একদৃষ্টিতে মোবাইলের মনিটরের দিকে তাকিয়া আছে কাজল । মোট ১২১ টা মেসেজ আর ১৫০ টা মিসকল। বাসায় গত দুদিন যাবত পানি নাই। ভুলেই গিয়েছিল সে, এখন মনে পড়ল। অথচ গোসল করাটা অত্যন্ত প্রয়োজন। কাজল ভেবে রেখেছিল আজকের দিনটা আর বাসায় ফিরবেনা। নিয়তির অমোঘ টানে ফিরতেই হলো। যা ঘটে গেল তা ভুলতেই সে রংপুরের বাসের টিকেট কেটেছিল আজ সকালে। হঠাৎই মনে পড়ল, মায়ের জন্য কেনা প্রেশারের ওষুধগুলো সে ড্রয়ারেই রেখে এসেছে। আর সেই ড্রয়ার খুলতেই বেরিয়ে এল রানুর জন্য কেনা আংটি, মোবাইলটা আর তার গায়ে লেগে থাকা অসংখ্য স্মৃতিময় খুদেবার্তাগুলো, যার পরতে পরতে রানুর উৎকণ্ঠা আর অভিমানের স্পর্শ। না পড়েই সেটা জানে কাজল। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল মেসেজগুলো খুলে পড়ার । সব তো শেষ। রানু তার ভালোবাসার মানুষটাকে এতক্ষণে ঠগ, জোচ্চোর, প্রতারক, মিথ্যেবাদী যাহোক কিছু একটা ভেবে নিয়েছে নিশ্চয়ই। জানে না কাজল। একগ্লাস পানির সাথে খালি পেটেই দুটো প্যারাসিটামল খেলো সে। মেসেজ, মিসকল আসা থেমে নেই, মোবাইলের চার্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ হবে না হয়তো। কিন্তু তারপর? এর তারপরটুকুর জন্যই বাসের টিকেট কেটেছে সে, আগামী একমাসের জন্য ঢাকাকে বিদায় জানিয়ে। ড্রয়ারটা আবার খোলার জন্য কাজলের হাত নিশপিশ করছে। কিন্তু মেসেজ seen কিভাবে করবে সে ? করলেই তো বিপদ। রানু রাত বিরেত উপেক্ষা করে এখানে এসে হাজির হবে। তারপর? কাজল আর ভাবতে পারছে না। একবার ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে পারলে তারপর যা হবার হবে। মাধবীলতার ঝাড়টা প্রচণ্ড বাতাসে দুলছে। এপাশ ওপাশ। সেই সাথে মাথার উপরের ফ্যানটাও। ফ্যানটার উপরে রাখা গোলাপ পাপড়ির কথা ভুলেই গিয়েছিল কাজল। নাহ, যত গরমই থাকুক ঐ ফ্যানে হাত দেবেনা সে, মরে গেলেও না।
অথচ গতকাল বিকেলটাও তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বিকেলগুলোর একটি ছিল। কৃষ্ণচূড়ার লালে উদ্যানের রাস্তাটা কেমন রাঙ্গা হয়ে ছিল। সূর্য ডোবার মুহূর্তটুকু দারুনভাবে উপভোগ করে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল তারা দুজন। মাথায় পরের দিনের পালিয়ে বিয়ের করার যাবতীয় পরিকল্পনার ছক ঘুরছে। তারপর এলোমেলো পায়ে কাজলের এগিয়ে যাওয়া, আর ঠিক তখনই পিছনে ইফতির আর্ত চিৎকার, “কাজল!!!!”, আর একটা প্রাইভেট কারের সশব্দে ব্রেক কষার আওয়াজ, নিমিষে ভেঙ্গে দিল সন্ধ্যার মৌনতা।
কাজল একদৃষ্টিতে গোলাপ ফুল দিয়ে দেয়ালে লেখা “রানু ও ইফতির শুভবিবাহ’’ কথাটা আর একবার দেখে নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।