অথচ দেশ বিক্রির সস্তা গল্প না বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বাংলাদেশ-ভারতের সাম্প্রতিক সময়ে স্বাক্ষরিত ২২ টি চুক্তি-সমযোতা স্মারকের যৌক্তিকতা সহজ ভাষায় সাধারন জনগনের সানে তুলে ধরে তাদের তলানিতে নামতে থাকা জনপ্রিয়তাকে একটু হলেও হাওয়ায় পাল দিতে পারতো। সেটি না করে তারা সহজ পন্থায় জনগনের কাছে পৌছানোর একটি অপচেষ্টায় ব্যর্থ হলো। তাদের ব্যার্থতার আরেকটি কারন হলো এবারের সফরে অধিকাংশ চুক্তিই হয়েছে সাইন্টিফিক্যল কিংবা টেকনোলজিক্যাল ক্ষেত্রে, যেগুলোতে বিএনপির অজ্ঞতা এমনিতেই সর্বজন বিধিত।
এবারে বিজ্ঞান - প্রযুক্তি খাতে সম্পাদিত চুক্তিগুলো কিছুটা এরকমের -
- মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে সহযোগিতা
- আনবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে সহযোগিতা
- পরমাণু নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণে কারিগরি তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতা
- বাংলাদেশে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে সহযোগিতা
- সাইবার নিরাপত্তায় সহযোগিতা
- ভূবিদ্যা নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা
- অডিও-ভিজ্যুয়াল সহ-প্রযোজনা চুক্তি
বিচারিক ক্ষেত্রে যে চুক্তিগুলো হয়েছে তার নমুনা-
- বিচারিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা
- ভারতে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা তৈরির কর্মসূচির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক
সব থেকে আলোচিত হয়েছে যে চুক্তিগুলো তা প্রতিরক্ষা খাত নিয়ে, অথচ এই প্রতিরক্ষায় স্পর্শাকাতর চুক্তি বলতে অস্র কিনতে ভারতের দেয়া ৫০ কোটি ডলারের ঋণটাই যা একটু ভয়াবহ। এছাড়া মূল যে তিনটি স্মারক তা হলো -
- বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রূপরেখা
- কৌশলগত ও ব্যবহারিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা
- জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কৌশলগত শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা
এছাড়া স্পর্শাকাতর সীমান্তের বিষয় নিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও সীমান্তে মৈত্রী হাট স্থাপনের বিষয়ে একটি সমযোতা স্মারকে সই হয়। গনমাধ্যমের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, কলকাতা-খুলনা বাস রুট চালু, কোস্টাল-প্রটোকল রুট উন্নয়ন,নাব্য চ্যানেল ডেভলপের মতো কিছু খুচরা উন্নয়ন চুক্তিও হয়।
ভারত বাংলাদেশকে ৩৬ টি কমিউনিটি ক্লিনিক দান করে এবং তৃতীয় ঋণ সহায়তার নামে আরও ৪০০ কোটি ডলারের চড়া সুদের ঋণের বোঝা মাথায় তুলে দেয়।
উপরে উল্লেখিত চুক্তি কিংবা স্মারকগুলোর মধ্যে দেশ বিক্রির মতো কোনো বিষয় পরিলক্ষিত না হলেও, যে বিষয়গুলোকে জনবিরোধী মনে হয়েছে কিংবা করণীয় কি হতে পারে সেগুলো হলো -
১) সরকার বারবার দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে শক্তিশালী প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও অস্র কেনার জন্যে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ নেয়াটাকে অন্যতম কূট কৌশল হিসেবে নেয়া যায় কিংবা চাপে পরে ফাদে পা দেয়াও বলা চলে। উন্নয়নের স্বার্থে মেনে নিলাম বাকী ৪০০ কোটি ডলার হালাল।
২) বৈজ্ঞানিক-প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রের চুক্তিগুলোতে আসলে কি রয়েছে সে বিষয়গুলো পরিস্কার না হলেও বিষয়গুলো অনেক স্পর্শকাতর। সেগুলোতে সরকার কতটুকু দেশের স্বার্থ নিশ্চিত করতে পেরেছে সেগুলোও জনস্মমুখে প্রকাশ করা তাদের কর্তব্য। কারন আগামীর বিশ্বে এই চুক্তিকৃত বিষয়গুলোই প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে অস্রের থেকেও বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।
৩) নিজেদের জন্যে হলেও সরকার তিস্তা চুক্তির একটা খসড়া রূপরেখা অন্তত করতে পারতো। এতে নিজেদের দিকে জনসমর্থনও কিছুটা টানা যেতো আবার কূটনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদের বিচক্ষনতাও কিছুটা প্রকাশ পেতো। এক মমতার হাতেই তিস্তার পানি শূন্য বালিতে নাকানি-চুবানি খেতে হতো না।
পুনশ্চ-
শক্তিশালী বিরোধীদল গণতন্ত্রের জন্যে অনেক গুরুত্ববহ কিন্তু আমাদের ছাচে ফেলা গণতন্ত্রে সেরকম বিরোধীদল না থাকায় দেশের একাংশ বিএনপির কাছে বিরোধীদলের ভূমিকা প্রত্যাশা করে। কিন্তু বিএনপির অজ্ঞ রিজভীরা সেটা না করে সস্তা বিনোদনে মত্ব হয়ে দেশের মানুষের সাথে নিত্তনৈমিত্তিক রসিকতায় লিপ্ত হচ্ছে। আমাদের কাছে দেশের স্বার্থই প্রধান আর সে স্বার্থ রক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীই আমাদের ভরসা। বাম-ডান অনেক কথা বলবে কিন্তু ওদের দিয়ে ইহ জন্মেও একচুল উপকার বাংলাদেশের জনগনের হয় নি আর জীবনে হবেও না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:১১