somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সালেহ মতীন
ভাঙতে নয়, গড়তে চাই। গড়তে চাই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের একটি বিশ্ব সৌধ। আগামী প্রজন্মকে হানাহানিমুক্ত একটি শান্তিময় সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে চাই। সুন্দরকে আরো সুন্দর করে সাজানো এবং পরিশীলিত ব্লগিং চর্চার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনই আমার সাধনা।

অলিখিত ইতিহাসের জানালায়

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারদিন হলো অফিসের কাজে দেশের দক্ষিণের দ্বীপ জনপদ ভোলায় এসেছি। বুড়িগঙ্গা-মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে রাতভর ভাসতে ভাসতে আমাদের লঞ্চ কর্ণফুলী-১০ খুব ভোরে ভোলা পৌঁছে নোঙর করে। হালকা কূয়াশায় কিছুটা শীতের বার্তা বহন করছে ভোরের প্রহরগুলো। একটু পরেই মিষ্টি রোদের পরশ বুলাতে শুরু করে ভোলার হৈমন্তী সকালটা। প্রথমবারের মতো এই আমার ভোলা সফর।

ছিমছাম ছোট্ট শহর। বেশ পরিপাটি ও পরিকল্পিত রুচির সমাহার এখানে স্পষ্ট। শহরের পাশ দিয়ে আপন মনে বয়ে যাওয়া ঝিলটির ওপর খানিক পর পর দৃষ্টিনন্দন সেঁতু, চারিদিকে নির্ভেজাল সবুজের উচ্ছ্বসিত সমারোহ, চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বহনকারী মসজিদ, ঈদগাহ আরো অনেক কিছু সহজেই ভালো লাগার আবহ তৈরিতে সতত পারঙ্গম।

তবে এসব আমাকে ঠিক সেভাবে কাছে টানছে না। আমি খুঁজে ফিরছি স্মৃতির জানালা দিয়ে অলিখিত এক ইতিহাসের ধূসরিত সেই পাতা দুটি যা হয়ত পুরাতন পাসপোর্টের পাতার মতো যুক্ত হয়েছে অবিচ্ছেদ্য মন্ত্রের কোন অখণ্ড প্রেরণায়। জীবনের বিচিত্র ক্যানভাসে হয়ত কোনদিন আর তা খুলে দেখা সম্ভব হবে না।

সময়টা ২০০০ সালের মাঝামাঝি। মাত্র কিছুদিন হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে আলহামদুলিল্লাহ ক্যারিয়ারের অনবদ্য যাত্রার সূচনা হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রখ্যাত ও অগ্রগন্য একজন আলেমে দ্বীন, অতি সুদর্শন ব্যক্তিত্ব আমার কর্মস্থলের অভিভাবক। স্যারের সাথে আমার চমৎকার সম্পর্ক নির্মিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বস্ততা ও আত্মবিশ্বাসে প্রশংসিত হতেও শুরু করি। হঠাৎ একদিন ডেস্কের সামনে আবিষ্কার করি স্যারের এক ভাইকে যাকে স্যারের ফটোকপি বললে অত্যুক্তি হবে না। পরিচয় এবং কয়েকদিনের আসা যাওয়াতে তাঁর সাথে সম্পর্ক হাইব্রিডের মতো ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে। হঠাৎ একদিন কোন রাখঢাক ছাড়াই তিনি বলে ফেললেন, "তোমার জন্য একটা মেয়ে ঠিক করেছি, বিয়ে করবে কি না বলো। মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দর।" শুনে আমি একেবারেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। কিছু বলছিনা দেখে পরক্ষণেই আবার তিনি বললেন, "মেয়েটি আমাদের এলাকার। ভোলার নাম শুনছ? মেয়েটি ভোলার, আমার খুবই পরিচিত, অনেক গুণী।"

এরপর তিনি ঘন ঘন অফিসে আসতে শুরু করেন এবং চা-বিস্কুট পর্ব শেষ হলেই সেই অব্যাহত কথন, "কী হলো? কী চিন্তা করলে?" আমি আমতা আমতা করতাম আর মিষ্টি করে হাসি দিতাম (মূলত আদৌ মিষ্টি করে হাসতে পারি কি না তা আজও আমার অজানা) কারণ, ভাবতাম যদি এখানে সম্পর্কে জড়িয়েই যাই তাহলে আজকের এই হাসিটাই একদিন ইতিহাসে পরিণত হতে পারে। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না যে, এ ক্ষণে আমার কী বলা উচিত! তিনি মেয়ের বায়োডাটা এনে আমার হাতে দিলেন এবং বললেন, "মেয়ে খুব পর্দা করে, তাই বায়োডাটায় ছবি দেয়নি, তুমি মতামত দিলেই ছবি আনব।"

কয়েকদিন পর তিনি আমাকে ডেস্ক থেকে ডেকে নিয়ে অন্যত্র একাকী বসালেন। বললেন, "মেয়েটাকে নিয়ে কী চিন্তা করছ কিছুই তো বলছ না! ছবি কি পাঠাতে বলব? " কিন্তু ততক্ষণে বাস্তবতার নির্মম অদৃষ্ট অন্যত্র আঁছড়ে পড়তে শুরু করে। বুঝতে পারলাম, অখ্যাত এক গ্রামের অসহায় উঠোনে বিধবা মায়ের কোলে বেড়ে উঠা কোন সংগ্রামী ও স্বপ্নচারী যুবকের ক্যারিয়ারের শুরুতে তার অন্তরে এ রোমাঞ্চ তেমন কোন দোলায়িত তরঙ্গ উৎপাদনে সক্ষম হচ্ছে না।

এর কিছুদিন পর প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিভিশনে আমার বদলীর আদেশ হয়। মুরুব্বী এখানে আগের মতো আর আসতে পারেন না। অনুধাবন করতে থাকি যে, আস্তে আস্তে প্রস্তাবনার লাইফটাইম ফিকে হতে শুরু করেছে।

ঘটনার ১৮ বছর পর এই আমি সেই ভোলায় প্রথমবার পা রেখেছি। খুঁজে ফিরছি অলিখিত ইতিহাসের সেই অদৃশ্য পাতার অক্ষরশৃঙ্খল।
স্মৃতি যদি আমাকে বিভ্রান্ত না করে তবে যতদূর মনে পড়ছে, মেয়েটির নাম ছিল সুমাইয়া তাবাসসুম। খুব জানতে ইচ্ছে করছে সেই পরমা সুন্দরী, গুণী মেয়েটি এখন কার ঘরে কেমন অাছে! রাস্তায় চলতে এ নাম শ্রবণেই সহসা ঘুরে দাঁড়াই, কিন্তু অদৃশ্য থেকে আওয়াজ আসে,"কোন লাভ নেই খুঁজাখুঁজি করে, সে এখন ঘোমটা পরা কাজল বধূ দূরের কোন গাঁয়।"

তবে কোন প্রকার ভুল বুঝাবুঝি এঁড়াতে বলে রাখা ভালো, বাস্তব অনুসন্ধানের সুযোগ ও সম্ভাবনা এখানে নিতান্তই অনুপস্থিত। সুতরাং পুরোটাই মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধানের বহিরাবরণ মাত্র।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×