somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কীনিকস্ (রি-পোস্ট)

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

মূললিখা- shorturl.at/ezEN5

বিশ্বনিন্দক তারা কি আপনাকে প্রভাবিত করে?
‘বিশ্বনিন্দক হল এমন একজন যে সবসময়ই অন্যের দোষ ধরে, অন্যের ভাল তার নজরে পড়ে না।’ উনিশ শতকের একজন আমেরিকান পাদ্রি হেনরি ওয়ার্ড বীচার বলেন, ‘এই লোকেদের সঙ্গে পেঁচার কোন পার্থক্য নেই। পেঁচারা যেমন শুধু রাতের বেলাতেই বেরোয় আর ছোট ছোট পোকা মাকড় ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না, তেমনই বিশ্বনিন্দকেরা লোকেদের শুধু দোষই দেখতে পায়। অন্যের দোষ ছাড়া তাদের চোখে আর কিছু পড়ে না। লোকেদের দোষ ধরাই যেন তাদের পরম কর্তব্য।’ প্রাচীন গ্রিসে “বিশ্বনিন্দক” বলতে কোন একজন লোককে বোঝাতো না যেমন আজকে লোকেরা মনে করেন কিন্তু অনেক অনেক বছর ধরে এটা এক দল দার্শনিকদের বোঝাতো।

তাহলে বিশ্বনিন্দকদের দর্শন কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল? তারা কী শেখাত? তাদের এই স্বভাব আমাদের কি ভাল লাগা উচিত?

আপনার কি তাদের স্বভাব ভাল লাগা উচিত?
বিশ্বনিন্দকের মানে দিতে গিয়ে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারী বলে “বিশ্বনিন্দক এমন একজন ব্যক্তি যে সবসময়ই অন্যের দোষ ধরে বা নিন্দা করে। . . . মানুষকে সন্দেহের চোখে দেখে আর তাদের নিচু করে।” আজকে জগতে এমন লোকেদের অভাব নেই আমাদের এমন স্বভাব থাকা উচিত নয়।

পুরনো দিনের বিশ্বনিন্দক ও তাদের ইতিহাস
প্রাচীন গ্রিসে সক্রেটিস, প্লেটো ও আ্যরিস্টটলের মতো বড় বড় দার্শনিকেরা ছিলেন। তাদের শিক্ষা লোকেদের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল। আজও পশ্চিমের দেশগুলোতে তাদের শিক্ষা দেখা যায়। তারা কী শিখিয়েছিলেন আর কীভাবে শিখিয়েছিলেন? আসুন আমরা এই ইতিহাসের দিকে একটু নজর দিই।

সক্রেটিস (সা.কা.পূ. ৪৭০-৩৯৯ সাল) মনে করতেন যে আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস, কামনা-বাসনা জীবনে সত্যিকারের সুখ দিতে পারে না। এগুলো সত্যিকারের সুখের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মানুষ নিজেদের মধ্যে ভাল গুণ গড়ে তুলে সত্যিকারের সুখ পেতে পারে। এইজন্যেই তিনি নিজে সমস্ত আরাম-আয়েশ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে সাধারণ জীবন কাটিয়েছিলেন। তার নীতি ছিল সহজ ও ত্যাগের জীবন।

কিন্তু সক্রেটিস এক অদ্ভুত উপায়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। কীভাবে? সাধারণত দার্শনিকেরা তাদের শিক্ষাকে ঠিক বলে তুলে ধরার জন্য লোকেদের সামনে প্রমাণ হাজির করতেন কিন্তু সক্রেটিস তার উল্টোটা করেছিলেন। তিনি অন্যদের শিক্ষার ভুল ধরে, নিন্দা করে তার শিক্ষাকে ঠিক প্রমাণ করেছিলেন। তিনি মনে করতেন যে এইভাবে দোষ ধরে ও মিথ্যে শিক্ষার মুখোশ খুলে দিয়েই সত্যি বিষয়কে শেখানো যায়। আর পরে এই উপায় অন্য লোকেরাও গ্রহণ করে।

সক্রেটিসের একজন শিষ্য ছিলেন এন্টিস্থেনেস (প্রায় সা.কা.পূ. ৪৪৫-৩৬৫ সাল)। তিনি ও তার সঙ্গীরা মিলে সক্রেটিসের শিক্ষাকে আরও কিছুটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারা শেখাতে শুরু করেছিলেন যে আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস, কামনা-বাসনা শুধু বাধাই নয়, এগুলো পাপ। সত্যিকারের সুখ এগুলো থেকে নয় কিন্তু শুধু নিজেদের মধ্যে ভাল গুণ গড়ে তুলে পাওয়া যায়। এই কারণে তারা নিজেরা আরাম-আয়েশ সবকিছু ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর তারা শুধু লোকেদের দোষই ধরতেন না বা নিন্দাই করতেন না, বরং যারা তাদের মতো চলত না সেই লোকেদের খারাপ চোখে দেখতেন কারণ তারা মনে করতেন যে এই লোকেদের একজনের মধ্যেও ভাল গুণ নেই। তারা এমনভাবে লোকেদের দোষ ধরতেন বা নিন্দা করতেন যেমন একটা কুকুর হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে খায়। এই স্বভাবের জন্য তাদের বিশ্বনিন্দক বলা হতো যা গ্রিক শব্দ কীনিকস থেকে এসেছে আর যার মানে হল “কুকুরের মতো।” *

তাদের জীবনে তাদের শিক্ষার ছাপ
যদিও আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস, কামনা-বাসনার বিরুদ্ধে তাদের এই শিক্ষা ঠিক ছিল কিন্তু এটাকে মেনে চলতে গিয়ে এই দার্শনিকেরা মাত্রা ছাড়িয়ে যেতেন। বিখ্যাত দার্শনিক ডায়োজিনীসের জীবন এর ভাল উদাহরণ।

ডায়োজিনীস সা.কা.পূ. ৪১২ সালে কৃষ্ণ সাগরের কাছে সনোপী শহরে জন্মেছিলেন। তিনি তার বাবার সঙ্গে এথেন্সে এসেছিলেন যেখানে তিনি সক্রেটিসের শিক্ষার বিষয়ে জেনেছিলেন। ডায়োজিনীস এন্টিস্থেনেসের কাছে শিক্ষা নেন ও তার শিষ্য হয়ে যান। আর তিনি এতই উৎসাহী ছাত্র ছিলেন যে তিনি সক্রেটিস ও এন্টিস্থেনেসের চেয়েও কয়েক পা এগিয়ে গিয়েছিলেন। সক্রেটিস কিছুটা সাধারণ জীবন কাটিয়েছিলেন। এন্টিস্থেনেস ভোগ-বিলাস ছেড়ে ত্যাগের জীবন কাটিয়েছিলেন আর ডায়োজিনীস এইসব থেকে একেবারেই সরে গিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছিলেন। কামনা-বাসনা ও আরাম-আয়েশ যে কত খারাপ তা দেখানোর জন্য তিনি এমনকি কিছু সময় একটা ছোট গামলার মধ্যে থেকেছিলেন।

কথিত আছে যে ডায়োজিনীস একজন ভাল বা গুণী লোককে খোঁজার জন্য ভরা দুপুরে এথেন্সের গলিতে গলিতে জ্বলন্ত প্রদীপ নিয়ে ঘুরেছিলেন! এরকম করে তিনি লোকেদের দোষ ধরতেন। তার এই কাজ অনেকের ওপর বেশ ছাপ ফেলেছিল। এইভাবেই ডায়োজিনীস ও অন্য দার্শনিকেরা অন্যের দোষ খুঁজে বের করে অন্যদের শেখাতেন। কথিত আছে একবার মহান আলেকজান্ডার ডায়োজিনীসকে বলেছিলেন আপনি যা চান, আমার কাছে চাইতে পারেন আমি আপনাকে দেব। উত্তরে ডায়োজিনীস শুধু এটুকুই বলেছিলেন একটু সরে দাঁড়ান যেন সূর্যের আলো আড়াল না হয়!

ডায়োজিনীস আর অন্য দার্শনিকেরা ভিখারির মতো জীবন কাটাতেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, সমাজের কাজকর্ম তাদের কাছে কোন অর্থ রাখত না। সক্রেটিসের মতো তারাও লোকেদের দোষ ধরতেন আর তাদের মান সম্মানের কথা তারা ভাবতেন না। এইজন্য এই দার্শনিকদের “কুকুরের মতো” বলা হতে থাকে। কিন্তু দোষ ধরা বা নিন্দা করার ব্যাপারে ডায়োজিনীসের চেয়ে নামকরা আর কেউই ছিল না। এইজন্য তাকে সবচেয়ে ‘জঘন্য কুকুর’ নাম দেওয়া হয়েছিল। আর যখন সা.কা.পূ. ৩২০ সালে ৯০ বছর বয়সে তিনি মারা যান তখন একটা শ্বেত পাথরের কুকুরের মূর্তি বানিয়ে সেটা তার কবরে রাখা হয়েছিল।

এই দার্শনিকদের শিক্ষা অন্য দার্শনিকদের ওপরও ছাপ ফেলেছিল। কিন্তু সময় কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়োজিনীস ও তার সঙ্গীদের লোকেরা অপছন্দ করতে শুরু করে। আর এমন এক সময় আসে যখন তাদের শিক্ষা ও তাদের শেখানোর উপায় ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:৪৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×