১)গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিরোধী দলের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সক্রিয় বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল জাসদ। মুলত সিরাজুল আলম খান আর শেখ ফজলুল হক মণির আদর্শিক দ্বন্দ থেকে ছাত্রলীগের একটা অংশ বেরিয়ে যেয়ে জাসদ গঠনের সুচনা করে। এরপর সামরিক শাসনামলে আমরা দেখেছি গৃহ পালিত বিরোধী দল। নব্বইয়ের দশকে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তনের পর থেকে মুলত হাসিনা আর খালেদাই পালাক্রমে বাংলাদেশে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছে। রাজনীতির মারপ্যাঁচে এখন বাংলার বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্বে আছেন আবহমান বাংলার বিশ্বস্ত গৃহবধূ বেগম রওশন এরশাদ। ইদানীং অবশ্য তিনি রাজনীতির চেয়ে সঙ্গীত চর্চা নিয়ে ব্যস্ত। হাজবেন্ড কবি, ওয়াইফ শিল্পী। বাংলার জনগণ কেন যে এই এমেজিং, কিউট, সুইট, ক্রিয়েটিভ কাপলটাকে যোগ্য সম্মান দিল না কে জানে? কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে তিনারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব কতটা পালন করেছেন তা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে আপনি জানেন কিনা জানি না রাজনীতিতে একটা কথা আছে, এখানে কোন কিছুই অপূর্ণ হয়ে থাকে না। কার্যকর বিরোধী দলের শুন্যতাও অপূর্ণ থাকেনি। বাংলার রাজনীতিতে সাম্প্রতিক কালে নুতুন বিরোধী দলের ভুমিকায় আবির্ভূত হয়েছে ফেসবুক। পাবলিক আজকাল ফেসবুকে দেদারছে সরকারের সমালোচনা করছে। প্রতিদিন ফেসবুকে তৈরী হচ্ছে নুতুন ইস্যু, তৈরী হচ্ছে নুতুন জনমত। এক ইস্যু চাপা পড়ছে অন্য ইস্যুতে। তনু হত্যা চাপা পড়ে মিতু হত্যায়, মিতু হত্যা চাপা পড়ে সুন্দর বন হত্যায়। এই ইস্যু গুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন তৈরী হচ্ছে নায়ক, প্রতি নায়ক। একদল তথাকথিত এই নায়কদের পক্ষে নামছে, আরেক দল বিপক্ষে। জমে উঠছে বিতর্ক। এর বাইরেও লাইক গোনা, প্রেম করা, সামাজিক প্রেক্ষাপটে হিরোইজম দেখানো সহ নানাবিধ কারণে মানুষের ফেসবুকে কাটানো সময়ের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। ফেসবুক কর্তপক্ষও চাইছে সেটাই। কোন একটি ঘটনা সাপেক্ষে আপনি নায়ক কিংবা প্রতিনায়ক যাই হোন না কেন আপনার ফলোয়ার বাড়বে। এমনকি নায়ক, পার্শ্ব নায়ক, প্রতিনায়ক কিছুই না হয়েও একদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আবিস্কার করতে পারেন আপনার ফলোয়ারের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কি বিশ্বাস হয় না? কিছু দিন আগে কোন এক সাদিয়াকে কেন্দ্র করে জুনায়েদ বনাম নুরুল্লাহর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জাতীয় চাহিদার প্রেক্ষিতে সাদিয়া নামের অনেক মেয়ের ফলোয়ার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। নাম সাদিয়া হলেই যে কেউ জুনায়েদের সাদিয়া হয় না এইটা বোঝার টাইমও আমাদের ফেসবুকের আমজনতার নাই। কি বিচিত্র তাই না?
সরকার অবশ্যই এই নব্য বিরোধী দল তথা বিরোধী দল কেন্দ্রীক জনমতকে উপেক্ষা করতে পারে না কিন্ত এই বিরোধী দলকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়ার যে কোন কারণ নেই সেটাও সরকার জানে। অন্য বিরোধী দলের থেকে এই বিরোধী দলকে মেনিপুলেট করা সরকারের পক্ষে অনেক সহজ। এক ইস্যু থেকে মনযোগ সরানোর জন্য স্রেফ নুতুন একটা ইস্যু হলেই হয়। অধিকাংশ ইস্যুই দিন শেষে হারিয়ে যায় বলে কোন ইস্যুই শক্তিশালী ষ্ট্যান্স নিতে পারে না। আগেই বলেছি কোন একটি ঘটনাকে নিজ বিদ্যা, বুদ্ধি কিংবা যুক্তি দিয়ে যাচাই করবার মত সময় আমাদের ফেসবুকের আমজনতার নাই তাই এখানে কোন মতবাদকে কাউন্টার করতে আরেকটা বিপরীত মতবাদকে জনপ্রিয় করাও তেমন কঠিন কোন কাজ নয়। যেমন ব্লগ ভিত্তিক মুক্তচিন্তা থেকে জন্ম নেওয়া শাহবাগের আন্দোলনকে কাউন্টার করতে হেফাজতের নাস্তিকতা বিরোধী আন্দোলনকে জনপ্রিয় করা হয়েছিল মাত্র কয়েক দিনে! এছাড়া সরকার চাইলে বিটিআরসিকে দিয়ে তার জন্য ক্ষতিকারক পেইজ বা একাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারে। আর শেষ অস্ত্র হিসেবে ৫৭ ধারার প্রয়োগ তো আছেই। যাই হোক বিরোধী দল হিসেবে ফেসবুকের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে তবুও বাংলার রাজনীতিতে কার্যকর বিরোধী দলের এই শুন্যতা পুরনের জন্য ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য, কি বলেন?
২)
একদা আপনি পত্রিকায় পড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের পাশে আছে। ঘটনাক্রমে ঐ দিন আপনার পাড়াতো বন্ধুর খালাতো ভায়ের মেয়ের বিয়ে যশোরের বেনাপোলে। বউয়ের কচকচানি থেকে কয়েকদিনের জন্য মুক্ত হতে আপনি সেখানে যাবেন বলে মনস্থির করলেন। বেনাপোলে পৌঁছে আপনার একটু সাধ জাগলো সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখবেন তাই হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলেন কাঁটাতারের দিকে। অতঃপর আপনার সামনে পড়ল টহলরত দুই বাঙ্গালী বিএসএফ জোয়ান। আপনার কিছু বলার আগেই তারা বলে উঠল-এই ব্যাটা এদিকে আয়?
খানিকটা ভয় পেলেও পূর্ণ আত্ববিশ্বাস নিয়ে আপনি তাদের দিকে এগিয়ে গেলেন, বললেন-হাই গাইজ, হাউ আর ইউ?
দুই জওয়ানের মধ্যে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী একজন আপনার দিকে এগিয়ে আসলো। মুহূর্তেই আপনার কলার ধরে বলে উঠল-এই তুই গরু ব্যাপারী?
-নো নো জেন্টেলম্যান, আই এম নট দ্যাট সর্ট অফ পারসন হুম ইউ আর লুকিং ফর। একচুয়ালি আই এম আ ট্যুরিষ্ট, আই এম ওয়াকিং থ্রু দিজ প্যাডি ফিল্ড।
আপনার কথাটিকে পাত্তা না দিয়েই প্রথম জওয়ানটি বলে উঠলো- ব্যাটা দেখি ইংরেজীও কয়! বল হারামজাদা কয় টাকা আনছস গরু কেনার লাইগা?
– নো নো ইয়াংম্যান, ইউ আর মিস্টেকেন কমপ্লিটলি। আই এম আ ভেরি রিস্পেক্টেবল সিটিজেন অব বাংলাদেশ, হোয়াই উড আই বিকাম আ গরু ব্যাপারী? আই হেইট দোজ ব্লাডি গরু ব্যাপারীজ। মাই ডক্টর হ্যাজ আস্কড মি টু নট ইট বিফভুনা।
-তুই ইন্ডিয়ায় ঢুকবার চাস অকাম করার লাইগা?
-নো নো, আই লাইক ইন্ডিয়া ভেরি মাচ। এভ্রি মানথ আই গো টু ইন্ডিয়া। আই গো ফর শপিং, আই গো ফর মাই পাইলস ট্রিটমেন্ট। মাই ওয়াইফ গোজ ফর হার ব্লাউজ মেকিং। আই লাইক বলিউড, আই লাইক শাহরুখ, আই লাইক দীপিকা, আই লাইক ক্যাটরিনা, আই লাইক আলিয়া ভাট…
কথাটা আপনি শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই মাথায় একটা ছোট খাট থাবড়া অনুভব করলেন।
একজন বলে উঠলো- অত কথা কস কেন হারামজাদা? গরু কেনার জন্য যা টাকা আনছস তাড়াতাড়ি বাইর কর?
হতভম্ভ আপনি ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। অগ্যতা বিএসএফ জওয়ানরাই আপনার পকেটে হাত ঢোকাতে বাধ্য হল। খানিক ক্ষণ পর আপনি আপনার ঘাড়ে একটা মৃদু ধাক্কা অনুভব করলেন। পিছন থেকে ভেসে আসলো তাদের কন্ঠস্বর- যা ভাগ ব্যাটা, আর কোনদিন যদি তোরে এই এলাকায় দেখি…
নিরুদ্বেগ আপনি আবারো বাংলার মেঠো রাস্তায় হাঁটা শুরু করলেন। খানিকটা মন খারাপ হলেও পরক্ষণেই একটা কথা ভেবে আপনার মন খুশি হয়ে উঠলো। যাক বাবা বাঁচা গেছে, ব্যাটারা দিলে একটা ছোট খাট অর্ধ চন্দ্রই তো দিয়েছে, পশাৎদেশে লাথি তো আর দেয় নাই। মোদীদা আমাদের পাশে আছে !!!
৩)
আজকাল বাংলার বোরখাওয়ালীদেরও প্রিয় ব্যক্তিত্ব বেগম রোকেয়া। বোরখা টাইট হবে নাকি ঢিলা হবে নাকি চক্ষূ ঢাকা হবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও রোকেয়াকে আইডল করা নিয়ে তাদের মধ্যে কোন মতভেদ নাই। বাংলার চিরকালীন রাজনৈতিক অনৈক্যের মধ্যে তাদের এই ঐক্য নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। তবে রোকেয়ার কপাল ভাল যে তিনি এখন আর এই বঙ্গদেশে বেঁচে নেই, বেঁচে থাকলে হয়তো কবি জীবনানন্দ দাসের ভাষায় বলতেন-
সব কাজ তুচ্ছ হয়- পণ্ড মনে হয়,
সব চিন্তা-প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়।
৪)
বিয়ের কথাবার্তা চলাকালীন মেয়েটি ছেলেটির কাছে তার সার্টিফিকেট গুলো দেখতে চেয়েছিল। ছেলেটি তার আলমারির ড্রয়ারে পুরোনো সার্টিফিকেটগুলো খুঁজতে যেয়ে আবিস্কার করে তার মেট্রিক-ইন্টার সার্টিফিকেটের একাংশ পোকায় খেয়ে ফেলেছে। অতঃপর বোর্ড অফিসে যোগাযোগ করে সে তার মেট্রিক-ইন্টার সার্টিফিকেটের রেপ্লিকা জোগাড় করেছিল। এদিকে ভার্সিটির কনভোকেশন তখনও হয়নি কাজেই অনেক ছুটোছুটি করে তাকে প্রভিশনাল সার্টিফিকেট জোগাড় করতে হয়েছিল। তারপর এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় জিপিএ ফাইভ যুক্ত মেট্রিক-ইন্টার সার্টিফিকেট, থ্রি পয়েন্ট সেভেনফাইভ সিজিপিএ যুক্ত ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট, চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রাপ্ত ক্যারেক্টার সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে ছেলেটি মেয়েটির দেওয়া ঠিকানায় ঠিক সময়ে পৌঁছেছিল। ছেলেটিকে কাক ভেজা হয়ে আসতে দেখে মেয়েটি একটা নীল রঙ্গের তোয়ালে এগিয়ে দিয়েছিল, ড্রইং রুমে বসতে বলে জিজ্ঞেস করেছিল- কি খাবে?
এক গ্লাস ঠান্ডা পানি- ছেলেটি উত্তর দিয়েছিল।
পানির গ্লাস নিয়ে ফিরতেই ছেলেটি তার সার্টিফিকেটসমৃদ্ধ ফাইলটি মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিয়ে আত্নবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিল-দেখো সব ঠিক আছে কিনা?
মুচকি হেসে মেয়েটি উত্তর দিয়েছিল- সবই তো ঠিক আছে কিন্ত মেডিকেল সার্টিফিকেটটা নেই যে…
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৪