somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগপোস্ট নয়, মুক্তিযোদ্ধার (?) সন্তানের মন্তব্য

০৫ ই মার্চ, ২০১২ সকাল ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মনে পড়ে একটা কথা-
একদিন বুয়েটের পাশ দিয়ে যেতে যেতে মাসুম বলেছিল,

'দেশটাকে স্বাধীন করেছে দেখে পাবলিক ভার্সিটিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় বোঝা বওয়ার...'

পরের কথাগুলো আর শুনতেই পাইনি, এমন ঝাঁ ঝাঁ করেছিল কানটা। তখনি ওয়াদা করেছিলাম, যদি কুত্তার বাচ্চা না হয়ে থাকি, জীবনে কোনদিন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হবার সরকারি সুবিধা আমি অন্তত নিব না।

হু, ভাই, ক্লিয়ার কাট কথা।

আমার বাপধন ১৯৭১ সালে কলেজে ওঠার কথা ছিল। সাতই মার্চে এসেছিল রেসকোর্সে। লোকটা কখনো মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলে না। আমিও কক্ষনো জিগ্যেস করি না। তবু মনে পড়ে, বলেছিল, ‌'বাসে যেতে যেতে আমরা গুলতানি মারি, আজকে শেখসাব মনে হয় স্বাধীন ঘোষণা দিয়া দিব।'

তারপর তাদের উপরও একাত্তর নেমে আসে।
না, লোকটা বীর পুরুষ না। বীর মুক্তিযোদ্ধা হবার তো প্রশ্নই ওঠে না। একটাও গুলি করেনি যুদ্ধে। সরাসরি সত্য কথা বলে সে- এটুকু বীরত্ব আছে ব্যাটার।

না খেয়ে থেকেছে আমার দাদা-দাদীকে নিয়ে, লুট করেনি একাত্তরে জেতার পর। সে কী কষ্ট! পাশের বাসার মদ ব্যবসায়ীর স্ত্রী, আমার পূজ্য প্রতিবেশী এক দাদী গোপনে ভাত নিয়ে আসতেন রাতের বেলা। স্বাধীনতার পর যখন দুর্ভিক্ষ হল না? তখন। এই শিক্ষিত ছেলেগুলো তো ভিক্ষাও করতে পারে না- ওই নিষিদ্ধ পল্লীতে মদ ব্যবসা করা মাতাল লোকটার স্ত্রীও জানতেন, তাই লুকিয়ে নিয়ে আসতেন সামান্য ভাত আর সিদ্ধ আলু।

আমার বাবার কাছে তখনো স্টেনগান ছিল। জমা না দেয়া স্টেনগান। কী কষ্ট! কী কষ্ট! পূজা করার সিস্টেম আমাদের ধর্মে নেই কেন? আমি কোন দেবতার পূজা করতাম না আব্বু, আপনিই আছেন।

বিশাল পদস্থ অফিসারের পুত, জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনি- আর আমরা টানা ছয়মাস ডাল ভাত আলুভর্তা ছাড়া কিসু্ই দেখিনি- এমনও দিন গেছে আমাদের।

হ্যা, আমার বাপধন কোন গুলি ছোড়েননি।

তখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছিল। তারা তিন বন্ধু প্রতিদিন গোসল করতে যাবার পর একসাথে বসে গল্প করতেন। দেশের কী অবস্থা- কেমন অবস্থা- এইসব। সেইসাথে, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাবার এক অক্ষম বাসনা।

ঘটনা হল, সেই তিনজনের একজন না বলে চলে গেল যুদ্ধে।

বন্ধুর এই বেঈমানীতে বাপধন কাতর। ঘটনা কী! তিনি আরো কিছুদিন সময় নিয়ে গোসলে বের হলেন। এবং গোসল করে স্বাধীন দেশে এলেন।

আব্বুর কাছ থেকে কিছুই জানতে পারি না। কারণ, তিনি নিজে থেকে কোনদিন কিছু বলেন না। আমিও কোনদিন কিছু জিগ্যেস করি না। তার পরও, উনত্রিশটা বছর কাটিয়েছি তার সাথে। দু চার কথা তো জানতে পারলাম এ ক দিনে?

তিনি লঞ্চে ওঠেন বাড়ির পাশের খাল থেকে। খালটা এখন হেজে মেজে পচে গেছে। খালের উপর দিয়ে এখন তৈরি হয়েছে খটখটে রাস্তা। ঠিক তাদের মুক্তিযুদ্ধের মত।

তারপর ভারত। তারপর ট্রেনিঙ। পাগল ছিল লোকগুলো। অনেকেই নাকি সামরিক ট্রেনিঙের সময়ও রোজা রাখত। মনের জোর বলে কথা।

সবশেষে ট্রেনিং শেষ, দেশে ফিরে আসা। ক্যাম্প থেকে ক্যাম্পে ঘোরা। কিছুদিনের মধ্যে 'গন্ডগোল' শেষ। তিনি কোন অপারেশনে গিয়েছিলেন কিনা, কোন অপারেশনে ব্যাকবোন হিসাবে কাজ করেছেন কিনা- আমি জানি না। কিন্তু তিনি বলেন, আমি কোন গুলি ছুঁড়িনি যুদ্ধে। সুযোগটা হয়নি। পেলে সবকয়টা হারামজাদাকে শেষ করতাম। নিজেও মরতাম। আর কার কাছে যেন শুনেছিলাম, মেঘনার পাড় ধরে শোলার বস্তার ভিতরে তিনি আর্মস চালান করেছেন একবার; নাপাক সেনাদের সামনে দিয়ে হেঁটে গিয়ে। কিন্তু আমি তার মুখে শুনিনি- জিগ্যেসও করিনি।

তবে তিনি গুলি করেছিলেন শুনেছি, স্বাধীনতার সাথে সাথে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে সবাই গুলি করেছিলেন উপরদিকে। হয়ত বলছিলেন মনে মনে-

আমি ভগবান বুকে এঁকে দিই পদচিহ্ন।

তারপর তাদের ফিরে আসা।

বাপধনের আজন্ম লালিত স্বপ্ন ডাক্তার হবে। দু বছর পর ডাক্তারি পরীক্ষা দিবে। চান্স নষ্ট হল ভাইভায়। বদনামি কলেজের নাম শুনে নিলই না। প্রশ্নই করল না আর একটা। ব্যাটা বোকারাম, তুই বলবি না, তুই মুক্তিযোদ্ধা? তোর স্টেনগান আছে? হাঁদারাম হয়ে আর কদ্দিন থাকবি? তুই যে ঢাবিতে জুলজিতে ভর্তি হয়ে পাশেই ঢামেকের অ্যাপ্রন দেখলে বিকারগ্রস্ত হয়ে যাস, তোর যে সেই পড়াটাও আর হল না- ফেলে চলে আসলি, এই বিষয় কেউ কোনদিন বুঝবে? তোর স্টেনগান ছিল না?

তারপর তাদের অনেকের বোকামি। হ্যা, তাদের বিশাল একটা গ্রুপ কোন লুটপাটই করেননি। অনেককে চিনি আমি- নিজের গ্রাম, আশপাশের পাঁচ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের চিনব না কেন? সবাই ছিলেন এবং আছেন ছা পোষা। অথচ সব হাতের মুঠোয় ছিল ওই সময়টায়।

ভাইরে,
এই ছা গুলা মুক্তিযোদ্ধাদের ছা,
কোন জাতির (হোক সেটা বাঙালি জাতি) কাঁধে এই ছা' দের তারা বে-ওয়ারিশ করে তুলে দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেননি।

আপনাদের (বিশেষ মন্তব্য ও মনোভাব পোষণকারী মানুষের) ভার্সিটির কোটা,
আপনাদের বিসিএস চাকরি আপনাদেরই থাকল।
প্রয়োজনে আপনাদের দেশ ছেড়ে চলে যাব ভাইডি,
জীবনে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী একজন সিভিলিয়ান গেরিলা সৈনিকের ছেলে হিসাবে একটা সুতা, আপনাদের দেশ থেকে নিব না।

বাপটা মরে গেলে পুলিশেও খবর পাঠাব না,
বাবারা, কবরের সামনে এসে শ্রাদ্ধ করে যাও।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:২৪
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×