মাসুম ধনী শিল্পপতি পিতা মাতার একমাত্র ছেলে। বাবার বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে এখন মাসুমই অফিসে বসে। একদিন রাত একটায় অফিস শেষ নিজের মার্সিটিজে করে বাড়ি ফিরছে মাসুম। মেইন রোড পেরিয়ে এমন একটা রাস্তা দিয়ে বাসা ফিরতে হয় যে জায়গাটা তেমন একটা জনবহুল না। ফাঁকা আরকি। এরপরেই মাসুমদের বাড়ি। তো মাসুম যখন ঐ ফাঁকা জায়গাটায় পৌঁছালো। স্বাভাবিকভাবেই ও গাড়ি চালাচ্ছে। হঠাত্ গাড়ির ওয়াচিং গ্লাসে চোখ পড়তেই মাসুম দেখে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তার গাড়ির সমবেগে একটা সাদাকাপড় পরা মেয়ে গাড়িটার পিছন পিছন অনেকটা শূণ্যে ভেসেই দৌড়াচ্ছে। মেয়েটার চেহারা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছেনা। তবে মেয়েটাকে মাসুমের অনেক চেনা চেনা লাগছে। মাসুম বিষয়টা দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। সে গাড়ি থামায়। ওয়াচিং গ্লাসে লক্ষ্য করলো যে ঐ মেয়েটাও দৌড় বন্ধ করে গাড়ির পিছনে মাথা নিচু করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাসুম বিষয়টা ফেস টু ফেস দেখার জন্য গাড়ির দরজা দিয়ে মাথা বের করে পিছনে তাকায়। তবে কাউকেই দেখতে পায়না। কিন্তু গাড়িতে মাথা ডুকিয়ে যেই মাসুম ওয়াচিং গ্লাসে তাকালো তখন দেখলো ঐ মেয়েটি গাড়ির পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। মাসুম আবার মাথা বের করে গাড়ির পিছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলনা। গাড়িতে মাথা ডুকিয়ে তার চোখ যখন আবারো ওয়াচিং গ্লাসে গেল তখন সে আবারো গ্লাসে মেয়েটিকে দেখলো এবং তত্ক্ষণাত্ গাড়ি থেকে বেরিয়ে পিছনে তাকালো। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। শুধু তত্সময়ে অপ্রত্যাশিত একটা ঠান্ডা বাতাস অনুভব করলো মাসুম। এবার কিন্তু খুব ভালোভাবেই ভয় পেয়েছে মাসুম। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে ওয়াচিং গ্লাসের দিকে না তাকিয়ে, যতদ্রুত সম্ভব গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেল মাসুম। বাড়ি ফিরে কাউকে বিষয়টা জানায়নি সে। যাইহোক, খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমোতে গেল মাসুম। রাস্তায় ঘটা ঘটনাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়েও গিয়েছে। কিন্তু ঘুমের ভিতর স্বপ্ন দেখল, ওয়াচিং গ্লাসে দেখা মেয়েটা মাসুমের রুমে এসে মাসুমকে গলা চিপে ধরে বলছে, "জীবনে মরণে একসাথে।" প্রায় চারটার দিকে বিভত্স এই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল মাসুমের। সে তাড়াতাড়ি রুমের লাইট জ্বালালো। কিন্তু রুমে কেউ নেই। আর ঘুমোতে পারেনি মাসুম। কানের কাছে শুধু একটা কথাই বারবার নক করছে, "জীবনে মরণে একসাথে!"
সকালে ফ্রেস টেস হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেল মাসুম। স্বাভাবিক ভাবেই চলছিল সবকিছু। অফিসে মাসুম তার রুমে বসেই কাজ করছে। হঠাত্ তার রুমের দরজায় নক করে একটা পরিচিত মেয়ে কন্ঠ বলে উঠে, "আসতে পারি, স্যার?" দরকারি একটা ফাইল দেখছিল মাসুম। সেজন্য কে নক করেছে তা না দেখেই মাসুম বলল, "আসুন।" নক করা মেয়েটি মাসুমের অফিস রুমে আসল। তখনো মাসুম ঐ মেয়েটার দিকে তাকায়নি। ফাইল দেখা শেষ করে মাসুম যেই মেয়েটির দিকে তাকালো তখন দেখলো এই মেয়েটিই সেই মেয়ে, যাকে মাসুম কাল রাতে রাস্তায় এবং স্বপ্নে দেখেছে। সেই একই স্টাইলে মাথা নিচু করে সাদা কাপড় পড়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে মাসুমের সামনে। মেয়েটি নিচের দিয়ে তাকিয়ে থেকেই এক ভয়ার্ত গলায় বলল, "জীবনে মরণে একসাথে।" মাসুম ভয়ে জোরে একটা চিত্কার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে পড়ে। সাথে সাথে তার পিএস সহ অফিসের নেতৃস্থানীয় অনেকেই মাসুমের রুমে এসে মাসুমের চোখ মুখে পানি টানি মেরে ওর সেন্স ফিরিয়ে আনে। সেন্স ফিরে পাওয়া মাত্রই মাসুম তার পিএসকে বলল, "কিছুক্ষণ আগে আমার রুমে কে এসেছিল?" তখন পিএস বলল, "কিছুক্ষণ আগে কেন, আজকে অফিস শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কেউ আপনার রুমে ডুকেনি।" মাসুম একথা শুনে আরো ভয় পেয়ে গেলো। সেদিন আর অফিস করেনি মাসুম। সোজা বাসায় চলে এলো। বাসায় এসে ফ্রেস না হয়েই তার বিছানায় শুয়ে পড়ল। ঠিক ঐ সময়ই তার মোবাইলে একটা কল আসলো। কল করেছে মায়া। স্তব্ধ হয়ে গেলো মাসুম। তাড়াতাড়ি ড্রয়ার খুলে দেখে মায়ার ফোন এবং সিম দুটোই ড্রয়ারে। তাহলে মায়া তাকে ফোন করল কিভাবে। আর ওকে তো এক মাস আগেই. . . . . . . . . . . . . !
কিছুক্ষণ পর আবার মায়া ফোন করলো। ভয়ে ভয়ে মাসুম এবার তা রিসিভ করলো। সাথে সাথেই মায়া কান্নাস্বরে বলে উঠল, "তুমি কেন এমন করলা? তুমি না বলছিলা আমরা জীবনে মরণে একসাথে থাকবো। কেন আমাকে বাঁচতে দিলানা? তুমি তোমার কথা রাখো নাই। নাও আই হ্যাভ টু ডু সামথিং। আই উইল প্রুভ দ্যাট জীবনে মরণে আমরা একসাথে।"
কথাগুলো শুনে সাথে সাথে ফোনটা কেটে দেয় মাসুম। অ্যাফ্রেইডনেস ইনক্রেজিং। মায়ার ভয়ার্ত কথাগুলার চিন্তায় রাতে খাওয়া দাওয়া হয়নি মাসুমের। ঘটনাগুলা পরিবার কাউকে জানায় নাই মাসুম। একটু তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়ে সে। রাত আড়াইটার সময় গলায় কিছুটা অস্বাভাবিক কিছু বোধ করে এবং ওর শ্বাস প্রশ্বাসে অসুবিধা হচ্ছে। ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলেই দেখে ও ফ্যানের সাথে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলে আছে। ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। কথা বলতে কিংবা চিত্কার করতে পারছে না। তখন হঠাত্ দেখে মাসুমের সামনে মায়া দাঁড়িয়ে আছে। মায়া খুব বিকট ভাবে হাসছে। আর বলছে, "তোমারে ছাড়া আমি আর এক মূহুর্তও থাকতে পারছিনা। তুমি চলে আস আমার কাছে, যেখানে যেভাবে পাঠিয়েছিলে তুমি আমাকে। আমরা জীবনে মরণে একসাথেই থাকব।" বেশিক্ষণ আর জীবন্ত অবস্থায় ঝুলে থাকতে পারল না মাসুম। ফ্যানের সাথে ঝুলেই মারা গেলো মাসুম। সকালে উঠে ওর মা বাবা দেখলো ছেলের এই অবস্থা। খবরটা জানাজানি হয়ে গেলো। সবার মুখে একই কথা, অমুক শিল্পপতির ছেলে মাসুমের ফাঁসি দিয়ে আত্বহত্যা। ঠিক একমাস আগে ছড়িয়ে গিয়েছিলো অমুক শিল্পপতির ছেলে মাসুমের স্ত্রী মায়ার ফাঁসি দিয়ে আত্বহত্যা।
কিন্তু আসল ঘটনাটা কি?? মাসুম মায়ার বিয়েটা ছিল লাভ ম্যারেজ। বাসর রাতেই তারা শপথ করেছিলো জীবনে মরণে তারা একসাথে থাকবে। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিলো। কিন্তু যখন মায়া জানতে পারলো যে অন্য একটি মেয়ের সাথে মাসুমের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে তখনই সমস্যাটা বাঁধে। একরাতে বিষয়টা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রচন্ড তর্কাতর্কি হয়ে এবং এক পর্যায়ে মাসুম রাগের মাথায় বালিশ দিয়ে চেপে মায়াকে হত্যা করে ফ্যানের সাথে দড়ি দিয়ে ফাঁসির মতো করে ঝুলিয়ে রাখে। বিষয়টা আত্বহত্যা বলে চেপে যায়। মায়া থেকেও মাসুম মুক্তি পায়। কিন্তু মুক্তি পায়নি মায়ার অতৃপ্ত আত্বা এবং জীবনে মরণে একসাথে থাকার শপথ থেকে। দুই মৃত্যুর মাঝের কথা গুলো আজও সবার অজানা!