সংস্কৃত “মল” ধাতুর সাথে ‘অ’ প্রত্যয় যোগে “মাল” শব্দটির আবির্ভাব যার একাধিক আভিধানিক অর্থ রয়েছে । যেমন: পণ্যদ্রব্য, ধনসম্পদ, কুস্তিগির, সাপের ওঝা, মদ-সুরা, খাজনা, মালা ইত্যাদি। সুতারং Goods এর বাংলা প্রতিশব্দও হচ্ছে 'মাল' । তবে অধুনা কথ্য বাংলা ভাষায় “মাল” একটি চমকপ্রদ শব্দ যার অর্থ ও প্রয়োগ ততোধিক ব্যাপক। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে “মাল” হতে পারে অর্থ-সম্পদ, জিনিস-পত্র, মদ-মাদক, বিতর্কিত/অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব (আজব চিজ বা আজীব), আবেদনীয় নারী/পুরুষ এবং আপত্তিকর কিছু অর্থ। আবার আরবীতে 'মাল' শব্দের অর্থ হলো সম্পদ। সুতরাং বায়তুলমালের শাব্দিক অর্থ হলো সম্পদাগার। সাধারণত রাষ্ট্রীয় কোষাগারকেই বায়তুলমাল বলা হয়। নামের সঙ্গে তার মন্ত্রিত্বের কার্যভার বা Portfolio সুন্দরভাবে মিলে গেছে। আপনি বিশ্বের এমন কোনো দেশ খুঁজে পাবেননা যেখানে স্বয়ং অর্থ মন্ত্রীর নামের সাথেই ইকোনোমিকসের এরকম একটা বিস্তৃত টার্ম যুক্ত আছে। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে ' তমঘা ই খিদমত' পদকে ভূষিত করে।
এই 'তমঘা ই খিদমত' ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র হলেও নিজের যোগ্যতা এবং মেধা বলে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন। আমি নিজে তার সাহিত্য নিয়ে দু-তিনটি বক্তব্য শুনেছি , যদি ভাষায় প্রকাশ করতে চাই এক কথায় অসাধারন। জীবনান্দ দাশলে তার মতো সুন্দর করে আর কেউ বিশ্লেষণ করতে পারবে বলে মনে হয় না। কথা হচ্ছে তিনি সাহিত্যের জন্যে পারদর্শী হলে অর্থ মন্ত্রনালয়ের জন্যে কতটা পারদর্শী?
অর্থমন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে 'তমঘা ই খিদমত' সাহেব এর আগেও ছিলেন। সেটা স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের সময়ে। বাংলাভাষায় ততটা পারদর্শী না হলেও উর্দু এবং ইংরেজীতে পারদর্শী আমাদের মাল সাহেবের মাথার চুল নেই এবং তিনি খুব ভালো ভাবেই জানেন সরকারের স্বার্থে কি করে, কোন প্রক্রিয়ায় জনগনের উপরে চাপিয়ে দিয়ে হলেও অর্থ আদায় করা যায়। চাটুকার এবং তোষামোদের গল্প তার নামের পাশে না থাকলেও বদ মেজাজী এবং বয়সের ভারে মস্তিস্ক ন্ব্যুজ্ব হয়ে যাওয়া এক অর্থ মন্ত্রীর প্রচুর গল্প আছে। তার এইসব বেফাস এবং অবিবেচকের মতো মন্তব্য নিয়ে চাইলেই একটা বই সম্পাদনা করে ফেলতে পারি কিন্তু সেটাও করছি না। যেটা করছি সেটা হলো তার কিছু মহান উক্তি তুলে ধরছি।
'তমঘা ই খিদমত' এর অমৃত বচনসমূহ-
১) “শেয়ার মার্কেটে কোন ইনভেস্টর নাই, সব জুয়াড়ি”
২) ‘শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন’
৩) 'তারা ৫০ হাজার, ৩০ হাজার টাকা বেতন দিতে পারে। আর মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে পারবে না কেন?'
৪) 'ঘুষ অবৈধ নয়'
৫) ‘চার হাজার কোটি টাকা তেমন বেশি কোনো টাকা নয়
৬) ‘ড. ইউনূস দেশের একমাত্র সমস্যা…, ড. ইউনূসের কথায় সততা নাই’
৭) 'একদিন বাজারে না গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে'
৮) 'ভারত ট্রানজিটের বিনিময়ে ফি নয়, একটা কিছু নিবো'
৯) 'পে-স্কেলে সরকারি চাকরিজীবীদের দুর্নীতি কমবে'
১০) 'কিছু খুনের ঘটনা ছাড়া’ দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘স্থিতিশীল’
১১) 'সিপিডির বক্তব্য টোটালি রাবিশ'
সর্বক্ষণ মুখে হাসি ধরে রাখা এক বিরল অভ্যাসের ব্যাপার এবং এই বিরল অভ্যাসটিই বিগত সাত দশক ধরে মুখে ধরে রেখেছেন আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সাহিত্যের পারদর্শীতা তিনি অতন্ত্য চমৎকার ভাবে ইকোনোমিকসেও ব্যবহার করে থাকেন। অল্প কথায় কাজ হলে বেশি কথার প্রয়োজন কি বঙ্কিমের এই তত্ত্ব ধারন করে তিনি 'টোটালি রাবিশ এন্ড ভোগাস' উক্তিটি ব্যবহার করে থাকেন। তিনি কোনো বিশ্লেষণ দিতে প্রস্তুত কিংবা দায়বদ্ধ নয়, তার সকল মতামতই খুঁজে পাবেন এই 'টোটালি রাবিশ এন্ড ভোগাস' তত্বের মধ্যে।
শেষ করছি এক ভাইয়ের মুখে শোনা অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে একটা কৌতুক দিয়ে -
- আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী তার অফিসের লিফটে কখনো উঠতে পারেনা । সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে! কেন বলুনতো?
- কারন তার লিফটের সামনে লিখা একটি সাইনবোর্ড রয়েছে’ “ এই লিফটে মাল পরিবহন নিষেধ
(নিতান্তই শখের বশে লেখা এবং রাজনৈতিক কাজে ব্যবহারের জন্যে নয়)