somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অন্যরকম প্রতিরোধ

২৪ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





টিভিতে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের উপর ভিত্তি করে জমজমাট একটা সিনেমা চলছে। সাংসারিক হাজার ব্যস্ততার মাঝেও কিছু অংশ রূপাও দেখছিল আর সকলের সাথে।
আহা!
নায়িকার সেকি দূর্গতি বলে বোঝানো যাবে না। রূপার ইচ্ছে ছিল ছবিটা শেষ অবধি দেখা কিন্তু রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে বলে তাকে রান্নাঘরে খাবার বানানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হলো।
তবে তার কান ছিল টিভির স্পীকারে আর ড্রইং রুমে। রান্নাঘর থেকে সে শুনতে পারছে তার শ্বাশুড়ির উত্তেজিত নানা কথাবার্তা। মাঝে মাঝে হাসিও আসছে তার ওদের উত্তেজিত ভাবসাব দেখে।নায়িকার পক্ষে জোহরা বেগম স্ক্রীনের এপারে বসে তুমুল ঝগড়া করছেন। তিনি নায়িকার মায়ের প্রতিনিধি হয়েছেন যেন!
ছবির মাঝামাঝি দৃশ্যে নায়িকাকে যখন গ্যাসের আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে তখন তিনি এবং রূপার একমাত্র ননদ জবাও তীব্র উত্তেজনায় ছটফট করতে লাগলেন।
ইশশ!
কী নির্মম!
কীভাবে পারে এত নিষ্ঠুর হতে মানুষ?
এই ধরনের নানান শব্দের বন্যা বয়ে যেতে লাগলো ড্রইং রুমে।
হঠাৎ সিনেমাটির চরম মুহূর্তে কেবল লাইনে কি একটা ঝামেলার কারণে চ্যানেলে সমস্যা দেখা দিলো। জোহরা বেগম আর জবার সেই মুহুর্তের ভাব দেখে মনে হলো পারলে টিভিটা এখনি আছড়ে ভাঙে তারা।
যাহোক রূপা ততক্ষণে টেবিলে খাবার পরিবেশন করেছে। কয়েক পদের রান্না, সবাই টেবিলে খেতে এল।এক ফাঁকে জবা তার একমাত্র ভাই সুজনকে ডেকে নিল।
রূপার এখন বসা নিষেধ সে পরে খাবে,সবার খাওয়া শেষে। ভাত বেড়ে দেওয়া, তরকারীর পাত্র এগিয়ে দেওয়া পানির গ্লাসে পানি ঢালা এইসব টুকটাক কাজ করছিল রূপা। খেতে খেতে হঠাৎ রূপার শ্বাশুড়িমা তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-বৌমা তোমাকে একটা কথা বলেছিলাম সেদিন মনে আছে তো নাকি ভুলে বসে আছো?
রূপা চুপ করে রইলো। আসলে এই মুহুর্তে কি বলবে বা কি উত্তর দেবে সে বুঝতে পারছে না। সে ভালো করেই জানে তার শ্বাশুড়ি কিসের ইঙ্গিত করছেন।
কিছুটা সময় নিয়ে জোহরা বেগম আবার তাগাদা দেন
- কি হলো কথা বলছো না কেন?
- মা আমি বাবাকে বলেছি।
-তা কবে দিতে পারবেন টাকাটা?
- মা গ্রামে এখন তো ডাল সিজন,কারো হাতেই তেমন পয়সা নেই তাই বাবা জমি বেঁচতে পারছেন না । খরিদ্দার পেতে একটু সময় লাগবে বলেছেন।
-ঢং, ওই কটি টাকার জন্য আবার জমি বেঁচা লাগে নাকি।
- মা এক লক্ষ টাকা আপনাদের কাছে সামান্য হতে পারে আমার বাবার কাছে সেটা মোটেও সামান্য নয়।
- আর ফকিরগিরি করো না তো। কত আর নিচে নামবে।
- যতটুকু আপনারা নিচে নামাবেন।
- কী আমার মুখে মুখে তর্ক? যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। অসভ্য, বেয়াদব। বাপ মা সহবত কিছু শেখায়নি নাকি?
- মা আমাকে যা বলার বলুন এর মধ্যে আমার বাবা মাকে টানছেন কেন?
সুজন এতক্ষণ চুপচাপ খাচ্ছিলো চট করে উঠে এসে বলা নেই কওয়া নেই রূপাকে দমাদম গুটিকয়েক চড় কষে দিল।
বলল,
-শুধু মুখে মাখে তর্ক না? এই সব শিখায়েছে তোর বাপ মা?
তৎক্ষনাৎদেরি না করে রূপাও ভাতের চামচ তুলে নিয়ে সজোরে স্বামীর পিঠে দুচার ঘা বসিয়ে দিল কায়দা মত।
রূপা আগেই ঠিক করে রেখেছিল এ বাড়িতে তার উপর হওয়া অন্যায়গুলো সে আর মেনে নেবে না। সব কিছুর একটা সীমা আছে।
এদিকে প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেও দ্রুত একজোট হয়ে রূপার স্বামী শ্বাশুড়ি ননদ সবাই তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
রূপা চিৎকার দিয়ে বলল,
- আসো মারতে আসো ওই দেখ ফেসবুক লাইভ চলছে। প্রতি দিন নির্যাতন করে পার পেয়ে যাও।আজ মোবাইল সেট করে রেখেছি। তোমাদের সকল অপকর্ম এখন সারা দুনিয়া দেখছে।
এ যেন আগুনে পানি ঢালা হলো।মুহুর্তে কেন্নোর মত গুটিয়ে ঘর ছাড়লো সকলেই।
সমাপ্ত
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:১৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×