somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জানা অজানা-২ [সাঁওতাল জনগোষ্ঠী-প্রথম পর্ব ]

৩০ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাটির ঘরে থেকেছেন কখনো? মাটির ঘরে থাকার মজাই আলাদা যারা থেকেছে তারা জানেন।বিশেষ করে তীব্র শীতে ঘরের ভেতরটা থাকে বেশ উষ্ণ। আবার প্রচণ্ড গরমেও ঘরের ভেতর থাকে তুলনামূলক শীতল।
ছবির গ্রামটি কেমন দেখাচ্ছে বলুন তো? দারুণ সুন্দর না?
কি অপরূপ! সিগ্ধ কোমল,মিষ্টি একটা গ্রাম।ঠিক যেন শিল্পীর আঁকা ছবি।এই ধরনের গ্রামগুলোতে সাধারণত আদিবাসী জনগোষ্ঠী সাঁওতালদের বাস। আমরা জানি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উপজাতিক জনগোষ্ঠী সাঁওতাল। তারা মূলত রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া জেলাতে বাস করে। আসুন তাঁদের সম্পর্কে জানি। তিন পর্বের আজ প্রথম পর্ব দেওয়া হলো।
সাঁওতাল শব্দটির প্রচলন
সাঁওতাল.,সান্তাল,হড় ( মানুষ ), হর (উচ্চারনে ভুল লেখা হড় হবে ),সান্দাল, সন্থাল, সান্থাল, সান্তাড় প্রভৃতি অভিধায়ও অভিহিত হয়ে থাকে।
ধারণা করা হয় সংস্কৃত সামান্ত পাল (সীমান্ত রক্ষক) শব্দটি মধ্যযুগে 'সামন্ত আল' শব্দে পরিণত হয়েছিল। প্রাচীন মেদেনীপুরের একটি অংশের নাম ছিল সাওন্ত বা সামন্তভূমি। এই শব্দই সাঁওতালদের ভিতরে শাওনতার হিসেবে প্রচলিত হয় বেশ আগে থেকে। কালক্রমে সাওন্ত>সাওন্তাল বা শাওনতার থেকে সাঁওতাল শব্দটির প্রচলন হয়।


গোত্র
সাঁওতালদের গোত্র-উপগোত্র
আফগানিস্তানের অংশবিশেষের নাম ছিল কান্দাহার বা গান্ধার। আর সমগ্র সিন্ধু প্রদেশের নাম ছিল চায় চাম্পা। চাম্পা অঞ্চলে সান্তালদের ছিল ১৪টি গোষ্ঠীর ১৪টি কেল্লা বা গড়। এই গড়গুলো হলো—
১.কুটামপুরি গড় (হাঁসদা গোষ্ঠী)
২. ময়নামতী গড় (হাঁসদা গোষ্ঠী)
৩. কঁয়ড়া গড় (কিস্কু গোষ্ঠী)
৪. চাম্পা গড় (মুর্মু গোষ্ঠী)
৫. যায়রি গড় (হেমবম গোষ্ঠী)
৬. বাদোলী গড় (মাণ্ডি গোষ্ঠী)
৭. চায়গড় (সরেন গোষ্ঠী)
৮. সিমগড় (টুডু গোষ্ঠী)
৯. লুই বাড়ি লুকুই গড় (টুডু গোষ্ঠী)
১০. হারবালোয়ং গড় (বাস্কে গোষ্ঠী)
১১, বানসারিয়া গড় (বেসরা গোষ্ঠী)
১২. জাঙ্গেকোডে গড় (চঁড়ে গোষ্ঠী)
১৩. বামাগড় (পাউড়িয়া গোষ্ঠী)
১৪. হলংগাড়া গড় (বোয়ালি গোষ্ঠী)
বর্তমানে সাওঁতালদের মোট ১২টি গোত্রের নাম পাওয়া যায়। এই গোত্র গুলো হলো— কিস্কু, হাঁসদা, মুর্মু, হেমব্রম, মাণ্ডি, সরেন, টুডু, বাস্কে, বেশরা, চঁড়ে, পাঁউরিয়া ও বেদেয়া। এদের ভিতরে বর্তমানে বেদেয়া গোত্রের লোক দেখা যায় না। এদের ভিতরে কিছু গোত্র কিছু কিছু বিশেষ কাজে দক্ষ ছিল। এই সকল গোত্রের লোকেরা কাজের সূত্রে বিশেষ নামে অভিহিত হতো।
সরেন সেপাই: সরেনরা একসময় সৈনিক হিসেবে কাজ করতো।
কিস্কু রাপাজ: রাজ্য চালনায় সুদক্ষ ছিল। এই কারণে এদেরকে এই নামে অভিহিত করা হতো।
মাণ্ডি কিসাঁড়া বা কিলিপসাড়: মাণ্ডিরা কৃষিকাজ করতো বলে এদেরকে এই নামে অভিহিত করা হতো।
মুর্মু ঠাকুর: পৌরিহত্য করতো বলে, এদেরকে এই নামে অভিহিত করা হতো।
এছাড়া অন্যান্যরা পৃথক নাম না পেলেও, তারাও বিশেষ কাজে পারদের্শী ছিল। যেম হেমব্রমরা করতো দেওয়ান-এর কাজ, বাস্কেরা করতো ব্যবসা, হাঁসদা এবং টুডু-রা ছিল লোহার কর্মকার। এই গোত্রের লোকেরা নাকাড়া জাতীয় মাদল বাজনাতেও দক্ষ ছিল। আগে সাঁওতালরা নিজ নিজ গোত্রের জন্য চিহ্ন ব্যবহার করতো। বিশেষ করে গরু মহিষের গায়ে এরা নিজ গোত্রের চিহ্ন ব্যবহার করতো। ফলে তাদের গোত্রের প্রাণী খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল।
প্রতিটি গোত্রের রয়েছে নিজস্ব ধর্মীয় প্রতীক বা টোটেম। প্রতিটি গোত্রের রয়েছে বেশকিছু উপগোত্র। এ সকল উপগোত্রেরও রয়েছে পৃথক টোটেম। এই টোটেম নির্ভর ভাবনা থেকে এদের উপগোত্রে কিছু বিধিনিষেধ বা ট্যাবু মান্য করা হয়। নিচে গোত্র-ভিত্তিক পরিচয় তুলে ধরা হলো।
১. হাঁসদা গোত্র: সমাজে এদের প্রধান পরিচয় লোহার কর্মকার হিসেবে। এদের গোত্রীয় চিহ্ন এবং টোটেম ছিল হাঁস। এর উপগোত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য টোটেম– সিঁদুর, সাদা রঙ, বুনো ছত্রাক, বেনা ঘাস ইত্যাদি। এদের উপগোত্রগুলো হলো–
মূল উপগোত্র হাঁসদা। অন্যান্য উপগোত্রগুলো হলো– অক্ হাঁসদা, অবর হাঁসদা, কাঁড়া ওজা হাঁসদা, কাঁহু হাঁসদা, কুণ্ডা হাঁসদা, কুহি হাঁসদা, কেডওয়ার হাঁসদা, গাড় হাঁসদা, চিল বিন্দা হাঁসদা, জিহু হাঁসদা, নায়কে থিল হাঁসদা, পিট কাণ্ডা হাঁসদা, মাঝি থিল হাঁসদা, যুগী হাঁসদা, রকলুতুর হাঁসদা, রাতওয়ারা হাঁসদা, সলে হাঁসদা, সাঁক হাঁসদা, সাদা হাঁসদা,
২. কিস্কু: রাজ্য চালনায় সুদক্ষ ছিল। এই কারণে এদেরকে এই নামে অভিহিত করা হতো। কিস্কুদের চিহ্ন ছিল লাঠি। এদের টোটেম শঙ্খচিল। এর উপগোত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য টোটেম– কেয়াফুল, সাদা রঙঁ, শকুন, ঘোড়া, কাঠ বিড়াল এদের উপগোত্রগুলো হলো–
মূল উপগোত্র কিস্কু। অন্যান্য উপগোত্রগুলো হলো– অক্ কিস্কু, অবর কিস্কু, আড কিস্কু, আবে কিস্কু, কাডা কিস্কু, কাতওয়ার কিস্কু, গাড় কিস্কু, জিহু কিস্কু, টিকা কিস্কু, নায়কে মিল কিস্কু, পাটি কিস্কু, বাদার কিস্কু, বিটল কিস্কু, মাঝি মিল কিস্কু, লাৎ কিস্কু, রকলুতুর কিস্কু, লাহের কিস্কু, সন কিস্কু, সাদা কিস্কু।
৩. মুর্মু: পৌরিহত্য করতো বলে, এদেরকে এই নামে অভিহিত করা হতো। এদের চিহ্ন ছিল লম্বা মই। এদের টোটেম নীলগাই। এর উপগোত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য টোটেম– চাঁপাফুল, কুড়চিফুল, পলাশফুল, সাদা রং। এদের উপগোত্রগুলো হলো–
মূল উপগোত্র মুর্মু। অন্যান্য উপগোত্রগুলো হলো– অক্ মুর্মু, অবর মুর্মু, কাডা মুর্মু, কুড়াম মুর্মু, কোলহা মুর্মু, গাজার মুর্মু, চাপোয়ার মুর্মু, জিহু মুর্মু, টিকা বা তিলক মুর্মু, টুটি মুর্মু, টুরকু লুনাম মুর্মু, নায়কে মিল মুর্মু, পোণ্ডু মুর্মু, বাদাড় মুর্মু, পোয়ার মুর্মু, বিটল মুর্মু, বোওয়ারা মুর্মু, মাঝি মিল মুর্মু, যুগি মুর্মু, লাৎ মুর্মু, সাওয়ার মুর্মু, সাং মুর্মু, সাদা মুর্মু, হাণ্ড মুর্মু।
৪. মাণ্ডি: এদের অন্য নাম মাণ্ডি কিসাঁড়া বা কিলিপসাড়। এরা কৃষিকাজ করতো বলে এদেরকে এই নামে অভিহিত করা হতো। এদের চিহ্ন ছিল তীর। এদের টোটেম খেরদা নামক ঘাস। এর উপগোত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য টোটেম– পিয়াল গাছ, ধ গাছ, ঘোড়া, সোনা, মিরুবাহা নামক ফুল। এদের উপগোত্রগুলো হলো–
মূল উপগোত্র মাণ্ডি। অন্যান্য উপগোত্রগুলো হলো– অবর মাণ্ডি, কাডা মাণ্ডি, কুলমি মাণ্ডি, কেদওয়ার মাণ্ডি, গদা মাণ্ডি, জনক মাণ্ডি, টিকা মাণ্ডি, টুরকু লুখাম মাণ্ডি, থাণ্ডা যোগাও মাণ্ডি, থিরু মাণ্ডি, নায়কে মিল মাণ্ডি, পোণ্ড মাণ্ডি, বাবড়ে মাণ্ডি, বিটল মাণ্ডি, বুবু বেরেৎ মাণ্ডি, ভগো মাণ্ডি, মাঝি মিল মাণ্ডি, মাড় মাণ্ডি, যারা মাণ্ডি, যুগী মাণ্ডি, রকলতুর মাণ্ডি, রত মাণ্ডি, রূপা মাণ্ডি, লাকি মাণ্ডি, সাদা মাণ্ডি, সিদুপ মাণ্ডি, হেগেল মাণ্ডি।
৫. হেবব্রম: দেওয়ান-এর কাজ করতো। এদের চিহ্ন ছিল আঁকশি। এদের টোটেম সুপারি। এর উপগোত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য টোটেম– আমলকি গাছ, শকুন, তসর, শাঁখা, সাদা রং। এদের উপগোত্রগুলো হলো–
মূল উপগোত্র হেবব্রম। অন্যান্য উপগোত্রগুলো হলো– অক্ হেবব্রম, অবর হেবব্রম, কুওয়ার হেবব্রম,গাড় হেবব্রম, গুয়া হেবব্রম, গুয়া সরেন হেবব্রম, ঠাকুর হেবব্রম, চাষা হেবব্রম, দাতেলা হেবব্রম, নায়কে মিল হেবব্রম, বাদার হেবব্রম,বিটল হেবব্রম, মাঝি মিল হেবব্রম, লাহের হেবব্রম, সলে হেবব্রম, সাৎ হেবব্রম, সাদা হেবব্রম, হাট হেবব্রম, হাণ্ডি হেবব্রম।
৬. সরেন: সরেনরা একসময় সৈনিক হিসেবে কাজ করতো। সেই থেকে সরেন সৈনিক নামে এরা পরিচিতি লাভ করে। এদের গোত্রীয় চিহ্ন ছিল হাঁস। এদের টোটেম সপ্তর্ষিমণ্ডল। এর উপগোত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য টোটেম– আমলকি গাছ, শকুন, তসর, শাঁখা, সাদা রং, সিঁদুর। এদের উপগোত্রগুলো হলো–
মূল উপগোত্র সরেন। অন্যান্য উপগোত্রগুলো হলো– অক্ সরেন, অবর সরেন, খাণ্ডা (বাদর) সরেন, গুয়া সরেন, চেহেল সরেন, জিহু সরেন, টুরকু সরেন, দাঁতেলা সরেন, নায়কে মিল সরেন, পেন্ড সরেন, বাজি সরেন, বিটল সরেন, মাও সরেন, মাঝি সরেন, মাণ্ডা সরেন, মাল সরেন, যুগী সরেন, রকতুল সরেন, লুমাম সরেন, সাঁক সরেন, সাজা সরেন, সাদা সিদুপ সরেন, সিদুপ সরেন।
৭. বাস্কে: এদের মূল পেশা ছিল ব্যবসা। এদের চিহ্ন ছিল লাঙ্গল। এদের টোটেম পান্তাভাত। এর উপগোত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য টোটেম– কাঠ বিড়াল, সোনা, শকুন। এদের উপগোত্রগুলো হলো–
মূল উপগোত্র বাস্কে। অন্যান্য উপগোত্রগুলো হলো– অক্ বাস্কে, অবর বাস্কে, কুহি বাস্কে, কেদওয়ার বাস্কে, গাড় বাস্কে, জাহের বাস্কে, জিহু বাস্কে, ঠুন্টা বাস্কে, নায়কে মিল বাস্কে, পটম বাস্কে, বিটল বাস্কে, বিন্দার বাস্কে, ভিডি বাস্কে, মাঝি মিল বাস্কে, মুণ্ডা বাস্কে, লাৎ বাস্কে, সাদা বাস্কে, সারুগতা বাস্কে, সুড়ে বাস্কে, হেন্দে বাস্কে।
৮. বেসরা: এদের চিহ্ন ছিল ঢেরা। এদের টোটেম বাজপাখি। এর উপগোত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য টোটেম– কাক, শকুন, নিমকাঠি, হাঁড়িয়া। এদের উপগোত্রগুলো হলো–
মূল উপগোত্র বেসরা। অন্যান্য উপগোত্রগুলো হলো– অক্ বেসরা, অবর বেসরা, কাহু বেসরা, কুসি বেসরা, গাড় বেসরা, গুয়া বেসরা, নায়কে মিল বেসরা, বাস্কে বেসরা, বিন্দাড় বেসরা, মন বেসরা, মাঝি বেসরা, রকলুতুর বেসরা, লাৎ বেসরা, সাদা বেসরা।
৯. টুডু: এর ছিল লোহার কর্মকার। এদের চিহ্ন ছিল টুইডুদের 'বৃত্তের ভিতর কাটা'। এদের মূল গোত্রে টোটেম জানা যায় নি। এর উপগোত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য টোটেম– সোনা হাঁড়িয়া। এদের উপগোত্রগুলো হলো–
মূল উপগোত্র টুডু। অন্যান্য উপগোত্রগুলো হলো– অক্ টুডু, অবর টুডু, আঙ্গারিয়া টুডু, কুডাম টুডু, খরহারা টুডু, গাড় টুডু, চিমি টুডু, চুরুচ টুডু, তিলক টুডু, দাতেলা টুডু, নায়কে মিল টুডু, বাঁবড়ে টুডু, বাস্কে টুডু, বিটল টুডু, ভক্তা টুডু, মাঝি মিল টুডু, যুগী টুডু, লাৎ টুডু, সাদা টুডু।
১০. চঁড়ে: এদের টোটেম গিরগিটি। এর উপগোত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য টোটেম– শকুন ও সাদা রঙ। এদের উপগোত্রগুলো হলো–
মূল উপগোত্র চঁড়ে। অন্যান্য উপগোত্রগুলো হলো– অক্ চঁড়ে, অবর চঁড়ে, কাহু চঁড়ে, গাড় চঁড়ে, চপেয়ার চঁড়ে, চাচারহাৎ চঁড়ে, ঠাকুর চঁড়ে, নায়কে মিল চঁড়ে, নিজ চঁড়ে, বিটল চঁড়ে, বিন্দার চঁড়ে, মাঝি মিল চঁড়ে, লাৎ চঁড়ে, সাদা চঁড়ে, সিঁদুর চঁড়ে।

১১. পাউরিয়া: এদের টোটেম পায়রা। এর উপগোত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য টোটেম– শকুন কাঠ বিড়াল ও সাদা রঙ। এদের উপগোত্রগুলো হলো–
মূল উপগোত্র পাউড়িয়া। অন্যান্য উপগোত্রগুলো হলো– অক্ পাউড়িয়া, অবর পাউড়িয়া, গাড় পাউড়িয়া, চাউরিয়া পাউড়িয়া, নায়কে মিল পাউড়িয়া, নিজ পাউড়িয়া, পটম পাউড়িয়া, বিটল পাউড়িয়া, ভিতার পাউড়িয়া, মাঝি মিল পাউড়িয়া, মুণ্ডা পাউড়িয়া, লাৎ পাউড়িয়া, সাদা পাউড়িয়া, সিদুপ পাউড়িয়া, সোনা পাউড়িয়া।
১২. বেদেয়া: এই গোত্রের নাম কিছু বই পত্রে পাওয়া যায়। কিন্তু এদের সন্ধান পাওয়া যায় না। সম্ভবত এরা অন্য কোনো গোত্রের সাথে মিশে গেছে।
যেমন
সাঁওতালদের মধ্যে টোটেম বিশ্বাস প্রচলিত আছে। টোটেম-এর উপর ভিত্তি করে সাঁওতালদের গোত্রে নানা ধরনের প্রাণী হত্যা বা আচরণগত ট্যাবু মান্য করে। প্রতিটি গোত্র তাদের পূর্বপুরুষ কিংবা গাছপালা, জীবজন্তু ও পশুপাখী ইত্যাদি নামে পরিচিত। হাঁসদা গোত্রের লোকের বিশ্বাস তাদের উদ্ভব ঘটেছে হাঁস থেকে। তাই হাঁসদা গোত্রের সাওতালদের হাঁস ভক্ষণ নিষিদ্ধ। আবার সরেন গোত্রের উৎপত্তি হরিণ থেকে তাই তাদের হরিণের মাংস খাওয়া নিষেধ। আবার যে সকল গোত্রে সাদা রঙ টোটেম। তাদের মেয়েরা শাঁখা পড়ে না, সাদা মুরগী খায় না। যাদের ঘোড়া টোটেম। তারা ঘোড়া হত্যা করে না, ঘোড়া স্পর্শ করে না। দূর থেকে ঘোড়াকে প্রণাম করে।


ভাষা ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয়
ভাষা এবং নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যে সাঁওতালরা বাংলাদেশের অন্য অনেক নৃগোষ্ঠীর মত মঙ্গোলীয় গোত্রের নয়। এরা সাঁওতালী ভাষায় কথা বলে যে ভাষাটি অস্ট্রো-এশীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। এদের মধ্যম গড়নের আকৃতির শরীর, ত্বকের গাঢ় রঙ, চ্যাপ্টা নাক, পুরু ঠোঁট এবং কোঁকড়ানো চুল তাদের অস্ট্রেশীয় নৃতাত্ত্বিক উৎস নির্দেশ করে যে গোষ্ঠির মানুষ ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিল দ্রাবিড়দেরও আগে অস্ট্রেলিয়া এবং সন্নিহিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপমালা থেকে। দেহ কাঠামোর বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে সাঁওতালদেরকে বিশুদ্ধ প্রাক-দ্রাবিড়ীয় গোষ্ঠীর প্রতিনিধি বলে মনে করা হয়। তবে অস্ট্রেলীয় কৌমগুলোর সাথে সাঁওতালদের বেশ মিল লক্ষ করা যায় বলে তাদেরকে আদি অস্ট্রেলীয় বলা হয়। ধারণা করা হয় সুঁতার (Soontar) কথাটি থেকে সাঁওতাল শব্দের উদ্ভব(ভুল ব্যাখ্যা )।
অন্য একটি সুত্র হতে পাওয়া তথ্য মতেঃ-
প্রায় ৬৫ হাজার বৎসর আগে, আফ্রিকা থেকে নরগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ ধীরে ধীরে অন্যান্য মহাদেশের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। এই দলটি প্রোটো-অস্ট্রালয়েড নামে বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন। এদের গায়ের রং কালো, নাক অনুচ্চ, চুল কালো ও কুঞ্চিত, উচ্চতা মাঝারি। প্রোটো-অস্ট্রালয়েড মানব হিসেবে এদের সাথে বিশেষ নৃতাত্ত্বিক ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে মুণ্ডা ও মালপাহাড়িদের সাথে। আবার দ্রাবিড় সংস্কৃতিরও কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য এদের ভিতরে পাওয়া যায়।

এদের ভাষার নাম সাঁওতালি। উল্লেখ্য এই ভাষাটি অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবার-এর অন্তরর্গত। সাধারণভাবে এদের ভাষাকে অস্ট্রিক ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অস্ট্রিক ভাষাভাষী মানুষদের একটি বড় অংশ ভারতবর্ষের প্রবেশ করেছিল খাইবার বোলান গিরিপথ দিয়ে। গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডাস-এর বিবরণ থেকে জানা যায়, সিন্ধু ও বেলুচিস্থানের কুটির শিল্পীদের বলা হতো সান্তাল। এই অঞ্চলে কিস্কু এবং মাণ্ডি গোষ্ঠীর লোকের সমভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠার কারণে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই সময় চাম্পা অঞ্চল ত্যাগ করে সান্তালরা উত্তর ও পূর্ব ভারতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সাঁওতালরা ভারত-উপমহাদেশের কৃষির পত্তন ঘটিয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন।
দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল
তথ্যসূত্র :
https://bn.wikipedia.org/wiki
বাংলাপেডিয়া
উত্তরবঙ্গের সাঁওতাল জাতি। দুলাল দাস।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪৪
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×