আজ পহেলা বৈশাখ।বহুবছর পর আজ খুব ইচ্ছে করছে রমনা পার্কে যেতে।রমনায় খুব রঙিন করে উত্‍সব পালন করা হয়।হ্যাঁ শেষমেষ তেমন কিছু না ভেবেই আমি রওনা হলাম।জীবনে বয়সের এই পঞ্চাশের কোটায় এসে আবারো নতুন করে যৌবন ফিরে পেতে ইচ্ছে করে।
কত যুবক যুবতী একসাথে উত্‍সবে এসেছে।হয়ত এটাই বিশ্বাস,এটাই ভালোবাসা।তবে উঠতি বয়সের প্রেমটা একটু বয়স হলেই নিজের কাছেই আদিখ্যেতা মনে হয়।এই ভালোবাসাকে ধরে রাখার একটা সাধনা থাকতে হয়।

আমি পার্কের ছাতার মতো একটা ছাওনিতে একা বসে আছি।দেখছি সেই রাস উত্‍সবের মাতামাতি।
হঠাত খেয়াল করলাম একটা আঠারো উনিশ বছরের মেয়ে আমাকে লক্ষ্য করছে।তার পাশেই প্রায় সমবয়সী একটা ছেলে।আবারো খেয়াল করলাম মেয়েটা আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।
এখন আমার সামনেই দাড়িয়ে।খুব সুন্দর করে সেঁজেছে মেয়েটা।কিন্তু কেন জানি মনে হলো সাঁজটা আমার খুব পরিচিত।কবে যেন কোথায় দেখেছিলাম।মেয়েটা চোখ দেখে মনে হলো আমার হাজার বছরের পরিচিত কেউ আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি হঠাত বলল,স্যার ,একটা অটোগ্রাফ প্লিজ।পাশেই দাড়িয়ে আছে ওর বন্ধুমত ছেলেটা।
আমি অটোগ্রাফ দিতে রাজি হলে মেয়েটি বলল,সরি স্যার আসলে আজ তো কাছে কোন ডায়েরী বা খাতা নেই।আসলে আপনার সাথে দেখা হবে এ আমি ভাবিনি।কিন্তু আপনাকে একটিবার দেখার খুব ইচ্ছে ছিল আমার।
স্যার,অটোগ্রাফটা যদি হাতেই দেন তো, বলেই মেয়েটা এমন মুখ করল যেন খুব অপরাধের কিছু একটা করেছে।

এরপর অটোগ্রাফ দিতে সময় মেয়েটা হঠাত বলল,স্যার আপনার ॥নয়নমেঘের জল॥বইটা আমার খুব ভালো লেগেছে।আমি কেঁদেছিও খুব।
আমি শুধু চুপ হয়ে ওর কথা শুনছি।
আবারো বলল,আপনার বই যখনই পড়ি তখন ই আমার মা বলে আপনি নাকি খুব ভালো মানুষ।জানেন স্যার বইমেলায় গেলে মা বলে প্রথমেই আপনার বই কিনতে।মা আপনার একেকটা বই অনেকদিন সময় নিয়ে পড়েন।আর কি সব যেন ভাবেন।
আমি এতক্ষণে কঠিন রকম অবাক হয়ে গেলাম।
বললাম,কি বলছ এসব,তোমার মা কি আমায় চেনে নাকি?আমি খুব ভালো সেটা উনি জানলেন কি ভাবে?
সে আমি জানিনা স্যার।তবে আজ যখন মাকে বলব,আপনার সাথে দেখা হয়েছে মা খুশিতে না জানি কতই না প্রশ্ন করবেন।
আমি বললাম,যদি কিছু না মনে কর মা একটা কথা বলতো।
কি স্যার?
তোমার মার নাম কি?
কিছুক্ষণ থেমে থাকার পর বলল,মৃন্ময়িনী।
এতক্ষণে আমার আর বোঝার বাকি রইলনা।শুধু অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মেয়েটি হঠাত বলল,স্যার আজকে আসি।আপনি ভালো থাকবেন।
বলেঈ চলে গেল মেয়েটি।
আর আমি আমার মতই বসে রইলাম।হঠাত চোখ থেকে গড়িয়ে একফোটা জল আমার হাতে পড়ল।এ কি! আমি কি কাঁদছি নাকি আমার চোখ আমার সাথে অভিনয় করছে?