somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প - গাঁজাখোর মিরাজ ভাই

১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( ক )

জীবনে একদিনের জন্য আকাশে উড়তে পারলাম না । আমার পাশে যে ছেলে হা করে বাতাস খাচ্ছে সে বেশ কয়েকবার আকাশে উড়েছে । কাহিনী এইখানেই দ্যা এন্ড নয় একদিন নাকি সে আকাশ থেকে আমার মাথায় পিচিক করে পানের পিক ছুড়ে দিয়েছে । । আমি অবশ্য কিছু টের পাই নি । এই ধরনের উড়াউড়ি একজন টের পায় । যে উড়ে সে একা । অন্য কেউ না ।

-অনু , দিবা নাকি একটা টান

স্বঘোষিত পাইলট মিরাজ ভাই আমার দিকে কল্কী বাড়িয়ে দিল । আমার কল্কীতে টান দিতে ইচ্ছা করছে না , মিরাজের কানপট্টি বরাবর টেনে চড় দিতে ইচ্ছা করছে । কিন্তু আমি হাসি মুখে বললাম
-- “ না ভাই , আমি টান দিব না । আপনি টানেন । দরকার পরলে বলবেন , আমি ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড দিব – আরও জোরে হেইউ ... জোরসে টানো হেইউ ... টানোরে টানো হেইউউ , টানায় জলিশা মুড আসবে “
-- তুমি মিয়া মানুষটা বহুত মজার আছো

মিরাজ ভাই গদ্গদ করে হাসে । আরেকটা লম্বা দেখে টান দেয় । মুখ চেপে ধোঁয়া বুকে জমিয়ে রাখে । ধীরে ধীরে ধোঁয়া ছাড়ে ! তার দৃষ্টি এখন অন্যরকম । এ দৃষ্টি ঘাড় যেন বাঁকা করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় – আচ্ছা ব্রাদার ! কি আছে এই বালের দুনিয়ায় , বলতে পারেন ? আই থিং আছে শুধু টাঙ্গাইলের শাড়ি দিয়ে বানানো পাচ বাই সাড়ে তিন হাত খেতা আর বানানো শিমুল তুলার বালিশ । খেতা আর বালিশ । নাথিং এলস । এম’আই রাইট ? প্লিজ টেল মি । এম আই রাইট অর রং ! প্লিজ টেল মি ব্রাদার “
এই ধরনের মানুষকে কিছু বলে লাভ নাই । তিনি নিজে যেটা বলবেন সেটাই ঠিক । আমি বললেও ঠিক আমি না বললেও ঠিক ।
তবে ঠিক কথাটা নিজে কতোটা ঠিক সেটা নিয়েও একটা যুক্তি তর্কে বসা যায় ।
‘ ঠিক ‘ জিনিসটা কিন্তু আসলে আপেক্ষিক । ঠিক শব্দটা নির্ভর করবে ব্যাক্তিবিশেষের নিজস্ব চিন্তাধারার উপর । মিরাজ ভাইয়ের দুনিয়া খেতা আর বালিশের দুনিয়া । এইকথাটা ভুল সেটা আমি , এই অনু কিভাবে বলবো ? আবার এই কথা ঠিক সেটাই বা কিভাবে বলবো ! আমার কাছে দুনিয়া মানে " রানু নামের মেয়েটি “ এই কথাটা ঠিক , কিন্তু সেটা কি মিরাজ ভাই স্বীকার করে নিবেন ? উত্তর নেগেটিভ । তাহলে এক দুনিয়া কয়ভাগে ভাগ হয়ে গেল ! মিরাজের দুনিয়া , অনুর দুনিয়া । আরও কেউ সাথে থাকলে তারও একটা দুনিয়া । অর্থাৎ দুনিয়া বাড়ছে , “ ঠিক “ মতাবাদের সঠিক রাস্তা বাড়ছে । সেইসাথে ক্যাচাল বাড়ছে ! মাথা ঘুরছে

-- অনু , সাতার কাটতে পারস ?
জি না মিরাজ ভাই । সাঁতার পারি না ।

--দূর চুদির ভাই , পারস কি ? সাতার কাটতে পারস না , আকাশে উড়তে পারস না , মাটিতে বুক দিয়ে দৌড়াইতে পারস ? না , এইটাও পারস না । তুই পারস কি ? বাল

আমি মাটিতে বুক রেখে দৌড়াবো কেন ! আমি কি সাপ ? এই কথা এখন মিরাজ ভাইকে বলে লাভ নাই । তিনি এখন টালের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন । ধীরে ধীরে তার টালামী বাড়ছে । মিরাজ ভাই এখন আমাকে তুমি থেকে তুই করে বলা শুরু করেছে । বোনাস হিসেবে ‘ চুদির ভাই ‘ শুনিয়ে দিয়েছে । এই সময়টা মারাত্মক , এখন উনার কোন কথার বাইরে চুল পরিমান নড়াচড়া করা যাবে , করলেই ঠাশ করে চড় বসিয়ে দিবে । মিরাজ ভাইয়ের আসমানে উড়তে আর বেশীক্ষন দেরী নেই ।
-- তুই আগামী মাসে সত্য সত্য মেস ছেড়ে দিবি ?
জী বস
মাঝে মাঝে আসিস । একসাথে আকাশে উড়মু
জী বস
মাথা নষ্ট ! একবার এই মেস ছেড়ে গেলে আমাকে আর কে পায় ? গাঁজাখোর রুমমেটের সাথে প্রায় একমাস যাবত বসবাস করছি ; এইটা শুনেই তো বন্ধুবান্ধব আমার দিকে কামন ক্যামন করে জানি তাকায় । ক্লোজ আপ দিয়ে দাঁত ঘষে গেলেও বলে – এই তোর মুখ থেকে ভুড়ভুড় করে গাঁজার স্মেল আস্তাছে , পিছনের বেঞ্চে গিয়া ব । কয়েক অতি উৎসাহী কয়েকজন বলে রেখেছে – দুস !! তুই আমার মায়ের পেটের দুস ! একদিন তোগর আসরে দাওয়াত দে , দেখিস আমি কেমন ইশটীক ফাটাইতে পারি । তব্দা খাইয়া যাবি । মাগার , তুমি দিনে কয়টা ফাটাস ?

আমি আর পারছি না । রুমে যাওয়া মাত্র গাঁজার গন্ধ ! যখন তখন মিরাজ ভাইয়ের টাকা ধার চাওয়া ( এখন পর্যন্ত তিনি কোন শোধ করে নাই , করবে বলেও মনে হয় না , এই টাকা Gone ) রাতে জোর করে ছাঁদে ঢেকে আসমানে উড়াউড়ি দেখানো ।

ভার্সিটির বড় ভাই । না পারছি সহ্য করতে না পারছে মুখ ফুটে কিছু বলতে ! আমি ফাস্ট ইয়ার ফাস্ট সেমিস্টারের ছেলে ফেল্টু মারতে মারতে কোন মতে ৪র্থ ইয়ারের সুবিখ্যাত গাঁজাখোর বড় ভাইকে কি বা বলতে পারি । আর কিছুদিন পরেই মেস ছেড়ে দিচ্ছি , ভাবতেই শান্তি ।

--অনু , এই অনু , ঘুমাই গেলি
জী না ।
--একটা উপদেশ দিতাছি , মনোযোগ দিয়া শুন –
জী বস
-- “ কক্ষনো কোন কিছুতে বেশী মনোযোগ দিস না । সব কিছু আলগা আলগা রাখবি । আই মিন লুস । বেশী মনোযোগ দেয়া মানেই তুই কট । ডিরেক্ট আমার মতো কট ।

তা তো অবশ্যই । তুমি যে কতো ভয়াবহ কট সেটা ইতিমধ্যে জেনে গেছি । কোন এক মেয়ের জন্য তিন তিনবার সেমিস্টার ড্রপ । কয়েক বছর যাবত রাত দিন শুধু গাঁজা নিয়া পড়ে থাকা । কোন বন্ধু নাই । শুভাকাঙ্ক্ষী দূর হস্ত । মানুষজন চান্স পাইলেই দেনার দায়ে রাস্তা ঘাটে দেয় মাইর । বাসার সাথে সম্পর্ক প্রায় নষ্ট । এক মামা মাঝে মধ্যে এসে মেস ভাড়া আর কিছু টাকাপয়সা দিয়ে যায় । তুমি তো মিয়াভাই সেই মাপের কট । ভয়াবহ কট

--এই অনু , আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবি ভাই । খুব কষ্ট লাগছে রে

ভরপুর পিনিকে থাকা মিরাজ ভাইয়ের কণ্ঠে এতোটা আবেগ শুনে আমি হকচকিয়ে গেলাম । আমাকে কিছু বুঝতে না দিয়েই মিরাজ নামের একদম রোগা হাড় বের হওয়া ছেলেটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে মতো কাঁদছে । আমি ভালো থতমত খেয়ে গেছি ।
এমন কি হল ! আগে তো এমন কিছু দেখেনি কখনো ! এ বাচ্চাদের মতো কাদে কেন ?


আমি মিরাজ ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম । তিনি গুটিসুটি হয়ে আমার বুকে মাথা দিয়ে আছে । মিরাজ ভাইয়ের কান্নায় আবার গেঞ্জি ভিজে যাচ্ছে । মিরাজ ভাই কান্নার ধকল সামলাতে পারছে না ।

মিরাজ ভাই বারবার বলছে – “ অনু কখনো কোন কিছুতে বেশী মনোযোগ দিস না , আমার মতো হয়ে যাবি রে , একদম নষ্ট হয়ে যাবি “

১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×