somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেজ নাইটঃ (গেম অব থ্রোন্সের প্রিকুয়েল সিরিজ) ডানকান এগ সিরিজঃ পর্ব-১

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মুখবন্ধঃ ডানকান এগ সিরিজটির কাহিনী শুরু হয় গেম অব থ্রোন্স বইটার প্রায় একশো বছর আগের কাহিনী নিয়ে। মুলত নিছক শখের বসেই অনুবাদ করা। যারা টিভি শো দেখে অনুপ্রাণিত আর এই জগতের বিভিন্ন ঘটনা জানতে চান তাদের জন্যে ছোট এই বইটা আগ্রহের সৃষ্টি করবে। কোনভাবেই ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে এই অনুবাদটি করা হয় নি। অনুবাদে ভূল ত্রুটি থাকলে অবশ্যই জানাবেন। :)

****

এই গল্পটা শুরু হয় এ গেম অব থ্রোন্স বইটির একশো বছর পূর্বের ঘটনাগুলো নিয়ে…

বসন্তের হাল্কা বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে গেছে, তাই ডাঙ্কের কবর খুড়তে কোন পরিশ্রমই করতে হচ্ছে না। সে একটা ছোট পাহাড়ের পশ্চিম পাশের ঢালু জায়গা কবরের জন্য বেছে নিল, বুড়ো মানুষটা সবসময় সূর্যডোবার দৃশ্য দেখতে পছন্দ করত। “আরেকটা দিন গেল” সে দীর্ঘশ্বাঃস ফেলে বলত। “আর কে জানে কাল কি আসবে আমাদের জন্যে, এহ, ডাঙ্ক?”

আসলে একদিনের সকাল নিয়ে এলো হাড় কাপুণে বৃষ্টি, তার পরের দিন নিয়ে আসল ভেজা ঠান্ডা বাতাস, তারপর আরো ঠান্ডা। চার নম্বর দিনের মাথায় বুড়োটা এতো অসুস্থ হয়ে পরল যে ঘোড়ার পিঠেই থাকতে পারল না। আর এখন সে চলেই গেছে। কিছুদিন আগেও সে রাস্তার চলার পথে গান গাচ্ছিলো, সেই পুরোনো গানটা, গালটাওনে ফিরে যাওয়া প্রিয়জনের দেখা পাওয়ার জন্য্‌, শুধুমাত্র গালটাওনের বদলে সে গাইছিল অ্যাশফোর্ড। অ্যাশফোর্ডের পথে, প্রিয়জনকে দেখব বলে… হেই-হো, ডাঙ্ক কবর খুড়তে খুড়তে এসবই কল্পণা করতে লাগল।

গর্তটা মোটামুটি গভীর হয়ে গেলে ডাঙ্ক বুড়োকে দু’হাতে তুলে নিয়ে আসলো । সে সবসমই ছোটখাট মানুষ ছিল, পাতলা; হাউবার্ক(গলা থেকে কাধ পর্যন্ত নেমে আসা এক ধরনের বর্ম) শিরস্ত্রাণ আর তলোয়ারের বেল্ট ছিল তার পরনে। তার ওজন বেশি হলে এক বস্তা পাতার সমান হবে। ডাঙ্ক তার বয়সের তুলনায় যথেষ্ট লম্বা, বিশালদেহী ষোল বা সতেরো বছরের বালক(কেউ সঠিক জানে না)। এখনি সে সাত ফুটের মত লম্বা, আর তার বৃদ্ধি মাত্র শুধু হয়েছে! বুড়োটা মাঝে মাঝে তার শক্তিমত্তার প্রশংসা করত, সে সবসময় মন থেকেই প্রশংসা করত। এটাই তার দেওয়ার মত ছিল।

সে তাকে কবরের মাঝে সুইয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ আবার পাওয়া যাচ্ছে, সে জানত বৃষ্টি আসার আগে কবরটা বন্ধ করে দেয়া উচিৎ, কিন্তু বুড়োর ক্লান্ত চেহাড়া দেখে সহজে তা করতে পারল না। এখানে কোন যাজকের থাকা উচিৎ ছিল, সে থাকলে তার জন্যে প্রার্থনা করতে পারত, কিন্তু বুড়োর জন্যে এখানে শুধু আমিই আছি। বুড়ো মানুষটা ডাঙ্ককে সে যা জানত, তলোয়ার, ঢাল আর বল্লমের খেলা, সব শিখিয়েছিল, কিন্তু সে কখনো তাকে প্রার্থনা শেখায় নি।

“আমি তোমার তলোয়ারটা রেখে যেতে পারতাম, কিন্তু এটা কবরে থাকলে মরিচা পরে যাবে,” ধরা গলায় বলল সে। “ঈশ্বরেরা হয়তো তোমাকে নতুন একটা দিবে, হয়তো..., আমি খুশি হতাম তুমি যদি মারা না যেতে, স্যর।” সে একটু থামল, নিশ্চিত নয় আর কি কি বলা উচিৎ। সে কোন প্রার্থনা জানে না, পুরোপুরি কোনটাই জানে না, বুড়োটা কখনোই ধর্মকর্ম নিয়ে পরে থাকত না। “তুমি একজন সত্যিকারের নাইট ছিলে, আর তুমি কখনোই আমাকে মারধর করো নি যখন আমি মারের যোগ্য ছিলাম না।” সে কোনভাবে বলল, “শুধুমাত্র ঐ একটা সময়ে মেইডেনপুলে, ইনবয় (inn boy) বিধবার সব পাই খেয়ে ফেলেছিল সেদিন, আমি না, আমি তোমাকে বলেছিলাম, যাই হোক, এটা কিছুই না, ঈশ্বরেরা তোমাকে শান্তি দিক, স্যর।” সে মাটির চাকায় লাথি দিল, ধীরে ধীরে গর্তটা ভরাট করতে থাকল সে, কখনোই নিচের দিকে তাকালো না। সে অনেক বছর বেচে ছিল, ডাঙ্ক ভাবে। সে মনে হয় ষাট কিংবা পঞ্চাশ বছর বেচেছে, কতজন মানুষ তা পারে? শেষ পর্যন্ত সে আরেকটা বসন্ত দেখে যেতে পেরেছে!

ঘোড়াগুলোকে খাওয়ানো পর্ব শেষ করতে করতে সূর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে পরেছে। তিনটা ঘোড়া ছিল, তার অদ্ভূত কুজের স্টট, বুড়োর চরার টাট্রুঘোড়া আর থান্ডার, তার যুদ্ধের ঘোড়া, শুধুমাত্র টুর্নি কিংবা যুদ্ধের ময়দানেই এটায় সে চরেছে। এই বড় বাদামি ঘোড়াটা এখন আগের মত ক্ষিপ্র আর শক্তিশালি নেই, কিন্তু এখনো তার উজ্জ্বল চোখে উদ্দ্যিমত্তা খেলা করে। ডাঙ্কের যা কিছুই আছে তার মধ্যে ঘোড়াটাই সবচেয়ে দামি। যদি আমি থান্ডার আর চেস্টনাটকে বিক্রি করে দেই, সাথে সেডেল আর লাগাম, আমার হাতে যথেষ্ঠ রুপালি মুদ্রা থাকবে… সামনে ঝুকল সে। সে একমাত্র জীবন চেনে হেজ নাইটের, এক সরাইখানা থেকে আরেক সরাইখানা, এই লর্ডের কাজ করা তো অন্য লর্ডের কাজ করা, তাদের যুদ্ধে যোগ দেয়া কিংবা তাদের হলে খাওয়া দাওয়া করা যতক্ষণ না যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধ শেষ হলে আবার বেরিয়ে পরা… সময়ে অসময়ে টুর্নিরও দেখা মিলত, যদিও কম সময়েই তা হতো, সে জানত অনেক হেজ নাইটই দস্যুগিরি শুরু করে দেয় শীতের মাঝে, যদিও বুড়ো কখনো করে নি।

আমি আরেকজন হেজ নাইটকে খুজে বের করতে পারি যে স্কয়ার অনুসন্ধান করছে তার ঘোড়াদের দেখাশোনা করা আর পোশাক পরিষ্কার রাখার জন্যে, সে ভাবে। অথবা আমি কোন শহরে চলে যেতে পারি, লেনিস্পোর্টে কিংবা কিংস’ ল্যান্ডিং এ, তাদের সিটি ওয়াচে ঢুকতে পারি কিংবা অন্যকিছু…

সে বুড়ো মানুষটার সবকিছু একটা ওকগাছের নিচে জড়ো করল। কাপড়ের থলেতে তিনটা রৌপ্যমুদ্রা, উনিশটা তামার পয়সা আর একটা উজ্জ্বল খনিজ পাথর রয়েছে; এমনটাই থাকে বেশির ভাগ হেজ নাইটের কাছে, তার সবচেয়ে দামি জিনিস তার ঘোড়াগুলি এবং তার উপর বাধা অস্ত্রগুলো। ডাঙ্ক একটা চেইনের হাউবার্ক উত্তরাধিকার সূত্রে পেল যার মরিচা সে হাজার বারের উপর ঘষে মেজে দূর করেছে বুড়োর জন্যে। একটা লোহার অর্ধ-শিরস্ত্রাণ পেল যার নাকের উপর শুধু পাতলা প্রোটেকশন আছে, এর বা পাশে আঘাতের গর্ত স্পষ্ট বোঝা যায়। একটা তলোয়ারের বেল্ট যার চামড়া ফেটে বাদামী হয়ে গেছে আর একটা লংসোর্ড সাথে কাঠ আর চামড়ার তৈরি খাপ। একটা ছুড়ি, একটা রেজর, আর একটা ধার দেয়ার পাথর। হাটুর নিচের বর্ম আর এক টুকরো গলায় প্যাচানোর জন্যে ব্যবহৃত কাপড়। একটা আট ফুট লম্বা যুদ্ধের বল্লম যার মাথায় লোহার চোখা অংশ বসানো, একটা ওক কাঠের ঢাল যার চারদিকে ঘষা ধাতু দিয়ে আটকানো, এর উলটো পাশে বসানো আছে স্যর আরলান পেনিট্রি এর সিজিল; একটা মগের দুইপাশে ডানা, বাদামির মাঝে রুপালী রঙে আকা।

ডাঙ্ক ঢালটা দেখল, তলোয়ারের বেল্টটা তুলে ধরল, আবার ফিরে ঢালটা দেখল। এই বেল্টটা বানানো হয়েছে বুড়োর চিকন কোমড়ের মাপে, তার সাথে কোনভাবেই আটবে না। হাউবার্কটাও তার কোন কাজে আসবে না। সে তলোয়ারের খাপটা তার কোমরে দড়ি দিয়ে বাধল, আর খাপ থেকে তলোয়ারটা বের করল।

তলোয়ারের ব্লেডটা লম্বা আর ভারি, ভালো কোন ক্যাসলে তৈরি করা স্টিল দিয়ে বানানো, এর কাঠের হাতলের উপর নরম চামড়া মোড়ানো, হাতলের মাথাটা পালিশ করা কালো পাথরের তৈরি। তলোয়ারটা হাতে নিয়ে ভালো লাগল তার, ডাঙ্ক জানত এটা অনেক ধারালো, সেই এতদিন ধরে পাথরে এই তলোয়ারটা ধার দিত আর বার্নিস করত ঘুমাতে যাওয়ার আগে। এটা আমার হাতেই ভালো মানায় তার হাতের চেয়ে, নিজে নিজে ভাবল সে। আর অ্যাশফোর্ড মিডোতে সামনে একটা টুর্নিও আছে।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×