ক্যাথলিক চার্চকে ইতিহাসে বিজ্ঞানের বৃহত্তম একক এবং দীর্ঘমেয়াদী পৃষ্ঠপোষক বলা হয় । বিশ্বের বিভিন্ন হাসপাতাল এবং চিকিৎসা সুবিধায় চার্চ অনেক তহবিল দিয়ে থাকে বটে । কিন্তু এখনো বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে একটা আদায় কাঁচকলা সম্পর্ক রয়ে গেছে । বিজ্ঞান মানেই নাস্তিকতা, ব্লাসফেমী আর ধর্ম মানেই অবৈজ্ঞানিক, মনগড়া, অযৌক্তিক বাতিল দলিল ইত্যাদি । কেন এই দলাদলি? এই দলাদলি কিন্তু আজকে নতুন নয় । যুগ যুগ ধরেই ছিল । একবারও কি ভেবে দেখেছেন এর পেছনে কারণটা কি? হ্যাঁ, পৃথিবীতে প্রত্যেক ধর্মই নিজেদের সংবিধান দ্বারা পরিচালিত । অনেক অনেক গোত্র আছে, অনেক মতাদর্শের মানুষ আছে দুনিয়ায় । গোত্রে গোত্রে চলে সংঘর্ষ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ । যেমনটা চলছে এখন সুন্নি আর শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে । এটাই এখন পশ্চিমা রাজনীতির সবচেয়ে বড় ইস্যু ।
এবার আসি ধর্ম-বিজ্ঞান, নাস্তিক-আস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী-সংশয়বাদী যে যেটাই বলেন; সেই প্রসঙ্গে । তাহলে আমাদের ফিরে যেতে হবে আবার ইতিহাসের পাতায় ।
১৬০০ সালের গোড়ার দিকে, একজন ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপার্নিকান থিওরি মানে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে তা সমর্থন করে ক্যাথলিক চার্চের সঙ্গে দ্বন্দ্বে চলে আসেন । পরে তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় । গ্যালিলিও একজন ক্যাথলিক ছিলেন, এবং শুধুমাত্র তাঁর মতবাদ বাইবেলের বিরুদ্ধে যাওয়ায় চার্চ ব্লাসফেমী আক্ষা দিয়ে ১৬৩৩ সালে রোমান হলি ইনকুইজিশনের নামে তাঁকে ফোর্স করে দিনের পর দিন গৃহবন্দী করে অত্যাচার চালায় । সেই ঘটনার দায় চার্চ স্বীকার করে নিয়েছে মাত্র সেদিন । ২০০০ সালে সাবেক পোপ জন পল II গ্যালিলিও এর উপর চার্চের নিষ্ঠুর আচরণের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন । তারপর আরো কাণ্ড আছে; ক্যাথলিক চার্চ চার্লস ডারউইনের ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত “অন দি অরিজিন অফ স্ফেসিয়েস” নানান ছুতায় গ্রহণ করেনি । বার বার রিফিউজ করে দিয়েছে । চার্চের বক্তব্য একটাই গড ক্রিয়েটেড এভরিথিং, কোনকিছুই নিজে নিজে সৃষ্টি হয়নি । এভাবে অনেক বছর চার্চ বিবর্তনবাদের থিওরিটাকে ঝুলিয়ে রেখেছিলো । তারপর পোপ জন পল II ১৯৯৬ এর অক্টোবরে বিবর্তনবাদের উপর ক্যাথলিক দৃষ্টিভঙ্গির একটা আউটলাইন তৈরি করেন । তিনি বলেন, চার্চ বিবর্তনকে শুধু একটা হাইপোথেসিসের চাইতেও আরো অনেক বেশি কিছু মনে করেন । যেহেতু এটা বিজ্ঞানের একটা ওয়েল এক্সেপ্টেড থিওরি । আমাদের মেনে নিতে আপত্তি নেই যে, হিউম্যান বডি তৈরি হয়েছে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রসেসিং এর মাধ্যমে কিন্তু হিউম্যান সোল বা আত্না তৈরি করেছেন শুধুমাত্র গড । এভাবে চার্চের রোষানলে পড়েছেন একে একে কোপার্নিকাস, ডা ভিঞ্চি, এবং হাইপেশিয়া । হাইপেশিয়া যিনি একজন নারী হয়েও বাঁচতে পারেননি তাদের অপঘাত আর মরণ কোপের হাত থেকে । আগোরা নামে একটা মুভি আছে হাইপেশিয়ার হিস্টরি নিয়ে । এগুলোই শেষ নয় । মধ্যযুগীয় ডাইনী শিকারের নামে গোটা ইউরোপ জুড়ে ভয়ংকর তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে ক্যাথলিকরা । ভয় আর ব্যক্তিগত ক্রোশ এই দুই কারণে তারা উইচক্র্যাফট অপবাদ দিয়ে যে কাউকেই নির্মম শাস্তি দিয়ে, পুড়িয়ে মেরে ফেলত । এখানে পাবেন চার্চের এরকম আরো নয়টি লজ্জাকর ইতিহাস । এভাবে ক্রমাগত বিজ্ঞান নিয়ে যে কোন গবেষণাতেই চার্চ বাগড়া দিত । ফলে কেউ স্বাধীন ভাবে বিজ্ঞান চর্চা কিংবা গবেষণা করতে পারত না । তারপরও কিন্তু বিজ্ঞান চর্চা থেমে থাকেনি । মানুষ সিক্রেটভাবে গবেষণা, রিসার্চ চালিয়ে যেত । এভাবে সিক্রেট একটি গ্রুপই তৈরি হয়ে যায় । যেটা ড্যান ব্রাউনের উপন্যাস দ্যা ভিঞ্চি কোড আর এঞ্জেল এন্ড ডেমন এ দেখা যায় ।
তাহলে আজকের এই মুক্তচিন্তা আর রক্ষণশীলতার মধ্যকার দ্বন্দ্বের সূত্রপাত সেই মধ্যযুগ থেকে । এর জন্য দায়ী তৎকালীন খ্রিষ্টান ক্যাথলিকরা । ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের একটা যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছে তারা । এই কারণেই বিজ্ঞান চর্চাকারীদের বেশিরভাগই গডে বিশ্বাস করে না । কারণ তারা ধর্ম বিশ্বাস করেনা । আর কেনই বা করবে; ধর্মের নামে চার্চ তাদের সাথে যে নির্মম আচরণ করেছে তা যুগে যুগেও তাদের ভুলতে পারার কথা নয় । মানবজাতির অগ্রযাত্রাকে কয়েকশো বছর পিছিয়ে দিয়েছে ওরা । অথচ দুঃখের বিষয় আজকের বিশ্বে মুসলিমদের কে অপবাদ দেওয়া হয় জঙ্গিবাদের জন্য । আমাদের দেশীয় মুক্তচিন্তার ভাইয়েরাও এদিক থেকে পিছিয়ে নেই । বার বার আঙ্গুলটা ঘোরায় আমাদেরই উপর । নাস্তিকতা মানেই ইসলাম বিদ্বেষী! নাস্তিকতা মানেই মহাজ্ঞানী! এখানে দুই ধরনের মানুষ আছে । একদল যারা অন্যের লেখা পড়ে, নিজে কোন স্টাডি না করেই অন্যদের সাথে তাল মেলায়; আরেকদল আছে যারা সবকিছু জেনেশুনে নিজেদের সুবিধার্থে কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থে ওয়েপনটা ইউজ করে । কোন একটা যায়গায় পেয়েছিলাম, মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোরসি নাকি আমেরিকার নাসায় চাকরি করতো। একটা স্পেস স্যাটল ডিজাইন টিমের সাথে ছিল। এতো উচ্চ শিক্ষিত মানুষটি মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনীতি করা আর ধর্ম মানার কারণে শেষ জীবনেও আমাদের কাছে প্রগতিশীল হতে পারে নি, কিন্তু তিন দিনের পোলা বিজ্ঞান লেখক বনে গেছে এরওর ব্লগ পড়েই। ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সে প্রগতিশীল। আবার উগ্রবাদী ধর্মান্ধ মোদি অনেক আধুনিক । এই হলো আমাদের অবস্থা । সমস্যা হচ্ছে, আমরা জানতে রাজি কিন্তু কষ্ট করতে রাজি না । এজন্যই আমাদের দেশের মৌলভি সাহেবদের ধর্মের কল বাতাসে নড়ে!
এসব অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য বেশিরভাগ দায়ী পশ্চিমা দেশগুলোই । তারাই সর্প হইয়া দংশন করে আর ওঝা হইয়া ঝাড়ে! আমেরিকার পেন্টাগনের একটা নীতিই হচ্ছে ডিভাইড এন্ড রুল । মিডল ইস্টকে ভেঙ্গে খান খান করে দাও আর গণতন্ত্র ঢুকিয়ে দাও । ব্যাস, এবার শুধু খেলা দেখো । আমেরিকার এই চোর পুলিশ খেলা আজকাল সারা বিশ্বই জানে । পশ্চিমা মিডিয়াগুলা কাজ করে তাদের কাভারেজ হিসেবে । আর সেই সাথে সৌদি রাজতন্ত্র আরো পাকাপোক্ত হয়ে উঠছে । বিশ্বরাজনীতি যে কতটা ডিপ্লোম্যাটিক! না হলে সমকামিতার মত এরকম একটা তুচ্ছ জিনিস নিয়ে গোটা বিশ্বে বলা ভালো আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বে এত হৈচৈ কেন? এতে কারাই বা লাভবান হচ্ছে, কাদের সুবিধা হচ্ছে কিংবা কাদের ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে! সেসব বিস্তারিত বলতে গেলে আরেকটা পোষ্ট দিতে হবে । এত জটিলতায় না গিয়ে বরং স্বাভাবিক গতিতেই এগুতে থাকি আমরা ।
এইবার আসি বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা প্রসঙ্গে । প্রসঙ্গটা এসেই গেল যেহেতু আমাদের ধ্যানধারণা সব আমেরিকা কে নিয়ে । বিনোদনের দিক দিয়েও বলিউড ছাড়িয়ে আমরা হলিউডে পোঁছে গেছি আরো আগেই । এখন ট্রেন্ড চালু হয়েছে আমেরিকা যা করবে আমাদেরও তাই করতে হবে; পিছিয়ে পড়া চলবে না । তাহলে চলুন আমেরিকা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে আসিঃ
বিশ্বের সেরা রেপিস্ট কান্ট্রিগুলার মধ্যে আমেরিকা হচ্ছে এক নাম্বার পজিশনে, দুই এ সাউথ আফ্রিকা, তিন নম্বর সুইডেন আর চারে আছে আমাদের প্রতিবেশী ইন্ডিয়া । আমেরিকাতে প্রতি দুই মিনিটে কেউ না কেউ যৌন হয়রানির শিকার হয়, প্রতি ছয় জনের ভেতর একজন নারী ধর্ষণের স্বীকার হয়! বিশ্বাস হচ্ছে না? দেখুন তাহলে
তারপর চাইল্ড এবিউজ । তাদের ঐখানে ওটা কোন বিষয়ই না । প্রতি ঘণ্টায় ৭৭টি চাইল্ড এবিউজের ঘটনা ঘটে । তার মানে প্রতি মিনিটে একেরও বেশি । প্রতিদিনই চারজনের বেশি মারা পড়ে এবিউজিং এর কারণে । ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিসের এক জরিপে দেখা গেছে ৫ থেকে ১৫ ভাগ শিশু কিশোররা পরিণত বয়সে মানসিক সমস্যায় ভোগে । এই কারণেই হয়তো আমেরিকায় সাইকোপ্যাথের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি । এবং যৌন নির্যাতনের শিকার কিশোর ভিক্টিমদের এক তৃতীয়াংশের বয়স ছয় বছরের নিচে । আর প্রতি তিনটি মেয়ের একটিই আঠারোতে পা দেওয়ার আগে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাও স্বজনদের দ্বারা । এটা দেখুন
আরো আছে, ২০১৩ সালের পেন্টাগন রিপোর্ট প্রকাশ করে বিগত ২০১২-২০১৩ সাল থেকে ইউ এস মিলিটারিতে সেক্সুয়াল এস্যল্ট প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গেছে । শুধুমাত্র ২০১২ সালেই নারী পুরুষ মিলিয়ে মোট ২৬০০০ যৌন হয়রানির রিপোর্ট দিয়েছে পেন্টাগন । ২০১৩ সালে একটা তদন্তে বের হয় মিলিটারিতে প্রতি পাঁচ জনের একজন নারী এবং পনেরো জনের একজন পুরুষ যৌন হয়রানির শিকার হয়! বিশ্বাস না হলে উইকিপিডিয়াতে গিয়ে দেখে আসতে পারেন । আমেরিকানদের স্বভাবের কথা বলে শেষ করা যাবে না । প্রিজন রেপ টেন্ডেন্সি, হোমোসেক্সুয়ালিটি, এইডসের কথা না হয় বাদই দিলাম । কারণে অকারণে প্রতিবছর প্রায় আট লক্ষ এটেম্পটেড সুইসাইড কেইস পাওয়া যায় ইউএসএ তে । তো সারা বিশ্ব নিয়ে মাতামাতি করা আমেরিকা নিজেদেরকেই এসবের হাত থেকে প্রটেক্ট করতে পারছে না! বিষয়টা ভাবতে কষ্ট হলেও সত্যি । সুতরাং ওরা সমকামিতা রাইট নিয়ে রায় দিলেও কি আর না দিলেও কি । রাশিয়ার কোন এক সিনেটর বলেছিলেন, আমেরিকা সমকামিতার ভারে এমনিতে নুইয়ে পড়বে । সমকামিতায় যৌনরোগ ছড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমশ । এটা গবেষণায় প্রমাণিত । Disease Control and Prevention (CDC) এর রিপোর্ট অনুযায়ী গে আর বাইসেক্সুয়াল মিলে গোটা আমেরিকার জনসংখ্যার ২% রিপ্রেজেন্ট করে । এই দুই পার্সেন্টের বিরাট একটা অংশ এইচাইভি সহ আরো অন্যান্য যৌনসংক্রামিত রোগে আক্রান্ত । এবং তারা এই রোগগুলো অন্যান্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দিচ্ছে । সমকামি ব্যক্তিরা নিজেরাও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকে এবং বিভিন্ন যৌনরোগের উদ্ভাবন ঘটায় । এছাড়াও তারা বিভিন্ন মনোবৈকল্যতে ভোগে । এইডসকে নাকি বলা হয় ‘গে ডিজিস’ । কারণ বেশিরভাগ এচআইভি আক্রান্ত রোগীরা দেখা যায় হোমো । শুধু মাত্র আমেরিকায় প্রতি পাঁচজন গে ব্যক্তিদের মধ্যে একজন এইচাইভি তে আক্রান্ত হয় আর বাইসেক্সুয়ালদের মধ্যে প্রতি ২০ জনে একজন ।
আরেকটা সমীক্ষায় দেখা গেছে আমেরিকায় সিফিলিস আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫% হচ্ছে সমকামী । CDC ২৮টি স্টেটে জরিপ চালিয়ে দেখেছে ফার্স্ট টাইম গনোরিয়ার চিকিৎসা করানো রোগীর সংখ্যায় হচ্ছে ২৭% । তার মধ্যে ২৪% হচ্ছে হোমোসেক্সুয়াল আর মাত্র ২.৯% হচ্ছে হেটেরোসেক্সুয়াল ।
Estimated Numbers of New HIV Infections in the United States for the Most Affected Subpopulations, 2010
Source: CDC. Estimated HIV incidence among adults and adolescents in the United States, 2007–2010
বিশ্বের অনেক বিখ্যাত এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তি আছেন সমকামী । ইতিহাসের আলেক্সান্ডার দ্যা গ্রেট, ডা ভিঞ্চি, এলান টিউরিং এরাও সমকামী ছিলেন । সেলিব্রেটিদের মধ্যে এল্টন জন, এলেন পেজ, জোডি ফোস্টার, লিন্ডসে লোহান ইত্যাদি । তারপর আছেন এপলের সিইও টিম কুক । বেশিরভাগ হোমোসেক্সুয়ালদের দেখা যায় তারা ধনী এবং সেলিব্রিটি । আমাদের দেশে তো দূরের কথা উপমহাদেশেই এরকম বিখ্যাত হোমো সেলিব্রিটি নেই । তারমানে আমরা এখনো তৈরি নই । তারপর সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো এলজিএমআর সাপোর্ট করেনি । মুসলিম দেশগুলোতে তো প্রশ্নই আসেনা । তারপর আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন; পৃথিবীর সেরা রেপিস্ট কান্ট্রিগুলোর মধ্যে কোন মুসলিম কান্ট্রি নেই! সমকামিতার হারও খুব কম । তাই এইচআইভির সংখ্যাও কম ।
আমেরিকার বহু আগেই অনেক দেশে এলজিএমআর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে । ডাচরা আজ থেকে প্রায় চৌদ্দ বছর আগেই তাদের আধিকার আদায় করে ফেলেছে, তারপর এ কাতারে একে একে এসে দাঁড়ায় বেলজিয়াম, স্পেন, সাউথ আফ্রিকা, নরওয়ে, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ইত্যাদি । তার মানে কি এই যে তারা আমেরিকার চাইতেও বেশি প্রগতিশীল!! কোথায় ছিলো তখন আমাদের প্রগতিশীল বিজ্ঞানমনস্করা!
আবার কিছু দেশে সমকামিতাকে একেবারে ব্যান করা হয়েছে । রাশিয়াও এলজিএমআর সাপোর্ট করেনা । উগান্ডা সমকামিতার জন্য ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়, এর আগে ডেথ পেনাল্টি দিত । মিডল ইস্টের বেশিরভাগ দেশগুলোই শরিয়া আইনের ভিত্তিতে সমকামিতার বিপক্ষে বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করে থাকে । আমাদের দক্ষিন এশিয়াতে শুধুমাত্র নেপাল বাদে আর সবগুলোতেই সমকামিতা ইলিগেল । আমাদের দেশে সমকামিতার শাস্তি কমপক্ষে ১০ বছরের কারাদণ্ড ।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই বাস করে দারিদ্র্য সীমার নিচে । যে দেশের মানুষের নুন আনতেই পান্তা ফুরিয়ে যায়, যে দেশের মানুষেরা দুই বেলা অন্ন যোগাতে নিজের জীবন বিপন্ন করে পাড়ি জমায় সমুদ্রপথে । সেই তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র একটি দেশে আমরা মেতে আছি এলজিবিটি নিয়ে । শুনতে হাস্যকর মনে হলেও আমরা তাই করে যাচ্ছি, আর বাদবাকিরা মজা নিচ্ছে! এর পেছনে উদ্দেশ্যটা কি! নারীবাদী প্রগতিশীলরা একসময় বলত, বিয়ে নাকি ধর্মের সৃষ্টি । নারীদের দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দী করে রাখে, পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস আর ভালোবাসাটাই হচ্ছে আসল । সেই তারাই এখন ধামাঢোল পিটিয়ে সমকামী বিয়ে নিয়ে মাতামাতি করছে! সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে নিজেদের রঙধনু সাজে সাজিয়ে । আর কিছু বুঝতে বাকি আছে নাকি কারো!!
সমকামিতা ক্ষতিকর, এই ফ্যাক্টটা আপনাকে মানতেই হবে । ধামাচাপা দেওয়ার কোন উপায় নেই । দুই ভাবে প্রকৃতি বিবর্তিত হতে পারে । একটাকে বলে প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং অপরটা কৃত্তিম নির্বাচন । প্রাকৃতিক নির্বাচনে প্রকৃতি তার রুলস অনুযায়ী নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যায় । আর কৃত্তিম নির্বাচন হচ্ছে অনেকটা জোর করে তেঁতো ওষুধ গেলানোর মত । যেমনঃ মানুষ বাঘ আর সিংহের সংকর তৈরি করতে চেয়েছিল । নাম দিয়েছিলো ‘লাইগার’ । কিন্তু পরে দেখা গেলো এরা বেশিদিন বাঁচতে পারেনা । সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেনা । একটা না একটা অর্গানিক সমস্যা নিয়ে তারা জন্মায় । পরে এ প্রচেষ্টা বাতিল করা হয় । সুতরাং দেখা যায় প্রকৃতির রুলসের বাইরে অস্বাভাবিক কিছু করতে গেলে তা সফল হয়না । অবশ্য প্রকৃতি মাঝেমধ্যে নিজে থেকে কিছু এক্সপেরিমেন্ট চালায়, যেগুলোর বেশিরভাগই ব্যর্থ হয় । কিছু মৌলিক এবং নৈতিক অনুভূতিই মানুষ আর অন্যান্য পশুপাখির মধ্যে পার্থক্য করে দেয় । হ্যাঁ, কিছু সহজাত প্রবৃত্তি জগতের সকল প্রাণীর মাঝেই বিদ্যমান । বুদ্ধিমান প্রাণীরা সমকামিতায় লিপ্ত হয়না । এরকম হলে প্রাণবৈচিত্রে অনেক বিস্ময়কর কিছুই লক্ষ্য করা যায় । যেমনঃ কিছু সরীসৃপ আছে যারা সঙ্গী ছাড়াই ডিম উৎপাদন করতে পারে । এটাকে Parthenogenesis বলে । আবার Loricifera জাতের কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যেগুলো গভীর সমুদ্রের নিচে অক্সিজেন ছাড়াই দিব্যি বেঁচে থাকে । সুতরাং এগুলো বলে শেষ করা যাবেনা ।
কেউ সমকামিতা সাপোর্ট করুক আর না করুক, সেটা আমাদের সমাজে তেমন বৃহৎ প্রভাব ফেলবে না । গোটা বিশ্বে আনুমানিক ১০% সমকামী আছে কি না সন্দেহ! আর যদি থাকেও তাতে ক্ষতি কি! পপুলেশন বম্বিং এর হার থেকে তো পৃথিবী অনেকাংশে বেঁচে যাচ্ছে । চিন্তা করে দেখুন আমরা প্রত্যেকেই একেকটা জেনারেশনের ধারক; আমাদের ভেতরেই সুপ্তায়িত আছে পরবর্তী প্রজন্ম । প্রাণীকুলের একটা কমন বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সে তার বীজ ছড়িয়ে দেবে পৃথিবীময়, এটা প্রাকৃতিক নিয়ম । প্রকৃতি আমাদের এভাবেই তৈরি করেছে । যারা অভিযোজিত হতে পারেনি তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে ।
শেষকথাঃ
কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ! কোনটা উচিৎ আর অনুচিত সেটা ধর্ম আমাদের শিক্ষা দেয় । বিজ্ঞান নয়! হ্যাঁ, আমাদের ক্ষমতা আছে ভালো মন্দের মত আপেক্ষিক জিনিসের বিচার করা, কিন্তু অনেকসময় পারিপার্শ্বিক প্রভাবের কারণে আমরা তা পারিনা । ধর্মের অনুশাসন সবসময়ই মানুষকে সঠিক পথ দেখায় আর ধ্বংস ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে । বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের একটা তিক্ত সম্পর্ক থাকলেও, আইনস্টাইনের ভাষায় বলতে হয়ঃ ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ । ইসলাম কখনো বিজ্ঞানের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না বরং উৎসাহ দেয় । পবিত্র কোরআনের পাতায় পাতায় দেখা যায় সেখানে মানুষকে চিন্তা করতে বলা হয়েছে, বিবেক খাটাতে বলা হয়েছে । মুক্তচিন্তা মানে এই নয় যে, আরেকজনকে খোঁচা দেওয়া । স্বাধীনভাবে যা ইচ্ছা তাই করা, অন্যকে গালি দেওয়া কিংবা ইভটিজিং যৌনহয়রানির মত ক্রাইম করা । না; মুক্তচিন্তা বরং এসব ঘৃণিত কাজ হতে মুক্ত থেকে মুক্তভাবে চিন্তা করা । অনেকসময় কলমের শক্তি অস্ত্রের চাইতেও বেশি! অস্ত্র দিয়ে মানুষের মগজধোলাই করা যায় না । নিরপেক্ষ থেকে নিজেকে হালকা করে একটু চিন্তা করুন, ভাবুন এই প্রাণবৈচিত্র্য, বিজ্ঞান কিংবা দর্শন নিয়ে । একটা ভৌগলিক সীমানায় অবস্থান করতে হলে যেমন আপনাকে লিগ্যাল হতে হবে, ঐ অঞ্চলের নিজস্ব কিছু আইন কানুন মেনে চলতে হবে । তেমনি একটি ধর্মীয় অনুশাসনের ভেতরে থেকেও ধর্মের কিছু রুলস মানতে হবে । না মানলে অন্তত রেসপেক্ট করা উচিৎ । এটা এমন নয় যে, আপনাকেও ধর্মান্তরিত হতে হবে! কিংবা মসজিদে মন্দিরে যেতে হবে! এইটুকু বুঝবুদ্ধি নিশ্চয় আমাদের সবার আছে । মুক্তচিন্তার অধিকারী হতে হলে আপনাকে একটা নির্দিষ্ট এজেন্ডার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে; একপাক্ষিক হলে চলবে না । বিজ্ঞান বলে জগতের প্রত্যেক বস্তুরই ধর্ম আছে! তাহলে আপনারটা কি?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১৩