somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ স্মেল

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-চিঠি না পার্সেল?

-আমি ঠিক জানি না,আপনাদেরই একজন কল করে বললেন আমার নামে নাকি একটা পার্সেল এসেছে?

-আপনার নাম আর ফোন নাম্বারটা প্লিজ

কুরিয়ারের ডেলিভারি জোনের মেয়েটা আমার দিকে আগ্রহ ভরে এমন ভাবে তাকালো যে আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।চোখে মুখে ফুটে ওঠা হাসিটা যেন শত চেষ্টা করেও দমিয়ে রাখতে পারছে না সে।এজন্যে নিজে নিজেই লজ্জায় পড়ে গেল মেয়েটা।মেয়েটার হাসির মানে আমার কাছে অজানা।আমি নাম,আর ফোন নাম্বারটা বলতেই চেক করে দেখে বলল,সব ঠিক আছে।তারপর একটা পার্সেল বক্স আমার হাতে তুলে দিয়ে একটা কাগজ এগিয়ে দিল।আমি নাম লিখেই বাইরে বেরিয়ে আসলাম তাড়াতাড়ি।

বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল।তাই পার্সেলটা তখন না খুলে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।ঘুমানোর সময় নজর পড়লো পার্সেলটার দিকে।এবার এটার প্রতি আগ্রহটা কেন জানি বেড়ে গেল।হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলাম।না কোথাও প্রেরকের নাম ঠিকানা নেই।আমার আগ্রহের মাত্রাটা বেড়েই চলেছে।র‍্যাপিং পেপার খুলে দেখলাম ভিতরে আমার প্রিয় লেখকের একটা বই।বইটার পাতা উল্টাতে উল্টাতে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলাম।
না পড়তে নয়,অন্য কিছু পাওয়া যায় কিনা তা দেখতে।বইয়ের প্রতিটি পাতা চেক করতে করতে মাঝরাত হয়ে গেল।কিন্তু না কিছুই পেলাম না।প্রেরক কোন ক্লুই রাখে নি তাকে খুজে পাওয়ার।আমার চোখ বুজে আসে ঘুমে।হাতের শক্তি শেষ হয়ে আসে,বুকের উপর ধপ করে পড়ে কিছু একটা।

হঠাত করেই ঘুম ভেঙ্গে যায়।আজকাল ঘুম গুলোর সাথে শত্রুতা জমে উঠেছে বেশ।এরা আমায় সঙ্গ দিতে চায় না,হঠাত হঠাত পালিয়ে যায়।আমি তখন রেগে গিয়ে গালি দিতে চাই ইচ্ছেমত।গালিটা আস্তে আস্তে শ্লীল থেকে অশ্লীল পর্যায়ে চলে যাবে।ওরা লজ্জা পেয়ে আবার আমার কাছে ফিরে আসবে।

কিন্তু আজকে কেন জানি গালি দিতে ইচ্ছে করছে না।অন্য এক মাদকতায় মগ্ন হয়ে খুজছি তার কারন।চোখ মেলে তাকাতেই দেখি একটা বই আমার বুকের উপরে পড়ে আছে।সেটা হাতে নিয়ে মুখের কাছে আনতেই একটা গন্ধ ভেসে আসে নাকে,সেটা ভ্যাপসা নয়।আমি বইটা মেলে ধরে শুকতে চেষ্টা করি।না এটা বইয়ের গন্ধ নয়,মাদকতা ধরে যাওয়ার মত।বইয়ের গন্ধে মাদকতা ধরে না,শুধু বুদ হওয়া যায়।

ছোটবেলায় আমি নতুন বইয়ের মাঝে নাক ডুবিয়ে গন্ধ শুকে বেড়াতাম।এখনো মনে আছে পঞ্চম শ্রেনীর নতুন বইয়ের গন্ধ নেওয়ার জন্য পড়ার টেবিলে পড়ে থাকতাম সারাক্ষন।হঠাত করে কিল ঘুষি খেতে হত এক জনের কাছে খুব একারনেই।সে আমার বন্ধু,খেলার সাথি আর আমার একনিষ্ঠ শত্রু রিমি।পাশের ফ্লাটের যে অস্থায়ী বাসিন্দা রিমি সে কোন ভাবেই সহ্য করতো না আমার বইয়ের মাঝে গন্ধ শুকে বেড়ানোটা।বলত,বুদ্ধুরাম বইয়ের গন্ধ কেউ শুকে নাকি?আমি হাসতাম শুধু।তারপর আবার বইয়ের মাঝে নাক গুজে দিতাম।

গন্ধ শুকতে শুকতেই একসময় বুঝতে পারি আমার পিঠে আর কেউ কিল ঘুষি দেয় না।আমাকে বুদ্ধুরাম বলা মেয়েটা হঠাত করেই হয়ে যায় পাশের ফ্লাটের স্থায়ী বাসিন্দা।বলতে গেলেই কাদো কাদো সুরে বলে উঠে,আমি বড় হয়ে গেছি রে।লোকে খারাপ বলে।

আমি অবাক হয়ে হয়ে বললাম,বড় হয়ে গেলে কি হয় রে?আর লোকে খারাপ বলে কেন?আমার কথা শুনে রিমির চোখ পানিতে ছলছল করে ওঠে।সে আর এক মুহূর্তও থাকে নি সেখানে।আমি শুধু অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখি।

ওর বাবা যেদিন বরিশালে বদলি হয়ে যায় সেদিন অনেক কেদেছিল সে।কাদিস কেন?আমি ভ্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলেছিলাম।

-এমনিতেই কাদি।তাতে তোর কি?

-বারে তুই আমার বন্ধু না?

-হুম।আচ্ছা তুই কি গন্ধ শুকে বলে দিতে পারিস কিসের গন্ধ সেটা?

-সব পারি না,শুধু বইয়ের গন্ধ শুকে বলতে পারি

-আমার শরীরের গন্ধ শুকে বলতে পারবি না?

দে শুকে দেখি,মনে রাখবো।বলেই রিমির ওড়নায় নাক ডুবিয়ে দিলাম।না রে তোর গন্ধটা ধরতে পারছি না।আমার কথা শুনে রিমি এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে বলল,যা ভাগ আমার কাছ থেকে।আমার গন্ধ সবাইকে নিতে দেব না।

-তাহলে কাকে দিবি?

-আমি যাকে ভালোবাসি,যে আমার গন্ধ শুকে বুঝতে পারে তাকে

-তার মানে আমাকে তুই ভালোবাসিস না?

-আরে বুদ্ধুরাম,আমি তো তোকে ভালোবাসিই।এ ভালোবাসা সে ভালোবাসা নয় বুঝলি?

হা হা হা বুঝছি রে বুঝছি।তুই যার প্রেমে পড়বি তাকে তো?আমি আবার ভ্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে ওকে বুঝাতে চাইলাম দেখ আমি কত বুঝি?সেও আমার হাসি দেখে হেসে ফেলেছিল সেদিন।সে হাসিতে কিছু একটা লুকিয়ে আছে,কিন্তু আমি ধরতে পারি না।

-রিমি তোর সাথে আর আমার দেখা হবে না?

-যখন বইয়ের মাঝে তুই আমার গন্ধ পাবি তখনই আমি তোর কাছে আসবো

রিমি চলে যাবার পর আর বইয়ের গন্ধ শুকে বুদ হতে পারি নি কোনদিন।অসহ্য হয়ে ধরা দিত সেটা।ক্যালেন্ডারের পাতায় এক একটা দিন চলে যাবার সাথে সাথে হারিয়ে যায় বুদ হওয়ার গন্ধ,শুধু থেকে যায় রিমি।টেবিলের উপর বই গুলো আমাকে আর টানে নি কোনদিন।বইয়ের ফাকে নাক গুজে দিলেও খুজতে থাকতাম অন্য কিছু।রিমির কেদে ওঠা,হাসির মাঝে লুকিয়ে থাকা "কিছু একটা" যখন বুঝতে পেরেছি তখন সে আমার থেকে অনেক দূরে।বুকের মাঝে চিনচিন করে উঠায় বুঝেছি আমি বড় হয়ে গেছি।

আমি আবার বইটা নাকের কাছে নিয়ে আসি।একটা গন্ধ ভেসে আসে নাকে।না এটা বইয়ের গন্ধ নয়,মাদকতা ধরে যাওয়ার মত।বইয়ের গন্ধে মাদকতা ধরে না,শুধু বুদ হওয়া যায়।এটা রিমির শরীরের গন্ধ।মাদকতায় ঝিম ধরে আসে আমার চোখে।আমি হাসতে থাকি,কুরিয়ারের মেয়েটার হাসির মানে না বুঝলেও আমার হাসির মানে আমি বুঝেছি।রিমি আসছে আমার কাছে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×