এইইই এইইই
-হুমম
-কি করো?
-গল্প লেখি
-কি গল্প?
-ভালোবাসার
-সুখের নাকি দূঃখের?
-সুখের
-দূঃখের গল্প লিখতে পারো না?
-দূঃখের গল্প লিখতে ভালো লাগে না
-কেন?
-কষ্ট লাগে
-তবুও আমার জন্য লিখো না একটা দূঃখের গল্প
-আচ্ছা লিখবো
-কবেএএএ?
-সুখ গুলো যেদিন ঘুড়ি হয়ে উড়ে যাবে
মৃত্তিকার এসব আবদার শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা হয়ে যায়।একেক সময়ের আবদার গুলো একেক রকমের।অহেতুক অদ্ভূত সব আবদার।আর সেসব না মেটালেও শাস্তিটাও হয় অদ্ভূত রকমের।মেয়ে সাবার সামনেই কান ধরে উঠবস করায়,কখনোও বা দূরে দূরে থাকে,কখনোও কয়েক দিনের জন্য কথা বন্ধ করে দেয়।
এবারের আবদার দূঃখের গল্প লেখার।যেটা আমার দ্বারা বরাবরই হয়ে ওঠে না।হয় না বললে,ভুল হবে।আসলে দূঃখের গল্প লিখতে ভয় হয়,কষ্ট লাগে।মনে হয় সুখের সুতোটা এই বুঝি কেটে গেল।এজন্যে অনেক বার না করেছি।কিন্তু মৃত্তিকার সেই একগুয়েমি ভাবের কাছে অবশেষে আমিই পরাজিত বারবার।যেমনটা হত তার সাথে আমার প্রথম দিন গুলোতেও।
কোন এক ঘুড়ি ওড়ানো পড়ন্ত বিকেলে তার সাথে আমার পরিচয়।সে এসেছিলো একটা লাল ঘুড়ি নিয়ে,আমি সবুজ,আরো অনেকে অনেক রংয়ের।কাটাকাটি খেলতাম।সে কাটতো আমার ঘুড়ি,আমি তার।এভাবে কাটাকাটি খেলতে খেলতে পরিচয়।সে একদিন আমায় বলেছিল,আমি নীল প্রজাপতি ঘুড়ির খবর জানি কিনা?অজানা সত্তেও সেদিন বলেছিলাম,জানি।পরে অবশ্য সারা শহর তন্যতন্য করেও খুঁজেও পাই নি নীল প্রজাপতি ঘুড়ির সন্ধান।লজ্জায় ওমুখো হই নি কয়েক দিন।তারপর যেদিন গেলাম আবার,গাল টেনে দিয়ে বলেছিলো এসো খেলি ঘুড়ি কাটাকাটি।
শুরুটা এভাবে।তারপরের সময়টাও কেটে গেছে সুন্দর ভাবে।ঘুড়ি কাটাকাটি থেকে হয়েছে নাকে ফুচকা ঠেসে দেওয়া,গাল টেনে দেওয়া থেকে হয়েছে বন্ধুত্ব,হয়েছে ভালো লাগা।ভালো লাগার শেষটা হয়েছে ভালোবাসায়,দুই জনের বোঝাপড়ায়।
জীবনে সুখটা পেয়েছি অফুরন্ত।দূঃখটা মাঝে মাঝে এসে ছুয়ে দিয়ে গেছে।ঐ একটু ছোয়াতেই ভয় পেয়েছি,কষ্টটা গাঢ় হয়ে জেকে বসত।
দূঃখকে ভয় করি বলেই হয়ত বিধাতা মৃত্তিকার সাথে আমার বন্ধনটাও করে দিয়েছিলো।সাড়ে তেরো হাত লাল পেড়ে শাড়ি পরেই সে এসেছিলো আমার ঘরে।সেই ঘরকে আলোকিত করে উপহার দিয়েছে প্রথম সন্তান সাবাকে।
আমি,সে,সাবা তিন জনের সুখের সংসার।সুখ গুলো মিশে আছে আমাদেরই পরশে অতি আপনে।সেই সুখের পরশে একটু খানি ভালোবাসা জমল চতুর্থ জনের আগমন বার্তায়।
অফিসের জরুরি মিটিং এ পড়ে ফ্যাসাদে পড়ে গিয়েছিলাম।অতি কষ্টে মিটিং শেষ হওয়ার আধাঘন্টা আগে অফিসের গাড়িটা নিয়ে ছুটলাম।গ্রীন লেন রোডের পাশে এসে দাড়াতেই সুখে বুঝি একটু ভাটা পড়লো।প্রচন্ড জ্যামের মধ্যে পড়ে গেলাম।অস্থির চিত্তে অপেক্ষা করতে লাগলাম জ্যাম ছোটার।হঠাত্ রাস্তার পাশের এক দোকানে চোঁখ পড়তেই গাড়ি থেকে ছিটকে বের হলাম।দৌড়ে গিয়ে দোকানে ঝুলিয়ে রাখা ঘুড়িটা হাতে নিলাম।মৃত্তিকার অতি পছন্দের নীল প্রজাপতি ঘুড়ি।সে এটা পেলে খুব খুশি হবে নিশ্চয়ই।ঘুড়িটা কিনে নিয়ে আবার গাড়ির দিকে হাটা দিলাম।
গাড়ির কাছে আসতেই মোবাইলটা বেজে উঠলো তার আপন সুরে কারো আমায় স্মরনে।মোবাইলের ডিসপ্লেতে লেখা সাবা মনি।রিসিভ করতেই কানে ভেসে আসলো,সাবার কান্না।তাকে কেউ সামলাচ্ছে বোধহয়।লোকটাকে চিনতে পারলাম না।তবে বিড়বিড় করে কি যেন বলল,মৃত্তিকা....অটিতে...আর নেই
পুরো দুনিয়াটা ঝাপসা হয়ে গেল আমার।হাত ফসকে পড়ে গেল ধরে রাখা নীল প্রজাপতি ঘুড়িটা।পাশে দাড়িয়ে থাকা একটা ছোট্ট ছেলে এসে উড়িয়ে দিল সেটা আকাশে।
সুখ গুলো ঘুড়ি হয়ে উড়ে গেল...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




