মহান স্রষ্টার সৃষ্টি পৃথিবীতে অনেক ধর্মের জন্ম হয়েছে এবং হচ্ছে, যার যেটা ভালো লাগে সে সেটা পালন করবে, এটা ব্যক্তি স্বাধীনতা । ধর্মের কারণে মানুষ হত্যা কোনো ধর্মেই নেই, সকল ধর্মেই অন্যায়কে অন্যায় বলা হয়েছে । তারপরও দুনিয়াব্যাপী স্বার্থান্বেষী মহল-গোষ্ঠী-ব্যক্তি শত শত বছর যাবত ধর্মকে ব্যবহার করে হিংসা-বিদ্বেষ-হানাহানি-মারামারি-ক্ষমতার দ্বন্দ তথা সত্য-সভ্যতা-মানবতা বিনাশী কর্মকান্ড চালাচ্ছে ।
ধর্ম মানুষকে মনুষ্যত্ব শেখায় । শৃংখলা-সাম্যতা অন্যের প্রতি ভালোবাসা ও যত্নবান হওয়ার উপদেশ । সব ধর্মগ্রন্থে এসব উপদেশ রয়েছে । ধর্ম বিশেষজ্ঞগণ সেভাবেই তাদের ভক্ত-অনুসারীদের শিক্ষা দেয় ।
সন্দেহ জাগছে, “জীবহত্যা মহাপাপ-অহিংস পরম ধর্ম” বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী বার্মার সামরিক জান্তা ও অং সান সুকি'র অসহায় নিরপরাধ রোহিঙ্গা গণহত্যার নিষ্ঠুর নীতি দেখে । আসলে তাঁরা কোন ধর্মের অনুসারী ? তাঁরা যদি সত্যিই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হয় তাহলে তারাতো তাদের ধর্মের আইন-কানুন মানার কথা ।
ধর্ম মানে না সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার । তাঁরা তো মানবতার কল্যাণকামী দুনিয়ার কোনো সংগঠনের অনুরোধকেও মানছে না । ২০১৬ সাল থেকে ক্রমেই অসহায় নিরপরাধ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন-জুলুম বৃদ্ধি করছে । তাদের আচরণে মানবতার প্রতি কোনো শ্রদ্ধা ভালোবাসা মানবধিকার কোনোটাই পাওয়া যাচ্ছেনা । তাহলে তাঁরা কি হিংস্র পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে গেল ?
গৌতম বুদ্ধ যে ধর্মের প্রবর্তন করেন তাতে সৃষ্টিকর্তার কোনো স্থান নেই । যদিও জন্মান্তরবাদ বৌদ্ধ ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ । গৌতম বুদ্ধ ছিলেন বর্ণপ্রথার ঘোর বিরোধী এবং তিনি তাঁর ধর্মের মাধ্যমে মানুষে-মানুষে ঐক্য, সমতা ও সমধিকারের বাণী প্রচার করেছিলেন । বর্ণপ্রথার মাধ্যমে ভারতীয় জনগণকে ধর্মের কাঠামোর মধ্যে যেভাবে বিভক্ত রাখা হয়েছিল, বৌদ্ধ ধর্ম ছিল তাঁর বিরুদ্ধে এক মহাবিদ্রোহ ।
গৌতম বুদ্ধের জন্ম ও মৃত্যুর সময়কাল সমন্ধে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না । বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে আনুমানিক ৪২৩ অব্দ বা আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮০ অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে তাঁর জীবনকাল হিসেবে নিরূপণ করেন ।
আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪৩ অব্দ বা আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দের (৮০ বছর) মধ্যে মৃত্যুর সময়কাল বলে নিরূপণ করেন ।
বুদ্ধের পরিনির্বানের পরে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হয় । বর্তমানে বৌদ্ধ ধর্ম দু’টি প্রধান মতবাদে বিভক্ত । প্রধান অংশটি হচ্ছে হীনযান বা থেরবাদ (সংস্কৃত: স্থবিরবাদ) । মহাযান নামে পরিচিত । বজ্রযান বা তান্ত্রিক মতবাদটি মহাযানের একটি অংশ । শ্রীলংকা, ভারত, ভুটান, নেপাল, লাওস, কম্বোডিয়া, মায়ানমার, চীন, জাপান, মঙ্গোলিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কোরিয়াসহ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে এই ধর্ম বিশ্বাসের অনুসারী রয়েছে । সবচেয়ে বেশী বৌদ্ধধর্মালম্বী বাস করে চীনে । বাংলাদেশের উপজাতীয়দের বৃহত্তর অংশ বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত ।
গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত বাণীর মূল অর্থ "অহিংসা" হলেও, এখন তা মানছেনা অং সান সুকি, সামরিক জান্তা ও তাদের সমর্থকগণ । বৌদ্ধদের অন্তর-আত্মা হিংসায় পরিপূর্ণ, তবে কিছু ভাল হৃদয়ের অনুসারী অবশ্যই আছেন কিন্তু তা সংখ্যায় অতি নগণ্য ।
(লেখাটি অসমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৫৬