গত ৬ সেপ্টেম্বর ছিল সালমান শাহর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। সালমানের প্রথম ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর নায়িকা মৌসুমী। সালমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তিনি স্মরণ করেছেন সবার প্রিয় নায়ককে।
মৌসুমী
৬ সেপ্টেম্বর। গত ১৫টি বছরে যতবারই এই তারিখটি এসেছে, ততবারই থমকে দাঁড়াতে হয়েছে। এই একটি দিন আমাদের সবার কাছেই অভিশপ্ত দিন। চলে গেল সালমান শাহ। আমার নায়ক ছিল সে। আমার বন্ধু ছিল। সবই আজ স্মৃতি। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।
৬ সেপ্টেম্বর দিনটি এলেই সকাল থেকে একধরনের শূন্যতা যেন আমাকে পেয়ে বসে। ইমনের (সালমানের ডাকনাম) অদৃশ্য পদধ্বনি যেন আমাকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায়। ওর দুষ্টুমিতে ভরা মুখটা যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যখন বাস্তবতায় ফিরে আসি, তখন বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়। বসা থেকে উঠতে গেলে নিজের মাথাটা মনে হয় যে চক্কর দিচ্ছে। কান দুটো গরম হয়ে ওঠে। জোরে জোরে কাঁদতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পারি না।
ঈদের পরদিনই মনে হয় সেপ্টেম্বর মাস। বুকটা কেঁপে ওঠে। ইমনের মৃত্যুবার্ষিকী। মনে পড়ে গেল কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির কথা। প্রথম দেখা হলো। আমাদের ওস্তাদ সোহানুর রহমান সোহান পরিচয় করিয়েছিলেন। পরিচয়ের পর থেকেই বন্ধু আমরা। কাজ করলাম। কতবার যে ঝগড়া লাগল আর আড়ি নিলাম! দুই ঘণ্টাও যায়নি—আড়ি কাটাকাটি করেছি।
ছবি মুক্তি পাবে ঈদে। কী যে টেনশন আমাদের দুজনের! ঢাকার বাইরে ছবি মুক্তি পাবে। ঈদের পর আমরা বরিশাল যাব। আমাদের সঙ্গে অনেকেই যাচ্ছেন। বরিশালে মানুষের ভিড়। সারা দিনের ক্লান্তি ঠেলে হোটেলে উঠতে গেলাম—সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া। কী জেদ ওর! ঢাকায় এসে পর্যন্ত অভিমান যেন কাটে না।
দেখা গেল, এফডিসিতে শুটিং করছি। খবর পেল, আমি অন্য একটি ছবির সেটে আছি। ইমন একবার হলেও আসবে। হয়তো আমি জানিই না। পরে শুনলাম ও এসেছিল। তারপর ফোন করতাম, ‘এই, তুই আসলি, কিন্তু দেখা করলি না কেন?’ ইমন হাসে। ওর সেই হাসি এখনো কানে বাজে। ইমন বেঁচে থাকলে এখনো নিশ্চয়ই সেই হাসি হাসত।
সালমানের সঙ্গে কেয়ামত থেকে কেয়ামত-এর পর আরও কিছু ছবিতে কাজ করলাম। মুক্তি পেল সেসব ছবি। প্রতিটি ছবিতে দর্শকের ঢল নামছে। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের একটি ছবি ছিল স্নেহ। এখানে ওর ঠোঁটে একটা গান ছিল, ‘চিঠি লিখলাম, ও চিঠি লিখলাম তোমাকে। পড়ে জবাব দিয়ো আমাকে।’
ইমনের চিঠি পেয়েছি এমন একটা সময়, যখন ইমন আর চিঠির জবাব দেওয়ারও সুযোগ দিল না আমাদের কাউকে।
এই নিষ্ঠুরতা কার, ইমনের নাকি প্রকৃতির?
টিভি চ্যানেলগুলো এখনো বিশেষ বিশেষ দিনে সালমানের সঙ্গে আমার পুরোনো ছবিগুলো প্রদর্শন করে। ছবিগুলো অনেকবারই দেখানো হয়েছে। তার পরও দেখানো হয়, নতুন প্রজন্ম দেখছে এবং জানছে সালমান সম্পর্কে। আমি টিভি-পর্দার দিকে তাকাতে পারি না। খুবই কষ্ট হয়। একটা কথাই মনে হয়, এভাবে কি কেউ চলে যায়?
ছবির নাম ........................... ছবি মুক্তির তারিখ
কেয়ামত থেকে কেয়ামত ...........১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ
তুমি আমার ছবিটি ..................১৯৯৪ সালের ২২ মে
অন্তরে অন্তরে ........................১৯৯৪ সালের ১০ জুন
সুজন সখী ............................১৯৯৪ সালের ১২ আগস্ট
বিক্ষোভ ..............................১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর
স্নেহ ..................................১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর
প্রেমশক্তি .............................১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর
কন্যাদান .............................১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
দেনমোহর ...........................১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
স্বপ্নের ঠিকানা ........................ ১৯৯৫ সালের ১১ মে
আঞ্জুমান ............................১৯৯৫ সালের ১৮ আগস্ট
মহামিলন ............................১৯৯৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর
আশা ভালোবাসা .....................১৯৯৫ সালের ১ ডিসেম্বর
বিচার ................................১৯৯৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি
এই ঘর এই সংসার .................১৯৯৬ সালের ৫ এপ্রিল
প্রিয়জন .............................১৯৯৬ সালের ১৪ জুন
তোমাকে চাই ......................১৯৯৬ সালের ২১ জুন
স্বপ্নের পৃথিবী .......................১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই
জীবন সংসার ........................১৯৯৬ সালের ১৮ অক্টোবর
মায়ের অধিকার ......................১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর
চাওয়া থেকে পাওয়া ................১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর
প্রেম পিয়সী ..........................১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল
স্বপ্নের নায়ক ........................১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই
শুধু তুমি .............................১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই
আনন্দ অশ্রু ..........................১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট
বুকের ভেতর আগুন ...................১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর
সালমান শাহ'র সংক্ষিপ্ত তথ্য-
জন্ম : ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭০
বাবা : কমর উদ্দিন চৌধুরী
মা : নীলা চৌধুরী
আসল নাম : শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন
স্ত্রী : সামিরা
প্রথম চলচ্চিত্র : কেয়ামত থেকে কেয়ামত
শেষ ছবি : বুকের ভেতর আগুন
প্রথম নায়িকা : মৌসুমী
সর্বাধিক ছবির নায়িকা : শাবনূর (১৪টি)
মোট ছবি : ২৭টি
বিজ্ঞাপনচিত্র : মিল্ক ভিটা, জাগুরার, কেডস, গোল্ড স্টার টি, কোকাকোলা, ফানটা।
ধারাবাহিক নাটক : পাথর সময়, ইতিকথা
একক নাটক : আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী।
মৃত্যু : ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




