somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধুনিক ইন্টারনেটের নকশা পরিবর্তন করে দিতে পারে ডিসেন্ট্রালাইজড ইন্টারনেট

২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু ভেবে দেখুন তো? আজ থেকে চার-পাঁচ বছর আগে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পর সর্বপ্রথম আমরা কোন কাজটি করতাম? আমরা ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙ্গে বেসিনের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত-মুখ ধুতাম। আর এভাবেই আমাদের একটা নতুন দিনের শুরু হতো।
আর এখন আমরা কি করি? এটা ভাবার জন্য খুব বেশি সময় লাগার কথা না।
আমরা আধো ঘুম অবস্থায় বিছানায় হাত নাড়িয়ে আগে নিজের ফোনটা তুলে নেই। তারপর মোবাইল ডাটা কিংবা ওয়াইফাই চালু করার সাথে সাথেই আমাদের দিন শুরু হয়। পার্থক্য এখানেই। আগে আমরা হাতে ব্রাশ তুলে নিতাম এবং বহুকাল ধরে তাই চলে আসছিল। এখন হাতে তুলে নেই স্মার্টফোন। আমাদের দিনটাই শুরু হয় ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর মাধ্যমে।
ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুকে ঢোকা, হোয়াটস অ্যাপ, মেসেঞ্জার,ইমেইল চেক করা ইত্যাদি আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর এই অভ্যাস তৈরী করে দিয়েছে টেকনোলজি। আরো স্পষ্ট করে বলতে হলে ইন্টারনেট।
আচ্ছা এই ইন্টারনেট আসলে কি?
দুঃখের বিষয় এদেশের মানুষ ইন্টারনেট বলতেই শুধু বোঝে ফেসবুক। মার্ক জাকারবারগ যদি হুট করে ফেসবুক বন্ধ করে দেয় তাহলে বাংলাদেশের আইএসপি (যেসব কম্পানি ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়) গুলো মাথা চাপড়াবে। কারণ এদেশের মানুষের কাছে ফেসবুক আর ইন্টারনেট এক জিনিস।
আবার আসল কথায় চলে আসি। ইন্টারনেট আসলে কি? আমরা আমাদের প্রিয় বন্ধু উইকিপিডিয়ার কাছে একটু জিজ্ঞেস করি।
উইকিপিডিয়া ইন্টারনেট সম্পর্কে যা বলে তা হলঃ “A global computer network providing a variety of information and communication facilities, consisting of interconnected networks using standardized communication protocols.”
সহজ কথায় ইন্টারনেট হল পৃথিবীর সকল কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ করার একটা প্রক্রিয়া। আর এটা করা হয় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মাধ্যমে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের যাত্রা শুরু হয় নব্বই দশকের শুরুতে আর তখন ইন্টারনেটের জেনারেশনকে চেনানো হতো ওয়েব ১.০ হিসেবে। তখন ইন্টারনেট মানেই ছিল কেবল তথ্য আদান-প্রদান করা। এইচটিএমএল নামক ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে একটা মৌলিক ওয়েবসাইট তৈরী করা হতো। আর বিভিন্ন ফাইল, ডাটা ইত্যাদি আদান-প্রদান করা হতো। তখন ডাটা ম্যানিপুলেশন করা যেত না। হুট করে চাইলেই কোনো ইউজার নতুন ইনফরমেশন যোগ করতে পারতো না। এ ধরণের সিস্টেমকে বলা হয় “স্ট্যাটিক ওয়েব সিস্টেম”। ওয়েব ১.০ তথ্য আদান-প্রদানকে নতুন মাত্রা যোগ করলেও এখানে কোনো “ইউজার ইন্টারেক্টিভিটি” ছিল না। সোর্স কম্পিউটার ছাড়া কেউ তাতে কিছু লিখতে পারত না।

এরপর আগমন ঘটে ওয়েব ২.০ এর, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের শুধু তথ্য পড়তে দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হলো না। তারা নিজেরাও লিখতে পারতো । এজন্য একে বলা হয় “রিড এন্ড রাইট” ওয়েব। আগমন ঘটলো পি এইচ পি, এ এস পি এর মত কিছু ল্যাঙ্গুয়েজের যা ব্যবহার করে ডেভেলপাররা বিভিন্ন ওয়েব এপ্লিকেশন তৈরি করতে থাকে ব্যবহারকারীদের নিজেদের লেখার সুবিধার জন্য। ইন্টারনেট তখন আর আগের মত থাকে না। এখানে নিয়মিত ডাটা আপডেট হতে থাকে। আর এজন্য এই সিস্টেমকে বলা হয় “ডায়নামিক ওয়েব সিস্টেম”। এই সিস্টেমই আমাদের দিতে পেরেছে ব্লগিং, ফেসবুক, ইউটিউব, ই-কমারস সাইট ইত্যাদি। এসব সাইটের ওয়েবপেজ রিফ্রেশ করলে নিয়মিত কনটেন্ট পরিবর্তন হয়। এই ওয়েব ২.০ ই আমাদের বর্তমান ইন্টারনেট ইউজাররা ব্যবহার করছে।

এরপর কি?
আমরা ওয়েব ২.০ তেই এত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি, তাহলে ইন্টারনেটের পরবর্তী জেনারেশনে আ
সলে
কি ঘটবে? কি পরিবর্তন আসবে?
এই লেখাটা মূলত সেই বিষয় নিয়েই। যা ইন্টারনেটকে নিয়ে যাবে সম্পূর্ণ অন্য মাত্রায়।

আচ্ছা, আপনি কি ইন্টারনেটে সুরক্ষিত? আপনি নিয়মিত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, ইমেইল, জিপিএস ইত্যাদি ব্যবহার করার সময় নিজের বিভিন্ন তথ্য দেন। আপনার কি কখনো মনে হয় না যে এসব তথ্য অন্য কারো হাতে গেলে আপনার কি রকম ক্ষতি হতে পারে? একটু চিন্তা করে দেখুন তো।
ধরুন আপনি ইউটিউবে প্রধানত বিনোদন বিষয়ক ভিডিও দেখেন। যখন আপনি এই সাইটটির হোমপেজে যান তখন কি দেখেন না যে একই ক্যাটাগোরির ভিডিও আপনার সামনে প্রদর্শন করা? যারা ব্যবসা বিষয়ক ভিডিও কিংবা পড়াশোনা বিষয়ক ভিডিও দেখে তারাও তাদের হোমপেজে নিজেদের পছন্দের ক্যাটাগোরির ভিডিও দেখতে পায়। দেখবেন যাদের সাথে আপনার বাইরে দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা যত বেশি তারাই আপনার ফেসবুক চ্যাট লিস্টে সবার উপরে থাকে। এর মূল কারণ এসব সাইট নিয়মিত আপনার ক্লিকগুলো মনিটরাইজ করে। তাদের ইন্টারনেট বটগুলো এখান থেকে আপনার পছন্দ-অপছন্দ বুঝে সেভাবে সাইটটা আপনার জন্য সাজায় যাতে আপনি যা দেখতে চান তাই সবার আগে আপনার চোখে আসে।
অনেকের হয়ত মনে হতে পারে এটা তো কাজ আরো সহজ করে দিচ্ছে। কিন্তু তাই কি?
আপনি কখন ইন্টারনেটে কি করছেন তার সবকিছুর খবর কেউ না কেউ জানছে। আপনি কোন ওয়েব সাইট কখন, কতবার ব্যবহার করেন তা সব আপনার আই এস পি সার্ভার দেখতে পাচ্ছে।
এই যে কোম্পানিগুলো আপনার ডাটা রেখে দিচ্ছে। আপনার মেইল, চ্যাট ডাটা ইত্যাদি সংরক্ষণ করে রাখছে আপনার প্রাইভেসির নিশ্চয়তা দিয়ে। এই বিরাট কোম্পানিগুলোর সার্ভার গুলো যদি হ্যাক হয়ে যায় তখন কি আপনার তথ্য সুরক্ষিত থাকবে? এসব কোম্পানির একটা চমৎকার পলিসি রয়েছে যে, যারা তাদের সিস্টেমে ঝামেলা খুঁজে বের করতে পারবে তাদের বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে হায়ার করে নেওয়া। এভাবে অনেক ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার নিয়মিত হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারে পরিণত হচ্ছে। আর তারাই আপনার তথ্য সুরক্ষিত রাখে। ব্যাপারটা কেমন শিয়ালের কাছে মুরগি পাহারা দেওয়ার মতো হলো না?
এখন বিরাট অঙ্কের টাকা-পয়সা অনলাইনেই লেনদেন ঘটে। পেপ্যাল, বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি আপনার কষ্টে অর্জিত অর্থ নিজেদের কাছে রাখছে আপনাকে নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দিয়ে। তারা কি আসলেই সঠিক নিশ্চয়তা দিচ্ছে? শুধু আমেরিকাতেই উদ্ভব ঘটেছে “আইডেন্টিটি থিফ” নামের এক প্রকার ক্রিমিনালদের। যারা অন্যের ক্রেডিট কার্ড ডাটা চূরী করে অবৈধ জিনিস-পত্র ক্রয় করে আর পুলিশ যেয়ে হানা দেয় ক্রেডিট কার্ডের আসল মালিকের বাড়িতে।

এই যে এতগুলো সমস্যার কথা আলোচনা করলাম। এসব নিমিষেই সমাধান করে দিবে ইন্টারনেটের পরবর্তী জেনারেশন ওয়েব ৩.০।

ওয়েব ৩.০ এর আইডিয়াটা এতই অসাধারণ যে একে “The New Internet” নামেও ডাকা হয়। এর একটি বহুল ব্যবহৃত নাম হলো “ডিসেন্ট্রালাইজড ইন্টারনেট”। ডিসেন্ট্রালাইজড বলতে বোঝায় ইন্টারনেট আর কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিকট কেন্দ্রিভূত থাকবে না। আপনার প্রয়োজনীয় ডাটা অন্য কোনো কোম্পানির সার্ভারে সংরক্ষণ করে রাখা লাগবে না। আপনার ডাটার মালিক আপনি নিজেই। এখন যেটি হয় তা হলো বিভিন্ন আইটি কোম্পানি আপনার ডাটা তাদের সার্ভারে সংরক্ষণ করে। তখন এ সকল সার্ভার অচল হয়ে যাবে। তথ্য আদান-প্রদানের সময় প্রেরক-গ্রাহক ছাড়া আর কোনো তৃতীয় পক্ষ সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
ওয়েব ২.০ যে চারটি ক্ষেত্রঃ নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, নিয়ন্ত্রন ও ক্ষমতার নিশ্চয়তা দিতে পারে না, তা নিমিষেই সমাধান করে দিতে পারে ওয়েব ৩.০ বা ডিসেন্ট্রালাইজড ইন্টারনেট।

আসলে সার্ভার ছাড়া তথ্য সংরক্ষণ করাটা আমাদের কাছে একটু অস্বাভাবিক লাগতে পারে। এতো তথ্য তাহলে থাকবে কোথায়? এখান থেকেই আসে ব্লকচেইনের ধারণা। ব্লকচেইন পারসোনাল কম্পিউটারগুলোর নেটওয়ার্কে থাকা তথ্য সংরক্ষণ করে। এটা আসলে একটা বিল্ডিং ব্লকের মতো যার উপর কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানি কিংবা ব্যক্তির হাত থাকবে না। বলতে গেলে এটি একটি ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক যেখানে সব তথ্য একটা ভারসাম্য বজায় রাখে। ব্লকচেইন এমন একটি সিস্টেম যেখানে প্রত্যেকটা ব্লক কালক্রমানুসারে সাজানো থাকে এবং যেকোনো একটি ব্লকের ডাটা ম্যানিপুলেট করলে পুরো সিস্টেম সেটা বুঝতে পারে।

আমরা এখন যে নেটওয়ার্কগুলোর সাথে যুক্ত আছি তাদের ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক বলা হয়। কোম্পানি তাদের ক্লায়েন্টদের ফ্রি কিংবা পেইড স্পেস দেয় এই সার্ভারে তথ্য রাখার জন্য। ব্লকচেইন যেটি ব্যবহার করে তা হলো পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক বা সংক্ষেপে P2P নেটওয়ার্ক। আমাদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু আসলে এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করি কিন্তু আসলে জানিই না। যারা নিয়মিত সিনেমা কিংবা টিভি সিরিজ ডাউনলোড দেয় তারা টরেন্ট নামক জিনিসটার সাথে পরিচিত। এখানে ডাউনলোড পদ্ধতিটা কিন্তু P2P নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই চলে। অর্থাৎ সব পিসি একটা ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেমের মাঝে থেকে নিজেদের মধ্যে একটা ফাইল শেয়ার করে। এই শেয়ারিং সিস্টেমকে সিডিংও বলা হয়। একটা ভিডিওর বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন জনের পিসি থেকে ডাউনলোড হতে থাকে। নির্দিষ্ট ফাইলের সিডিং যত বেশি তার নেটওয়ার্ক তত বড় আর এ কারণে ডাউনলোড স্পিডও বেশি হয়।

বলে রাখা ভাল। বিভিন্ন দেশে টরেন্ট ডাউনলোড দেওয়া একটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। কারণ এখানে সব পাইরেটেড গেম, সিনেমা, বই ইত্যাদি ফ্রি তে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এটা নিয়ে কোনো আইন নেই। কিন্তু একজন টরেন্ট ডাউনলোডার দেশের বাইরে গেলে তাকে অবশ্যই এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
তো মোদ্দা কথা হলো যে, এই পি টু পি নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই ব্লকচেইন কাজ করে যেখানে কোনো থার্ড পার্টির হাত নেই।

ব্লকচেইনের হাত ধরেই এসেছে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল ক্যাশ। ডিজিটাল ক্যাশের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিটকয়েন। যারা ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে টুকটাক জানে তারা হয়তো বিটকয়েন নামটা আগে শুনে থাকবে। এটি নিয়ে অনেকেরই একটা নেতিবাচক ধারণা থাকে যে কেবলমাত্র ডিপ ওয়েবে অবৈধ চোরাচালানে এটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিষয়টা আসলে তা না। এটি ব্যবহারের মূল সুবিধা হলো এর ক্ষেত্রে লেনদেনে অনেক গোপনীয়তা পালন করা যায়।
এই বিটকয়েন বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো ভবিষ্যৎ লেনদেনে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে । আর হয়ত বড় বড় ব্যাংকের দরজায় তালাও মেরে দিতে পারে।

বিটকয়েন আসলে যে কাজটা করে তা হলো সেলার এবং কাস্টমারের মাঝে বিনিময় বা ট্রান্স্যাকশনের একটা ডিজিটাল রেকর্ড রাখে। এখন হয়ত অনেকের মাথায় আসতে পারে আমি তো চাইলেই কোডিং করে বা করিয়ে অনেকগুলো বিটকয়েন তৈরী করতে পারি। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে এত সহজ না। একেকটা বিটকয়েন কেবলমাত্র একবারই ব্যবহার করা যায় আর ট্রান্স্যাকশন রেকর্ড হলো একটি কয়েনের ডেথ সার্টিফিকেট। চাইলেই কেউ অনেকগুলো বিটকয়েন বানিয়ে বড়লোক হতে পারবে না কারণ প্রত্যেকটা কয়েন ইউনিক। অনেকটা ফ্রিঙ্গার প্রিন্টের মতো। আর বিটকয়েন মাইনিং প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করতে হয় যার বিস্তারিত আলোচনা আপাতত এখানে করছি না।
বিটকয়েনের মাধ্যমে লেনদেন ইতিমধ্যেই অনেক জায়গায় হয়। কিন্তু এটা সাধারণ মানুষের কাছে মুক্ত হলে পেপ্যাল, আমাজন, বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সিস্টেম মুখ থুবড়ে পড়বে। আর একারণেই হয়ত কিছু সুবিধাবাদী ক্ষমতাধর মানুষ এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে একটা নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করেছে। আর এর প্রসারও সেভাবে হতে দেয়নি।

ডিসেন্ট্রালাইজড ইন্টারনেট যদি সত্যিই আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়িত হয় তাহলে তা প্রযুক্তিতে একটি নতুন ধারার সূচনা করবে। ইন্টারনেট হবে আগের থেকে অনেক সুরক্ষিত। ভাবুন একজন লোক এক বস্তা কমলা নিয়ে হাঁটছে। এখানে লোকটা একটা কোম্পানি আর বস্তার মধ্যে রাখা কমলাগুলো আমাদের সবার তথ্য। একজন অসৎ লোক ঐ লোকের পিছনে হাঁটছে। সে সামনের লোকের অজান্তে বস্তায় একটা ছিদ্র তৈরি করার চেষ্টা করছে। ছোটখাট একটা ছিদ্র হলেই অসৎ লোকটা এক টান দিয়ে বস্তাটা ছিঁড়ে সব কমলা রাস্তায় ফেলে দিল। কমলা বহনকারী কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটা কিছু কমলা নিয়ে দৌড় দেয়। প্রতিবছর এভাবেই বিভিন্ন ক্লাউড সার্ভারগুলো থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের তথ্য চুরী হয়।
এবার মনে করুন একটা নির্দিষ্ট লোকের বস্তায় রাখার বদলে প্রত্যেকে নিজের কমলা নিজের পকেটে রাখল। সবাই একই রকম ড্রেস পড়ে রাস্তায় হাঁটছে। এতে অসৎ লোকটার স্বাভাবিক ভাবেই চুরী করতে গেলে সমস্যা হবে এবং অনেক শ্রমও দিতে হবে। বর্তমান ইন্টারনেট আর ডিসেন্ট্রালাইজড ইন্টারনেটের মাঝে নিরাপত্তার দিক থেকে এটাই পার্থক্য।

বর্তমানে নতুন ইন্টারনেটের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রয়েছে অনেক বড় বাধা। আর এ বাধাগুলো হলো আইটির নেপথ্যে থাকা বড় বড় টেক জায়ান্টরাই। এই ইন্টারনেট ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে তাদের ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক আর চলবে না। গুগল, এপল, আমাজন, ফেসবুক ইত্যাদির ক্লাউড স্টোরেজ সুবিধা কেউ নিবে না।
ইন্টারনেট অফ থিংস এর রিভোলিউশোনেও এই ইন্টারনেটের বিরাট ভূমিকা থাকবে। আমরা অফিসে বসে নিজের বাসায় বিভিন্ন ইন্টারনেট বটের মাধ্যমে বাসার কাজ করে রাখতে পারব। সকল ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস হবে ইন্টারকানেক্টেড। আর এতে থাকবে না কোনো তৃতীয় পক্ষের হাত। নিয়ন্ত্রন থাকবে আমাদের নিজেদের হাতেই।

স্বাধীনতা সবাই চায়। সেটি বাস্তব কিংবা ভার্চুয়াল যে জগতই হোক না কেন। বিভিন্ন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স নিরাপত্তার নামে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে ইচ্ছামত ঘাটাঘাটি করতে পারে। এটা অবশ্যই স্পর্শকাতর একটা বিষয়। আর প্রযুক্তির নিয়মিত হালনাগাদের সাথে সাথে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনও এর আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। আমাদের যথাযথ স্বাধীনতা আর প্রযুক্তির উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করতে ডিসেন্ট্রালাইজড ইন্টারনেট হতে পারে দ্য নেক্সট বিগ থিং।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×