“চিনতে পেরেছেন?”
মধ্য দুপুরের গনগনে রোদ। হাওয়াই শার্টটা ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপটেছে অনেকক্ষণ আগেই। এই অবস্থায় বাসের জন্য অপেক্ষা করা মানে হচ্ছে কড়াইয়ের তেলে ফ্রাই হওয়া। ঠিক সেই মুহূর্তে সানগ্লাস পড়া এক যুবতীর আচমকা এই প্রশ্নবাণ।
“সরি, চিনতে পারছিনা।” সরাসরিই জবাব দিলাম। ধানাই পানাই করার মত মুড নেই একদম।
মেয়ে দেখি সহজে দমবার পাত্রী নয়। এদিক সেদিক তাকিয়ে আবার আমার মুখের দিকে তাকাল। তারপর সানগ্লাসটা চোখের উপর থেকে সরিয়ে একটু স্মিত হেসে আবার প্রশ্ন করলো,
“এবার? চেনা যায়?”
এতক্ষণ মেয়েটাকে ভাল করে লক্ষ্য করিনি। এবার বোধহয় আপাদ মস্তক দেখা উচিত, অন্ততপক্ষে চেনাচিনির স্বার্থে। হোয়াইট টপসের সাথে ব্লু জিনস, পায়ে ফ্ল্যাট সু, হাতে একটা ট্রান্সপারেন্ট ফোল্ডার এবং আন্দাজ বছর পঁচিশের চলনসই চেহারার এই মেয়েটাকে আমি কস্মিন কালেও দেখেছি বলে আমার মেমোরি সাপোর্ট করছে না।
“দেখুন সত্যিই চিনতে পারছিনা, কে বলুন তো আপনি?”
“চেহারা দেখে যখন চিনতে পারেননি, তখন নাম বললেও চিনতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না।”
“বলেই দেখুন। চেষ্টাটা অন্ততপক্ষে করা যায়, নাকি?”
মেয়েটা মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিল,
“ওকে শেষ চান্স, আমার নাম মুমতাহিনা।”
শেষ চেষ্টাটুকুও বিফলে গেল। ‘নামটা শুনলে চিনতে পারব’ এইরকম একটা আশা ভরসা মনের ভেতর কাজ করছিল। সে আশাতেও গুড়ে বালি হল।
“আপনার চোখই বলছে, আমাকে আপনি চিনতে পারেন নি।”
মুমতাহিনাকে ভালই অপমানিত মনে হচ্ছে এখন। মুখ-টুখ শুকনো করে ফেলেছে এক নিমিষেই। শুরুতে পাত্তা না দিতে চাইলেও এখন কেন জানি নিজের উপরেই রাগ লাগছে । অপ্রস্তুত আমি জবাব দিলাম,
“আসলে কি যে বলব সত্যিই বুঝতে পারছি না। গরমটা আজ বড্ড বেশিই মনে হচ্ছে।”
মুমতাহিনা এবার আমাকে অবাক করে দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল।
“ওয়েদার ঠাণ্ডা থাকলে চিনতে পারতেন বোধহয়। আহারে।”
এবার আমি একটু ভাব নিলাম।
“নিজেকে চেনাতে না পেরে আপনার খুব আফসোস হচ্ছে, বুঝতে পারছি।”
“মোটেই না, বরং আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না দেখে আপনার উপর করুণা হচ্ছে বলতে পারেন।”
মুমতাহিনা রহস্য করে হাসল। এতক্ষণ খেয়াল করিনি মেয়েটার চেহারাটা মামুলি হলেও হাসিটা একেবারে ফেলনা না, ভালই মিষ্টি সেটা।
“আচ্ছা, আপনার কোন আপত্তি না থাকলে কোথাও বসে এই চেনাচিনির পর্বটা কন্টিনিউ করা যায়না? আমার তরফ থেকে অন্তিম একটা চেষ্টা বলতে পারেন।”
“আজ? আজ তো হবে না। বনানীতে যাচ্ছি। দুটোয় মিটিং আছে ক্লায়েন্টের সাথে। অন্য আরেকদিন হবে না হয়।”
ফোল্ডারটা নাড়িয়ে মুমতাহিনা তাড়াহুড়া দেখাল।
“কিভাবে দেখা হবে? আপনার ফোন নাম্বারটাই তো জানিনা।”
মুমতাহিনা এগিয়ে গিয়ে পেছনে তাকাল,
“আপনার ফোন নাম্বার আমার কাছে আছে। এই উইকটা একটু ব্যস্ত আছি। নেক্সট উইকে কল দিব আপনাকে। তখন একদিন কোথাও বসা যাবে, ওকে?”
মুমতাহিনা আমাকে গোলকধাঁধায় ফেলে ফোন নম্বর না দিয়েই চলে গেল। আমার ফোন নাম্বারটাও সে জানে। অথচ আমি তার কিছুই জানি না। কি আশ্চর্য। আমার এই ৪০ বছরের জীবনে এরকম অদ্ভুত ব্যাপার আর একটিও ঘটেনি।
মুমতাহিনার ফোন আর আসলো না। পরের সপ্তাহ, এর পরের সপ্তাহ এবং এর পরের...। ভুলে গেলো নাকি মেয়েটা? নাকি ইচ্ছা করেই ঢং দেখাচ্ছে? অথচ ব্যাপারটা যার ভুলে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ছিল সেই আমিই ভুলতে পারলাম না। কিন্তু এর ভেতরে তাকে চেনার প্রচণ্ড চেষ্টা করে চিনতেও পারিনি। মেমরি থেকে পূর্বের “মুমতাহিনা পর্ব” পুনরুদ্ধার হলই না একদম। কোন এক অজানা কারণে সেটা পাসওয়ার্ডসহ কমপ্লিটলি ডিলিটেড বুঝতে পারছি।
অলরেডি ১ বছর পার হচ্ছে। মুমতাহিনাকে মনে পড়েনি এরকম একটা দিন ও বোধহয় যায়নি। অফিসের সামনের বাসস্টপে দাঁড়ালেই “এক্ষুনি হয়তো দেখা হয়ে যাবে……হয়তো একটু আগে এসেছিল দেখা হয়নি একটুর জন্য” ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক হাবিজাবি কথা মনে হয়, হতেই থাকে। এভাবেই “মুমতাহিনা-বিহীন” দিনগুলো পুনরায় দেখা হওয়ার মিথ্যে আশা নিয়ে ক্রমশ: চলে যায় ।
এর মধ্যেই কোন এক শুক্রবারে আমার অফিস কলিগ বহ্নি তার বাসায় দাওয়াত করে বসল। দাওয়াতের উপলক্ষ ওর ১২তম বিবাহবার্ষিকী। অনিচ্ছাসত্ত্বেও গেলাম। কারণে-অকারণে বিয়ের প্রসঙ্গ চলে আসে বলে দাওয়াতগুলো পারতপক্ষে একটু এড়িয়েই চলি আজকাল। যথাসময়ে গিয়ে টের পেলাম একটু আগেভাগেই চলে এসেছি। বহ্নি আমাকে দেখেই উচ্ছ্বসিত ভঙ্গীতে হাত নাড়াল,
“ইকরাম ভাই, আপনি ফার্স্ট হয়েছেন। আপনার আগে আর কেউ আসেনি।“
আমি একটু অপ্রস্তুত হয়েই জবাব দিলাম,
“দেখনা, তুমি দাওয়াত করেছ এই খুশিতে সকাল সকাল চলে এসেছি।“
“খুব ভাল করেছেন, এখন আমাকে রান্নার কাজে হেল্প করেন। আপনার হাতের ইলিশ পোলাও তো নাকি লা-জবাব। আমার তো ইউটিউবই ভরসা।“
“সেকি রান্না এখনো শেষই হয়নি? আমার তো খিদে পেয়ে গেছে।“
“যাহ, তার জন্য এপেটাইজার আছে না। আপনি বরং কাবাব খেতে থাকুন আর ল্যাপটপে আমাদের ছবিগুলো দেখতে থাকুন, ততক্ষণে আমি রান্না সেরে আসছি।“
কিছুক্ষণের মধ্যে বহ্নির ল্যাপটপে প্রচুর ছবির ভিড়ে আমি প্রায় হারিয়ে গেলাম। ওর ছোটবেলার ছবি, বিয়ের ছবি, কলেজ ফ্রেন্ড, কলিগদের সাথে হাজারটা ছবি। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি যে নাটকীয় ঘটনার মুখোমুখি হলাম তাতে আমার কলিজা ঠিকরে বের হয়ে আসার উপক্রম হল। আমাদের অফিস কলিগদের সাথে একটা নৌভ্রমণে আমাকে আর বহ্নিকে যার পাশে হাস্যোজ্বলভঙ্গীতে দেখা যাচ্ছে, সে আর কেউ না, মুমতাহিনা। যাকে আমি এতদিন ধরে পাগলের মত খুঁজছি সে গত বছরের জানুয়ারিতেও আমার পাশেই ছিল। হিসেব করে দেখলাম মুমতাহিনার সাথে আমার রাস্তায় দেখা হয়েছে মার্চের ১৮ তারিখে। ঠিক এই ছবিগুলো আমার ল্যাপটপেও আছে, অনেকবার হয়তো দেখাও হয়েছে । অথচ মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে তাকে আমি চিনতে পারিনি, এ কি করে সম্ভব ?
“বহ্নি, একটু এদিকে আসবে প্লীজ।“
বহ্নি প্রায় দৌড়ে এলো।
“কোন সমস্যা ইকরাম ভাই?”
আমি মুমতাহিনাকে দেখিয়ে বললাম, “আমাদের পাশে দাঁড়ানো এই মেয়েটাকে তুমি চেন ?”
বহ্নি খুব ভাল করে কতক্ষণ দেখে-টেখে জবাব দিল, “নাহ ভাইয়া চিনতে পারছিনা। ওখানে অনেকেই গেস্ট নিয়ে এসেছিল। আমি তো ভেবেছিলাম আপনার গেস্ট বোধহয়।”
প্রচণ্ড মাথাব্যথা অনুভব করছি। ঘটনাটা বহ্নিকে জানানো উচিৎ হবে কিনা বুঝতে পারছি না। মেয়েটা আমার এবং বহ্নির পরিচিত না হওয়া স্বত্বেও পাশে দাঁড়িয়ে হাসিহাসি মুখ করে ছবিই বা তুলল কেন, সেটাই আমার মাথায় আসছে না। এ কি শুরু হল আমার সাথে ? পুরো গোলমেলে অবস্থায় পড়ে গেলাম দেখছি।
কোনোমতে খেয়ে “শরীর খারাপ” বলে বহ্নির বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। রাস্তায় নেমে হঠাৎ মনে পড়লো সিফাতের কথা। আমার এক্স কলিগ। মিরপুরেই বাসা। এখান থেকে ১০ মিনিটের রাস্তা। ওর বাসায় খুব না হলেও মাঝেমধ্যে যাওয়া হয়। খুবই ঠাণ্ডা মাথার ছেলে। আমার ফেসবুক একাউন্টটা সিফাতই খুলে দিয়েছিল।
সিফাত আমার হঠাত আগমনে কিছুটা অবাক হলেও কিছু না বলে চেপে গেল। আমাকে ওর খাটে বসিয়ে জিজ্ঞেস করল, “লাঞ্চ করেছেন ? না খাবেন আমার সাথে ?”
“না না, খাবো না। বহ্নির বাসায় দাওয়াত ছিল, খেয়েই তোমার এখানে এসেছি। তুমি খাও।”
“শরীর ভাল তো? আপনাকে কেমন জানি দেখাচ্ছে ।“
“একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে গেছে। সেটার কিনারা করতে পারছিনা। একটু হেল্প করবে প্লীজ?”
সিফাত হাসল।
“দেখি কতটুকু হেল্প করতে পারি। আপনি ঘটনাটা বলুন, আমি খেতে খেতে শুনছি।”
সিফাত পুরো ঘটনা শুনে একটুখানি চুপ করে রইল। ভাত খেয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে আমার পাশে আয়েশি ভঙ্গীতে বসে জিজ্ঞেস করল,”ফেসবুকে খুঁজেছেন একবারও ?”
“না তো, এটা একবারও মাথায় আসেনি।“
“নিজের একাউন্টেও তো খুব একটা ঢোকেন বলে মনে হয়না। আরে ফেসবুকে এখন সব নিখোঁজ মানুষজন খুঁজে পাওয়া যায়। দাঁড়ান দেখছি।“
কপালপোড়া হলে যা হয়। কমপক্ষে ৫১৫০ জন মুমতাহিনার ভিড়ে আসল মুমতাহিনাকে পাওয়াই গেল না। এতো আধুনিক একটা মেয়ের ফেসবুক একাউন্ট নেই কথাটা বিশ্বাসযোগ্য না। সিফাতকেও এখন বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে।
“ইকরাম ভাই, আপনি সিউর তো মেয়েটার নাম মুমতাহিনা?”
“হ্যাঁ সেটাই তো বলেছিল আমাকে।”
“হুম...।”
সিফাতকে এবার চিন্তিত দেখাচ্ছে।
“ইকরাম ভাই, এমনও হতে পারে মেয়েটা তার আসল নাম দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট খোলে নি। ‘অবুঝ মেয়ে’, ‘মেঘবালিকা’ এই টাইপ নাম ইউজ করেছে। হতে পারে না ? তাহলে পাওয়ার উপায় কি বলুন।”
আমি সিফাতের দিকে না তাকিয়ে মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। একটা মেয়েকে ভদ্র উপায়ে খুঁজে বের করা এতটাই কঠিন হবে বুঝিনি। অথচ আমার জন্য আর কোন রাস্তাই রাখেনি সে।
“আরে আপনি এতটা হতাশ হচ্ছেন কেন ? রাস্তা আরেকটা আছে তো !”
“রাস্তা আছে?” উত্তেজনায় আমি প্রায় দাঁড়িয়ে গেলাম।
“আরে বসুন তো। রাস্তা আছে। থাকতেই হবে। সব রাস্তা কি একসাথে বন্ধ হয় নাকি? তবে এই রাস্তায় যেতে হলে আরেকজনের হেল্প লাগবে।”
“আবার কাকে ধরতে হবে?”
“মালিহা । আমাদের রিভার ক্রুজের অর্গানাইজার। এরই মধ্যে ভুলে গেলেন?”
“ও হ্যাঁ মালিহা, গোলগাল ফর্সা চেহারার মেয়েটা । তা ও কিভাবে হেল্প করবে আমাদের?”
“খুব সোজা। ও আমাদের লিস্ট দেবে যারা যারা সেদিন সেখানে ছিল। সেটা ওর ল্যাপটপেই থাকবে আশাকরি ।”
বেলা চারটা। মালিহাকে ফোনে পাওয়া গেলো। ওকে ব্যাপারটা জানাতেই ফোনে একচোট হেসে নিল। আধঘণ্টা সময় পরে সিফাতকে ফোন করে জানাল,
“ইকরাম ভাই যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন সে তো এই লিস্টে নাই। আপনাদের কোথাও কোন ভুল হচ্ছে না তো?”
“লিস্টে নাই তাহলে ছবিতে আছে কিভাবে?”
মালিহা অবাক কণ্ঠে উত্তর দিল,
“ছবি? আপনি তো কোন ছবির কথা বলেননি। ও কোন ছবিতে আছে ?”
মালিহাকে সিফাত আমাদের সাথে তোলা ছবির কথা তুলতেই ও এ্যালবাম ঘেঁটে পেয়ে যা জানাল তাতে আমার চেয়ার ছেড়ে মাটিতে পড়ার দশা হল । সে নাকি মালিহার খালাতো বোন মেহজাবীন, কিছুতেই ওর নাম মুমতাহিনা নয়। মালিহার সাথে ও রিভার ক্রুজে এসেছিল, তাই আমাদের কেউ ওকে চেনে না। অতঃপর “মুমতাহিনা-রহস্যের” কিনারা হল। অথচ এত খোঁজাখুঁজির পর যাকে পাওয়া গেল তাকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হবার বদলে অজানা এক অভিমানে ছেয়ে গেল আমার মন । সিফাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে “ধন্যবাদ” দিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ওর বাসা থেকে।
পরেরদিন । দাঁড়িয়ে আছি আমার সেই চিরচেনা বাসস্টপে। পেছন থেকে হঠাৎ একটা সুরেলা কণ্ঠ বলে উঠল,
“চিনতে পেরেছেন?”
“হুম চিনেছি, তোমার নাম মেহজাবীন।”
মেহজাবীন খিলখিল করে হেসে তারপর মুহূর্তেই গম্ভীর হয়ে জবাব দিল,
“এরই মধ্যে মালিহার কাছ থেকে আমার নামটা জেনে বসে আছেন? আপনি কি জানেন আমি যে আপনার উপর অসম্ভব রেগে আছি।”
“তুমি কেন রেগে থাকবে? রাগ তো হিসেব অনুযায়ী আমার হওয়ার কথা, নাকি?”
কপট রাগ দেখিয়ে উত্তর দিলাম।
“বাহ আপনার সাথে দেখা, আলাপ, ফোন নাম্বার নেয়ার দুই মাস পর যার কথা ভুলে গেলেন রাগটা তো সে করবে, আপনি করবেন কেন?”
রাগের মাথায় এতক্ষণ ওকে খেয়ালই করিনি। আকাশী নীল একটা শাড়ির সাথে মেয়েটা নীল টিপ ও নীল চুড়ি পড়েছে । একটুকরো ছেঁড়া শরতের মেঘ হয়ে সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ও কি এগুলো আমার জন্য পরে এসেছে ?
“তুমি তোমার নাম মুমতাহিনা বললে কেন? জানো কত কষ্ট হয়েছে তোমাকে খুঁজে পেতে ?”
“ইচ্ছে করে বলিনি। কেন বলিনি জানেন? আমাদের যেদিন প্রথম আলাপ হল আপনি আমার নামটা শুনে একটু চুপ করে গিয়েছিলেন। তারপর আমি জানতে চাওয়ায় বলেছিলেন যে মেহজাবীন আপনার প্রাক্তন প্রেমিকার নাম, যার বিরহে আপনি এত বছর ধরে চিরকুমার আছেন। তারপর তার অনেক কথা শুনলাম, আপনিই শোনালেন। এক পর্যায়ে আমি আপনার ফোন নাম্বার নিলাম। খুব সম্ভবত আমার একটা ভিজিটিং কার্ডও আপনাকে দিয়েছিলাম । সেটা হয়তোবা সেদিন জাহাজের ডেকেই ফেলে এসেছিলেন। এরপর আমাদের দ্বিতীয় দেখা। এই বাসস্টপেই । আপনি আমাকে কিছুতেই চিনতে পারলেন না। খুব রাগ হয়েছিল সেদিন। বুঝেছিলাম ‘মেহজাবীন’ নামটাই হয়তো এর জন্য দায়ী । এই নামটার কারণেই আপনি প্রথমদিন আমার সাথে এত কথা বলেছিলেন অথচ পুরোটা সময় ‘মেহজাবীনেই’ পড়েছিলেন । কোন সন্দেহ নেই, এখানে নামটাই মুখ্য, মানুষটা গৌণ। তা নাহলে দুই মাসের ব্যবধানে একটা মানুষ আমাকে ভুলে যায় কিভাবে ?”
আকাশ কালো হয়ে আসছে, এখুনি বৃষ্টি নামবে। আমি সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকালাম । মেহজাবীনের কাজলকালো চোখেও বৃষ্টি নামব নামব করছে। এখন এই সুন্দর মুহূর্তে কি আমার ওর হাতটা ধরা উচিৎ না ?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫২