দেখতে দেখতেই লোকটা আমার উপর হেলে পড়ল। লোকটা যে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছেনা আমি সে ব্যাপারে নিশ্চিত হলাম। তাই আমিও ধরেই থাকলাম। রাস্তা ধরে দু একজন মানুষ হেটে যাচ্ছিল। তারা তেমন কর্ণপাত না করলেও দুএকজন বলল-ওইতো সামনেই সেন্ট্রাল হসপিটাল ,ওইখানে লইয়া যান।
ভালই একটা বিপদে পড়া গেল। উপকার করতে এসে এখন আমার চিৎকার করবার দশা। কিন্তু আমি তা না করে লোকটার পেছনে ভেসপায় চেপে বসলাম্ । লোকটা এখনও বুক চেপে আছে। আমি তার পেছন থেকে হাত দিয়ে ভেসপার হাতল ধরে অতিকষ্টে চালাতে লাগলাম। কেন যেন আমার ভেতরে মনুষ্যত্ব বোধ জেগে উঠল। আমি আজ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি মনুষ্যত্ববোধ থাকা মোটেও ভাল নয়। লোকটাকে এখানে ফুটপাতে ছুড়ে ফেলে যাওয়াটাই ভালকাজ হতো । তারপরেও আমি তা করতে পারলাম না। কোনমতে হেটে ঠেলে কখনো ভেসপা চালিয়ে যখন সেন্ট্রাল হসপিটালের সামনে পৌছেছি তখন আমি ভিজে একদম চুপচুপে। লোকটা এইমুহুর্তে বেহুশ।
আমি হাত মুখ ধুয়ে হাসপাতালের বেঙ্চিতে এসে বসলাম। লোকটার মানিব্যাগ আর মোবাইল আমার কাছে। মোবাইল ঘেটে রুপা নামের একটা নাম্বারে ডায়াল করলাম। আমার ধারণা এই নাম্বারটি তার ফ্যামিলি মেম্বার এর হতে পারে। ফোন রিসিভ করল এক কোমলস্বরের নারী। আমার প্রচন্ড কান্না পেল কারন,এই কোমলমতী নারী হয়তো বুড়ো চাচার কথা শুনে কিছুক্ষনের মধ্যেই কাদতে চলেছে। আর অন্যের কান্না শুনলে বা দেখলে আমারও কান্না পায়।
আমি খুবই ভালো মানুষ। আমি কান্নার ঠেলায় কথা বলতে পারছিনা। ওপাশ থেকে হ্যালো কে বলছেন,কি ব্যাপার কথা বলছেন না কেন? আপনি কাদছেন কেন-এ ধরনের উক্তি করেই চলেছে । এক পর্যায়ে আমি আমাকে সামলে বললাম-আপনি কি রুপা বলছেন?
মেয়েটি জানাল-রুপা তার বড় বোনের নাম। তার নাম স্বর্ণা।
আমি বললাম যা বলার। মেয়েটি এখন কাদছে ,আমার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। মেয়েটি জানাল -সে আধাঘন্টার মধ্যেই হসপিটালে পৌছে যাবে। আমিও ফোনটি রেখে দিতেই নার্স এসে হাজির হল। নার্স আমায় বলল=আপনার চিন্তা করার কিছু নেই। আপনার বাবা ভাল আছেন।
আমি কিছু বললাম না। বলে আর কি হবে বাবা তো বানিয়েই দিয়েছে। তাছাড়া এসব নিয়ে শূধরানোর কিছু নেই,,লোকটা তো আমার বাবার বয়সী। সমস্যা কই?
আমি একটা জিনিস ভেবে অবাক হই। হাসপাতাল ভর্তি নার্স,ডাক্তারের ছায়া পর্যন্ত নেই। হাসপাতালে এই মুহুর্তে তাহলে লোকটার প্রাথমিক চিকিৎসা তাহলে নার্সই দিয়েছে। ভালো।
পৌনে একঘন্টা হয়ে গেল। কারোরই কোন দেখা নেই। আমি বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিলাম আমার আসতে দেরি হবে। আমার স্ত্রী আমাকে শূনিয়েই দিল-প্রতিদিন তো রাতই হয়,আজ কি ভোরে আসবেন?
আমি কিছু বলিনি। আসলে কিছু বলার নেই।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১০:২৪