-তুমি আমাদের সাহায্য করতে চাও কেন?
-এই এলাকায় ছিনতাইকারীদের উপদ্রব বেশি তাই
-তো তুমি আমাদের কিভাবে সাহায্য করবে?তুমি কি পুলিশ?
-না,ছিনতাইকারী
মহিলাটি আমার কথা শুনে মনে হয় একটু ভয় পেল।ভয় পেয়ে দূরে একটা ল্যাম্পপোষ্টের পাশে গিয়ে দাড়ালো।আর আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম তাঁর একটানা বকবক শুনার হাত থেকে।
এই মাঝ রাতে আমার ঘুমিয়ে থাকার কথা।কিন্তু আমি সেটা না করে একজন মহিলা ও একজন মেয়েকে পাহারা দিচ্ছি।দুষ্ট বাস ড্রাইভার দুষ্টামি করে নির্দিষ্ট সময়ের বিশ মিনিট আগেই নামিয়ে দিয়ে গেছে তাদের।কেউ তাদের রিসিভ করতে আসতে দেরি করছে,তাই অপেক্ষার প্রহর গুনছে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে।দিনগুলো বড্ড ভালো,শুধু মানুষ গুলই খারাপ করে দেয়।এই উপলব্ধি থেকেই মাঝরাতে ফুটপাথে হাটতে এসে জনসেবা করছি।
মহিলাটি দূরে যেতেই অনেক্ষন থেকে পাশে দাড়িয়ে উসখুশ করা মেয়েটিও বোধহয় দম পেল।কয়েকবার খুক খুক করে কেশে নিয়ে বলল,আপনি কি করেন?
-দিনে ঘুমাই,মাঝে মাঝে রাতে বের হই
-আকাশ দেখতে?
-না ছিনতাই করতে
-ছিনতাই করেন কেন?
-সিগারেটের পয়সা জোটাতে
-আজকে ছিনতাই করবেন না?
-না,আজকে আমার টাকা আছে
-কোথায় পেলেন?
-মেসের বাজারের টাকা মেরেছিলাম
-হি হি আপনি চোর
আমি অবাক হই।না মেয়েটার হাসি দেখে নয়,আমি ছিনতাইকারী শুনেও মেয়েটার আমার সাথে কথা বলার জন্য।এই ধরনের মেয়েরা সাধারনত ছিনতাইকারিদের প্রচন্ড ভয় পায়।যার জন্য লিপস্টিকের মায়ায় এরা ভ্যানিটি ব্যাগ শক্ত করে আকড়ে ধরে রাখে।
-আপনি আকাশ দেখেন না?
-দেখি,তবে যে রাতের আকাশে চাঁদ থাকে না
-কেন?
-নিজের ইচ্ছে মত চাঁদটাকে যেখানে খুশি সেখানে বসিয়ে নিতে পারা যায় তাই
-সেই চাঁদটাকে পেয়েছেন?
-না কোন এক অমাবস্যার রাতে খুঁজে বসিয়ে নেব
-আমি অপেক্ষা করবো
-ছিনতাইকারীদের জন্য অপেক্ষা করতে নেই
কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো সে।কিন্তু তাঁর আগেই একটা গাড়ি এসে থামলো সামনে।ভেতর থেকে একজন ভদ্রলোক বেরিয়ে আসলেন।লম্বা চওড়ায় বিশালদেহী লোকটিকে দেখে যে কারোই ভয় পাওয়ার কথা।কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি না।কারন লোকটি গাড়ি থেকে বেরিয়েই মন ভোলানো হাসি দিয়ে দুই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমার দিকে।সম্পূর্ন অপরিচিত একজন লোক আমাকে এভাবে তার বুকে টেনে নিতে পারে ভাবতেই মনটা আনন্দে ভরে যায় আমার।আমি এগিয়ে যেতে চাই,কিন্তু তার আগেই পাশের দাড়ানো মেয়েটা ছুটে গিয়ে বুকটা দখল করে বসে।আমি শুধু হিংসায় নীরব দর্শক হয়ে দাড়িয়ে থাকি।
আব্বু এই লোকটি আমাদের এত রাতে সাহায্য করেছে।মেয়ের কথা শুনে লোকটি আমার দিকে তাকালো।তারপর আমার দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,হাই আমি জাহিদুল ইসলাম।আপনি?
-আমি টুকুন
টুকুন!!!বাবা মেয়ে একসাথে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কিছুটা বিব্রত।অবশ্য এই নামটা নিয়ে এর আগেও অনেকবার এরকম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে।তাই পরিস্থিতি সহজ করতেই তাড়াতাড়ি বললাম,টুকুন আহমেদ।আমার বাবা মায়ের দেয়া নাম
ও আচ্ছা।তা এই এলাকাতেই থাকেন বুঝি?লোকটি হেসে বলল।
জি পাশেই থাকি মেসে।
এই নিন আমার কার্ড।শুনেছি এই এলাকায় নাকি ছিনতাইকারীদের উপদ্রব খুব বেশি।প্রবলেম হলে আমাকে জানাবেন।আমি আপনাকে হেল্প করতে পারবো আশা করি,আসি।একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললেন তিনি।
আমি কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম।সুন্দর রুপালি কাগজের একপাশে বড় করে লেখা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।তার নিচে ছোট্ট করে লেখা জেলা প্রশাসক।আমি এইটুকু দেখেই সামনে তাকালাম।দেখলাম আধ উঠানো গাড়ির কাচের জানালার ফাঁক দিয়ে মা মেয়ে আমার দিকে হাত নেড়ে নেড়ে হাসছে।আমিও আস্তে আস্তে হাত নেড়ে মনে মনে বললাম,অমাবস্যার রাতের আকাশে চাঁদ বড্ড বেমানান
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




