somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ আজ আমার বিয়ে

১২ ই মার্চ, ২০২২ ভোর ৬:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল। হাজার হোক বিয়ে বলে কথা। একটা চাপা টেনশন সবসময় মনের মধ্যে কাজ করছে কয়েকদিন থেকেই। গতকাল বিকালে হলুদের অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার পর তার সাথে যুক্ত হয়েছে অন্য মাত্রার এক অনুভূতি। কষ্ট মিশ্রিত মন খারাপ করা বিষন্নতা ছুঁয়ে যাচ্ছে বারবার। ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সবকিছু। কি নেই কি নেই ভাব একটা।ক্ষণে ক্ষণে চোখে জলও চলে আসছে। এমন অবস্থায় নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে। কি সব ছেলেমানুষী করছি আমি এই সব? কেন করছি? না না এতদুর অগ্রসর হওয়ার পর অন্য কোন চিন্তা কিছুতেই মনে স্থান দেওয়া যাবে না।
কিন্তু জুঁই কাল হলুদের অনুষ্ঠানে কেন এলো? কিছু কি বলতে চেয়েছিল? হিসাব মিলছে না কিছুতেই।হলুদের অনুষ্ঠান ঠিকঠাক চলছিল বলা নেই কওয়া নেই জুঁই সোজা এসে হলুদ ছুঁইয়ে দিল আমার দুই গালে।কানেকানে বলল সুখী হও,ভালো থেকো। এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা।সব কেমন যেন ওলট পালট হয়ে গেল আমার।ওর কোমল স্পর্শ এতদিনের জমানো কষ্ট দুঃখ অভিমানগুলো ভেঙে চুরে বানের জলে ভাসিয়ে নিয়ে গেল মুহুর্তেই। ভালোবাসা ফিরে এলো আবার।
কিন্তু এখন তো আমি অন্য একজনের কাছে দায়বদ্ধ।তাহলে জুৃঁইয়ের জন্য আবার এত উতলা হচ্ছি কেন?এতো পাপ। আমার কর্মফল মহুয়া কেন ভোগ করবে?তাকে তো কিছুতেই ঠকানো যাবে না।যদি আমি বিবেক বোধ সম্পন্ন মানুষ হই। তাহলে.... জুঁই কি চায় আমার কাছে? নাকি এমনিই এসেছিল।কঠিন অবস্থা।
দীঘির পাড়ে দাঁতন দিয়ে দাঁত মাঁজতে মাঁজতে নানা চিন্তা আসছে মনে। আমি ভালো করে জানি এসব চিন্তা করা এখন অবান্তর। জুঁই এখন ভালো আছে। সে এবং তার ক্যারিয়ার আরও দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে সামনের দিনগুলোতে সে বিষয়ে কারোও দ্বিমত নেই কারণ সে অসাধারণ মেধাবী ছাত্রী।
ভাবনায় ছন্দ পতন হলো, পেছন ফিরতে বাধ্য হলাম।ছোট বোন তুলি নাচতে নাচতে আসছে। সে এই সাত সকালে হাতে মেহেদী লাগিয়েছে।গতকাল কি করছিল কে জানে?দুর থেকে মিহি গলায় ডাকছে সে
- দাদা ও দাদা বাড়ি এসো। তাড়াতাড়ি.....
- কেন?
- একজন অচেনা ভদ্র মহিলা তোকে খুঁজছে।
- আমাকে? কেন?
- জানি না তো। বলল জরুরী।আসো তাড়াতাড়ি আসো।
(২)
ভদ্রমহিলাকে আমি এর আগে কোনদিন দেখি নি তিনি মাথা নিচু করে বসার ঘরে চুপচাপ বসে আছেন।আমার পায়ের শব্দে মাথা উচু করে আমার দিকে তাকালেন।একদমই অচেনা অজানা একজন মানুষ হুট করে আমার খোঁজে আমার বাসায় চলে আসছে তাও আমার বিয়ের দিন ব্যপারটা অদ্ভুত মনে হলো আমার কাছে।এই মহিলা কি চায় কে জানে। পরে আসতে বলবো কি না ভাবছি এমন সময় মহিলাটি উঠে আমার দিকে এগিয়ে এলো।
- কেমন আছো বাপজান? শরীর ভালো?
- জ্বী ভালো।
তারপর আশেপাশে তাকিয়ে কেমন যেন অস্বস্তি চোখে বললেন
- তোমার সাথে একটু কথা আছে।কথাটা জরুরি।
- আজই বলা লাগবে? একটু ব্যস্ত ছিলাম মানে আজ আমার....
- হ্যাঁ আজই এক্ষুনি বলা লাগবে। না হলে সমস্যা বাড়বে। আমি বেশি সময় নেব না বাবা। দশ মিনিট দশ মিনিট সময় হবে?
- বলুন।
- একটু আলাদা জায়গায় কথা বলি। ব্যপারটা গোপনীয় আবার গোপনীয় না কিন্তু আমি চাই না এটা নিয়ে লোকের মুখে মুখে আলোচনা হোক।
ভদ্রমহিলার নাটকীয় কথাবার্তা আমার পছন্দ না হলেও উনাকে আমার রুমে নিয়ে এলাম।

(৩)
উথাল-পাতাল জোছনায় আমি তিনতলার নিঃসঙ্গ ছাদে একাকী বসে আছি।কেন বসে আছি আমি জানি না। এখন আমার জোছনায় বসে থাকার কথা না বসে থাকার কথা বাসর ঘরে বউয়ের পাশে কিন্তু আশ্চর্য এক ঘটনার কারণে আমি জোছনায় বসে আছি।বাড়ি ভর্তি লোক ছিল আজ সকালেও দুপুরের পর থেকে সবাই ফিরে গেছে একে একে। আনন্দ ফুর্তি খাওয়া আড্ডা কত স্বপ্ন নিয়েই না এসেছিল তারা। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কম বেশি সবাই আহত হয়েছে । আমিও সেই ঘটনার পর থেকে আর ঘরের মধ্যে বাইরে আসিনি। জীবনটা এমন কেন কে জানে? বারবার সাজানোর চেষ্টা করি বারবার হোটচ খাই। যা চাই তাই হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। এ জগতে কোন কিছু আমারা নয়। আমিও কারও নই।শুরু হয়েছিল জন্ম থেকে যেদিন আমার মা আর আমার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছিল কিছু দুষ্ট লোকের কারণে।
কোথায় যেন কিশোর কুমারের একটা গান বাজছে ......
"কারও কেউ নইকো আমি কেউ আমার নয়। কোন নাম নেইকো আমার শোন মহাশয়.... "
আমিও কারো নই। ডাক ছেড়ে মা মা বলে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
হঠাৎ পিঠে কার যেন হাতের স্পর্শ পেলাম। কিছুটা চমকে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতে অবাক হলাম। অস্ফুট স্বরে বললাম
-জুঁই তুমি?
- হ্যাঁ আমি।
- এত রাতে কি মনে করে?
- নিজের মানুষের কাছে আসবো তার আবার রাত আর দিন কি!
- কিন্তু তোমার ক্যারিয়ার?
- ভালোবাসার কাছে ক্যারিয়ার খুব কি গুরুত্বপূর্ণ কিছু? এখন আর আমার কাছে তেমনটা মনে হয় না।তোমার বিরহ তোমার বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। আর এখন এমন পরিস্থিতিতে তোমার পাশে থাকা নিজের দায়িত্ব বলে মনে করছি।
- শুধু দায়িত্ব?
- ওভাবে বললে কষ্ট পাই তুমি কি আমাকে কষ্ট দিবা নাকি ভুলবোঝাবুঝি অবসান ঘটিয়ে কাছে টেনে নিবা।
- করুনা করছো।
- যাকে ভালোবাসি তাকে করুনা করবো কেন? অনেক সময় মানুষ অনেক সিদ্ধান্ত নেয় আবার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরেও আসে। সরে আসে নানাবিধ কারনে সিদ্ধান্ত নেয় ও নানাবিধ কারণে। আসলে মানুষের মন রহস্যময়। সেখানে কখন যে কি ঘটে কেউ জানে না। তবে আমি তোমাকে চাই খুব করে চাই এটা নিশ্চিত । নিজের স্বার্থ ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও চাই এ কদিনে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। কি করবো বল মনকে কিছুতেই বশে আনতে পারলাম না যে।এখানে আমার কি দোষ?
-দেখো পরে কিন্তু আর ফেরা সম্ভব নাও হতে পারে।
- আর বেশি কথা বললে কিন্তু খবর আছে। তুমি তো এমন জিলিপির প্যাঁচের মত ছিলে না। যাও বাদ দাও, একটা কাজ কর তো।
- কি?
- আমার কপালে হাত দিয়ে দেখ ।
- কেন কপালে হাত দিতে হবে কেন?
-দিবে তো।
আমি জুঁইয়ের কপালে হাত দিয়ে চমকে গেলাম
- একি! তোমার তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। কখন থেকে এমন হল?
- গত কদিন থেকেই জ্বর গতকাল রাত থেকে একটু বেশি। চিন্তায় চিন্তায় মাথা খারাপ হবার দশা।কি বলবো তোমাকে। তোমাকে না করে দেওয়ার শাস্তি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। বলেছিই তো।
- কি জানি।
- তোমাকে যে ভালোবাসি সত্যি ভালোবাসি এখনও কি বিশ্বাস হচ্ছে না?
- কিছুটা।
- মারবো এক কিল
- আবার যদি না করে দাও।তুমি যা খাম খেয়ালী।
- আবার একই ভুল কোনদিন ই করবো না। ন্যাড়া একবারই বেল তলায় যায়।
- যায় তো।
- হু যায়।
চল তাহলে আবারও যাই। ততক্ষণে গান বদলে গেছে। এখন বাজছে,
তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর হাসি আর গানে ভরে তুলবো। কত কথা দুজনে বলবো।আমি জুঁইয়ের হাতটা শক্ত করে ধরলাম।

পরিশিষ্ট
------------
প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছু গল্প থাকে যা হঠাৎ সামনে এসে সম্পর্কের মাঝে দেয়াল হয়ে দাড়ায়। আমার এক বছরের মাথায় আমার গর্ভধারিণী মা খুনের দায়ে জেল খাটে। জেল থেকে ছাড়া পায় যখন ততদিনে আমার বাবা বিয়ে করে ঘোর সংসারী।মা ও লজ্জা ঘৃণায় আর ফেরেনি এ মুখো।...
গতকাল যিনি এসেছিলেন তিনি ছিলেন আমার মায়ের দুর সম্পর্কের বোন। জেল পরবর্তী জীবনে আমার মা উনার আশ্রয়েই ছিলেন।মায়ের আবার বিয়ে হয় উনার প্রচেষ্টায়।মা ভালো ই ছিলেন সেই সংসারে। পরবর্তীতে আমাকে আর খোঁজ নেন নি কেন সেটাই আমার কাছে এক বিষ্ময় ।মায়ের দ্বিতীয় সংসারে দুইটি সন্তান হয়। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে।মেয়েটি জন্মাবার পরে মা মারা যান।সেই মেয়েটি গিয়ে পড়ে তার এক ফুফুর কাছে সেখানেই বড় হয়। সেই মেয়েটির নাম মহুয়া। মহুয়ার সাথেই আমার বিয়ে হবার কথা ছিল। সম্মন্ধটা ছোট চাচা এনেছিল। অজান্তে বড় একটা ভুল হতে যাচ্ছিল।আমি এসব ব্যপারে তেমন কিছু ই জানতাম না। জুঁই এর প্রত্যাখান আমাকে পাগল করে দিয়েছিল।যাহোক সব জানার পর আমি বাবা আর ছোট চাচাকে বিষয়টি জানাই। বিয়েটা ভেঙে যায়। তৎক্ষনাৎ মেয়ে দেখে বিয়ের কথা হয় আমি কঠোর ভাবে নিষেধ করে দেই। আসলে আমি এত ঘটনার দায়ভার বয়ে নিতে পারছিলাম না। একটু সময় নিতে চাচ্ছিলাম।
তবে আর যাই হোক বিয়েটা ভেঙে ভালোই হয়েছে আমি জুঁইকে ফিরে পেয়েছি। একেই বলে বুঝি অনিষ্ট থেকে ইষ্ট। এখন বাসায় কি করে জানাবো সেই উপায় বের করতে হবে। সব ভালো যার শেষ ভালো তার।
সমাপ্ত

©রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:৪৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাস্থানের বিছিস্ট এনছিপি নেতা হাবদাল্লা।ভারতের সিস্টার না হলেও নিজেদের সিস্টারদের ..।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:১০



আপাতত সেভেন সিস্টার পৃথক না করতে পারলেও । সিক্স সিস্টার অত্যন্ত সফলতার সাথে সার্জারি করে পৃথক করে ফেলেছেন । এই কারণে আপনারা সবাই রাজুতে চলে আসুন। উনি অজাতিদের উদ্দেশ্যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

×