somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেজ নাইটঃ (গেম অব থ্রোন্সের প্রিকুয়েল সিরিজ) ডানকান এগ সিরিজঃ পর্ব-৩

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ডাঙ্ক যখন অ্যাশফোর্ড মিডোর কিনারে চলে আসল ততক্ষণে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে গেছে। তিনটা বড় আকারের তাবু এর মাঝেই ঘেসো মাঠে টাঙ্গানো হয়ে গেছে। কিছু তাবু ছোট আকারের, কোনটা আবার বড়, কোনটা দেখতে চারকোণা, কোনটা আবার গোলাকার, কোনটা পালের মোটা কাপড়েরে তৈরি, কোনটা আবার লিনেন এর, আবার কিছু আছে রেশমের; কিন্তু সবগুলিই উজ্জ্বল রঙের। সবগুলোর উপর থেকে লম্বা ব্যানার ঝুলছে তাবুর মাঝের খাম্বা থেকে, বন্যফুলের চেয়েও উজ্জ্বল এসব তাবুগুলো গাঢ় লাল আর সূর্যের ন্যায় হলুদাভ, অনেক ধরণের সবুজ আর নীলের মিশ্রণ দেখা যায়, কোনটা কালো, ধুসর কিংবা গাঢ় বেগুনী রঙের।

বুড়ো মানুষটা এসব কিছু নাইটের সাথে ঘোরাফেরা করেছে; বাকিদের ডাঙ্ক চিনল কমনরূমের আড্ডা আর ক্যাম্পফায়ারের কেনার ঘেষে উঠা গল্পের নায়ক হিসেবে। যদিও তার লেখা পড়া শেখার সুযোগ হয়ে উঠে নি, কিন্তু বুড়োটা সবসময় তাকে বিভিন্ন লর্ড, হাউজের সিজিল, ঘোষনা ইত্যাদি শেখানোর চেষ্টা করত, বিশেষ করে যখন তারা দূরের পথে চরে বেড়াত। নাইটিঙ্গেল পাখির ব্যানার হচ্ছে লর্ড কারন, হাউস মার্চ এর। সে যেমন হার্প বাজানো জানত তেমনি জানত যুদ্ধের বল্লম চালানো। হরিণের শিং এর উপর মুকুট হচ্ছে লাফিং স্টর্মের লায়নেল বেরাথিয়নের সিজিল। ডাঙ্ক দেখল কিছু টার্লিদের সৈন্য, হাউজ ডানডারিয়নদের বেগুনি বজ্রপাত, ফসোয়েসদের লাল আপেল সিজিল। লেনিস্টারদের সিংহের সিজিল দেখা গেল, লালের মাঝে সোনালী রঙের, আরো দেখা গেল ইস্টারমন্টসদের গাঢ় সবুজ রঙের সামুদ্রিক কাছিম, সবুজ ঘাসের চাদরে সাতার কাটছে। বাদামী রঙের যে তাবুটা দেখা গেল লাল যোদ্ধাঘোড়াটার পাশে সেটা নিশ্চিতভাবেই স্যর ওথো ব্র্যাকেনের। তিন বছর আগে কিংস’ ল্যান্ডিঙ্গের একটা টুর্নিতে লর্ড কোয়েন্টেইন ব্লেকউডকে হনন করবার জন্যে সবাই তাকে চেনে ব্রুট অব ব্র্যাকেন নামে। ডাঙ্ক শুনেছিল যে স্যর ওথো তার লংএক্স (যুদ্ধের কুঠার) দিয়ে লর্ড ব্লেকউডের শিরস্ত্রাণে এমন জোরে আঘাত করেছিল যে হেল্মটার (শিরস্ত্রাণ) চোখের উপরের ঢাকনাটা দুমড়ে মুচড়ে তার মাথার ভেতরে ঢুকে পরে। সে কিছু ব্লেকউড ব্যানারও দেখতে পেল, মিডোটার পশ্চিম পাশে, স্যর ওথোর থেকে অনেক দূরে। মারব্রান্ড, মেলিস্টার, কারগাইল, ওয়েস্টারলিং, সোয়ান, মুলেনডোর, হাইটাওয়ার, ফ্লোরেন্ট, ফ্রেয়, পেনরোস, স্টোকওর্থ, ডেফি, পেরেন, ওয়াল্ড… মনে হচ্ছে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যত লর্ডমত হাউজ আছে সবাই তাদের নাইট পাঠিয়েছে এই টুর্নিতে তাদের ঘরে সুনাম নিয়ে আসার জন্যে। কেউ কেউ একটা কিংবা কেউ তিন চারটা নাইট পাঠিয়েছে অ্যাশফোর্ডে।

অথচ যত সুন্দর করেই তারা তাদের পেভিলিয়ন সাজাক না কেন সে জানত যে এখানে তার কোন জায়গা নেই। একটা মামুলি উলের চাদরই তার ভাগ্যে জুটবে আজকে রাতের জন্যেে। এখানে লর্ডেরা আর তাদের নাইটেরা যেমন ডিনারে কেপন (মোটা একজাতের মুরগী) আর শুকরের মাংশ চাটছে, ডাঙ্কের জন্যে ডিনার হিসেবে আছে শক্ত, আশালো লবণ দেয়া গরুর মাংস। সে বুঝতে পারল এখানে সে যদি তার ক্যাম্প করে তাহলে তার তাদের অবজ্ঞা আর টিটকারি শুনতে হবে। কেউ হয়তো তার সাথে দয়া দেখাতে চাইবে, কিন্তু সেটা তার জন্যে হবে সবচেয়ে বাজে ব্যাপার।

একজন হেজ নাইট সবসময় তার গর্ব নিয়ে চলে। এটা না থাকলে তার সাথে একটা সেলসোর্ডের কোন পার্থক্য থাকল না। আমার যোগ্যতা দিয়ে তাদের মাঝে আমার জায়গা করে নিতে হবে। যদি আমি ভালোভাবে লড়তে পারি তাহলে কোন লর্ড হয়তো আমাকে তার হাউজহোল্ডে নিয়ে যাবে। আমি তখন উৎকৃষ্ট শ্রেনীর মানুষের মাঝে থাকতে পারব, তাদের ক্যাসলে তাদের সাথে তাজা মাছ মাংস খেতে পারব। আমি এমনকি নিজের পেভিলিয়নও দিতে পারব টুর্নিতে। কিন্তু প্রথমে আমাকে ভালো কিছু করতে হবে। অনিচ্ছাকৃতভাবে সে টুর্নির এলাকা ছেড়ে তার ঘোড়া নিয়ে জঙ্গলের মাঝে ঢুকে পরল।

টুর্নির প্রান্তর, শহর আর ক্যাসল থেকে প্রায় আধা মাইল দূরে সে একটা জায়গা পেল যেখানে গভীর পুকুরের সৃষ্টি হয়েছে। ঘন আগাছা জন্মেছে এই পুকুরটার চারদিক ঘেষে, এদের মাঝে বড়পাতা বিশিষ্ট এলমের দেখাও মিলল। বসন্তের ঘাসগুলো এতই সবুজ যে দেখতে মনে হয় কোন নাইটের ব্যানার আর অনেক নরমও। এই জায়গাটা তার ভালোই মনে হল, এবং আশেপাশে কেউ নেই তার কাছ থেকে এটা নিয়ে নেবার মত । এটাই হবে আমার পেভিলিয়ন, ডাঙ্ক নিজেকে বলল। এমন একটা পেভিলিয়ন যার ছাদ হবে পাতার… টাইরেলদের আর ইস্টারমন্টসদের ব্যানারের চেয়েও সবুজাভ।

প্রথমে সে তার ঘোড়াগুলোকে দেখাশোনা করল, এরপর তার গা থেকে ধুলো ময়লা ধুয়ে ফেলার জন্যে কাপড় ছেড়ে হাটুজলে ডিঙ্গিয়ে পুকুরের মাঝে পৌছাল। “একজন সত্যিকারের নাইট পরিষ্কার এবং পবিত্র থাকে,” বুড়োটা সবসময় বলত। সে সবসময় তাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ধুতে বলত, তাদের শরীরে দুর্গন্ধ হোক কিংবা না হোক। এখন যেহেতু সে একজন নাইট সে প্রতিজ্ঞা করল যে সেও এমন করে যাবে।

সে নগ্ন অবস্থায় এলম গাছটার নিচে ঠেস দিয়ে বসল, হাল্কা বসন্তের বাতাসটা উপভোগ করতে করতে অলসভাবে একটা ঘাসফড়িংকে লক্ষ্য করতে থাকল। ঘাসফড়িংটা অলসভাবে আগাছার মাঝ দিয়ে উড়ে চলছে। তারা কেন ঘাসফড়িংকে ড্রাগনফ্লাই নাম দিবে? সে বিস্মিত হল। এটাতো মোটেও দেখতে ড্রাগনের মত না! এমন না যে ডাঙ্ক কখনো ড্রাগন দেখেছে। কিন্তু বুড়োটা দেখেছে। ডাঙ্ক এই গল্পটা একশো বারেরও বেশি শুনেছে। যখন স্যর আরলান ছোট ছিল তখন তার দাদা একদিন তাকে কিংস’ ল্যান্ডিং এ নিয়ে গেল, সেখানে তারা দেখেছে শেষ ড্রাগনটিকে, তখনো সেটা মারা যায় নি। সে একটা সবুজ রঙ্গের স্ত্রী ড্রাগন ছিল, ছোট আর ভীত। তার ডানা ছিল কুঞ্চিত। তার কোন ডিমই আর ফুটে নি কখনো। “কোন রাজা তাকে বিষ খাইয়েছে,” বুড়ো মানুষটা বলত। “এইগন তৃতীয়ই মনে হয় এই কাজ করেছে, না রাজা ডেইরনের বাবা না, তার কথা বলছি যার নাম দেয়া হয়েছিল ড্রাগনবেন (dragonbane), কিংবা এইগন দ্য আনলাকি। সে ড্রাগনদের ভয় পেত, সে তার চাচার ড্রাগনটাকে তার মাকে মারতে দেখেছে। শেষ ড্রাগনটা মরার পর থেকে গ্রীষ্মের সময়কাল কমে গেছে, শীত এখন লম্বা সময় ধরে চলে, নিষ্ঠুরভাবে।”

সূর্যটা গাছের নিচে ডুব দিতেই বাতাস ঠান্ডা হতে থাকল। ডাঙ্কের হাতের লোম দাঁড়িয়ে গেলে সে তার ঝিল্লিবিশিষ্ট পাজামা এলম গাছের গুড়ির সাথে আছাড় দিতে থাকল যেন কোন ধুলাবালি আর অবশিষ্ট না থাকে, এরপর আরেকবারের জন্যে তা পরে ফেলল। পরের দিন সকালে সে খেলাটার মাস্টারকে খুজে বের করবে এবং নিজেকে লিস্টের মাঝে ঢুকাবে। কিন্তু তাকে আজ রাতে আরেকটা জরুরী কাজ সম্পন্ন করতে হবে যদি সে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়।

তাকে যে মোটেও নাইটের মত দেখায় না এটা বোঝার জন্যে তাকে পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে হবে না। তাই সে স্যর আরলানের ঢালটা নিজের পিঠে চাপালো যেন সিজিলটা মানুষ দেখতে পারে। ঘোড়াগুলিকে এলম গাছের তলায় ছেড়ে দিল যেন ঘন ঘাসের জঙ্গল তারা তৃপ্তি সহকারে সাবার করে দিতে পারে। এরপর সে আবার ফিরে চলল টুর্নির গ্রাউন্ডে।

আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×