****
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন ক্যাম্পাসে নায়ক মাগুর আর
নায়িকা ইলিশের সামনাসামনি ধাক্কা। ইলিশের
হাত থেকে পড়ে গেল বই-
ইলিশ(নায়িকা): এই যে মিস্টার, দেখে চলতে পারেন
না?
মাগুর(নায়ক): (ইলিশের বই তুলে দিতে দিতে) সরি
ম্যাডাম, নদীর পানি এত ময়লা যে খালি চোখে
কিছুই দেখতে পাই না। আচ্ছা আপনার নাম জানতে
পারি?
ইলিশ:হাউ ডেয়ার ইউ? ধাক্কা দিয়ে আবার নাম
জানতে চান? যত্তোসব কম পানির মাছ এসে পড়েছে
বেশি পানিতে...
(মুখ ঝামটি দিয়ে চলে গেল নায়িকা ইলিশ, আর
অপমানিত মুখে দাঁড়িয়ে রইল নায়ক মাগুর)
কয়েক দিন পর বিপদে পড়ল নায়িকা ইলিশ।
বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় আটকা পড়ল এক
জেলের জালে-
ইলিশ:ছেড়ে দে, ছেড়ে দে শয়তান। তোর ঘরে কি আর
ইলিশ মাছ নেই?
জেলে:চুপ...একটা কথা বলবি না...
ইলিশ:শয়তান, তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু মন পাবি
না...
জেলে:তোর দেহটাই দরকার সুন্দরী, কেজিতে
হাজার টাকা...হু হু হা হা।
ইলিশসর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার) বাঁচাও, বাঁচাও, কে
আছো বাঁচাও... গুন্ডারা আমাকে তুলে নিয়ে গেল।
অনেক দূরে নায়ক মাগুর তখন ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর
গ্যারান্টি চাই’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশগ্রহণ
করছিল। ইলিশের চিৎকারে মাইক্রোসেকেন্ডের
ব্যবধানে সে হাজির হলো ঘটনাস্থলে। দাঁত দিয়ে
কেটে দিল জাল, মুক্ত করল নায়িকা ইলিশকে।
ইলিশ:কী বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাব, আপনি
না থাকলে যে আজ কী হতো। (আগের ধাক্কা
খাওয়ার ঘটনায় একটু ইতস্তত বোধ করে) ইয়ে...আসলে
মাছ চিনতে আমার ভুল হয়ে গিয়েছিল। আমাকে ভুল
ভাববেন না, প্লিজ। আমি ইলিশ, আপনি?
মাগুর:আমি মাগুর।
ইলিশ:দেশি না বিদেশি...
এভাবেই পরিচয়... পরিণয়...
অতঃপর গান...
‘ইলিশ লো
তোর রুপালি ঐ আঁশ
বাজারেতে কিনতে গেলে
খাওয়া লাগে বাঁশ
ইলিশ লো’
নেচে-গেয়ে চলতে থাকল ইলিশ আর মাগুরের প্রেম।
সময়ের পরিক্রমায় বের হলো মাগুরের রেজাল্ট-
মাগুরদৌড়ে ঘরে ঢুকে চিৎকার দিয়ে) মা মা, আমি
ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছি।
মা মাগুর: আজ যদি তোর বাবা বেঁচে থাকত...
মাগুর: বাবার কী হয়েছিল মা?
মা মাগুর: তুই যখন পোনা ছিলি, তখন মানুষেরা তোর
বাবাকে ধরে নিয়ে খেয়ে ফেলেছে।
মাগুরচোখ মুছতে মুছতে) মাছ হয়ে ভালো রেজাল্ট
করে লাভ নেই মা, শেষমেশ মানুষের পেটে যেতে
হয়...
এদিকে ইলিশ তার বাবার সঙ্গে মাগুরের পরিচয়
করিয়ে দিতে নিয়ে এল ঘরে। কিন্তু মেয়ের
প্রেমিকের প্রজাতি দেখে মনঃক্ষুণ্ণ হলেন ইলিশের
বাবা।
ইলিশের বাবা:সামান্য দেশি মাগুর হয়ে কোন
সাহসে তুমি আমার মেয়ের দিকে পাখনা
বাড়িয়েছ?
মাগুর:ভালোবাসা কখনো মাছের প্রজাতি দেখে
না। ইলিশকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি
ভালোবাসি।
ইলিশের বাবা:তুমি জানো, আমার মেয়ের লেজের
দাম দিয়ে তোমার মতো কয়েক ডজন মাগুরকে বাজার
থেকে কিনে নেওয়া যাবে।
মাগুর:ইলিশ সাহেব, টাকা দিয়ে মাছ কেনা যায়,
কিন্তু মাছের ভালোবাসা কেনা যায় না। আমরা
গরিব মাছ হতে পারি, কিন্তু ছোট মাছ নই।
ইলিশের বাবা:আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হলে
তোমাকে ইলিশের মতো চলাফেরা করতে হবে।
শরীরে ইলিশের ঘ্রাণ থাকতে হবে। নইলে এ বাড়ির
দরজা তোমার জন্য বন্ধ।
নায়ক মাগুরের তৎক্ষণাৎ প্রস্থান। বাবা ইলিশ ঘরে
বন্দী করলেন তার মেয়েকে।
ইলিশের বাবা:আজ থেকে তোমার বাড়ির বাইরে
যাওয়া বন্ধ। আমার বন্ধুর ছেলে রুইয়ের সঙ্গে শিগগিরই
তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
ইলিশ:না বাবা, না, মাগুরকে আমি ভালোবাসি
বাবা। মাগুরকে ছাড়া আমি বাঁচব না। ওই ফরমালিন
দেওয়া পচা রুইকে আমি মেনে নিতে পারব না।
ইলিশের বাবালেজ দিয়ে মেয়ের গালে চটাশ
করে চড় দিয়ে) আমার মুখের ওপর আর একটা কথা না।
তোমার এত অধঃপতন হবে জানলে জাটকা থাকতেই
গলা টিপে তোমাকে মেরে ফেলতাম।
নায়ক মাগুর এত সহজে হাল ছাড়ল না। অনেক পরিশ্রম
করে বেশ কিছু টাকা জোগাড় করে ফেলল। এরপর সেই
টাকা দিয়ে বাজার থেকে ইলিশের গন্ধওয়ালা এক্স
ব্র্যান্ডের বডি স্প্রে কিনে আনল। শরীরে স্প্রে করা
মাত্র মাগুরের শরীর থেকে ভুরভুর করে ইলিশের গন্ধ
বের হলো। শুধু তা-ই না, আশপাশ থেকে বিভিন্ন
প্রজাতির মেয়ে মাছ পাগলের মতো তার দিকে ছুটে
আসা শুরু করল!
মাগুরের এই বুদ্ধি কাজে দিল। ইলিশের বাবা
মাগুরের সঙ্গে ইলিশের বিয়েতে রাজি হয়ে
গেলেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হলো গুন্ডা রুই মাছ। সে তার
দলবল নিয়ে অপহরণ করে নিয়ে এল নায়িকা ইলিশ আর
তার বাবাকে। দড়ি দিয়ে বেঁধে দিল দুজনের শরীর।
গুন্ডাদের আস্তানায়-
রুই:সোজা বড়শিতে মাছ না উঠলে তাতে কেঁচো
দিতে হয়, ইলিশ সাহেব। আজ থেকে ইলিশ আমার,
ইলিশের সব সম্পত্তিও আমার, হু হু হু হা হা হা...
ইলিশের বাবা:তোর জিভ আমি টেনে ছিঁড়ে ফেলব
বদমাশ। ইলিশ দেখেছিস, ইলিশের কাঁটা দেখিসনি...
রুই:হু হু হু হা হা হা, সে সুযোগ তুই পাবি না। তোকে খুন
করে তোর লাশ দিয়ে ইলিশ পোলাও রান্না করা
হবে। হু হু হু হা হা হা। তোর মেয়ে ইলিশ এখন আমার
সামনে নাচবে... এই কে আছিস, ইলিশের বাঁধন খুলে
দে...
খুলে দেওয়া হলো ইলিশের বাঁধন। ইলিশ আবার আধুনিক
মেয়ে, মুক্ত হয়েই সে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল
‘gundara amake tule niyese, monta onek kharap’। লোকেশনে
লিখে দিল ‘rui er astana’।
তারপর গান গেয়ে গেয়ে নাচা শুরু করল। এদিকে
স্ট্যাটাস দেখামাত্র মাগুর ছুটে এল রুইয়ের আস্তানায়।
দেয়াল ভেঙে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল গুন্ডা রুইয়ের ওপর।
মাগুর:শয়তান, আজ আমি তোকে মেরেই ফেলব।
গুন্ডারা গুলি করা শুরু করল ঢিশা... ঢিশা... ঢিশা... (৭০
রাউন্ড গুলি, নিহত ০)
নায়ক মাগুরও গুলি করা শুরু করল ঢিশা... ঢিশা (২ রাউন্ড
গুলি, নিহত ৭০)।
সব গুন্ডাকে মারার পর বাকি রইল শুধু রুই। অন্য গুন্ডাদের
হাতের নিশানা ভালো না হলেও রুইয়ের হাতের
নিশানা ভালো। নায়কের দিকে তাক করে গুলি করল
সে। ঢিশুয়া...কিন্তু, ইলিশের বাবা দৌড়ে এসে বুক
পেতে দিলেন মাগুরের সামনে। গুলি এসে লাগল
তার পেটিতে। এমন সময় পুলিশ মাছের আগমন। ‘আইন
নিজের পাখনাতে তুলে নেবেন না’ বলে গ্রেপ্তার
করা হলো গুন্ডা রুইকে।
এদিকে—
বাবা ইলিশরক্তমাখা পেটিতে ধরে) বাবা মাগুর,
আমার মেয়েকে তুমি দেখে রেখো, বাবা। ওকে
তোমার হাতে দিয়ে গেলাম। আ আ আহ্...
ইলিশ:নাআআ আআ বাআআবাআ নাআ, তুমি এভাবেএএ
চলে যেতে পারো নাআআ নাআআ।
অতঃপর মাগুর আর ইলিশ সুখে-শান্তিতে বসবাস
করিতে লাগিল, আর কিছুদিন পর মাগুর ইলিশ থেকে
‘মালিশ’ নামক নতুন মৎস্য প্রজাতি পেল বাংলাদেশ।
*****
সমাপ্ত