somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের চোখের যত্ন

০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাকরি সূত্রে কিংবা ব্যক্তিগত প্রয়োজনের তাগিদে অথবা অনেক সময় ব্লগিংয়ের কারনে আপনাকে হয়তো প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে; তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে মনিটরের দিকে। হয়তো স্ক্রিনে পড়তে পড়তে আগের লাইনের সঙ্গে পরের লাইন মিশে যায় বা একটি শব্দ পার্শ্ববর্তী শব্দের সঙ্গে মিশে যায়; মনিটরে কাজ করতে করতে মাথা তুললে কিছুক্ষণের জন্য দূরের জিনিস ঝাপসা দেখায়; কখনোবা একটি জিনিসের দুটো ইমেজ দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে আপনার আশঙ্কা হতে পারে নিয়মিত কম্পিউটারে কাজ করতে করতে আপনার চোখের কোনো ক্ষতি হলো কিনা। যেহেতু চোখ একটা স্পর্শকাতর ইন্দ্রিয়। তাই চোখের ব্যাপারে আমাদের অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ এর সামান্য কোনো অসুস্থতা আমাদের কাছে চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মও দরুণভাবে ব্যাহত হয়।

কম্পিউটার দ্বারা চোখের ক্ষতির ব্যাপারে আপনাকে আশ্বস্ত করে বলা যায়- কম্পিউটারে কাজ করার জন্যই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- এখনো এমন অভিযোগ শোনা যায়নি। তবে কম্পিউটারের মনিটর নিয়ে যারা নিয়মিত কাজ করেন তাদের প্রায় ৬০%-৭০% কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম বা সিভিএস দ্বারা আক্রান্ত। মনিটর কিন্তু এই সিন্ড্রোম তৈরি করে না। আসলে চোখের গঠনগত, কার্যগত বা জৈব রসায়ন ঘটিত অসঙ্গতির কারণে যদি কম্পিউটারে স্বাভাবিক কাজের বিঘ্ন ঘটে, তবে সেই পরিস্থিতিই হলো কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম বা সিভিএস। কারো যদি সিভিএস আসে এবং তা যদি আমলে না নিয়ে কাজ করার প্রবণতা থাকে, সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে নানা রকম জটিলতার জন্য হয়তো কম্পিউটারের কাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে বা কম্পিউটারে কাজ করা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকতে হতে পারে।
প্রতিষেধক হিসেবে মনিটর এবং চোখের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

১. প্রথমত মনিটরের গুণগত মান ভালো হওয়া চাই।

২. কম্পিউটারের মনিটর যেন সব সময় চোখের লেভেল ৪ ইঞ্চি -৮ ইঞ্চি নিচে এবং ২০ ইঞ্চি-২৮ ইঞ্চি দূরে থাকে। মনিটরটা সামান্য উপর দিকে রাখতে হবে।

৩. মনিটরের উজ্জ্বলতা এবং কনট্র্যাস্ট লেবেল চোখের সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত। বর্ণের আকার যতোটা সম্ভব বড়ো এবং কম্পিউটার স্ক্রিনের ব্যাকগ্রাউন্ডের রং চোখের পক্ষে আরামদায়ক হওয়া উচিত।

৪. ঘরের আলো এমনভাবে রাখতে হবে যাতে সেই আলো সরাসরি মনিটর বা চোখের ওপর এসে প্রতিফলিত না হয়।

৫. কিবোর্ড হাতে রপ্ত হলে ভালো, না হলে কিবোর্ডকে মনিটরের যতোটা সম্ভব কাছে রাখতে হবে যাতে মনিটর থেকে কিবোর্ডে চোখের মুভমেন্ট কম হয়।

৬. যদি অফিস ঘর অপরিসর হয় এবং বাইরের দৃশ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তাহলে মনিটরের উল্টো দিকে বা প্রয়োজনে স্ক্রিন সেভাবে এমন কোনো ল্যান্ডস্কেপ রাখতে হবে যেটা অবসর সময়ে চোখকে আরাম দেবে।
এতো গেল মনিটর সংক্রান্ত সতর্কতার কথা। এবার আসা যাক চোখের সাবধানতার প্রসঙ্গে।

৭. চোখের পলক স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি মিনিটে ১২-১৪ বার পড়ে। কিন্তু আমরা যখন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকি, তখন চোখের পাতা পড়ার হার অনেক কমে আসে। চোখের পাতা কম পড়ার কারণে চোখের উপরিভাগের আর্দ্রতা কমে যায়। যারা এসিতে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এটা আরো ত্বরান্বিত হয়। একে ’ড্রাই আই’ বলে।
চোখের পাতার অনেকগুলো কাজের মধ্যে একটা প্রধান কাজ হলো অশ্রুগ্রন্থি নিঃসৃত জলকে চোখের মধ্যে সমভাবে ছড়িয়ে দেওয়া; যাতে তা চোখের উপরিভাগের আর্দ্রতা, মসৃণতা, পুষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে বা বাড়িয়ে তোলে। এর অভাবে চোখের নানা উপসর্গ হতে পারে, যা সিভিএস-এর জন্য ভীষণভাবে দায়ী। সে কারণে প্রথম প্রথম খুব সচেতনভাবে বার বার চোখের পাতা ফেলার অভ্যাস করতে হবে। পরবর্তী সময়ে যা সুঅভ্যাসে দাঁড়িয়ে যাবে।

৮. এরপরই আসে চোখের বিশ্রামের কথা। সাম্প্রতিককালে কম্পিউটার জগতে ২০/২০ বা ৬০/৬০ আন্তর্জাতিক স্লোগান চালু হয়েছে, যার অর্থ আপনি কম্পিউটারে টানা যতো মিনিট কাজ করবেন, ঠিক ততো সেকেন্ড সময় চোখকে বিশ্রাম দেবেন।

৯. কম্পিউটারে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে উচিত ঘাড়ের দুএকটা ব্যায়াম করা এবং নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নিয়ম করে চোখেমুখে একটু পানি দিয়ে আসা।

- চোখের ত্রুটিজনিত কারণে অনেককেই চশমা ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু কম্পিউটারের কাজ করার ক্ষেত্রে চশমা একটা বিরাট অন্তরায়। এর থেকে রেহাই পেতে হলে আপনাকে নিতে হবে এমনই একটা চশমা যেটা আপনাকে কম্পিউটারে সাবলীলভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে। অবশ্যই সেটা হবে এমন একটা চশমা, যেটা মনিটরকে দেখতে এবং একইভাবে কাছের জিনিস দেখতে সাহায্য করবে। অর্থাৎ যেটাকে কাছের এবং মধ্যবর্তী দূরত্বের কমবিনেশন চশমা বলা হয়ে থাকে। স্ক্রিনটা ২০ ইঞ্চি -১৪ ইঞ্চি কে কাছের দূরত্ব ধরা হয়। চশমার উপরিভাগ দিয়ে মনিটর দেখা যাবে আর নিচের অর্থাৎ বাইফোকাল অংশ দিয়ে কাছের কাজ করা চলবে। অবশ্য এটা হাঁটাচলায় ব্যবহার করা যাবে না, সে ক্ষেত্রে আলাদা আরেকটা চশমা রাখতে হবে। চমশার লেন্সে এন্টি রিফুলেকটিং কোটিং এর ব্যবহারও কম্পিউটারের কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহারও কম্পিউটারের কাজের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক কালে সমাদৃত হচ্ছে।

আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত এমন কোনো চোখের পরিসেবা কেন্দ্র চালু হয় নি, যেখানে কেবল সিভিএস সংক্রান্ত বিশেষ বিভাগ বা বিশেষজ্ঞ আছেন। তবে ইউরোপ ও আমেরিকার মতো কিছু কিছু উন্নত দেশে এ বিষয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। বাস্তবিক তাগিদে এ ধরনের পরিসেবা আমাদের দেশেও চালু করা অত্যাবশ্যক। তবে যতোদিন না তেমন কোনো পরিসেবা কেন্দ্র চালু হচ্ছে, ততোদিন সবার সচেতনতাই কাম্য।

তথ্যসূত্র : বিদেশী পত্রিকা অবলম্বনে
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:৫০
২৪টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×