somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ও টিপাই মুখে বাধঃ সাহারা মরুভমির পথে বাংলদেশ-২

০৮ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পড়ুন পর্ব-১

পর্ব-২

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ নীহগাররঞ্জন রায় ‘বঙ্গালীর ইতিহাস’ লিখতে গিয়ে অনুভব করেছেন, “বাংলার ইতিহাস রচনা করিয়াছে বাংলান ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী। এই নদ-নদীগুলিই বাংলার প্রাণ, এরাই বাংল কে গড়িয়াছে, বাংলার আকৃতি-প্রকৃতি নির্ণয় করিয়াছে যুগে যুগে। এখনও করিতেছে। এই নদ-নদীগুলো বাংলার আশির্বাদ; এবং প্রকৃতির তাড়নায় মানুষের অবহেলায় কখনও বোধ হয় বাংলার অভিশাপ।” আমাদের বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি এবং তার হাল-অবস'া এই ছোট্ট কয়েকটি কখার মধ্যদিয়ে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। ঢাকার অদুরে মধুপুর অঞ্চল এবং রাজশাহীর বরেন্দ্র ভূমির একটা অংশ বাদে এদেশের পুরো ভূখন্ডই নদ-নদীগুলোর -প্রধাণত গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বয়ে আনা পলি দ্বারা গঠিত। এবং এখনও এ প্রক্রিয়ায় এখানে ভূমি গঠন চলছে । তাই স্বাভাবিকভাবেই এদেশের ভূপ্রকৃতি, মানুষের জীবন জীবিকা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, একথায় গোটা জীবন প্রবাহ গড়ে ওঠেছে নদ-নদীকে ঘিরে। সেজন্য নদ-নদ কেই ধরাহয় এদেশের প্রাণ।বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, কোন কারণে এগুলো শুকিয়ে গেলে, গোটা দেশটাই মৃত্যূমুখে পতিত হবে। সম্প্রতি এ আশঙ্কাটা জনমনে বেশ ভালভাবেই জেঁকে বসেছে; বিশেষ করে, ভারত সরকারের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের কথা জানার পর থেকে।

এমনিতেই রাজশাহী সিমানে-র ১১ মাইল উজানে গঙ্গার ওপর নির্মিত ফারাক্কা বাঁধের কুপ্রভাব দিনকে দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ওদিকে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারার উজানে বরাক নদীর ওপর টিপাইবাঁধ দিয়ে মেঘনাকে মারার আয়োজন চলছে। (সুরমা-কুশিয়ারার মিলিত স্রোতের নামই হল মেঘনা)। এর মধ্যেই যদি আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মধ্যমে ব্রহ্মপুত্র থেকেও পানি প্রত্যাহার শুরু হয় তাহলে বাংলাদেশের সামনে মৃত্যু ছাড়া আরকোন গতি থাকে না।

জনশ্রুতি আছে যে এক সময় এদেশে ১৬শ নদী ছিল। কবিয়ালরা বন্দনা গাওয়ার মসয় এতথ্য পরিবেশন করতেন। তারা ব্রহ্মপুত্রকে বলতেন নদীর রাজা। জনশ্রুতি বাদ থাক, বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন একসময় এদেশে ১২০০ নদীর নাম পাওয়া যেত। কিন্ত এখন ২৩০ টি নামে আছে, যদিও বাস্তবে সবগুলো সচল নেই। শীতকালে ৬০/৬৫টির বেশি প্রবাহমান থাকে না । পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, ২৫টি নদী সহসাই শুকিয়ে যাবে। এরই সাথে জানা গেছে, ভারত বাধেঁর মালা দিয়ে বাংলাশেকে ঘিরে ফেলেছে। আমাদের আন-র্জাতিক নদী ৫৭টি। ৫৪টি এসেছে ভারত, ৩টি মিয়ানমার থেকে। ভারত আন্তর্জাতিক সকল নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে উজানে অধিকাংশ নদীতে বাঁধ দিয়েছে। ইতিমধ্যে ১৬ টি বৃহৎ বাঁধ চালু করা হয়েছে। ৮টি নির্মাণাধীন। খবরে প্রকাশ, ভারত তার উত্তর-পূর্বাংশে ক্রমান্বয়ে আরও ৬৪টি বাঁধ নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে সেগুলোর প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে।

আমাদের পানির প্রধাণ উৎস তিনটিঃ আর্ন্তজাতিক নদী প্রবাহ, বৃষ্টির পানি এবং ভূগর্ভস' পানি। এর মধ্যে নদীপ্রবাহের আবদান দুই তৃতীয়াংশের বেশী (৭৬.৫%)। বাকি দু ’টোর অবদান যথাক্রমে ২৩% ও ১.৫%। বলা বাহুল্য, সাগরের পাশাপাশি নদীর পানি বাস্পীভূত হয়েই বৃষ্টিতে পরিণত হয়। ভূগর্ভস' পানির ভান্ডারেও নদীর পানির অবদান বিশাল। আবার, নদীপ্রবাহের মাধ্যমে দেশে যে পরিমাণ পানি আসে তার ৯০% এরও বেশী বহন করে ৩টি প্রধাণ নদী- ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্রই আনে ৬০-৭০% পনি। ফলে একদিকে বাঁধের মালা, অন্যদিকে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের অশুভ পরিনাম ভেবে সচেতন মানুষ মাত্রই শিউরে উঠবেন সন্দেহ নেই। তবে এ অশুভ পরিণামকে রুখতে হলে সমগ্র জনগনকে দাঁড়াতে হবে, বাংলঅদেশকে পানিতে মেরে ভারতীয় শাসকদের কথিত উন্নয়নের স্বরূপ বুঝতে হবে। আর এ প্রয়োজন থেকেই নদী নিয়ে ভারত সরকার গৃহীত পদক্ষেপসমূহের স্বরূপ সন্ধান জরুরি বলে আমরা মনে করছি।

প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার, আমাদের ভাবনা ছিল, নদী সংযোগ ফারাক্কা ও টিপাইবাঁধ তিনটকে মিলিয়েই একটা আলোচনা হাজির করা। কিন' স্থানাভাবে বর্ততমান পরিসরে তা সম্ভব নয়। ফারাক্কা নিয়ে আমরা অন্যত্র (ট্রানজিট-হাইওয়ে বির্তক, পানিচুক্তি ও বাংলাদেশ-ভারত সর্ম্পক পুস্তিকায়) বিস-রিত আলোচনা করেছি। টিপাইবাঁধনিয়েও আমাদের অনরূপ ভাবনা আছে (সম্প্রতি ’টিপাই মুখ বাঁধ প্রকল্পঃ মৃত্যুর মুখে সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনা’ শীর্ষক পুস্তিকাটি হাতে পেয়েছি। পরবর্তীতে ব্লগে প্রকাশের ইচ্ছা আছে।) এখানে শুধু নদীসংযোগের উপরই আমাদের মনোযোগ নিবদ্ধ থাকবে।

(চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১১:৪০
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×