somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্র্যান্ড মাস্টার

০২ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





ভোর ৫ টা ৩০:
এলার্মটা অনেক খন ধরে বেজে চলেছে। টানা ৩০ বার বেজে থেমে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিচিত্র কারণে থামছে ই না। আরো কিছুক্ষণ ঘুমাতে ইচ্ছা করছিল ওর। আর না পেরে উঠে দাঁড়াল। চোখ কুঁচকে একবার এলার্ম এর দিকে তাকাল। এলার্ম টা বেজেই চলেছে, থামছেই না। মনে মনে কৌতুক অনুভব করল ও। এলার্মটা বন্ধ না করে এগোলো রেস্টরুম এর দিকে।

সকাল ৬ টা ৩০:
পুরোপুরি প্রস্তুত ও। সাদা পায়জামা পাঞ্জাবির উপরে মেরুন রঙ এর কোট। হাতে তার অতি প্রিয় ঘড়ি। মুখে সেই ধীর মাপা হাসি নিয়ে সে এগোচ্ছে দরজার দিকে। একটু অবাক হয়ে তাকাল ঘড়িটার দিকে। এখনো এলার্ম বেজেই চলেছে। হাসিটা মুছে গেল, মাত্র ১ সেকেন্ড এর জন্য, কিন্তু মুহুর্তেই ফিরে আসল সেই শান্ত, স্থির হাসিটা। এক হাতে এলার্ম টা বন্ধ করে দিল নিজে থেকে। এগোনো শুরু করল হলরুম এর দিকে। পেছনে আস্তে বন্ধ হয়ে গেল দরজাটা।



সকাল ৭ টা ৩০:
কিছুটা চাপা আনন্দ অনুভব করছে। একি সাথে অনুভব করছে একটা বিরাট সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে ও। একটু আগের হলরুম এর সকালের কনফারেন্স এর কথা ভাবছিল ও। তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিন আজ। পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রান্ডমাস্টার সে। সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে তাকে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর বাইরের যেকোন গ্রহে অবসর যাপন এর সমস্ত সুযোগ। শেষবারের মত সে হলরুম এ তার বক্তৃতা সে দিল। বিনম্র শ্রদ্ধায় তাকে অভিনন্দিত করেছে আমন্ত্রিত ৫০০ মানুষ, যারা এই পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান এবং মেধাবী বলে পরিচিত।



সকাল ৮ টা ৩০:
কাজ সব গুছিয়ে আনা হয়েছে। সারাজীবন পৃথিবীর মানুষের কথা ভাবতে গিয়ে বিয়ে থা করা হয় নাই ওর। এখন পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার সময় মনে হয়েছে, ওর সঙ্গিনী হবার সুযোগ দিবে কাউকে। ওর নিজের সময় ও হয়ত তাতে ভাল কাটতে পারে। নিজের রুম এর হলোগ্রাফিক স্ক্রীন টা অন করল ও। একজন তরূণীকে দেখা যাচ্ছে। ওর জন্য নিয়ে আসা হয়েছে পৃথিবীর কোন এক প্রান্ত থেকে এই তরূণীকে। পাশে একটা বোতামে চাপ দিতেই তরুণীর বায়োডাটা সামনে চলে আসল।তার তুলনায় এই তরুণী আসল কিছুই না। অনেক দূরের এক দ্বীপদেশের ছোট্ট হাসপাতালের চিকিতসক এই দীর্ঘ কালো চুলের তরুণী। সদ্য ইন্টার্ণ শেষ করেছে সে। সামনে ই বিয়েতে বসার কথা ছিল তার দীর্ঘদিনের প্রেমিক এবং ক্লাসমেইট এর সাথে। গ্রান্ড মাস্টার একটা বড় হাই তুলল। ঘুমটা পুরা হয় নাই। সে মেয়েটাকে সামনা সামনি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করল হলোগ্রাফিক স্ক্রীন এর মাধ্যমে।




সকাল ৯ টা ৩০:

টেবিল এর ওপ্রান্তে বসে আছে মেয়েটা। চুপচাপ, ধীর, শান্ত ভাবে। টেবিল এর এপাশে বসে আছে গ্রান্ডমাস্টার। মনে মনে কৌতুক অনুভব করছে সে, পৃথিবীর বুকে দীর্ঘ একঘেয়ে জীবন কাটাতে হবে না মেয়েটাকে, এজন্য নিশ্চয় ই মেয়েটা অনেক কৃতজ্ঞ। একজন সাধারণ মানুষের সাথে জীবন কাটাতে হবে না, জীবন কাটাবে সে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রান্ডমাস্টারের সাথে। এই অতি আনন্দ নিশ্চয় ই মেয়েটাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। মেয়েটা তার মত প্রতিভাবান ব্যক্তির যোগ্য সহচর হতে পারবে কিনা এ নিয়ে একটু ক্ষীন সন্দেহ আসলেও মেয়েটার মুখের একধরণের সারল্য এবং সৌন্দর্য আছে যেটা সে অনেক পছন্দ করেছে। নাহ, মেয়েটাকে সুখবর জানানো দরকার যে তাকে তার পছন্দ হয়েছে। মেয়েটা নিশ্চয়ই এই সুখবর শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

সকাল ১০টা ৩০:
কিছুটা হলেও ও একটু আশ্চর্য হয়েছে। মেয়েটাকে সে পছন্দ করেছে এটা বলার পরেও মেয়েটার মুখভঙ্গির কোন পরিবর্তন হয় নাই। বরং আরো কঠিন হয়েছে বলে মনে হল মুখটা। তাকে আজকেই তার সাথে পৃথিবী ছাড়তে হবে বলার পরেও তার মাঝে কোন বিস্ময় দেখা যায় নাই। যে অনুভুতি দেখা গেছে ও তার সাথে পরিচিত না। ওর ভুল হতে পারে কেন জানি মনে হলো মেয়েটা তার দিকে প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে যাছে। আর তেমন কথা হলো না। বের হয়ে যাওয়ার মুহূর্তে মনে হলো দু;খিত ভাবে পূবদিকের জানালা দিকে তাকাল একবার। মেয়েটা চলে যেতেই কি মনে করে উঠে দাঁড়াল গ্রান্ড মাস্টার পূব দিকের জানালার সামনে র পর্দা সরিয়ে দিল সে। চারিদিকে মেঘ করেছে। মনে হয় বৃষ্টি নামবে আজ। ভবনের সীমানার বাইরে দাঁড়িয়ে একটা কমবয়সী তরুণ পাগলের মত চিতকার করছে। মাথায় ঝাঁকড়া কালো চুল, একটা ক্ষাপাটে ভাব নিয়ে সে বার বার দরজায় আঘাত করছে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল গ্রান্ডমাস্টার। পৃথিবীর এই ক্ষাপাটে মানষ গুলার ভাল’র জন্য কত কষ্ট করতে হয়। এই ক্ষাপাটে তরূণের জন্য মায়া অনুভব করল সে। কিন্তু এমন পাগলামি কেন সে করছে, তা জানার আগ্রহ তার হলো না। আজ পৃথিবীতে তার শেষদিন। এই দিন টা সে নিজের মত করে কাটাতে চায়।




সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:২৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×