somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৫ই আগস্ট সম্পর্কিত একটি সমসাময়িক শোক

১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফোনের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় বাতেনের। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে একটু ঝিমুনির মত এসে গিয়েছিল তার। সবেমাত্র ঘুমটা একটু গাঢ হয়েছে, এমন সময় বেজে উঠেছে বাল্য বন্ধু শিপনের ফোন।
-হ্যালো বাতেন, তোর ডিএসএলআরটা কি কাইল ফ্রি আছে ?
-কেন ডিএসএলআর দিয়ে কি করবি?
-কাল পনেরই আগষ্ট ছুটি তো, তোর ভাবীরে লইয়া ঘুরতে যামু। ভাবছিলাম কিছু ছবি উঠামু।
-ডিএসএলআর আমার দুলাভাইয়ের কাছে। কাইলকা পাবি না।
-ও আচ্ছা। কিরে ঘুমাইছিলি নাকি ?
-হ
-আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে রাখি।
-আচ্ছা।
ফোনটা রাখতেই মেজাজ খারা্প হয়ে যায় বাতেনের। সত্যিই তো আগামী কাল পনের আগষ্ট, সরকারী ছুটি। বাতেনের মনে পড়ে গত বছরের পনেরই আগষ্টের কথা। ধানমন্ডী লেকে মলির সঙ্গে কত সুন্দর সময় সেবার কাটিয়েছিল সে। আজ মলি নেই, পনেরই আগষ্টের হিসাবও নেই। বাতেনের মনে হয় এই তো সেদিনের ঘটনা। দেখতে দেখতে কিভাবে যে এক বছর পার হয়ে গেল ভেবেই পায় না সে। মলিবিহীন আর একটা বিশেষ ছুটির দিন তাহলে এসেই গেল!

পাড়াতো মেয়ে হলেও মলি আক্তার ওরফে এঞ্জেলিনা মলির (ফেসবুক আইডি) সাথে বাতেনের যোগাযোগ মূলত ফেসবুকে। প্রথম রিকোয়েষ্টটা বাতেনই পাঠিয়েছিল। কয়েকদিন ঝুলিয়ে রেখে একদিন সেটা একসেপ্ট করেছিল মলি। প্রথম ডেট এক একুশে ফ্রেব্রুয়ারীর পড়ন্ত বিকেলে। বাংলার যুব সমাজ আজকাল ২১শে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনারের চেয়ে পার্ক আর আবাসিক হোটেলগুলোতে বেশি ভিড় করে। মলি আর বাতেনও সেবার ভিড় করেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ভিড়ের মধ্যে কোন রকমে ২১টা গোলাপ সেদিন মলির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাতেন বলেছিল-আই লাভ ইউ। জবাবে মলির সেই বিখ্যাত লাজুক হাসি। তারপর কিভাবে কিভাবে যেন মলি আর বাতেনের প্রেমটা গাঢ হয়ে গেল। রাত জেগে ফোনে কথা বলা, চন্দ্রিমা উদ্যানে এক সঙ্গে বাদাম চিবানো, ব্লক বাষ্টারে সিনেমা দেখা, মাঝিহীন ভাড়াটে নৌকায় দূর দিগন্তে ভেসে চলা, আহা কি দিনই না ছিল সেসব! তারপর একদিন রঙ্গমঞ্চে কমন ফ্রেন্ড কাশেম বিন আবুবকর ওরফে কিউট বয় কাশেমের (ফেসবুক আইডি) আবির্ভাব তারপর বাকিটা ইতিহাস। ফেসবুকে কাশেমের মাঞ্জা মারা পিকচার, গিটারের মূর্ছনা, চামড়ার আড়তদার বাপের টাকায় কেনা ৫০০ সিসি বাইকের টানে মলি যে কবে তার নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেল টেরই পায়নি বাতেন। তারপর এক বৈশাখী ঝড়ের হাতে সবে মাত্র কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর পরিকল্পনা করছিল বাতেন। হঠাৎ বেজে উঠেছিল মলির ফোন।
– শোন বাতেন, আজ থেকে তোমার লগে আমার রিলেশন ব্রেক আপ।
ব্রেকআপ শব্দটা শুনে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিল বাতেন, বলেছিল- জানপাখি তোমার আল্লার কসম লাগে তুমি এই কাম কইরো না।
-কেন করুম না কও? তুমি আজ পর্যন্ত আমারে কি কেয়ার করছো কও দেখি? তুমি জান কাশেম আমারে কত্তগুলান কেয়ার করে, আমারে কত সুন্দর সুন্দর গিফট কিনে দেয়?
-কি কও তুমি এই গুলান জানপাখি? তোমারে একদিন না দেখলে আমার কইলজা পানি পানি হইয়া যায়। আর তুমি কইতাছ তোমার জন্য আমি কিছুই করি নাই?
-কি করছো তুমি আমার লাইগা?
-আমি তোমার জন্য তাহসানের মত হেয়ারকাট দিছি, গিটার বাজানো শিখছি, জোরে বাইক চালানো শিখবার যাইয়া ঠ্যাং ভাইঙ্গা তিন মাস হাসপাতালে থাকছি।
-তাহসানের মত হেয়ারকাট দিলেই তাহসান হওয়া যায় না বুঝলা আর গিটার তোমার থেকে কাশেম আরো ভাল বাজায়।
-কাশেমের গলা কেমন তুমি জান না? ওর গান শুনলে তো কাউয়াও লজ্জা পায়।
-কাশেমের গলা কাউয়া হলে তোমার গলা কি?
-আমার গলা মিষ্টি। বেবি তুমি জানো কাশেমের কি পরিমাণ চুল ওঠে? ও তো আর কয়দিন পর টাকলা হইয়া যাইবো। তুমি কি টাকলা জামাইয়ের ঘর করবা নাকি?
-তুমি যাই কও তোমার লগে রিলেশন আর রাখুম না। তুমি আমারে কিরণমালা কিইনা দিছ? দেও নাই। কাশেম দিছে, তাহলে বুঝ কাশেমের মহব্বত কত বেশি।
– তুমি জান হবিগঞ্জে কিরণ মালা দেখা নিয়ে সংঘর্ষে শতাধিক লোক আহত হইছে। কিরণ মালা কোন ড্রেস হল? আমি তোমারে এর থেকেও ভাল ড্রেস কিইনা দিব।
-তোমার কথার কোন দাম নাই।
-কে বলেছে দাম নাই? ময়না পাখি, তুমি জান আমি প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজে তোমার জন্য আল্লার কাছে দোয়া করি।
-যতই দোয়া করো রিলেশন রাখুম না।
-আমি তো নেক্সট মঙ্গলবার তোমার জন্য গামছা বাবার দরবারে মুরগী মানত করছি, ব্রয়লার না একেবারে খাটি দেশী মুরগী ।
-যতই মানত করো রিলেশন রাখুম না।
-বেবি রাখো না প্লিজ ?
-না রাখুম না।
-আমার সাথে রিলেশন না রাখলে তোমার উপর আল্লার ঠাঠা পড়বো।
-পড়লে পড়বো।
-বেবি রাখো না?
-না।

সেই থেকে মহল্লার মোষ্ট এলিজেবল ব্যাচেলরের তকমাটা আপাতত বাতেনের ঘাড়ে। তবে এই তকমাটা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা যে বাতেন করেনি এমনটা না। মাঝখানে কয়েকদিন পাড়ার আরেক মেয়ে সুমির পিছনে ঘুরঘুর করেছে, ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠিয়েছে, সুমির কলেজের সামনে যেয়ে ঝিম মেরে বসে থেকেছে কিন্ত প্রতিবারই তাকে দেখে সুমি তার মুখটার এমন ভঙ্গীমা করেছে যে বাতেনের আর সামনে এগোনোর সাহস হয়নি। অতঃপর আজ সে একা, বড় একা। কাল ১৫ই আগষ্টের ছুটিতে বন্ধুরা গার্লফ্রেন্ড লইয়া আনন্দ করবে, ফুচকা খাবে আর সে একা বসে থাকবে কথাটা ভাবতেই বুকটা ফেটে যায় বাতেনের। কিন্ত কি আর করা যাবে? কপাল সবই কপাল! হঠাৎ ফোনটা আবারও বেজে ওঠে বাতেনের। এবার ফোন করেছে মহল্লার ছোটভাই মারুফ। ফোনটা ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে মারুফ বলে-হ্যালো বাতেন ভাই, কেমন আছেন?
-ভাল। তুমি কেমন আছ মারুফ?
-জ্বি আছি ভালই, ভাই আপনের ডিএসএলআরটা কি কাল দেওন যাইব ?
-কেন মারুফ, ডিএসএলআর দিয়া কি করবা ?
-কাইলকা পনেরই আগষ্ট, ছুটিতো। গার্লফ্রেন্ড লইয়া ঘুরতে যামু। কিছু ছবি উঠাইয়া পার কইরা লমু।
-আমার ডিএসএলআরটা তো শিপন লইয়া গেছে। সেও তো কাল ঘুরতে যাইতাছে।
-ও আচ্ছা, কপালটাই খারাপ। রাখি তাহলে বাতেন ভাই।
-আচ্ছা ঠিক আছে।

ফোনটা রাখতেই মেজাজটা আরো খানিকটা বিগড়ে যায় বাতেনের। সেদিনের সেই পিচ্চি পোলা মারুফ যার নাক টিপলে দুধ বের হয়, সেও গার্ল ফ্রেন্ড লইয়া ঘুরে, আর তাকে মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলরের তকমা লাগিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। হায় হায়, এই দুঃখ সে রাখে কোথায় ? বিরক্তি আর দুঃখবোধের চরম তিক্ত অনুভূতি গুলোকে সঙ্গী করে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় বাতেন। দূর আকাশের নক্ষত্রগুলোর দিকে একদৃষ্টিতে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে। জ্যোছনাময় রাত। বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত দুটো বের করে জ্যোছনা ধরতে ইচ্ছে করে বাতেনের। রাত বাড়ছে, হাজার বছরের পুরোনো সিঙ্গেল রাত। মহল্লার মোড়গুলোতে ছাত্র, যুব, স্বেচ্ছাসেবক, অনিচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্মীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কে কত আয়োজন করে শোক দিবস পালন করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। কাঙ্গালী ভোজের খিচুরি রান্না হচ্ছে, সেই রান্নার মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে বাতেনের নাকে লাগছে। মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ফাঁকে ফাঁকে চিটিয়া কালাইয়া বে বাজছে। এই তো আর কিছুক্ষণ, বারোটা পেরোলেই পনেরই আগষ্ট, শোক দিবস। বাতেন শোকাহত, গার্লফ্রেন্ড এঞ্জেলিনা মলিকে হারানোর উত্থাল করা শোক।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৫৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×