রাত সোয়া দশটার সময় স্বর্ণা ও রুপা দু্ইবোন এসে উপস্থিত হলো। আমার একটু ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। কেবিনের সামনে এসে দুইবোনের কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গল। আমি ভেবেছিলাম সকাল হয়ে গেছে বুঝি। কিন্তু না। দুই বোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাদছে । স্বাভাবিক ।
নার্স বোঝানোর চেষ্টা করছেন। আমিও এগিয়ে গেলাম। নার্স আমাকে দেখেই বলে ফেললেন-ভাগ্গিস আপনার বড় ভাই সেদিন আপনার বাবার সাথে ছিলেন।
দুই বোন আমার দিকে তাকাল। কে কার ভাই আর কার বোন সেটা ভাবার সময় এখন নয় । স্বর্ণা কিংবা রুপা কেউ একজন আমাকে বলল-আপনিই তাহলে আমার বাবাকে এখানে নিয়ে এসেছেন।
আমি বললাম-হ্যা।
সে বলল-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমি বললাম-না না ধন্যবাদ দেয়ার কিছু নেই ।
অপর বোনটি বলেই ফেলল-কেন আপনি আমার বাবাকে স্কয়ারে নিয়ে না যেয়ে এখানে নিয়ে আসলেন কেন?
এ জায়গাটা কিরকম নোংরা দেখেছেন।
আমি একটু স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম এই হয়তো বুড়ো মানুষটার ছোট মেয়ে তার মানে স্বর্ণা। আমাকে কিছু বলতে হলো না । বড় বোন রুপাই ছোট বোন স্বর্ণা কে সামলে নিল। আমার দিকে চেয়ে বলল-ও আমার ছোট বোন স্বর্ণা । খালি লম্বাই হয়েছে বুদ্ধিসুদ্ধি কিছুই হয়নি।। আপনি ওর কথা কানে মাখবেন না।
আমি মৃদু হেসে বললাম- না মাখলাম না।
স্বর্ণা নাক উচিয়ে দাড়িয়ে রইল।
রাত পৌনে এগারটা । আমি বিদায় নিচ্ছি । হাসপাতাল একেবারেই নীরব। মনে হচ্ছে হাসপাতালের স্টাফ সহ সবাই ঘুমিয়ে গেছে। মেয়ে দুটো কেবিনে বাবার সাথে কথা বলতে গিয়েছে । ভাবছি ওরা বের হলেই আমি বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো।
হাসপাতালের করিডরের কিছু লাইট নিভিয়ে দেয়া হয়েছে।
মেয়ে দুটো বের হয়ে আসতেই আমি তাদেরকে জানালাম। আমি চলে যাচ্ছি। তেমন আপত্তি তারা জানাল না। খালি বলল-তার বাবার জন্য নিচ থেকে জুস আর বিস্কিট নিয়ে আসতে। আমিও আপত্তি জানালাম না। বিস্কুট কিনে দিয়ে আমি রওনা হলাম।
এবার বহু কষ্টে বাসে উঠলাম। এই সময় বাস পাওয়া যাবে সেটাই ভাবতে আশ্চর্য হল। বাসে উঠেছি। কারওয়ান বাজারের সামনে । হঠাৎই মোবাইলের ভাইব্রেশনে মোবাইল টা বের করে অবাক হলাম। আরে এইযে ওই লোকটার মোবাইল।
দিতে মনে ছিল না। রুপা ফোন করেছে। নাম্বার সেইভ করা। আমি ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকেই কান্নার আওয়াজ পেলাম।
কোনমতে রুপা জানাল তার বাবা আর নেই।