত আসতে পারতো না ।
ফাক অফ!!
এ্যাসহোল, হোয়াট আর ইউ টকিং এবাউট?
আপনাকে কেউ বলেনি আমাদের পশ্চাদেশ শুঁকে শুঁকে মেম্বারশীপে ঠাই দিতে আর এভাবে হেনস্তা করতে, শোরগোলের মাঝেও বুকারের কথাটি স্পষ্ট শুনতে পেলেন ম্যাকাইন ।
যাই বলেন আমি আর মিঃ ফ্রাং এ প্রতিষ্ঠানের জন্মদাতা । আমাদের সিদ্ধান্ত আপনাদের মানতেই হবে ।
হেহ্! জন্মদাতা । এ পরিষদের মেম্বারদের অন্তঃসত্ত্বা করেই আপনারা জন্ম দিয়েছেন আজকের এই বিজ্ঞান পরিষদ; ভুলে গেছেন সেই কথা? রনিন্সন বলে ওঠলেন ।
আমরা এ প্রতিষ্ঠানের মেম্বারশীপ থেকে রিসাইন করছি, বুকার আর রনিন্সন বলে ওঠলেন ।

নাগরিক ব্যাস্ততা আর কোলাহল তিমির বিস্তীর্ণতায় স্তিমিয়ে এলে নগরবাসী যখন নান্দনিক ও জৈবিক অত্যাবশ্যকীয় কার্যক্রমে মশগুল; ঠিক তখনই একদল মুখোশ পরিহিত লোক এই নৈঃশব্দ্যতা না ভেঙ্গে বিজ্ঞান পরিষদের শক্তিশালী সিকিউরিটি ভেঙ্গে দেয় । আর একে একে বের করে আনে সত্তরটি ক্যাপসুল ও তার আনুসঙ্গিক কলকব্জা । এক্সেরেনিয়াম কোম্পানি তাদের স্বত্ব বিক্রি করে রাতারাতি পাতাটারি গুটিয়ে টেক্সাস ছেড়ে পাড়ি জমায় গুপ্ত কোনো এক স্থানে । দশ বছর তন্ন তন্নকরেও তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়না ।

দশ বছর পর__
দশ বছর পর সফলতা আসে । বুকার আর রোনিন্সন করমর্দন করেন ।
অবশেষে সাফল্য আমাদের হাতে এসে ধরা দিলো, কি বলেন? রোনিন্সন বললেন ।
কিন্তু এই সাফল্যের বিড়ম্বনা হ্যান্ডেল করাও তো আরেক মুশকিল, চিবুক চুলকাতে চুলকাতে বললেন বুকার ।
তা ঠিকই বলেছেন । আচ্ছা এই মহাকাশ ষ্টেশনে আমরা আর কতদিন থাকবো? রিসোর্স গুলোও ফুরিয়ে আসছে ; রোনিন্সন বললেন ।
সত্তরটি রোবোম্যানেরও তো জৈবিক প্রয়োজনের দরকার আছে । শত হলেও তো তাদের কে আমরা জীবনের কাছাকাছি রূপ দিতে পেরেছি ।
এখানে ভাবনার অনেক কিছু আছে বুকার ।
কী? ওদের চাহিদা বিলাসিতা এইতো?
না! ওরা যে মানুষের সমকক্ষ । মিঃ ফ্রাং এর ঐ কথাটাই মনে পড়ছে এখন । ‘অল্প বিদ্যা আর অত্যধিক বিদ্যা দুটোই ক্ষতিকর’ ।
ভাবনার বিষয় হচ্ছে, ওরা বার্ধক্য জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করবে না । পেশী শক্তির দিক দিয়েও মানুষের দ্বিগুণ ।
দু জনের কথোপকথনের মাঝখানে যোগ দিলেন ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক্সের তরুণ স্পেশালিষ্ট ‘ফ্রয়েড রেমন’ ।
আপনারা যা ভাবছেন তার চেয়েও বড় ভাবনার বিষয় হচ্ছে, ওদের বুদ্ধিমত্তা ।
হ্যাঁ, মানুষের সমান তাতে কি হয়েছে ? রোনিন্সন বললেন ।
পৃথিবীতে প্রযুক্তি সৃষ্টির আদিলগ্নে কি মানুষ বসবাস করে নি? এনচেস্টররা তো বনে জঙ্গলে, গুহায় বসবাস করে কাঁচা মাংস ভক্ষন করে পশুপাখির মতই দিন কাটিয়েছে । তখন তারা প্রযুক্তির ধারে কাছে যেতে পারে নি কেনো?
তাদের বুদ্ধিমত্তা কম ছিলো, বুকার বললেন ।
বুদ্ধুমত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে বিবর্তনের মাধ্যমে । আজকের প্রযুক্তির কথা চিন্তা করুন । শুরুতেই কিন্তু মানুষের বুদ্ধিমত্তা বেশি ছিলো না ।
তুমি কি বলতে চাচ্ছো আসলে? রোনিন্সন জিজ্ঞ্যাস করলেন ।
আমি বলতে চাচ্ছি আপনারা শুরুতে তাদের কপোট্রনে ২৫ শতাংশ মানব অনুভূতি ইনপুট করাতে চেয়েছিলেন । আমার মনে হয় সেটাই ভালো হতো । বাকিটা তারা ধীরে ধীরে শিখতে পারতো । অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে ওদের তুলনায় আমাদের বুদ্ধিমত্তা মাত্র ২৫ শতাংশ ।
কি করবেন এখন? ওদেরকে এম্পূল দেয়া হয়ে গেছে । আর কয়েক মিনিটের মাঝে রোবোস্যাপিয়েনরা জেগে ওঠবে ।
সেক্ষেত্রে ওরা এই ক্ষুদ্র পরিসরে থাকতে চাইবে না । বেরিয়ে পড়বে পৃথিবীময়, রনিন্সন বললেন ।



.৫০
পলিন বসে বসে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছে । ওর সামনে গোটাকয়েক মেইনফ্রেইম কম্পিউটার এবং ডজন খানেক এনালগ ডিভাইস । এনালগ মিটারের কাঁটা গুলো একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে নির্দিষ্ট রেঞ্জে উঠানামা করছে । ভিডি ফাইন্ডারে চোখ রাখলো সে । হাজার হাজার মানুষের Span of control এখন পলিনের মুঠোয় । এ ভিডি ফাইন্ডার দ্বারা একসাথে সে দশ হাজার মানুষের ওপর দৃষ্টি ফেলতে পারে । একটু পর ‘অহিনা’ এসে প্রবেশ করলো রুমে । এসেই সে মিষ্টি হেঁসে পলিনের কোলের ওপর বসে পড়লো । বিরক্তি প্রকাশ না করলেও কপাল কুঁচকে এলো পলিনের ।
কি হচ্ছে এসব কাজের মধ্যে?
-রাগ করছ কেন সুইটি? মিহান বলেছে আমি তোমার কাছ থেকে স্পার্ম নিতে পারবো । কি দিবে না আমায়?
স্পার্মাগারে শুধু আমার না তুমি যার ইচ্ছা তারটাই নিতে পারবে । এখন যাও বিরক্ত করো না ।
-কী? আমি স্পার্মাগারে যাবো । কক্ষনো না .........,
আমাদের সামনে মহাবিপদ অহিনা । এখন আরেকটি রোবোস্যাপিয়েনকে পৃথিবীতে এনে আমি হুমকির মধ্যে ফেলতে পারি না । আমি এখানে অসহায় ।
-আমি তাকে নিরাপত্তা দিয়ে রাখবো । বিশ্বাস করো, নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও । এ যুদ্ধে আমি না ও বাঁচতে পারি । তুমিও মারা যেতে পারো । তার আগে আমি মাতৃ অনুভূতিটা নিয়ে যেতে চাই । তোমার জেনারেশন পৃথিবীতে আজীবন বিচরণ করুক তা কি তুমি চাওনা?
বুকে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসটা বেরিয়ে এলো পলিনের । একটু পর ওরা পৃথিবীর আদিম জৈবিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়লো । অহিনার গর্ভে জাইগোট সৃষ্টি হতে লাগলো ।

মিহান, সামরিক বাহিনীর প্রধান। জন্ম, বিবাহ, রিলেশন ইত্যাদির পারমিট লাইসেন্স প্রধানের এপ্রোভাল ছাড়া নিষ্ক্রিয় । সামনে ইতিহাসের উচ্চ প্রজন্মের সবচেয়ে বড় যুদ্ধের আবির্ভাব হতে যাচ্ছে । যা গ্রেটওয়ার নামে পরিচিত । হোমোস্যাপিয়েনদের ঘিরেই মূলত এ যুদ্ধ । একদল রোবোস্যাপিয়েন চাচ্ছে যার জোর তার মুল্লুক নীতি অবলম্বন করেবাহুল্যদের সমূলে ধ্বংস করে দিতে । আর আরেকদল চাচ্ছে তাদের বাঁচিয়ে রেখে সুশাসন কায়েম করতে । মিহান হচ্ছে সেই দলে যারা সিনার জোরে টিকে থাকতে চায় । এমতবস্থায় সে আর বাড়তি কোনো লাইসেন্স দিতে রাজি নয় সে । আইনভঙ্গের শাস্তি এখানে স্মৃতিভস্ম । রোবোস্যাপিয়েন্সদের বয়সই হচ্ছে স্মৃতি । মূলত বয়স বললে ওরা কিছুই বুঝবেনা ।
শাস্তিটা দেওয়া হয় অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে । নিউরন থেকে স্মৃতি বিন্যাস করে সেই জায়গায় অন্য কোনো ভয়ংকর স্মৃতি দিয়ে দেওয়া হয় । আজীবন নরক যন্ত্রণা ভোগ করা লাগে সে বেচারার । আর কেউ ভালো কিছু করলে তাকে মজার এবং আনন্দের স্মৃতি ইনপুট করে দেওয়া হয় । ফলে দুঃখ কষ্টের মাঝে থাকলেও সে আনন্দ উপভোগ করতে পারে ।
মিহান ‘অরোকে’ ডেকে পাঠালেন । অরো হচ্ছে জুডিশিয়াল অফিসার ।
আজ হোমোস্যাপিয়েনদের কয়জন ধরা পড়েছে ? জিজ্ঞ্যাস করলো মিহান ।
-সবে মাত্র চারজন ।
আজকাল তো দেখছি ওরাও নিয়ম নীতি মেনে চলে । যাই হোক তাদের স্মৃতি অপসারণ করে আমাদের গ্রুপে রিক্রুট করো । জলদি...
-কিন্তু মিহান একটা সমস্যা হয়ে গেছে ।
আমার কাছে আজ পর্যন্ত কোনো সমস্যাই সমস্যা বলে মনে হয়নি ।
-আহান ওদের উদ্ধার করে নিয়ে গেছে । আমতা আমতা করে বলল অরো ।
মিহান রাগে থর থর করে কাঁপতে লাগলো । রাগান্বিত অবস্থায় কথা বললে ওর মুখ থেকে ফেনা বের হয় । যাও পলিনকে গিয়ে বলো ওর ট্রাকিওশানে প্রেসার দিতে; এক দলা থুথু ছিটিয়ে বলল মিহান ।
ঠিক এ মুহূর্তে অহিনা এসে প্রবেশ করলো ।
মিহান আমি তোমার কাছে বার্থ লাইসেন্স পারমিট করতে এসেছি ।
-দশ মিনিট আগেই আমি সকল প্রকার লাইসেন্স ব্যান করে দিয়েছি । এখন আর সম্ভব নয় ।
জানে অনুনয় করে লাভ হবেনা তারপরও অহিনা কাকুতি মিনতি করলো কিছুক্ষণ । কিন্তু লাভ হলো না ।
-তুমি বরং পলিনকে বলো আহানের ট্রাকিওশানে প্রেসার ক্রিয়েট করতে ।

পলিন আহানের ডি এন এ আইডি অনুযায়ী ট্রাকিওশান ট্রেক খুঁজে তার সিকুয়েন্সগুলো একটা গুপ্ত নাম্বার দ্বারা এনক্রিপ্টেড করে দিলো । শত চেষ্টা করলেও এখন আর ও ছাড়া কেউ আহানের কিচ্ছু করতে পারবে না । পলিন এবার অহিনার ভিডিতে জানিয়ে দিলো কোথায় গিয়ে অপেক্ষা করার জন্য । তারপর মেমরী আপডেটের মাধ্যমে তার স্কিলগুলো ডেভেলপ করে নিলো । স্কিল গুলোর মধ্যে আছে _ এয়ার ক্র্যাফট ড্রাইভ, ব্লাস্টার চালনা, এবং বিভিন্ন ওয়েপন সম্পর্কে ধারণা ।

প্রায় এক বছর পর_
গ্রানাইট পাথরের বেদিটাতে বসে আছে এক বিশালদেহী মানুষ । হাতের সাথে এটমিক ব্লাস্টার বাঁধা । সুতীক্ষ্ণ চোখের দৃষ্টি অবলোকন করছে আকর্ষণীয় একটা নারীয় দেহের নগ্নতা । ধীরে ধীরে হাতের ব্লাস্টারটা খুলল সে । হিংস্র চিতার মত ধীর পায়ে এগোতে লাগলো মেয়েটির দিকে । বুভুক্ষের মত সে লেহন করতে থাকে তার চিরযৌবন । মেয়েটির আকাশ কাঁপানো চিৎকার তাকে বিন্দুমাত্র বিচলিত করলো না । অবশেষে ছটপট করা দেহটা নিথর হয়ে যায় ।
একজন এসে বিশাল দেহী লোকটাকে বলল, মিহান তোমাকে ডেকেছে ‘বুবেন’ । ক্রুর একটা হাঁসি দিয়ে বুবেন কাপড় পড়ে নিলো। কিন্তু তার আগেই বুবেনের ভিডিতে একটা সিগন্যাল ধরা পড়লো । নির্দেশ অগ্রাহ্য করে সে ছুটলো ইনস্ট্রাকশন বরাবর ।

পলিনকে একটা ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে । মিহান একটি ইন্টেনিয়ামের সূচ দিয়ে বার বার ওকে খোঁচাচ্ছে । প্রতিবারই একটা নির্দিষ্ট মাত্রার বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ওর মস্তিস্কের কোষগুলোর মধ্যে পেইন সৃষ্টি করছে । তার প্রভাবে পলিনের দেহটা কুঁকড়ে যায়, চোয়াল শক্ত হয়ে আসে । তবুও সে একটুও চিৎকার কিংবা আকুতি করে না।
ক্রুদ্ধ কন্ঠে মিহান চেঁচিয়ে ওঠে, বল তোর জেনেটিজম কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস?
-সত্যিই জানতে চাও? দুর্বল কন্ঠ পলিনের ।
না বললেও অসুবিধে নেই । তোর মেমরী ইউজ করে আমরা সব পেয়ে যাবো ।
-কি দরকার শুধু শুধু কষ্ট করা? তারচে বরং বলেই দি ।
চোখে মুখে সন্তুষ্টির একটা আভা ফুটে ওঠে মিহানের ।
-মানব অস্তিত্ব রক্ষার্তে একটা বিকট স্পেস শিপে করে আহান প্রায় পাঁচ হাজার হোমোস্যাপিয়েনদের মহাকাশ ষ্টেশন আমাদের আদি বাসস্থান এক্সেরিনে পাঠিয়ে দিয়েছে । তাদের সাথে আমি আমার মেয়েকে দিয়ে দিয়েছি । কেউ বুঝতে পারবে না সে একজন রোবোস্যাপিয়েন ।
কিছুক্ষণ থম মেরে রইলো মিহান । তারপর আচমকা চেঁচিয়ে বলে ওঠলো আমাদের এয়ার ক্র্যাফট গুলো পাঠিয়ে দাও এক্সেরিনে । যুদ্ধবাজদের স্মৃতি ধারণকৃত দলদের এটমিক ব্লাস্টার নিয়ে তৈরী হতে বলো জলদি...।
-অনেক কষ্ট করে একটু হাসার চেষ্টা করলো পলিন । তুমি শুধু শুধু ব্যাস্ত হচ্ছ মিহান । ওটার খোঁজ তুমি কখনোই পাবে না । এক্সেরিনের সকল তথ্য উপাত্ত, ট্র্যাকলাইন সবই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে । ইনফ্রারেড সিগন্যাল ডিভিশন থেকেও এক্সেরিনের ম্যাপ সরিয়ে ফেলা হয়েছে । তোমাদের যত ডিভাইস, রাডার, স্যাটেলাইট কোনো কাজেই আসবেনা ।
হুংকার দিয়ে ওঠলো মিহান ।
একটু পর কয়েকজন এসে পলিনের মাথায় একটা হেলমেট পরিয়ে দিলো । চারপাশ থেকে কতগুলো অক্টোপাসের মত শুঁড় ওকে জড়িয়ে ধরলো ।
-তোর মেমরী অপটিক্যাল ডিস্কে ধারন করা হচ্ছে । তোকে আমরা মারবো না । দেহটা ধ্বংস করে ফেলবো মাত্র । আমরা আজীবন বেঁচে থাকি শুধু আমাদের খোলসটা পাল্টাতে হয় । এই স্মৃতি ভান্ডারেই তো আছে এক্সেরিনের প্রয়োজনীয় তথ্য তাই না?
স্মৃতি ধারন প্রক্রিয়া যখন অর্ধেকে এসে পড়েছে তখন পলিন তার দাঁতের ফাঁকে লুকিয়ে রাখা ছোট্ট বিন্দুর মত নীল বলটা চালান করে দেয় পেটে । কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সে দুলে পড়ে যায় । রোবোস্যাপিয়েনরা মারা যাওয়ার পর আরো পাঁচ ছয় মিনিট তাদের মস্তিষ্ক সদৃশ কপোট্রন সচল থাকে । এ সময়ের মাঝে অপটিক্যাল ডিস্কে এক্সেরিন সম্পর্কে কিঞ্চিৎ একটু সেভ হয়ে যায় । মিহান দেখতে পায় সে ফুটফুটে একটি বাচ্চাকে হস্তান্তর করছে এক মহিলার কাছে । মহিলাটি বাচ্চাকে নিয়ে এয়ার ক্র্যাফটে ওঠে পরে ।তারপর আর কিচ্ছু নেই......

সিগন্যাল ধরে ধরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জঙ্গলের ভেতর এগিয়ে যায় বুবেন । তার সঙ্গে পঁচিশ জন সহযোদ্ধা । সবাই বনের মাঝে ছড়িয়ে যায় । কিন্তু কেউ নেই এখানে । সিগন্যালটাও হঠাৎ করে ভ্যানিশ হয়ে যায় । বুবেনের পরামর্শ মতে সবাই ইনফ্রারেড গগলস পরে সামনে এগিয়ে যায় । পিঠে ঝুলানো ইন্টেনিয়ামের ধারালো অস্ত্রটা তুলে নেয় সে । আগ্নেয় অস্ত্রের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় এই অস্ত্র ।

বিশাল টেবিলটার মাঝ বরাবর আচমকা কিল বসিয়ে দিলো আহান । পানপাত্র গুলোর বেশীরভাগ ঝন ঝন করে উল্টে পরে ভেঙ্গে গেলো । পৃথিবীতে এখনো অনেক মানুষ রয়ে গেছে । গুরুত্বপূর্ণ যারা ছিলো তাদের সবাইকেই তো পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে । বাকিদের কি হবে?
আহান আমাদের ট্রেক ডিভাইস বলছে ওরা কাছে ধারে এসে পড়েছে, কেউ একজন বলল ।
মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে পড়ে থাকা ভারি ইন্টেনিয়ামের কুঠার সদৃশ অস্ত্রটা হেঁচকা টানে তুলে ফেলল আহান । তারপর বলল, এগিয়ে যাওয়া যাক তাহলে । পেশীবহুল শরীরটাকে একটা মোচড় দিয়ে ওঠে পড়লো সে । তুমুল হর্ষধ্বনি তোলে আহান দল আসন্ন সংঘর্ষে সংগঠিত হওয়ার অভিপ্রায়ে জঙ্গল বরাবর অভিযান চালাতে লাগলো ।

জঙ্গলের মাঝখানের একটা খোলা প্রান্তরে দু লড়াক্কু রোবোস্যাপেয়েন এবং তাদের অনুগতরা মুখোমুখি হয় অবশেষে । যুদ্ধের পরিক্রমায় আহান হঠাৎ একটা প্রস্তাব উত্থাপন করে ।
এতজনের জীবন নিয়ে তোমার খেলা উচিৎ হচ্ছে না বুবেন ।
-তুমিই তো খেলতে ডেকেছিলে ।
বেশ, খেলাটা তাহলে তোমার আর আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাক ।
-কুৎসিত একটা হাঁসি দিয়ে বুবেন বলল, আহ বহুদিনের ইচ্ছেটা আজ পূরণ হতে যাচ্ছে । তুমি কেমন লড়াক্কু তা আমার একটু পরখ করে দেখার শখ বহুদিনের । বিজাতীয়দের দলে নাম লিখিয়েছ বলে সুযোগও পেয়ে গেলাম । মিস করাটা ঠিক হবেনা ।
একজন যোদ্ধার আসল পরিচয় পাওয়া যায় তার রণকৌশলে যা আগ্নেয় অস্ত্র দ্বারা নিরূপণ করা যায় না । তাই এখানে শর্ত হচ্ছে ইন্টেনিয়াম ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না ।
-আমিও তাই ভাবছিলাম । তবে প্রস্তুতির জন্য একটু সময় দরকার ।
ঠিকাছে সময় দেওয়া হলো, আহান বলল ।
বুবেন যাওয়ার সময় ইন্টেনিয়াম দিয়ে মোটা একটা গাছে জোরে আঘাত করলো । গাছটি একদিকে হেলে পড়লো । খুশি হয়ে ওঠলো আহান, যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী পেলাম মনে হয় ।

দুজনের হাতে এখন ইন্টেনিয়ামের ধারালো অস্ত্র ছাড়া আর কিছু নেই । ক্ষিপ্ত বুবেন বুনো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিকারের দিকে আর ওর অস্ত্রটিতে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে ।
আহান তার কুড়াল মার্কা বিকট অস্ত্রটায় একটা ঝাঁকি মারলো । বিজলীর মত ঝলক দিয়ে ওঠলো সেটা । অপরাজেয় অসীম শক্তির দু যোদ্ধা সমরের সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠ পরিচিতি এবং বহু ইতিহাস সাক্ষ্য দিয়ে আসছে এদের কৃতিত্ব সম্বলিত স্মারক হিসেবে । দুজন দু প্রান্ত থেকে দৌড়ে যায় প্রতিপক্ষকে কতল করতে ।

বুবেন প্রথমে দৌড়ে গিয়ে কোপ মারে আহানের কাঁধ বরাবর । এক পাশে সরে গিয়ে আঘাত থেকে রক্ষা পায় সে । সিংহের মত গর্জন করতে করতে আবার ছুটে আসে সে । এবার আহান ডান পায়ে ভর দিয়ে ছোট্ট একটা লাফ মেরে বাম পাশে সরে যায় । বুবেনের দল হর্ষধ্বনি করতে থাকে । ওঠার আগেই বুবেন প্রচণ্ড গতিতে কুঠার নামিয়ে আনে প্রতিপক্ষের বুক বরাবর । আড়াআড়ি ভাবে ওর অস্ত্রটা ঠেকিয়ে প্রতিরোধ করে ও । প্রচণ্ড সংঘর্ষে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে । দু সেকেন্ডের মধ্যেই কুঠার নিয়ে ওঠে দাঁড়াতে সক্ষম হয় আহান । বাঁ হাতে অস্ত্রটা তুলে ধরে সে । দৌড়ে গিয়ে আঘাত করতে উদ্যত হলে বুবেন তা ঠেকানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ে । দৌড়ের গতিটা কাজে লাগিয়ে ড্রাইভ দিয়ে বুবেনের কোমরে জড়িয়ে ধরে ওকে নিয়ে অনেক দূরে গিয়ে পড়ে আহান । ঝটকা মেরে বুকের ওপর থেকে ওকে সরিয়ে দেয় বুবেন । শোয়া অবস্থাতেই অস্ত্র চালায় বুবেন, আহানের কাঁধ আর ঘাড়ের সংযোগ পেশী ছিঁড়ে যায় এতে । ইন্টেনিয়ামের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ওকে খানিকটা দুর্বল করে ফেলে । অস্ত্র ফেলে দেয় আহান । মওকা পেয়ে দৌড়ে এসে ওকে খুব জোরে লাথি মারে বুবেন ।চার হাত দূরে গিয়ে পড়ে ওর দেহ । বুনো হাঁসিতে গোপে তা দিতে থাকে বুবেন । ইন্টেনিয়াম ফেলে দেয় । অনায়াসে আহানকে মাথার ওপর তোলে ফেলে সে । সুযোগ কাজে লাগালো সে । বুবেনের ফুলে ওঠা কাঁধের মাংসপেশিতে খামচে ধরলো সে । ককিয়ে ওঠে ওকে ছেড়ে দিলো বুবেন । পড়েই বিদ্যুৎ গতিতে পা চালালো আহান ঠিক বুবেনের উরুসন্ধি বরাবর । হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ে বুবেন । আহান দল এবার হর্ষধ্বনি শুরু করে । ইন্টেনিয়াম ওর কপাল বরাবর চালায় আহান । ব্যাস ওর মেমরী সেল এবং কপোট্রন দুটোই গেছে । এগুলো আর কেউ ইউজ করতে পারবে না । কিন্তু ওরটা পারবে । হাচড়ে পাঁচরে একটু ওঠার চেষ্টা করে আহান কিন্তু পড়ে যায় । এভাবে কয়েকবার চেষ্টা করে যখন সে আর পারে না । তারপর ধীরে ধীরে বুবেনের মতই জড়বস্তুতে পরিণত হয় আহান ।

.২৫
পৃথিবীতে মানব অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে প্রায় । তেজস্ক্রিয়ায় টিকে থাকার মত এক্সটার্নাল এন্টিবডি হোমোস্যাপিয়েনদের জন্য ইলিগেল । তারা ফুসফুস জনিত রোগে মারা পড়ছে । আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাবে তাদের রেটিনা এবং দৃষ্টিক্ষমতা দু’ই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । রোবস্যাপিয়েনরা বলতে গেলে আরামেই আছে । তাদের কন্টাক ল্যান্সের ক্রিস্টাল রিফ্লেক্টর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ডিফেন্ড করছে । যে কজন হোমোস্যাপিয়েন এখন টিকে আছে তার একটা বিশাল সংখ্যা রোবোস্যাপিয়েনদের অনুগত্য মেনে নিয়েছে । তাদের বিশ্বাস একদিন তাদের জ্ঞাতি ভাইয়েরা ফিরে আসবে । মানবজাতির এই বিপন্ন বিলুপ্ত প্রবণতাকে রোধ করবে ।
রোবোস্যাপিয়েনরা শিল্পের পাশাপাশি অর্থনীতিকেও নিয়ে গেছে ভার্টিকাল প্যাথে । নতুন নতুন প্রযুক্তি, অস্ত্র, ভেহিকল, ফুড প্রসেসর ইত্যাদির জোগান দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত । নার্কোটিক বস্তুসমূহ এখানে সম্পূর্ণ ইলিগেল । লাইসেন্স করে তারপর কিনতে হয় ।
বর্ণবৈষম্যের আধুনিক রূপ হচ্ছে এখানে কর্মবৈষম্য । কার্যধারায় একদল এগিয়ে আছে এবং আরেকদল ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে । ওজোনস্তরের অপরিশোধিত গ্যাস বায়ুমণ্ডলে সম্পূর্ণ ফ্রি এক্সেস করছে ।এটমিক তেজস্ক্রিয়া পরিবেশের ভারসাম্য বিরূপ করে তুলছে । ঘূর্ণনরত পৃথিবীর গতি বাড়েছে কিংবা কমছে না । তারপর ও সময় যেন স্থির হয়ে আছে । এই বিপুল সময়ের মাঝেই রোবোস্যাপিয়েনরা জীবনের খায়েশ মিটিয়ে ফেলে এবং পরবর্তীতে জীবনের প্রতি একটা বিতৃষ্ণা জন্মে ওঠে তাদের । আত্নহননের প্রবণতা তাই ইদানিং বেড়ে চলেছে ।

পলিন তার অবশিষ্টাংশ স্মৃতি নিয়ে ঝুপড়িমত জীবনটাকে চেঁচিয়ে এখনো বেঁচে আছে । কিসের আশায়? কিসের মোহে? হয়তো একটা ঘোরের মাঝে সে স্বপ্নে দেখেছিলো অতি পরিচিত কেউ একজনকে সে হস্তান্তর করে দিচ্ছে আরেকজনের কাছে । কেন? তা সে জানেনা । প্রতি বছর এক্সেরিন থেকে একজন এসে পৃথিবীচারণ করে যায় । সে নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে । ওর বুকের মাঝখানটায় অতি সূক্ষ্ম একটি অনুভূতি জেগে ওঠে যার সাথে সে বহুদিন আগে থেকে পরিচিত । তাকিয়ে থাকে সে শূন্যতায় শূন্য দৃষ্টি মেলে । আর স্মৃতিচারণ প্রক্রিয়ায় সে খুঁজে পায় একটা অদ্ভুত নাম ‘এক্সেরিন’ যার অস্তিত্ব সে সবসময় জিরো বলে ধরে নিয়েছে ।


সিনথিয়ার কন্টাক ল্যান্সের স্বচ্ছ সংবেদনশীল রিফ্লেক্টরটা চক চক করে ওঠলো । মানুষের সুখ দুঃখ কেড়ে নিয়েছে যন্ত্র । মানুষ এখন ইচ্ছে করলেই কাঁদতে পারেনা, হাঁসতে পারেনা । কিন্তু আবেগ ঠিকই আছে । সিনথিয়ার আবেগ এখন কাঁদছে । এক্সেরিনের চারটি স্টেটের একটিতেই সে দিনাতিপাত করছে । অন্যগুলোতে কেনো যেন ওর যাওয়া নিষেধ । ও চাইলেই সব করতে পারেনা অন্যরা ঠিকই পারে । কেন এই বৈষম্য? পৃথিবীতেও কি এরকম বৈষম্য ছিলো? উত্তর পায় না সে ।
এবারের ভাগ্যবান বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হচ্ছে । এ বছর পৃথিবীচারণের সুযোগ পাচ্ছেন মিস সিনথিয়া । আশাভঙ্গের শব্দ শোনা গেলো কয়েকজনের কাছ থেকে । এবার হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে ভেসে ওঠলো সিনথিয়ার ছবি এবং প্রোফাইল । তারপরই শোনা গেলো_ এই আইডি হোল্ডারের এই স্টেট থেকে অন্য কোথাও যাবার পারমিশন নেই । তাই আমরা এবারের বিজয়ী এবং তার লটারী উইথড্র করছি । তবে পরবর্তী সম্ভাব্য বিজয়ীর নাম ঘোষণা করার জন্য আপনাদের অবগতি কামনা করছি ।
সিনথিয়া জানতো পৃথিবী নামক কোনোকিছুর অস্তিত্ব এখন আর নেই; সেটি শূন্য । এই ধারণাটা আজ আরেকটু পাকাপোক্ত হলো । বোকাচোদা লোকদের নির্বাচিত করে তারা তাদের লটারী নামক জোচ্চোরি টিকিয়ে রাখছে ।

বিষাদগ্রস্থ ভায়োলিনের করুণ সুরে ইয়ন শহর বেদনার্ত হয়ে পড়েছে । সন্ধ্যার এই চমকপ্রদ আয়োজনে ঝকঝকে সুউচ্চ শ্বেত ভাস্কর্যের উপর দিয়ে এক ঝাঁক বাদুড় ডানা মেলে । সবই আসলে মেকি । সবই শূন্য । অন্যদের সাথে পুষ্পস্তবক অর্চনে নিজেও শামিল হয়ে যায় সিনথিয়া । রাত বাড়তে থাকে । বাদুড় গুলো বেরিয়ে পড়ে সেই রাতের আঁধারকে সঞ্চয় করে । এক্সেরিনের অরাজকতা, বৈষম্যতা তাদের রুখতে পারেনি ।

************************




সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৮:৫০
২৭টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×