somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৃতি ও বিচার ......

১০ ই মে, ২০২০ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাবা আজকে আমরা খাইতে পাবো ? খুব খিদা পাইছে বাবা আজকে নিয়া আইসো কিছু। সাইমার মা তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে অনেক কিছুই
হয়ত বলবে কিন্তু কিছুই বলতে পারলোনা, খাইরূল তার বউ এর দিকে তাকিয়ে, দুজনার চোখ ছলছল করছে চোখের পানি পরতে গিয়েও হয়ত পরলোনা । তারা শিখে গেছে কিভাবে পানি আটকায় রাখতে হয় ।

অজপাড়াগায়ে তাদের বাস , খায়রূল দিন মজুর যা কাজ পাই সেটাই করে , নিদৃষ্ট কোন কাজ নেই, ছোট্ট একটা টূপরি তে তিনজন থাকে ।
১৩ বছরের সঃসার ,মেয়ের বয়স ১০, শেষ ৭-৮ মাস আগে মেয়ে ও তার বউ এর জন্য কাপড় কিনেছিল । ঠিকমত খাবার জোটেনা আবার কাপড় । শেষ তিনদিন আগে মাটি কাটার কাজ করে ৪০ টাকা পেয়েছিল তা দিয়ে কোনরকম একবেলা খেয়ে তিনজন বেচে আছে ।

রাস্তাদিয়ে হাটতে হাটতে কি সব চিন্তা করতে করতে হঠাৎ দেখল একটা সাদা কালারের গাড়ি, কয়েকজন জমায়েত হয়েছে সেখানে, সেও গেল । একজন কোটটাই পরা লোক কি যেন বলছে গাছ কাটার ব্যাপারে আর ১০০ টাকা । সে বোঝার চেষ্টা করলো , পাশে থাকা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো কি হইছে , সে বললো ঐ উচু টিলার নিচের গাছ গুলো কেটে দিতে হবে তাও রাতের বেলায় ।
খায়রূল কিছু না বুঝেই রাজি হলো পেটে ক্ষিদাতো । সে আরো কাছে গিয়ে বললো মালিক আমি কাটবো গাছ । অনেকেই তাকে অনেক
কিছু বলতে চাইলো কিন্তু সে কারো কথায় শুনলোনা রাজি হলো সাথে সাথে নগদ ১০০ টাকা পেলো তার সাথে আরো দুইজন যোগ দিল

১০০ টাকা সে তো মহা খুশি, বাড়িতে তিন দিন পর খাবার খাবে তার পরিবার তবুও কৌতুহুলি মন তাদের দুইজন কে জিজ্ঞাসা করলো অন্যরা চলে গেলো কেন? কেন তুমি কিছু জানোনা টিলার ওখানকার গাছ গুলোতো সব সরকারি আর যারা আমাদের টাকা দিয়ে গেলো তারা
দালাল চক্র আমরা গাছ কেটে দিব তারা এই গাছের কাঠগুলো অনেক দামে বিক্রয় করবে আর গাছ কাটতে গিয়ে ধরা পড়লে তারা আমাদের চিনবেনা সম্পূন' ঝুকি আমাদের । খায়রূল ও আচ্ছা তাহলে তোমরা রাজি হলে কেন ? বাকি দুজন তুমিও যেমন ঠেকায় পড়ে ঠিক আমরাও এখন যাও রাতে দেখা হবে ।

সাদা গাড়ির ভেতর একজন বসেছিলো তাকে কেও খেয়াল করে নি । হাসান সাহেব তার কোটটাই পড়া ম্যানেজারকে জিজ্ঞাস করলো ওরা পারবেতো ..ম্যানেজার জি স্যার তারা পারবে - অভাবী লোক স্যার পেটের দায়ে ঠিকিই পাড়বে । হাসান সাহেব- দেখো : তুমিতো আগেই তাদের টাকা দিয়ে দিলে ।

বাসায় খাবার এসেছে, সবাই আজ পেট পূরে খাবে । খেতে খেতে মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো বাবা তুমি কি নতুন কাজ পাইসো , হ রে মা
সায়মা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো, সায়মার মা জিজ্ঞাসা করলো কি গো কিসের কাজ আর কাজ করার আগেই টাকা দিয়া গেল । গাছ কাটার কাজ, ঐ যে উচু টিলাডা আছেনা ঐখান কার গাছ। সায়মার মা কি কও ঐগুলি না সরকারি গাছ, কিছুদিন আগে কারে যেন ধইরা নিয়া গেল আর মাইকে কি সব শাস্তির কথা কইয়া গেল, দেখো কোন বিপদ হইবনাতো । খায়রূল রেগে গিয়ে বললো চুপ কর খালি অলক্ষনে কথা একদম চুপ ।

রাতের বেলায় খায়রুল তার মেয়ের মাথায় হাত বুলায়ে, সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল , সায়মার মা কইল সাবধানে থাইক । খায়রুল ..হ হ

সবাই আইসা পরছে আরো ৩-৪ জন আছে , রাস্তায় ট্রাক দারায় র‌ইছে হয়ত গাছ কাটা হলে সব নিয়া ট্রাকে উঠাইয়া লইয়া যাইব ।
গাছ কাটা শুরু হলো কিছুক্ষন পর হঠাৎ বেশ হাওয়া শুরু হইলো সাথে বৃষ্টি তারপরও গাছ কাটা থামেনি । বেশ কয়েকটা গাছ কাটার পর
খায়রুল একটা গাছ কাটতে গেলে পাখি চিল্লায় উঠলো, সে যতবার গাছে কুড়াল এর কপ বসায় ততবারিই গাছে থাকা পাখি চিৎকার দিয়ে উঠে। তার বিবেকে একবার বাধা দিলেও সে থামেনি কেটে ফেলছে গাছ। অনেক গুলো গাছ কাটা হলে সবাই মিলে তা ট্রাকে উঠিয়ে দিয়ে যে যার মত বাসায় আইসা পড়লো ।

তখন রাত অনেক গভীর, বাইরে বেশ জরেসরে বৃষ্টি ও সাথে ঝর হচ্ছে , সায়মার মা চিন্তিত কখন আইব তার স্বামী। দরজায় হঠাৎ - সায়মার মা দরজা খোল। সে তারহুড়া করে দরজা খুললো দেখে খায়রুল ভিজে একাকার

ভোরের আগে (আযান দেয় এমন সময়) বৃষ্টি আর ঝড় এর গতি আরো বেড়ে গেলো , ঘরের ভেতর অনেক যায়গা দিয়ে পানি পড়ছে । সায়মা ঘুম থেকে জেগে গেছে সে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে আছে । বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টির সাথে সাথে মেঘ চম্কাচ্ছে সাথে বাজ বা ঠাডা পড়ছে , খায়রুল বলল পরিস্থিতি ভালো নাগো সায়মার মা , আমাদের স্কুলের দিকে যাওয়ন লাগবো । সায়মার মা কইল তুমি তোমার বেটিরে লই্য়া বাইর হও আমি কিছু দরকারি জিনিস লইয়া বাইর হইতাছি। খায়রুল তার মেয়েরে নিয়ে বাহির হইল আর একটু সামনে আগাইল ..আর চিৎকার দিল কই বাইর হও কিন্তু ঐ সময় বাজ পড়ে ঘর তছনছ হইয়া গেল আর একবার একটা চিৎকার শোনা গেলো ওমাঃ এর পর আর কোন আওয়াজ পাওয়া যায়নি। খায়রুল কি করবে কিছুই বুঝতে পাড়লনা সে ও তার মেয়ে ডাক দিল দজনেই ডাক দিল কোন সাড়া শব্দ নাই , আবারো একটা বাজ গাছের উপর পড়ে গাছ ভেঙ্গে ঐ টুপড়ির উপরেই পড়ল। খায়রুল ও তার মেয়ে কাদতে কাদতে স্কুলের দিকে দৌড়াতে লাগলো ।

সকাল বেলায় বৃষ্টি থামার পর খায়রুল ও তার মেয়ে সায়মা যলদি বাড়ির দিকে রওনা দিল, স্কুলের পথ টিলার উপরেই, টিলা দিয়ে নামার সময় সায়মা খেয়াল কড়ল তিনটা পাখি একটা বড় দুইটা বাচ্চা, দুইটা কোন নড়াচড়া করছে না, একটা ছোট বাচ্চা বেচে আছে আর সে চেও চেও করছে । সায়মা বলল বাবা দেখ, খায়রুল খেয়াল করেও যেন কড়ল না বলল চল আগে বাড়ি যাই ।

বাড়ি এসে দেখে পুড়ো বাড়ি লন্ড-ভন্ড হয়ে গেছে আর একটা গাছ সায়মার মায়ের উপর পড়ে আছে । খায়রুল কাদতে কাদতে গিয়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে থাকা সায়মার মাকে বার করার চেষ্টা করলো এবং এও বুঝলো যে সে আর বেচে নেই ..

হাসান সাহেব গাছের ব্যবসায় করতে গিয়ে সরকারের কাছে ধরা পড়েছে ....আর সেই ঝড়ের ঘটনার কিছুদিন পর তার একমাত্র বাচ্চার ক্যান্সার ধরা পড়েছে । ডাক্তার বলেছে তার বাচার সম্ভাবনা নাই ........




বিশেষ দ্রষ্টব্য : এইটা আমার জীবনের প্রথম গল্প ...ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২০ রাত ১:০৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×