somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ টুকুনের রাতের আকাশ

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-তুমি আমাদের সাহায্য করতে চাও কেন?

-এই এলাকায় ছিনতাইকারীদের উপদ্রব বেশি তাই

-তো তুমি আমাদের কিভাবে সাহায্য করবে?তুমি কি পুলিশ?

-না,ছিনতাইকারী

মহিলাটি আমার কথা শুনে মনে হয় একটু ভয় পেল।ভয় পেয়ে দূরে একটা ল্যাম্পপোষ্টের পাশে গিয়ে দাড়ালো।আর আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম তাঁর একটানা বকবক শুনার হাত থেকে।

এই মাঝ রাতে আমার ঘুমিয়ে থাকার কথা।কিন্তু আমি সেটা না করে একজন মহিলা ও একজন মেয়েকে পাহারা দিচ্ছি।দুষ্ট বাস ড্রাইভার দুষ্টামি করে নির্দিষ্ট সময়ের বিশ মিনিট আগেই নামিয়ে দিয়ে গেছে তাদের।কেউ তাদের রিসিভ করতে আসতে দেরি করছে,তাই অপেক্ষার প্রহর গুনছে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে।দিনগুলো বড্ড ভালো,শুধু মানুষ গুলই খারাপ করে দেয়।এই উপলব্ধি থেকেই মাঝরাতে ফুটপাথে হাটতে এসে জনসেবা করছি।

মহিলাটি দূরে যেতেই অনেক্ষন থেকে পাশে দাড়িয়ে উসখুশ করা মেয়েটিও বোধহয় দম পেল।কয়েকবার খুক খুক করে কেশে নিয়ে বলল,আপনি কি করেন?

-দিনে ঘুমাই,মাঝে মাঝে রাতে বের হই

-আকাশ দেখতে?

-না ছিনতাই করতে

-ছিনতাই করেন কেন?

-সিগারেটের পয়সা জোটাতে

-আজকে ছিনতাই করবেন না?

-না,আজকে আমার টাকা আছে

-কোথায় পেলেন?

-মেসের বাজারের টাকা মেরেছিলাম

-হি হি আপনি চোর

আমি অবাক হই।না মেয়েটার হাসি দেখে নয়,আমি ছিনতাইকারী শুনেও মেয়েটার আমার সাথে কথা বলার জন্য।এই ধরনের মেয়েরা সাধারনত ছিনতাইকারিদের প্রচন্ড ভয় পায়।যার জন্য লিপস্টিকের মায়ায় এরা ভ্যানিটি ব্যাগ শক্ত করে আকড়ে ধরে রাখে।

-আপনি আকাশ দেখেন না?

-দেখি,তবে যে রাতের আকাশে চাঁদ থাকে না

-কেন?

-নিজের ইচ্ছে মত চাঁদটাকে যেখানে খুশি সেখানে বসিয়ে নিতে পারা যায় তাই

-সেই চাঁদটাকে পেয়েছেন?

-না কোন এক অমাবস্যার রাতে খুঁজে বসিয়ে নেব

-আমি অপেক্ষা করবো

-ছিনতাইকারীদের জন্য অপেক্ষা করতে নেই

কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো সে।কিন্তু তাঁর আগেই একটা গাড়ি এসে থামলো সামনে।ভেতর থেকে একজন ভদ্রলোক বেরিয়ে আসলেন।লম্বা চওড়ায় বিশালদেহী লোকটিকে দেখে যে কারোই ভয় পাওয়ার কথা।কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি না।কারন লোকটি গাড়ি থেকে বেরিয়েই মন ভোলানো হাসি দিয়ে দুই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমার দিকে।সম্পূর্ন অপরিচিত একজন লোক আমাকে এভাবে তার বুকে টেনে নিতে পারে ভাবতেই মনটা আনন্দে ভরে যায় আমার।আমি এগিয়ে যেতে চাই,কিন্তু তার আগেই পাশের দাড়ানো মেয়েটা ছুটে গিয়ে বুকটা দখল করে বসে।আমি শুধু হিংসায় নীরব দর্শক হয়ে দাড়িয়ে থাকি।

আব্বু এই লোকটি আমাদের এত রাতে সাহায্য করেছে।মেয়ের কথা শুনে লোকটি আমার দিকে তাকালো।তারপর আমার দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,হাই আমি জাহিদুল ইসলাম।আপনি?

-আমি টুকুন

টুকুন!!!বাবা মেয়ে একসাথে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কিছুটা বিব্রত।অবশ্য এই নামটা নিয়ে এর আগেও অনেকবার এরকম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে।তাই পরিস্থিতি সহজ করতেই তাড়াতাড়ি বললাম,টুকুন আহমেদ।আমার বাবা মায়ের দেয়া নাম

ও আচ্ছা।তা এই এলাকাতেই থাকেন বুঝি?লোকটি হেসে বলল।

জি পাশেই থাকি মেসে।

এই নিন আমার কার্ড।শুনেছি এই এলাকায় নাকি ছিনতাইকারীদের উপদ্রব খুব বেশি।প্রবলেম হলে আমাকে জানাবেন।আমি আপনাকে হেল্প করতে পারবো আশা করি,আসি।একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললেন তিনি।

আমি কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম।সুন্দর রুপালি কাগজের একপাশে বড় করে লেখা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।তার নিচে ছোট্ট করে লেখা জেলা প্রশাসক।আমি এইটুকু দেখেই সামনে তাকালাম।দেখলাম আধ উঠানো গাড়ির কাচের জানালার ফাঁক দিয়ে মা মেয়ে আমার দিকে হাত নেড়ে নেড়ে হাসছে।আমিও আস্তে আস্তে হাত নেড়ে মনে মনে বললাম,অমাবস্যার রাতের আকাশে চাঁদ বড্ড বেমানান
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:১৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×