somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পূর্বে বিভিন্ন দেশে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মৃত্যুদন্ডের... ।

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বর্তমানে অনেক দেশেই মৃত্যুদন্ড ওঠে গেছে । আর থাকলেও তা ফাঁসী, ইঞ্জেকশন আর ইলেকট্রিক চেয়ারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ।



১. সিদ্ধ করা, দুর্ভাগা ব্যাক্তি কে একটি জল ভর্তি পাত্রের মধ্যে রাখা হয় । কল্পনা করতে ছিল প্রথমে ঠান্ডা, তারপর একটি অগ্নি পাত্র নীচে দিয়ে দেওয়া হত যাতে পানি ধীরে ধীরে গরম হয় এবং বন্দী জিবন্ত সিদ্ধ হতে থাকে । এই ভাবে এক সময় সে মারা যেত । শাস্তির এই পদ্ধতিটি প্রায় ৫০০,০০০ বছর বয়সী এবং চর্চা হত প্রাচীন চীনে । নিশ্চিত চীন কিছু পাশবিক শাস্তি আবিস্কার করেছিল এবং এটাও বলা হয় যে, মৃত্যুদন্ডের এই পদ্ধতি যুক্তরাজ্যে বিদ্যমান ছিল ১৫০০ শতক পর্যন্ত । জাপান, ফিজি, পাপুয়া নিউগিনিতেও এই শাস্তির তথ্য রয়েছে । এমনকি মোঘল আমলে ১৬৭৫ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলেও ইসলাম গ্রহণ না করায় শিখ নেতা ভাই দয়ালাকে এভাবে হত্যা করা হয় ।



২. ক্রুশবিদ্ধ করা, এই মৃত্যুদন্ড পদ্ধতি যীশু খ্রীষ্টের অনুসরণ করে । একটি ক্রুশকাঠ এ বন্দি ব্যাক্তিকে পেরেক দিয়ে হাত পা কাঠের বা লোহার ক্রুশে দিয়ে উন্মুক্ত স্থানে ছেড়ে দিত । বেশির ভাগ সময় বন্দী সাধারণত রক্ত ঝড়া থেকে মারা যেত । কোন কারণে যদি সে মারা না যেত তবে ক্ষুধা বা তৃষ্ণা দ্বারা মারা যেত । সে সমস্ত বন্দী ছিল ভাগ্যবান, সে শুধু তীব্র ঠান্ডা বা তাপ দ্বারা মারা যেত । ৩৫-৬০ কেজি ওজনের ক্রুশগুলি আসামীকে বয়ে নিয়ে যেতে হত । শুধূ তাই নয় আরও লজ্জা দেয়ার জন্য নগ্ন করা হত । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নির্দেশ না মানার জন্য ব্যারাকে সৈনিকদের এভাবে একদিন ঝুলিয়ে রাখার শাস্তি দেয়া হত ।



৩. জীবন্ত চামড়া তুলে নেয়া বর্তমান ইরাকের পূর্বসূরী আসেরীয়রা বা মেক্সিকোর এযটকরা এই প্রথায় শাস্তি দিত । মধ্যযুগে ১৩০০-১৪০০ সালের দিকে এই ধরণের রেওয়াজ ছিল । এর মত নিষ্ঠুর পদ্ধতি আমি আর শুনিনি । এটি বন্দীকে জীবন্ত রেখে ত্বকের সমগ্র শরীর থেকে চামড়া অপসারণ করা হত । এটি ছিল একটি প্রকাশ্য মৃত্যুদন্ড প্রদান সার্বজনীন পদ্ধতি । মাঝে মাঝে ব্যাথার তীব্রতা বাড়ানোর জন্য লবণ মাখানো হত । এই ভাবে অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করে বন্দি মারা যেত ।


৪. বিশেষ বিশেষ অঙ্গ কর্তনের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড, এই পদ্ধতিতে দেহের প্রধান অঙ্গগুলি কাটা হত বিশেষ করে পেটের । জাপান, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়ামে এই পদ্ধতি চালু ছিল । এটি ছিল সবচেয়ে গুরুতর শাস্তি । তখনকার দিনে চোর এবং ব্যভিচার ছিল বেশি, তাই এই শাস্তি প্রচলন হয়েছিল । ইংল্যান্ডে disembowelment বেশিরভাগই ছিল রেওয়াজ । এই শাস্তি হল অত্যাবশ্যক অঙ্গ আপনার শরীর থেকে এক এক করে ছুড়ি বা ধারালো কোন অস্ত্র দ্বারা অপসারণ করা হত বন্দী মারা না যাওয়া পর্যন্ত ।



৫. বিশেষ চাকা, এই বিশেষ যন্ত্র ক্যাথরিন এর চাকা নামেও পরিচিত ছিল । এ পদ্ধতিতে বন্দি কে একটি বড় চাকার সাথে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রশস্ত ব্যবধানযুক্ত করে আবদ্ধ করা হত এবং তা ঘুরানোর সাথে সাথে অঙ্গ প্রসারিত হত । চাকা ঘোরানোর সময় একটা হাতুড়ি দিয়ে একজন ব্যক্তির শুধুমাত্র ব্যক্তির হাড় এ নিয়মিত বিরতিতে আঘাত করা হত । এই প্রক্রিয়ায় মৃত্যু সাধারণত খুব দীর্ঘ হত । সাধারণত একজন ব্যক্তির প্রতিটি অঙ্গ নষ্ট করা হত । এটা অবশ্যই একটি দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু ।


৬. বিদ্ধ, এ পদ্ধতিতে উলঙ্গ করে বন্দির হাত-পা বেঁধে তার পায়ু পথে সুচালো একটি দন্ড ঢুকিয়ে তাকে তার উপর বসিয়ে দন্ডটি খাঁড়া করে দেওয়া হতো । বন্দী তার নিজের শরীরের ভারে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নেমে যেত । অনেক সময় খুঁটিটির মাথা সুচালো না করে ভোঁতা রাখা হত যাতে হৃৎপিন্ড বা অন্যান্য প্রধান অঙ্গ বিদ্ধ হয়ে তাড়াতাড়ি মারা না যায় । এতে অপরাধী প্রচন্ড কষ্টে মারা যেত । এ পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে অনেক সময় লাগত এমনকি এক থেকে দু’দিন সময়ও লাগত ।



৭. মাথা পিষ্ট মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার এই পদ্ধতিটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উদ্ভাবিত, সুদূর কোনো দেশের পদ্ধতি নয় । এ পদ্ধতিতে বিশাল আকৃতির হাতি তার পা দিয়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাথা থেঁতলে দিতো, যাতে সে ধীরে ধীরে পায়ের চাপ বাড়ায়, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ কষ্ট ভোগ করে মারা যায় ।



৮. পুড়িয়ে হত্যা, বন্দী ব্যক্তি সাধারণত মুত্যু পর্যন্ত অবর্ননীয় যন্ত্রণা ভোগ করত যতক্ষণ না ঘাড় এবং মুখ আগুণ লেগে মারা না যেত । পুড়িয়ে হত্যা করার পদ্ধতি শুরু হয় মূলত জোয়ান অব আর্ককে পুড়িয়ে মারার পর থেকে । সে সময় তার বয়স ছিলো মাত্র ১৯ বছর । ১৪৩১ সালের ৩০ মে তাকে হত্যা করা হয় । জোয়ান অব আর্ক ছিলেন পূর্ব ফ্রন্সের একজন সামান্য কৃষকের ঘরে জন্মানো ব্যাক্তি যিনি ফরাসী সেনাবাহিনীর জন্য বিরল যুদ্ধজয় এনে দিয়েছিলেন । তার নেতৃত্বেই ফ্রান্স তাদের বেহাত হয়ে যাওয়া ভূমি পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয় । তিনি সপ্তম চার্লসের ক্ষমতারোহনের পেছনেও পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছিলেন । অথচ দেশের জন্য এত গৌরব বয়ে আনা সত্ত্বেও তাকে বার্ন্ডুনডিয়ানরা আটক করে ইংরেজদের কাছে বিক্রি করে দেয় । সেখানে একটি খৃষ্টান আদালতের রায়ে তাকে পুড়িয়ে মারা হয় । তার মৃত্যুর ২৪ বছর পর সপ্তম চার্লসের উদ্যোগে পোপ তৃতীয় ক্যালিক্সটাস তার পুনতদন্তে জোয়ানকে নির্দোষ সাব্যস্ত করেন এবং তাকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয় ।



৯. করাতে কেটে মৃত্যুদন্ড, এই পদ্ধতিটি চালু ছিলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ এশিয়াতেও । এক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যাক্তিকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে উল্টো করে দুই পা দুই দিকে ফাঁক করে বেঁধে রাখা হতো । এরপর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির যৌনাঙ্গ বরাবর করাত রেখে দেহকে মাঝ বরাবর কেটে ফেলা হতো । আর উল্টো করে ঝোলানোর কারণে ব্যাক্তিটির মস্তিষ্ক যথেষ্ট পরিমাণ রক্ত পেতো, যাতে তিনি শরীরের মাঝ বরাবর কেটে ফেলার ব্যাথা সম্পূর্ণটাই অনুভব করতে পারে । মধ্যযুগের অমানবিক মৃত্যুদন্ডের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:০৮
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×